somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দেয়া কিছু বিপ্লব (২য় পর্ব)

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১ম পর্ব

বিপ্লব ছাড়া কোনদিন অধিকার আদায় করা যায়না , পৃথিবীর ইতিহাস তাই বলে । এর আগের পর্বে আমার দৃস্টিকোন থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ন বিপ্লবের কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম , আজ সেইরকম আরও কিছু ঐতিহাসিক বিপ্লবের কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।


ফরাসী বিপ্লবঃ


শিল্পীর তুলিতে ফরাসী বিপ্লব


মানব সভ্যতার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা , আমার দৃস্টিকোন থেকে এই বিপ্লব শুধু ফ্রান্সের না , সারা বিশ্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন ঘটনা । এই বিপ্লব স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের পতন , নির্যতিত মানুষের অধিকার আদায়ের এক রক্তাক্ত দলিল ।

ফরাসী বিপ্লব ছিলো তদানিন্তন ফ্রান্সের শত শত বছর ধরে নির্যাতিত ও বঞ্চিত 'থার্ড স্টেট' বা সাধারণ মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ । এই বিপ্লবের পূর্ব সমগ্র ফ্রান্সের ৯৫ ভাগ সম্পত্তির মালিক ছিলো মাত্র ৫ ভাগ মানুষ , অথচ সেই ৫ ভাগ মানুষও কোন আয়কর দিতোনা । অথচ যারা আয়কর দিতো তারা তেমন কোন সুযোগ ভোগ করতে পারতোনা , এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করতো তাদেরকে এনে বাস্তিল দুর্গে (বাস্তিল দুর্গ ছিলো স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের প্রতীকবিশেষ ) নির্যাতন করা হতো ।

পূর্ববর্তী রাজাদের যুদ্ধনীতি ও বিলাস ব্যসনের কারণে ষোড়শ লুই-এর আমলে মারাত্মক আর্থিক সঙ্কট দেখা দেয়। কর বৃদ্ধি করা ছাড়া আর্থিক সংস্থানের কোন বিকল্প ছিল না। সমস্যা সমাধানের জন্য রাজা অর্থ সচিব নেকারের পরামর্শ চান। নেকার স্টেট জেনারেলের বৈঠক না ডেকে কর বৃদ্ধি করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন। অথচ ১৭৫ বছর ধরে স্টেট জেনারেলের অধিবেশন হয় না। নিরুপায় রাজা প্রস্তাবে সম্মত হন। কিন্তু থার্ড স্টেট-এর নেতৃবৃন্দ সুযোগ বুঝে দাবি উত্থাপন করেন যে, নির্বাচনের আগে তাদের সদস্য সংখ্যা অভিজাত ও যাজক সম্প্রদায়ের মোট সংখ্যার (৩০০+৩০০=৬০০) সমান করতে হবে। রাজা ১৭৮৮-এর ডিসেম্বরে দাবি মেনে নেন। নির্বাচনের আগেই সিদ্ধান্ত হয় যে, ১৭৮৯ সালের ৫ মে নবনির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে স্টেট জেনারেলের অধিবেশন বসবে। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফলাফলে দেখা যায় যে, অভিজাত ও যাজকদের মোট নির্বাচিত সদস্যের সংখ্যা হয় ৫৬১টি। অপরদিকে থার্ড স্টেট বা তৃতীয় সম্প্রদায় একাই লাভ করে ৫৭৮টি আসন। বিভিন্ন কারণে তিন ক্যাটাগরি থেকে সর্বমোট ৬১টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। নির্বাচনের মাধ্যমে তৃতীয় শ্রেণীর প্রাধান্য স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয়। কিন্তু রাজা তৃতীয় সম্প্রদায় ছাড়াই অধিবেশনে বসেন এবং কর প্রস্তাব দেন। তৃতীয় শ্রেণীর সদস্যরা সভাকক্ষে ঢুকতে না পেরে অপমানিত বোধ করেন। ১৭ জুন তারা নিজেদেরকে সমগ্র জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি বলে ঘোষণা দেন।
২০শে জুন ৩য় স্টেটের প্রতিনিধিরা সভাস্থলের পাশে একটি টেনিস কোর্টে এক বৈঠকে মিলিত হন , যাতে যাজক এবং অভিজাত সম্প্রদায়ের বেশ কিছু সদস্য যোগ দেন , এবং তারা একই সাথে শপথ নেন যে যতদিন ফ্রান্সের জন্য তাঁরা একটি সংবিধান রচনা সম্পন্ন না করতে পারবেন ততদিন তাঁরা একত্রে থাকবেন। এই শপথ নামা টেনিস কোর্টের শপথ নামে পরিচিত।
২৩ শে জুন রাজা ঘোষণা দেন যে ,তারা ৩য় শ্রেণীর দাবী মেনে নেয়া যাবেনা , এবং ৩য় শ্রেণীর প্রতিনিধিদের রাজপথ থেকে সরে যেতে বলেন, জবাবে প্রতিনিধিরা রাজদূতকে বলেন , বেয়োনেট দিয়ে না খুঁচিয়ে আমাদেরকে সরানো যাবে না। অপর দিকে রাজা যেই নেকারের (অর্থ সচিব)পরামর্শে নির্বাচনের ডাক দিয়েছিলেন , তিনি তাকে পদচ্যুত করেন । এতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয় । এবং রাজা প্রায় ২০ হাজারের মত সৈন্য প্যারিসের রাস্তায় মোতায়েন করে । এবং প্রচুর অস্ত্র এবং গোলাবারুদ বাস্তিল দুর্গে জমা করা হয়।
১৩ই জুলাই হাজার হাজার মানুষ প্যারিসের পৌর ভবনের সামনে জড় হন , এবং একটি রক্ষীবাহিনী গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয় । খুব সল্প সময়ের মধ্যে রক্ষীবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১২ হাজারে উন্নতি হয়।
১৪ তারিখ নির্বাচিত প্রতিনিধি , রক্ষীবাহিনীর সদস্য এবং বাস্তিল দুর্গের আশেপাশের মানুষ বাস্তিল অভিমুখে রওনা হয় । প্রতিনিধিরা রক্তক্ষয় এড়াতে বাস্তিল দুর্গের প্রধান দ্য লোনের কাছে আলোচনার প্রস্তাব দেন। লক্ষ্য ছিলো বাস্তিলে অবস্থিত ৭ জন রাজবন্দীকে মুক্ত করা এবং বাস্তিলে রক্ষিত অস্ত্রসমূহ জনগনের হাতে তুলে দেয়া এবং কামানগুলো অন্যদিকে সরিয়ে নেয়া কিন্তু দ্য লোন প্রস্তাবগুলো ফিরিয়ে দেয় । জনতা উত্তেজিত হয়ে পড়ে , জনতার ঢেউ আছড়ে পরে বাস্তিল দুর্গে , বাস্তিলের রক্ষীরাও কামান দাগাতে শুরু করে ,প্রায় দুইশত বিপ্লবী জনতা হতাহত হয়। এরপর চারিদিক থেকে উত্তেজিত ক্ষুব্ধ জনতা বাস্তিল ধ্বংস করে।

