এক গ্রামে এক দরিদ্র দম্পতি বসবাস করতো , যাদের শুধু একটি পুত্র সন্তান ছিলো নাম ইভানুস্কা । ইভানুস্কার তেমন কোন যোগ্যতা ছিলোনা , তবে সে চমৎকার বাশি বাজাতে পারতো , কথিত আছে তার বাশির সুর যে একবার শুনেছে সে আর ভুলতে পারে নাই , ইভানুস্কা বাশির সুরের সাহায্যে একই সাথে মানুষকে কাদাতে আর হাসাতে পারতো ।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় একটু বড় হওয়ার সাথে সাথে তাকে কাজের সন্ধানে ঘর ছাড়তে হলো ।
সে তার নিজ গ্রাম থেকে , অনেক দূরে চলে আসলো , কিন্তু কেউ তাকে কোন কাজ দিতে চাইছিলোনা , অবশেষে একজন তাকে মেষপালকের কাজ দিতে চাইলো , তবে শর্ত ছিলো ইভানুস্কা যদি ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে , তবে তাকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুন অর্থ দেয়া হবে , আর যদি না পারে তাকে কোন টাকা দেয়া হবেনা । ইভানুস্কা এই শর্তে রাজী হলো ।
নিয়ম অনুযায়ী সে প্রতিদিন সকালে ভেড়ার পাল নিয়ে জঙ্গলে চলে যেতো , এবং বিকেলে ফিরে আসতো । প্রতিদিন ভেড়ার মালিক ভেড়াগুলো গুনে গোয়ালে পাঠাতো , এভাবেই প্রায় মাস শেষ হয়ে আসতে লাগলো ।
তখন ইভানুস্কার মালিক খুব চিন্তায় পরে গেলো , যে কিভাবে ইভানুস্কা সব গুলো ভেড়াকে অক্ষত রাখছে , এর আগে প্রতিদিনই একটা বা দুইটা ভেরা নেকড়ের পেটে যেত , কিন্তু ইভানুস্কার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সবগুলো ভেড়া অক্ষত রয়েছে । মালিক চিন্তায় পরে গেলো কারন ইভানুস্কা যদি তার কাজ সঠিক ভাবে সম্পাদন করে , তবে তাকে দ্বিগুন অর্থ দিতে হবে ।
কিভাবে ইভানুস্কা এই কাজটি করছে ,সেটা জানার জন্য মালিক উদগ্রীব হয়ে যেতে লাগলো ।
তাই সে একদিন বুদ্ধি করে , ভেড়ার লোমের পোশাক পড়ে , ভেড়ার মত চতুস্পদী প্রানীর রূপধারন করলো , এবং ভেড়ার পালের সাথে মিশে ইভানুস্কার পিছে পিছে যেতে শুরু করলো ।
মালিক খেয়াল করলো ,যখনই ভেড়াগুলো গভীর জঙ্গলের দিকে যেতে শুরু করে , তখনই ইভানুস্কা বাঁশি বাজাতে শুরু করে , এবং ভেড়া গুলো তার কাছে এসে পরে , একটা সময় ইভানুস্কা বাশিতে এমন এক সুর তুললো , যে ভেড়াগুলো সব নাচতে শুরু করলো , এমনকি ভেড়ার ছদ্মবেশী মালিকও !!
নাচতে নাচতে এক পর্যায়ে মালিক ক্লান্ত হয়ে পরলো , কিন্তু সে থামাতে পারছিলোনা । এই অবস্থায় সে চিৎকার করতে লাগলো , তখন ইভানুস্কা বাঁশি থামিয়ে মালিকের কাছে ছুটে গেলো , এবং বললো "জনাব , আপনি এখানে কি করছেন , আর কেনোই বা ভেড়ার লোমের পোশাক পড়েছেন?" জবাবে মালিক বললো "আসলে খুব ঠান্ডা তো তাই এই পোশাক "। অবশেষ নাচতে নাচতে ক্লান্ত মালিক যখন তার বাসায় এসে এই কথা তার স্ত্রীকে বললো , স্ত্রী কোন অবস্থাতেই সেটা বিশ্বাস করলো না, এমন অবস্থায় স্বামী স্ত্রী দু জনে মিলে ফন্দী করলো কিভাবে ইভানুস্কাকে টাকা না দেয়া যায় । তাই মালিকের স্ত্রী , মালিককে ছাদের উপর একটা বদ্ধ ঘরে রেখে দিলো , এবং ইভানুস্কাকে ডেকে বললো , তুমি যদি বাশির মাধ্যমে আমাদের দুজনকে নাচাতে পারো , তবেই কেবল তুমি টাকা পাবে ।
তখন ইভানুস্কা বাঁশি বাজাতে শুরু করলো , মালিকের স্ত্রী অন্য চেস্টা সত্ত্বেও নিজেকে থামাতে পারলোনা , এমনকি বাশির সুরের মোহে তার স্বামীও বদ্ধ দরজা ভেঙ্গে চলে আসলো , তারপর দুজনে নাচতে শুরু করলো । ইভানুস্কা বাঁশি বাজাতে বাজাতে ঘরের বাইরে চলে যেতে শুরু করলো , তখন মালিক ও তার স্ত্রী বললো দয়াকরে তোমার বাঁশি থামায় ,গ্রামের অন্য মানুষরা যদি এভাবে আমাদের নাচতে দেখে তাহলে আমাদের কোন মানসন্মান থাকবে না ,ইভানুস্কা শুনলোনা সে বাঁশি বাজাতে বাজতে গ্রাম দিয়ে ঘরে বেড়াতো লাগলো ,আর মানুষজন সেই দম্পতিকে থেকে হাসতে শুরু করলো ।
এর পরেরদিন সকালে , সেই দম্পতি ইভানুস্কাকে তার প্রাপ্য টাকা বুঝিয়ে দেয় , কিন্তু লজ্জায় তারা আর কোনদিন জনসম্মুখে আসতে পারেনা ।
(গল্পের বেশীর ভাগ স্থানে বাঁশি বানান ভুল আছে , আমি অভ্রতে চন্দ্রবিন্দু দিতে জানিনা )
রিলেটেড পোস্টঃ
রূপকথার গল্প: বৃদ্ধার বুদ্ধিমত্তা
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৫৮