ঢাবিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু'গ্রপের মধ্যে গোলাগুলী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু'গ্রপের মধ্যে গোলাগুলীর ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীলক্ষেত আবাসিক এলাকায় পাঁচ থেকে ছয় রাউন্ড গুলীর শব্দ হয়।এ সময় আবাসিক এলাকার শিক্ষক-কর্মকর্তারা আতঙ্কিত হয়ে থানায় খবর দেন। তবে পুলিশ ঘটনার কোন ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি। ওই এলাকায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন ও সহ-সভাপতি রাসেদুল মাহমুদ রাসেল থাকেন।
শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় এ সরকারের আমলে প্রথম গোলাগুলী বলে জানা যায়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ দু'নেতার নিজস্ব কোন্দলের কারণে এঘটনা ঘটে।
আবাসিক এলাকার পাশেই সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, এসএম হল ও স্যার এএফ রহমান হলের ছাত্রদের মধ্যে গুলীর শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কেএম সাইফুল ইসলাম খান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তিনি গুলী হয়েছে এমনটা শুনেছেন। তবে কারা এরসঙ্গে জড়িত তা চিহ্নিত করতে পারেননি। প্রক্টর বলেন, বিষয়টি শোনার পরপরই তিনি আইন-শৃক্মখলা বাহিনীর সদস্যদের অবহিত করেছেন। ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার রোটন সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে ছাত্রলীগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করেন। এবিষয়টি কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন ভালোভাবে দেখেননি। রোটনকে বিপদে ফেলতেই তিনি তার কর্মীদের আবাসিক এলাকায় বিশৃক্মখলা সৃষ্টির নির্দেশ দেন। আবাসিক এলাকায় গোলাগুলীর ঘটনা ছাত্রলীগ স্বীকার করেছে। এঘটনায় এক গ্রুপ অপর গ্রুপকে দোষারোপ করেছে। ছাত্রলীগের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে এ গোলাগুলী হয়েছে। এঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সোহেল রানা মিঠুকে দায়ী করেছেন।
গত ১২ অক্টোবর হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে সভাপতি মোহম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন গ্রুপের মধ্যে রাতব্যাপী ও ৬ আগস্ট সূর্যসেন হলে সভাপতি সাঈদ মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক তুহিন গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলী হয়। নির্বাচনের পরপরই এরআগে মু্ক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাদ থেকে চারটি বোমা, কমপক্ষে ১০ রাউন্ড বুলেট ও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ। ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপুর ছোট ভাই গেদা ওরফে ইমন ক্যাম্পাসে অস্ত্র চালান ও ব্যবসায় জড়িত থাকায় সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছেন। ইমন রিমান্ডে স্বীকার করেছে টিপুর সহায়তা ও সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে অস্ত্র ব্যবসা ও ফেনসিডিল-হেরোইনের ব্যবসা করেছেন।
এদিকে চা খাওয়াকে কেন্দ্র করে সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শহীদুল্লাহ হলের ফলিত পরিসংখ্যান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শাওন ও ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একই বর্ষের ছাত্র অর্ণবকে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু গ্রুপের কর্মীরা। ওই ঘটনার প্রতিবাদ করতে রাত সাড়ে নয়টার দিকে ছাত্রলীগের শহীদুল্লাহ হলের সভাপতি মুন্না ও এফএইচ হলের সভাপতি মারুফ জামান কল্লোলের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হলে আক্রমণে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।