বাস্তিলের পতন
পতন হয় স্বৈরাচারী শাসকের , ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয় শোষিত ,নির্যাতিত মানুষের জয়ের নতুন এক উপাখ্যান যার নাম “ফরাসী বিপ্লব”

আমেরিকান বিপ্লব:


শিল্পীর তুলিতে আমেরিকান বিপ্লব
আজকের বিশ্বের পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রও একদিন ব্রিটিশ উপনিবেশের অন্তর্গত ছিলো । অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে উত্তর আমেরিকার ১৩ টি প্রদেশ এক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে United Stated of America গঠন করে , ইতিহাসের পাতায় যেটি আমেরিকান বিপ্লব নামে পরিচিত ।

প্রথমে ঐ ১৩ টি প্রদেশের জনগণ বিদেশী শাসকদের প্রত্যাখ্যান করে , এবং সমস্ত ব্রিটিশ কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিতাড়িত করে এই বিপ্লবের সূচনা করে।
যদিও তারা ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের বিতাড়িত করতে পেরেছিলো , তবুও আমেরিকানরা পুরোপুরি ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত ছিলোনা । ১৭৭৪ সালের দিকে ঐ ১৩টি প্রদেশের প্রতিটি প্রদেশ নিজস্ব সরকার গঠন করলেও , তারা ছিলো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ব্রিটিশরা এই আমেরিকানদের এই নিজস্ব প্রাদেশিক সরকার মেনে নিতে চাইছিলোনা । তাই ১৭৭৫ সালের দিকে ব্রিটিশরা সরাসরি শাসন ব্যবস্থা পুনঃবহালের জন্য একটি প্রদেশে সৈন্য প্রেরন করে । তখন অন্যান্য আমেরিকান প্রদেশ একত্রিত হয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে নামে ইতিহাসে যেটা American Revolutionary War নামে পরিচিত । ১৭৭৬ সালে তারা ব্রিটিশ বন্ধন ছিন্ন করে স্বাধীনতা ঘোষণা করে ।

ফিলাডেলফিয়ার কংগ্রেসে স্বাধীনতার ঘোষনা

এই যুদ্ধ ১৭৭৮ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত চলে এবং আমেরিকার জয় দিয়ে শেষ হয় ।
একদিন তারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো , অথচ আজ তারাই পৃথিবীর সুপার পাওয়ার , এমনকি পূর্বে ব্রিটিশ উপনিবেশের অংশ সত্ত্বেও তারা আজ কমনওলেথ ভুক্ত নয়। আমরাও একদিন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম , অথচ আমরা.........

৩য় পর্ব
রেফারেন্স
http://en.wikipedia.org/wiki/French_Revolution
Click This Link
আরও অনেক
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:০৬
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×