মাস খানেক আগে আমি এবিষয়ে জানতে চেয়ে একাধিক পোস্ট দিয়েছিলাম সামুতে। কেউ কেউ সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন এ ব্যাপারে তথ্য দিয়ে, কিন্তু খুব পরিষ্কার কিছু জানতে পারি নি। একজন আবার মেইলে যোগাযোগ করতে বললেন, কিন্তু একাধিক মেইল দেয়ার পরেও তিনি সময় করতে পারেন নি আমার মেইলটির জবাব দেবার

সে যাই হোক, অবশেষে আমি অনলাইনে একটি ল্যাপটপ কিনেছি এবং সম্প্রতি হাতেও পেয়েছি। যাদের বিদেশে কেউ আছে, কিন্তু জিনিস বহন করার মতো কেউ এখন দেশে আসছেন না, তাদের হয়তো কিছুটা হলেও উপকার হবে আমার অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করলে। মূলতঃ তাদের জন্যই এই পোস্ট ।
আমি amazon.com থেকে Sony VAIO FW সিরিজের ল্যাপটপ কিনেছি। চমৎকার দেখতে, আর কনফিগারেশনও বেশ ভালোই। দেশ থেকে কিনতে গেলে লাখ টাকার কাছাকাছি বা তা ছাড়িয়ে যেত দামে। এই সিরিজের ল্যাপটপ IDB তে চোখেও পরে নি।
আমার বাবা থাকেন আমেরিকায়। আমি কিনে ল্যাপটপটা তার কাছে পাঠিয়ে দিই, যেহেতু amazon বা Sony VAIO নিজেরাও আমাদের দেশে কিছু ship করে না।
এখন দেশে আনলাম কিভাবে? প্রথমেই ভয় পার্সেলের মাধ্যমে দেশে আনতে না জানি কতো খরচ হবে! সামু তে খুঁজলাম, এ ব্যাপারে কোনোই পোস্ট পেলাম না, নিজের দেয়া পোস্টেও পরিষ্কার ধারণা পেলাম না জবাব গুলো থেকে। তখন আমি খোঁজ লাগালাম Fedex, DHL এর মতো সার্ভিসগুলোতে। ওদের সাথে কথা বলে যা জানলাম, তা হলো ওদের মাধ্যমে আনতে গেলে ওটা কাস্টমস্ থেকে ছাড়াতে যেই টাকা লাগবে তা দিয়ে নাকি দু'টা ওমন ল্যাপটপ কেনা যাবে!
ওদিকে USPS (আমেরিকার সরকারী পোস্টাল সার্ভিস) দিয়ে পাঠালে আমাদের GPO তেই জিনিস চুরি যাওয়ার ভয়। তবু রিস্ক নিলাম। বাবাকে বললাম USPS দিয়েই পাঠাতে। ওদের আছে insurance করার ব্যবস্থা, তাই যদি হারিয়েও যায় আপনার ল্যাপটপটি, তবুও আপনি ক্ষতিপূরণ পাবেন। USPS দিয়ে একটা ল্যাপটপ পাঠাতে insurance fee সহ ৭০-৮০ ডলারের বেশি লাগার কথা নয় (Priority Mail)। বিস্তারিত জানতে পারবেন ওদের ওয়েবসাইট থেকে, Postage Calculation লিঙ্ক থেকে কতো লাগতে পারে সেই হিসাবটাও করে ফেলতে পারেন। তবে একটা সতর্কবাণী, ১০-১২ দিনের বেশি লাগার কথা না থাকলেও আমারটা পৌঁছাতে লেগেছিল পাক্কা এক মাস।
তারপর যথারিতি GPO তে যেয়ে ল্যাপটপ ছাড়াতে হবে। অনলাইন ট্র্যাকিং-এ দেশে পৌঁছার খবর পাওয়ার একদিন পরেই গেলাম খোঁজ নিতে, ওদের চিঠির অপেক্ষা না করে। পরে বুঝেছি ঠিক-ই করেছিলাম, চিঠি এসেছে ইস্যু করার সাতদিন পর! তো যাই হোক, ওরা আমাকে আরো একদিন পরে আসতে বললো, যদিও চাইলে ঐদিন-ই দিতে পারতো।
তো গেলাম একদিন পর। তিন ঘন্টা লাগলো সব প্রক্রিয়া শেষ করতে। একটাও কম্পিউটার দেখলাম না আমাদের ডিজ়িটাল দেশের পুরা GPO তে। তাই আট-দশটা টেবিলে এই নানান রকম কাগজ সই করাতে এই সময় গেলো।
হাতে হাতে জিনিস নিয়ে আসতে চাইলে আপনার অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্রটির ফটোকপি নিয়ে যাবেন, নাহলে ওরা আবার লোকাল পোস্ট অফিস থেকে পার্সেল গ্রহণ করতে বলবে। আপনাকে একটি আবেদনপত্র লিখতে হবে জিনিস পাওয়ার জন্য ৫ টাকার কোর্ট ফী স্ট্যাম্প সহ (আমার জিনিস নিতে আমার আবেদন করা লাগবে!)। এই স্ট্যাম্প ওখানকার পিওনদের কাছে পেতে পারেন ২০ টাকায়। ল্যাপটপ ছাড়াতে আপনাকে দিতে হবে দামের উপর ৬% ট্যাক্স, কোনো ভ্যাট নাই (অন্য কিছু আনলে আলাদা ট্যাক্স ও ভ্যাট প্রযোজ্য হতে পারে)। দাম কতো সেটা কাস্টমস্ অফিসার আন্দাজ করে নেবেন, ল্যাপটপের ক্ষেত্রে সাধারণত ৫০,০০০ ধরা হয় বলে জানা গেলো। ছাত্র হিসেবে রিকোয়েস্ট করে আমি ১০,০০০ কমাতে পেরেছিলাম


এই ৬% ফী ছাড়া আমার কিছু “চা খাওয়ার” টাকা বিলাতে হয়েছে একাধিক বার, সর্বমোট ১০০ টাকা গেছে এই খাতে।
সব খরচের পরেও আমার কমপক্ষে ৩০-৪০ হাজার টাকা বেঁচে গেছে।
বোনাসঃ যাদের আমেরিকায় কেউ নেই তারা কি করবেন? এই সাইটটি দেখুন। ওরা আপনার যেকোন জিনিস একটি নির্দিষ্ট ফী-এর বিনিময়ে আপনার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবে আপনার পছন্দের পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে। আপনার কাজ হল ওদের ঠিকানায় জিনিসটা কিনে পাঠানো। চাইলে ওরা আপনার হয়ে আপনার পছন্দের সাইট থেকে কিনেও দিতে পারে। তবে আমি নিজে এদের সার্ভিস ব্যবহার করিনি, তাই কতোটা বিশ্বাসযোগ্য তা বলতে পারছি না, নিজ দায়িত্বে করেন যা করার!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১০ রাত ২:৩৯