আমাদের এই বিশ্ব ঠিক বর্তমানে যেরকম আছে , পূর্বে ঠিক এরকম ছিলোনা । আবার বর্তমানে যেরকম আছে ভবিষ্যতেও এরকম থাকবেনা। এই পরিবর্তন কখনো হয় খুব ধীরে ধীরে মানুষের নিজের অজান্তেই আবার কখনো কোন পরিবর্তন সাধিত হয় মানুষের নিজ ইচ্ছায় , অনেক সংগ্রাম ত্যাগ তিতিক্ষার পর। আজ সেইরকম কিছু যুগান্তকারী বিপ্লবের কথা শেয়ার করবো ।
হাইতির বিপ্লব (The Haitian Revolution)
সময়কালঃ ১৭৯১-১৭৯২
সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ ১৭৯১ সালের ২২শে আগস্ট Saint Domingue (একটি দ্বীপ যেটা ফ্রান্সের একটি কলোনী ছিলো ) এর দাসেরা তাদের মালিকদের উপর বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং গোটা কলোনীকে একটি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। দাসদের এই বিদ্রোহ ছিলো মূলত বহুদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের ফসল। এই বিদ্রোহ ঘোষনার ১০ দিনের মধ্যে কালো বর্ণের দাসেরা সমগ্র উত্তর অংশের দখল নিয়ে নেয় ।
কিছুদিনের মধ্যে প্রায় ১০০০০০ দাস এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করে , প্রায় ৪০০০ শ্বেতাঙ্গ এই বিপ্লবের নৃশংসতার স্বীকার হয়। দেড় শতাধিক কারখানা ধ্বংস হয় । ১৭৯২ সালের দিকে বিপ্লবীরা সমগ্র দীপের ১/৩ দখল করে নেয়।
ফলাফল: বিপ্লবীদের এই সাফল্যে ফ্রান্সের ন্যাশনাল এসেম্বেলী খুব চিন্তিত হয়ে পরে, তারা নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য ১৭৯২ সালে যুদ্ধ বন্ধ ঘোষনা করে এবং কালো বর্ণের লোকদের সামাজিক এবং রাজনৈতিক অধিকার দিয়ে আইন পাস করে। আজকের দিনে বর্ণবাদ প্রথা বিলুপ্তির জন্য এই বিপ্লবের ভূমিকা অনস্বীকার্য
কিউবার বিপ্লব (Cuban Revolution)
সময়কালঃ ১৯৫২ -১৯৫৯
সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ ১৯৫২ সালে কিউবায় জেনারেল বাতিস্তা সেই দেশের প্রেসিডেন্ট সরিয়ে এবং সকল নির্বাচন বাতিল করে নিজেই ক্ষমতায় বসে , এই ঘটনা সেই সময়ের এক তরুণ আইনজীবী ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে খুব ক্ষুব্ধ করে তোলে । ক্যাস্ট্রো যেকোনো মূল্যে বাতিস্তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় । ১৯৫৩ সালে ক্যাস্ট্রো সর্বপ্রথম বাতিস্তার একটি ব্যারাকে আক্রমন চালায় , ক্যাস্ট্রোর দল পরাজিত হয় , এবং তার ১৫ বছরের জেল হয়। যদিও ২ বছর পর ক্যাস্ট্রো মুক্তি পান , মুক্তি পেয়ে আবার বিদ্রোহীদের নিয়ে বাতিস্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং আবার পরাজিত হন । পরাজিত হয়ে ক্যাস্ট্রো কিউবার সিয়েরা মাস্ত্রা পর্বতমালায় পলায়ন করে এবং বিদ্রোহীদের নিয়ে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করেন। অবশেষে ১৯৫৯ সালের জানুয়ারি মাসে ক্যাস্ট্রো বাতিস্তাকে পরাজিত করতে সমর্থ হন। যদিও পরবর্তীতে ক্যাস্ট্রো নিজেই স্বৈরাচার হয়ে ওঠেন । বাতিস্তার অনুগত সবাইকে হত্যা করে এবং নিজেকে আজীবন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন।
ফলাফলঃ ক্যাস্ট্রো পরবর্তীতে নিজেই স্বৈরাচার হলেও , তিনিই সর্বপ্রথম বিপ্লবের মাধ্যমে কোন স্বৈরাচারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে পেরেছিলেন । স্নায়ু যুদ্ধের সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন , বর্তমান বিশ্বে হাতে গোনা কয়েকজন যারা আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী আচরণের প্রতিবাদ করতে পারে ক্যাস্ট্রো তার মধ্যে অন্যতম।
চাইনিজ বিপ্লব Chinese Revolution(s)
সময়কালঃ ১৯১১-১৯৪৯
সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ ১