খুলনায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ভাইদের নেতৃত্বে তান্ডব
৩৫টি ঘর নিশ্চিহ্ন স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুট
খুলনা অফিস : খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির তিন চাচাতো ভাইয়ের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক ক্যাডারের তান্ডবে দুইটি বাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে, মাটির সাথে মিশে গেছে আরো ৩৩টি বাড়ি এবং মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য গবাদি পশু পাখির। কয়েক লাখ টাকার সম্পদ লুটপাট হয়েছে। জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলাধীন ঢেউয়াতলা গ্রামে গত সোমবার সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পুলিশের উপস্থিতিতে এ তান্ডব চলে বলে গ্রামবাসীরা জানান।
গ্রামবাসীরা জানান, গত সোমবার সকালে গ্রামের পুরুষেরা কাজে বেরিয়ে যাওয়ার পরে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদের চাচাতো ভাই শেখ আব্দুল গফুর, শেখ আব্দুল জববার ও শেখ আব্দুর রউফের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক লাঠি-সোঠাধারী লোক ঢেউয়াতলা গ্রামে হামলা চালায়। আটটি হিন্দু পরিবারসহ ১৭টি পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙ্গতে শুরু করে। তারা এসব পরিবারের ৩৩টি ঘর ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। ২টি ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। গোয়ালে গরু এবং খোপে হাঁস-মুরগি থাকা অবস্থায় সেগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়। এতে অনেক গরু ছাগল এবং হাঁস-মুরগির মৃত্যু হয়। হামলাকারীরা রান্নাঘরে রক্ষিত খাবার পর্যন্ত সরিয়ে নিতে দেয়নি। সেগুলো ধ্বংস করে ফেলে। তারা সেখানে ব্যাপক লুটপাটও চালায়। এ তান্ডব চলার সময় এসব বাড়ির গৃহবধূরা হামলাকারীদের পা জড়িয়ে ধরে চলে যাওয়ার জন্য দুই দিন সময় ভিক্ষা করে। কিন্তু তারা পা কি কথা বলে? এ কথা উচ্চরণ করে লাথি মেরে তাদের সরিয়ে দেয়। গৃহবধূ কবিতা রাণী মন্ডল জানান, ৭১ সালে রাজাকাররাও এত বড় ক্ষতি করেনি। তার মেয়ে পপির কয়েকদিন পরে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো বিয়ের বাজার ও গহনা হামলাকারীরা লুট করে নিয়ে গেছে বলে জানান। বটিয়াঘাটা থানার ৫ পুলিশের উপস্থিতিতে এসব ঘটনা ঘটে বলে গ্রামবাসীরা জানান। ঘটনার খবর পেয়ে এলাকার সাবেক এমপি পঞ্চানন বিশ্বাস এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সমবেদনা জানান।
এ ব্যাপারে বটিয়াঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, জজ কোর্টের আদেশে সেখান থেকে ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদের সময় কোর্টের একজন নাজির ও একজন অফিসারের নেতৃত্বে পুলিশ উপস্থিত ছিলো।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান ফোনে জানান, সেখানে বর্বরোচিত ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। গবাদি পশু পাখি ঘরের দেয়াল চাপা দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, লুটপাট চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু টাউট বাটপাড় সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য প্রশাসনের এক শ্রেণীর কর্মচারীর সাথে যোগসাজশ করে এ অপকর্ম করেছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের পূনর্বাসন এবং দোষিদের শাস্তি দেয়ার দাবি জানান। বটিয়াঘাটা থানা আ'লীগের সভাপতি ও খুলনা-১ আসনের সাবেক এমপি পঞ্চানন বিশ্বাস খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং দোষিদের আটক করে শাস্তি দেয়ার দাবি জানান। তিনি থানার ওসির প্রত্যাহার দাবি করেন।