somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দেয়া কিছু বিপ্লব (৩য় পর্ব)

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্ব
২য় পর্ব

অধিকার আদায়ের জন্য বিপ্লবের কোন বিকপ্ল নেই , ইতিহাস আমাদের বার বার এই শিক্ষাই দিয়ে আসছে । মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য যেসব বৈপ্লবিক ঘটনা ইতিহাসের পাতায় ঠাই পেয়েছে , সেইরকম কিছু বিপ্লবের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করবো । এর আগের দুটি পর্বে বেশ কিছু বিপ্লবের কথা শেয়ার করেছিলাম , আজ আপনাদের সাথে অক্টোবর বিপ্লব এবং তুর্কী বিপ্লবের কথা শেয়ার করবো


অক্টোবর বিপ্লবঃ


পৃথিবীর ইতিহাসে অক্টোবর বিপ্লব এক ঐতিহাসিক স্থান দখল , এই বিপ্লবটি ছিলো এক নতুন দর্শনের সূচনা । যুগে যুগে বঞ্চিত ,শোষিত শ্রমিক শ্রেনীর পুঞ্জীভূত ক্ষোভের উত্থান সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে , প্রতিটি মানুষের সম অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখায় এই অক্টোবর বা বলশেভিক বিপ্লব।
এই মহান বিপ্লবের নেতৃত্বে ছিলেন কমরেড লেনিন,ট্রটস্কি প্রমুখ মহারথীরা। এই অক্টোবর বিপ্লব ছিলো মূলত রাশিয়ান বিপ্লবের ২য় ধাপ । (১ম ধাপ যেটা কিনা ইতিহাসে ফেব্রুয়ারী বিপ্লব নামে পরিচিত)।
এই বিপ্লবটি মূলত ১৯১৭ নভেম্বর মাসের ৭ তারিখে সংঘঠিত হলেও ,তৎকালীন রাশিয়ান পুরাতন জুলিয়ান ক্যালেন্ডার প্রচলিত থাকার কারনে বিপ্লবের সময়কাল হয় অক্টোবরের ২৫ তারিখ।
এই বিপ্লবের পিছনে অনেকগুলো কারন চিহ্নিত করা যায়
১। প্রথম কারন হিসেবে ধরা যায় রাশিয়ার সামগ্রিক অর্থনীতি বেহাল দশা , ১৯১৭ সালের দিকে রাশিয়ার মোট উৎপাদন প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ কমে যায়।
২। দেশে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি।
৩। ১৯১৩ সালের তুলনায় ১৯১৭ সালে এসে শ্রমিকদের বেতন প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়।
৪। রাশিয়ার মোট দেনার পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ৫০ বিলিয়ন রুবল।

৫। শ্রমিক এবং কৃষকদের দৈন্য চরম অবস্থায় পৌছায় , অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষক ভূমির মালিকদের দ্বারা নির্যাতিত হন।
উপরের কারনগুলোর কারনেই মূলত মানুষ বিশেষত শ্রমিক শ্রেনীর মধ্যে বিপ্লবের দানা বাধতে শুরু করে।


ট্রটস্কি এবং লেনিন একসাথে
ঘটনাপ্রবাহঃ
১০ ই অক্টোবর লেনিনের নেতৃত্বাধীন বলশেভিকদের কেন্দ্রীয় কমিটি , অস্থায়ী সরকারের বিরুদ্ধে একটি সশস্ত্র সংগ্রামের পরিকল্পনা গৃহীত হয়।
২৩শে অক্টোবর বলশেভিক নেতা জ্যান আনভেল্টের নেতৃত্বে বামপন্থী বিপ্লবীরা এস্তোনিয়ার রাজধানীতে বিক্ষোভ শুরু করে , তার দুই দিন পরে ২৫ শে অক্টোবর লেনিনের নেতৃত্বে বিপ্লবী রেড গার্ডস পেত্রোগার্দ (বর্তমান সেন্ট পিটার্সবার্গে) বিক্ষোভ শুরু করে , ঠিক ৯:৪৫ এ যুদ্ধ জাহাজ অরোরা থেকে একটা ফাকা শেল নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে বিপ্লবের শুরু হয়


(বিপ্লবের নিদর্শন হিসেবে যুদ্ধ জাহাজ অরোরা আজও সেই স্থানে দাঁড়িয়ে আছে)
অল্প কিছুক্ষনের মাধ্যমে তারা পেত্রোগার্দের গুরুত্বপূর্ন অফিস স্থাপনার দখল নিয়ে ফেলে , এবং উইন্টার প্যালেসের (অস্থায়ী সরকার প্রধানের বাসভবন) দিকে অগ্রসর হয় । এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পতন হয় উইন্টার প্যালেসের। জয় হয় বিপ্লবীদের। প্রতিষ্ঠিত হয় শ্রমিকদের শাসন।প্রতিষ্ঠিত হয় সমতা। এরপর এগিয়ে যেতে থাকে সোভিয়েত রাশিয়া , ক্রমেই হয়ে ওঠা বিশ্বের পরাশক্তি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধেও এই পরাশক্তির অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন । বিপ্লব সর্বশেষে সফল কিনা তা অনেক বিতর্ক আছে , কিন্তু বিপ্লব যে স্বপ্ন তা দেখিয়েছে তা বেচে থাকবে চিরকাল।তাই আজও নিপীরিত মানুষ স্বপ্ন দেখে এই বিপ্লবের কথা মনে করে আর গর্জে উঠে "দুনিয়ার মজদুর এক হয়"।


