রানী নগরের সুদেব ও তার পরিবার দীর্ঘদিন একঘবে হিন্দু সমাজপতিদের দাপট।
নওগা: আবদুর রশীদ তারেক,
নওগার রানীনগর উপজেলার চামটা গ্রামের সুদেব (৪৫) দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু সমাজপতিদের দাপটে একঘরে হয়ে আছেন। তার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়েছে সমাজপতিরা। জমি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সেচ না দেয়ায় তার ফসল পুড়ে যাচ্ছে। সন্তানদের পড়াশোনাও বন্ধের পথে। সমাজপতিদের চাহিদা অনুসারে ২০ হাজার টকা চাদা দিয়েও সমাজে ফিরতে পারেননি সুখদেব। এ অবস্থায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে একঘড়র সুদেব এখন মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গরামের কথিত মান্দিরের ৮৯ শতাংশ খাস সম্পত্তি ১৫ বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছিলেন সুদেব। ফসলের বর্গা অংশ তিনি গ্রামের মান্দিরে দিতেন। ২০০৮ সালে ওই সম্পত্তি একটি ক্লাবের নামে লিজ দেয়ার প্রক্রিয়া শুর হলে তিনি ওই জমি নিজ নামে সনপত্তন নেন। এতে ক্ষিপ্ত হযে ওঠেন সমাজপতিরা। এ বিরোধের জের ধরে ছয় মাস আগে এক বৈঠক করে সুদেবকে সপরিবারে সমাজচ্যুত করা হয়। রায়ে উল্লেখ করা হয়, হিন্দু সমাজের কেউ সুদেব ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কোনরকম যোগাযোগ এবং কথাবার্তা বলতে পারবে না। এ আদেশ লঙ্গন কারলে তার এক হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। কোন পূজা-পার্বণ, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সুদেব এবং তার স্ত্রী-সন্তানরা যোগ দিতে পারবে না। ইতোমধ্যে সুদেবের ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র শুভকে প্রাইভেট পড়ানো থেকে বাদ দিয়েছে গ্রামের শিক্ষিকা অনিমা। এ ছাড়া সুদেবের সাথে কথাবার্তা বলার অভিযোগে সমাজের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে প্রবীণ শিক্ষক সুরেনকে। গত ষষ্ঠী পুজায় অংশ নিতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন সুদেবের স্ত্রী সীমা রানী। সুদেব জানান, তার শেষ সম্বল আড়াই বিঘা জমি সেচের অভাবে পুড়ে যাচেছ। তারা সেচ দিতে দিচ্ছে না। জমি থেকে জোর করে শ্যালো মেশিন তুলে নিয়ে গেছে। সমাজে ফেরার জন্য সমাজপতি প্রদীপ মৌলিককে ২০ হাজার টাকা চাদা দিয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন টালবাহানা করে শেষ পর্যন্ত আমাকে সমাজে তুলে নেয়নি তারা। এ প্রসঙ্গে তার ভাই জয়দেব (৩৫) জানান, সমাজপতিদের ভয়ে ভাইয়ের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতে পারছি না। সমাজপতি প্রদীপ বিশ্বাস জানান, সমাজের সিদ্ধান্ত না মানায় এবং সমাজকে সমীহ করে না চলায় তাকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা মো: জহিরুল ইসলাম খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।