আমাদের সমাজে যাদের মাঝে মানসিক অসুস্থতা রয়েছে , আমরা তাদের প্রায়ই বিদ্রুপের চোখে দেখি , তাদের অসহায়ত্ব নিয়ে পরিহাস করি । তবে এই পৃথিবীতে এমন কিছু বিখ্যাত ব্যাক্তি জন্মেছিলেন , যাদের মধ্যে মানসিক অসুস্থতার লক্ষন ছিলো । আজ সেইরকম কিছু মানুষের কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ।
জন ন্যাশঃ অর্থনীতিতে নোবেল প্রাপ্ত বিখ্যাত গণিতবিদ , A beautiful mind মুভির কারনে আমরা সকলেই কম বেশী তার কথা জানি । জন ন্যাশ সিজোফ্রেনিয়াতে আক্রান্ত ছিলেন , এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা অবাস্তব সব ঘটনা এবং চরিত্র পর্যবেক্ষন করে থাকে
আব্রাহাম লিঙ্কনঃ যুক্তরাস্ট্রের ১৬ তম প্রেসিডেন্ট , ভয়ংকর ভাবে হতাশায় ভুগতেন । রাতে ঘুমাতে পারতেন না , প্রায়ই কেঁদে উঠতেন , এবং তার মধ্যে তীব্র আত্মহত্যার প্রবণতা ছিলো ।
ভ্যানগগঃ এই বিখ্যাত শিল্পীর কথা আমরা সবাই জানি , যে কিনা নিজের কান কেটে প্রেমিকাকে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলো । ভ্যান গগ মৃগী রোগী ছিলেন , অতি উচ্চমাত্রার মদ্যপও ছিলেন , মাত্র ৩৭ বছর বয়সে এই বিখ্যাত শিল্পী আত্মহত্যা করেন।
ফ্রান্সের রাজা ষষ্ঠ চার্লসঃ রাজা ষষ্ঠ চার্লসকে অনেক সময় “charles the mad” নামেও ডাকা হতো , তিনি ১৩৮০ থেকে ১৪২২ পর্যন্ত ফ্রান্সের শাসক ছিলেন । তার প্রথম জীবনে পাগলামীর কোন চিহ্ন ছিলোনা , কিন্তু রাজা হবার বছর দশেক পর থেকেই তার মধ্যে অস্বাভাবিক আচরন পরিলক্ষিত হয় । যেমনঃ তিনি অধিকাংশ সময় নিজের নাম মনে রাখতে পারতেন না , স্ত্রী পুত্র সহ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের চিনতে পারতেন না । তার মনে ধারনা হয় যে সে কাচের তৈরী , গোসল করা ও পোশাক পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও তার ছিলো তীব্র অনীহা।
আর্নেস্ট হেমিংওয়েঃ নোবেল জয়ী সাহিত্যিক । The old man and the sea , a farewell to arms সহ অনেক বিখ্যাত গ্রন্থের রচয়িতা। তীব্রভাবে হতাশায় ভুগতেন এবং শেষ জীবনে আত্মহত্যা করেন । যদিও তার মানসিক রোগের কারন অনেকটা জিনগত , কারন তার পরিবার এবং পূর্বপুরুষদের অনেকেই আত্মহত্যা করেছিলেন ।
বেটোভেনঃ বিখ্যাত কম্পোসার । কথিত আছে ছোটবেলায় সে তার বাবা প্রায়ই তাকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করতো । এর কারনে সে তার শ্রবন শক্তিও হারিয়েছিলেন । সে প্রায়ই মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যাক্তির মত আচরন করতেন , এবং তীব্র হতাশায় ভুগতেন । তবে মজার ব্যাপার হলো তার সৃষ্টি কর্মের বেশীর ভাগ কাজই তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় করেছিলেন । এবং তিনি নিজের তার এই মানসিক অসুস্থতার কথা বুঝতে পেরেছিলেন , এবং নিজেই সেটার চিকিৎসা করেছিলেন ।
আইজাক নিউটন: আধুনিক পদার্থ বিদ্যার অন্যতম পথিকৃৎ , তার মধ্যেও মানসিক রোগের অনেক লক্ষণ বিদ্যমান ছিলো , যেমনঃ সে প্রায়ই খুব উত্তেজিত হয়ে যেতেন , আবার কখনো কখনো মারাত্মক ভাবে নার্ভাস হয়ে যেতেন । কেউ যদি তার মতের সাথে একমত না হতেন তবে তিনি ভীষণভাবে ক্রুদ্ধ হতেন ।
উইনস্টন চার্চিল: সাহিত্যে নোবেলজয়ী রাজনীতিবিদ ,২য় মহাযুদ্ধের অন্যতম মহারথী । যদিও তার মধ্যে মানসিক অসুস্থতার কোন প্রকাশ্য লক্ষণ ছিলোনা , তবে তিনি ভয়ংকর রকম বিষন্নতায় ভুগতেন এবং তার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ছিলো , বেটোভেনের মত তিনি নিজেই নিজের রোগ বুঝতে পেরেছিলেন এবং নিজেই নিজের চিকিৎসা করতেন অ্যালকোহলের মাধ্যমে !!
তাই এখন থেকে সাবধান , আজ যার মানসিক অসুস্থতা নিয়ে হাসাহাসি করছেন , হয়তো ভবিষ্যতে আপনিই আবার তার গুনমুগ্ধ হবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৫৮