তরুন তুর্কী বিপ্লবঃ



জনগনের নিজস্ব ইচ্ছা ,চিন্তা চেতনার প্রতিফলনের জন্য গনতন্ত্রের কোন বিকল্প নেই । কিন্তু যুগে যুগে এই গনতন্ত্র ভুলন্ঠিত হয়েছে কিছু স্বৈরাচারী শাসকের দ্বারা , আবার সেই গনতন্ত্র পুনরূদ্ধার হয় কিছু সাহসী মানুষের সময়োপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে, অথবা হাজারো মানুষের রক্তের বিনিময়ে।
ঠিক এইরকম একটি সাহসী পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে , তুরস্কে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ,ইতিহাসের পাতায় যার নাম তরুন তুর্কী বিপ্লব।
এই বিপ্লবের মাধ্যমে ১৯০৮ সালে তুরস্কে নতুন করে সাংবিধানিক যুগ শুরু হয় , এবং সংসদের কার্যক্রম শুরু হয় , যা কিনা ১৮৭৮ সালে সুলতান আব্দুল হামিদ ২য় দ্বারা স্থগিত হয়েছিলো।
এই বিপ্লবের কারন হিসেবে অনেকগুলো ঘটনাকে চিহ্নিত করা যায়
১। সুলতান আব্দুল হামিদ ২য় এর শাসন আমলে তার প্রনীত সংবিধান প্রতিক্রিয়াশীলদের দ্বারা অনেক সমালোচিত হয় ,যা পরবর্তীতে দেশ জুড়ে নৈরাজ্য এবং সহিংসতার সৃস্টি করে।
২। ইউরোপের বড় শক্তিগুলো আব্দুল হামিদকে পছন্দ করতোনা।
৩। তার শাসন আমলে রুমানিয়া ,বুলগেরিয়া ,সার্বিয়া তুর্কী সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
৪। সুলতান আব্দুল হামিদের সেচ্ছাচারীতা এবং তার প্রশাসনিক ব্যবস্থার ভুলের কারনে জনমনে বিপ্লবের দানা বাধতে শুরু করে।
তুরস্কে গনতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দলোনের পিছনে তরুন তুর্কী (Young Turk ) নামে একটি সংগঠনের ভূমিকা সবথেকে বেশী গুরুত্বপূর্ন । এই তরুন তুর্কীরা তাদের রাস্ট্রের এই অধপতন কোন ক্রমেই মেনে নিতে পারছিলোনা। তারা চেয়েছিলো সবকিছুর শান্তিপূর্ন সমাধান ,কিন্তু সুলতানের সেচ্চাচারীতার কারনে তা আর সম্ভব হয়নি । তাই তারা ভিন্নপথে এগোতে বাধ্য হয় ।
এই তরুন তুর্কীদের নেতা ছিলো কামাল পাশা ।


কামাল পাশার নেতৃত্বে তারা একটি বিপ্লবের প্রস্তুতি নেয় ,তার সাথে ছিলো । কিন্তু তারা কিছুতেই প্রকাশ্যে এগোতে পারছিলোনা, সুলতানের দমন নীতির সামনে তারা অসহায় হয়ে পড়ছিলো। অবশেষে তারা বিপ্লবের জন্য তুরস্কের ৩য় আর্মীকে নির্বাচিত করে। অবশেষে জুলাইয়ের ৩ তারিখ ৩য় আর্মীর সৈন্যরা মেসিডোনিয়া থেকে বিদ্রোহ ঘোষনা করে , বিদ্রোহী সেনাদের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর আহমেদ নিয়াজী ।
যদিও সুলতান এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চেস্টা করেছিলো কিন্তু এই বিদ্রোহের জনপ্রিয়তার কারনে তা সম্ভব হয়নি।


অবশেষে সুলতান আহমেদ আত্মসমর্পনে বাধ্য হয় এবং ২৪ শে জুলাই সংসদ পুর্নবহাল হয় । কামাল পাশা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
এই কামাল পাশা কে নিয়ে আমাদের জাতীয় কবি এবং আমার প্রিয় কবি একটি কবিতাও লিখেছিলেন
ঐ ক্ষেপেছে পাগলী মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই
অসুর –পুরে শোর উঠেছে জোরসে সামাল সামাল তাই
কামাল তুনে কামাল,কিয়া ভাই


এমনকি এই কামাল পাশার নামে আমাদের দেশে একটি সড়কও আছে । অনেক বছর আগে তুর্কী রাস্ট্রদূত বলেছিলেন নজরুলের নামেও তুরস্কে একটি সড়কের নামকরন করা হবে , জানিনা সে তার কথা রেখেছে কি না?

রেফারেন্সঃ

Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link

আরও অনেক


আজ আমি বিপ্লবের কথা লিখছি , হয়তো ভবিষ্যতে আরও অনেকেই লিখবে , তাদের লেখায় হয়তো এক পার্শ্ববর্তী রাস্ট্রের অন্যায় আচরনের বিরুদ্ধে এক কী বোর্ড বিপ্লবের কথাও লেখা থাকবে
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:০৭
২৫টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×