গ্রুপ পর্বের রিভিউ দিয়ে শুরু করছি .......
স্পেন: আগের পোস্টে স্পেনের কথা বিশেষ করে বলেছিলাম। বলেছিলাম- এবার স্পেন যেরকম দল নিয়ে আফ্রিকা গিয়েছে- তাতে তাদের বিশ্বকাপ না জেতাটাই চরম অঘটন।
কিন্তু ১ম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের কাছে ১-০ গোলে হারার পরে অনেকে টিটকারি করে উঠেছিল, ভাবটা এমন - বিশ্বকাপ ফুটবলের মঞ্চটা কখনো স্পেনের জন্য ছিল না, এবারেও নেই। যাহোক পরবর্তী দুটো ম্যাচে স্পেন তার জাত চিনিয়ে ঠিকই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ২য় রাউন্ডে। যদিও আমার ধারণা- এখনও স্পেন তার আসল সমার্থ্যের পুরোটা ঢেলে দিতে পারেনি...
মূল অস্ত্র, কারিগর জাভি এখনো আসল চেহারায় আসেনি। ইনিয়েস্তা, রামোস ছাড়া বাকিদের এমনকি ডেভিড ভিয়ার আসল খেলা এখনও দেখিনি বলেই মনে হয়।
ইতালি/ ফ্রান্স: এদের ১ম রাউন্ডে বিদায়টা খুব স্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছে। চরম নড়বড়ে দুটো দল নিয়ে এরা এসেছিল- ফলাফল এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। যদিও ইতালী-স্লোভাকদের খেলার শেষ ১৫ মিনিটের খেলাটা এ পর্যন্ত এ বিশ্বকাপের শ্রেষ্ঠ। অসাধারণ টানটান খেলা খেলেছে দুদল শেষ ১৫ মিনিটে।
ইংল্যান্ড ইংল্যান্ড সবচেয়ে হতাশ করেছে। অন্য কয়েকবারের তুলনায় এবারের ইংল্যান্ডের দলটা কিছুটা শক্তপোক্ত মনে হচ্ছিল। কিন্তু, কেউই আশানুরূপ খেলতে পারছে না। এদের বেশীদূর এগুতে পারার কথা নয়।
জার্মানি: জার্মানির খেলা আমার কখনোই ভালো লাগে না, কিন্তু বিশ্বকাপের জার্মানিকে আলাদা গুরুত্ব দিতেই হয় সবসময়। এবারেও ১ম ম্যাচেই জার্মানি আবার সে কথা মনে করে দিয়েছিল। কিন্তু একইভাবে ২য় ম্যাচে সার্বিয়ার কাছে হেরে- হতাশ করেছিল। ঘানাকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই ২য় রাউন্ডে গেলেও- জার্মানি এবার খুব বড় কিছু করবে বলে মনে হচ্ছে না।
পর্তুগাল/ আইভরি কোস্ট: রোনালদো আর দ্রগবার জন্য এই দুটো দলের প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল। হাত-ভাঙ্গা দ্রগবা ছায়া হয়েই ছিল। রোনালদোর কিছু ঝলক দেখা গেলেও- পর্তুগালের খেলা তেমন আহামরি কিছু মনে হয় নি।
হল্যান্ড: হল্যান্ড নীরবে নিভৃতে ৯ পয়েন্ট নিয়ে ২য় রাউন্ডে গেলো। তারপরেও হল্যান্ডরে নিয়ে উচ্চকিত হওয়ার কিছু নেই- গ্রুপে সব কটাই দুর্বল দল ছিল।
আর্জেন্টিনা: আর্জেন্টিনার খেলা ভালো লেগেছে। মেসির খেলা দেখাটা খুবই দৃষ্টিসুখকর বিষয়। ফলে, আর্জেন্টিনার খেলা দেখাটাও আনন্দের বিষয়। আগের পোস্টে যেটা বলেছিলাম- ভেরনকে দিয়ে গোল বানানোর কাজ সম্ভব নয়- এ কাজটা মেসিকেই করতে হবে। মেসিকে সে ভূমিকাতেই দেখছি। ২য় ম্যাচের লাইন-আপটাই পারফেক্ট মনে হয়েছে। ভেরনের পরিবর্তে রদ্রিগেজ, পাস্তোর, মাচোরানোরাই মেসির যথার্থ সহযোগী হতে পারে। রক্ষণভাগকে খুব বড় পরীক্ষা দিতে না হলেও- বুঝা গেছে এটাতে ভালো সমস্যা আছে। সামনে খবর আছে।
ব্রাজিল: ব্রাজিলের ১ম ও ৩য় ম্যাচ হতাশ করলেও ২য় ম্যাচে বুঝা গেছে- ব্রাজিল কি জিনিস। ফরোয়ার্ডে সেরকম আহামরি খেলোয়াড় না থাকলেও- ব্রাজিল অসাধারণ কারণ টোটাল টিম ওয়ার্ক। ২য় ম্যাচটা দেখে মনে হয়েছে- একটা পুরো দল খেলছে। নিখুত পাসিং তো ছিলই, ডিফেন্সে লুসিও- আর সিজাররা থাকলে বিপক্ষ দলের আক্রমণ নিয়ে চিন্তার তেমন কিছু থাকেও না।
নক-আউট পর্ব: নকআউট পর্বের ফিকশ্চার দেখে মনে হলো, ব্রাজিল খুব ভাগ্যবান- আর আর্জেন্টিনার পোড়া কপাল। তবে এটাও ঠিক- ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মত কোন দলের ২য় রাউন্ডেই বিদায় নেয়াটা ভালো হতো না, তার তুলনায় সেমিফাইনালে বিদায় নেয়াটা অনেক ভালো।
বুঝতেই পারছেন- কি বলতে চাচ্ছি। ২য় রাউন্ডে স্পেনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না কাউকে। ব্রাজিল হবে ফাইনালে আর আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালে। তার আগে অবশ্য ব্রাজিলকে হল্যান্ড আর আর্জেন্টিনাকে জার্মানি বাঁধা পেরুতে হবে।
লাটিন ফুটবল নিয়ে দুটো কথা বলেই শেষ করি- ইউরোপের এক স্পেন ছাড়া এবার সেমিফাইনালের তিনটা দলই লাটিন আমেরিকার হতে যাচ্ছে বলে মনে হয়। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল-উরুগুয়ে। অনেকে ফিকশ্চারের দোষের কথা বলছেন (ঘানা- উরুগুয়ে-দ: কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র), কিন্তু আমার মনে হয় উরুগুয়ের এই দলটা ইংল্যান্ড- পর্তুগালের চেয়েও ভালো, অর্থাৎ ঘানা-কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের বদলে ইউরোপের এইসব কাগুজে বাঘরা থাকলেও তারা কিছু করতে পারতো বলে মনে হয় না। তবে, সেমি ফাইনালে ৭৫% লাটিন, ফাইনালে ১০০% হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম, এমনকি শেষ হাসিটাও এবার লাটিন নাও হাসতে পারে। কারণ ঐ স্পেন। তবে আপনারা স্পেনকে লাটিন হিসাবে ধরতে পারেন, কারণ সেতো কখনো ঐ ইউরোপের কুৎসিত ঘরানার ফুটবল খেলেনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১০ সকাল ১১:৪৬