ছোটবেলা থেকেই হারকিউলিস ছিলো বেশ শক্তিশালী , তার বাল্যকালের একমাত্র বন্ধু ছিলো পাখাওয়ালা ঘোড়া পেগাসাস।
সকল দেবতা হারকিউলিসকে খুব পছন্দ করতো , শুধু ব্যাতিক্রম ছিলো জিউসের ভাই হেডস । হেডস জিউসকে ঘৃণা করতো । হেডস জিউসের মত অলিম্পিয়াসের রাজা হতে চেয়েছিলো , অলিম্পিয়াসের রাজা হওয়ার জন্য হেডস তিন ভাগ্যদেবীর (ক্লোতো , ল্যাচেসিস ,এট্রোপোস) সাহায্য চায় ,
সেই তিন ভাগ্যদেবী যারা কিনা অতীত ,বর্তমান এবং ভবিষ্যত জানতেন। কিন্তু ভাগ্যদেবীরা তাকে জানায় ১৮ বছর পরে , টাইটান নামক এক দৈত্য দ্বারা জিউসকে হত্যা করা গেলেও , হারকিউলিস সেই দৈত্যকে হত্যা করবে ।
এর পর হেডস বিকল্প ভাবতে লাগলেন , হেডস হারকিউলিসকে হত্যার জন্য একধরনের বিষ তৈরী করেন , কিন্তু তিনি হারকিউলিসকে সেই বিষ সম্পূর্নরূপে পান করাতে ব্যার্থ্য হন ।
পরবর্তীতে হারকিউলিস , তার পালিত পিতা মাতার (আনফিট্রাইয়ন ও আলকেমিন) কাছে বড় হন।
ছোটবেলা থেকে হারকিউলিস মোটামুটি নিঃসঙ্গ ছিলো , এবং তার শক্তি ছিলো তার অন্যতম সমস্যা , সে যা কিছুই ছুয়ে দেখার চেস্টা করতো সেটাই ভেঙ্গে যেত
হারকিউলেস একাকীত্ব এবং অন্যান্য সমস্যা তার পালিত মা বাবা বুঝতে পারে , এবং তাকে সত্য বলে দেয় , তাকে বোঝানো হয় সে দেবতার ঘরে জন্ম নেওয়া এজন্যই সে অন্যদের থেকে ভিন্ন রকম ।
হারকিউলিস তার জন্মের রহস্য উন্মোচনের জন্য সে জিউসের মন্দিরে যায় , এবং সেখানে গিয়ে সে অবাক হয় যখন সে দেখতে পায় জিউসের এবং হেরার মূর্তি জীবিত হয়ে গেছে । এবং জিউস এবং হেরা স্বীকার করে যে তারাই তার আসল পিতামাতা।
হারকিউলিস , তার আসল পিতামাতার কাছে থেকে যেতে চায় , কিন্তু জিউস তাকে বলে “এখানে শুধু দেবতারাই থাকতে পারবে , তুমি যদি কোনদিন নিজেকে এই পৃথিবীর সত্যিকারের বীরে পরিনত করতে পারো , তবেই তুমি এখানে থাকতে পারবে” ।
হারকিউলিস নিজেকে সত্যিকারের বীরে পরিনত করার জন্য তার বাবার কথা অনুযায়ী , বীর তৈরীর শিক্ষক ফিলোকটেসের কাছে যায় ,তার কাছে দীক্ষিত হবার পর জীবনের প্রথম পরীক্ষার জন্য থেবসের দিকে রওনা হয় ।
পথিমধ্যে সে দেখতে পায় অর্ধমানব এবং অর্ধ ঘোড়ার সংমিশ্রনে এক দৈত্য একটি সুন্দরী মেয়ে আক্রমন করছে ।
হারকিউলিস , ঐ দৈত্যটা বধ করে মেয়েটিকে উদ্ধার করে । মেয়েটির নাম ছিলো মেগার । হারকিউলিস মেয়েটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমে পড়ে যায় ।
এদিকে হেডস (জিউসের ভাই ), হারকিউলিসকে হত্যা করার জন্য একের পর এক দানব পাঠাতে থাকে । হারকিউলিস সবগুলিকে পরাজিত করে , পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী বীরে পরিনত হয় ।
কিন্তু তারপরও সমস্যা থেকে যায় , হারকিউলিস অমরত্ব পায়না , পারেনা অলিম্পিয়াসে গিয়ে তার পিতা মাতার সাথে থাকতে । হারকিউলিস তার পিতাকে জিজ্ঞেস করে , সে এত দৈত্য বধ করার পরেও কেনো অমরতে পাচ্ছেনা জিউস তাকে বলে তুমি যত সাহসী হও না কেনো যতদিন তোমার হৃদয়ে কোন দুর্বলতা থাকবে ,ততদিন তুমি অমরত্ব পাবেনা ।
হারকিউলিস খুজতে থাকে তার আসল দুর্বলতা কোথায় , অবশেষে হারকিউলিস বুঝতে পারে তার একমাত্র দুর্বলতা মেগারা ।
হেডস এই কথা জেনে যায় , এবং বুদ্ধি করে মেগারাকে বন্দী করে ।
অবশেষে মেগারাকে মুক্ত করার জন্য হারকিউলিস একদিনের জন্য তার শক্তি সমর্পন করতে রাজী হয় । এইসময় হেডস সাইক্লোপস নামক এক চোখা দৈত্যকে পাঠায় হারকিউলিসকে হত্যা করার জন্য ,
কিন্তু হারকিউলিস ফিলোকটেসের সহায়তায় সাইক্লোপসকে হত্যা করে , কিন্তু সাইক্লোপ্সের যুদ্ধের সময় মেগারা আহত হয় । ফলে হেডসের সাথে চুক্তি অনুযায়ী হারকিউলিস তার শক্তি ফিরে পায় , কারন শর্ত ছিলো মেগারাকে সম্পূর্ন অক্ষত অবস্থায় ফেরত দিতে হবে।
এদিকে হেডস টাইটান নামক এক দৈত্যকে অলিম্পিয়াসে পাঠায় , দেবতা জিউসকে হত্যা করার জন্য। হারকিউলিস আহত মেগারাকে ফিলোকটেসের কাছে রেখে ,জিউসকে রক্ষা করতে চায় । হারকিউলিস কোন অস্ত্র ছাড়াই টাইটানকে হত্যা করে , তার পিতাকে রক্ষা করে ।
যখন হেডস দেখলো , তার কোন পরিকল্পনা কাজে আসছে না , তখন সে হারকিউলিসকে বললো , মেগারা মারা গেছে , এই কথা শুনে হারকিউলিস ভেঙ্গে পড়ে এবং সেই সাথে মেগারার সাথে সহমরনের ইচ্ছা জানায় এবং একই সাথে মেগারার আত্মা যেখানে থাকবে সেখানে যেন তার আত্মা রাখা হয় সেই দাবী জানায় ।
অবশেষে , ভালোবাসার জন্য এই আত্মাহুতির ইচ্ছার জন্য হারকিউলিস দেবতাদের কাছে সত্যিকারের বীরের মর্যাদা পায়, এবং হারকিউলিস এবং মেগারা অমর হয়ে দুজনে একসাথে পৃথিবীতে বসবাস করতে লাগলো ।
**********************************
গ্রীক ট্রাজেডীঃ ইকারুসের ডানা
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:০৩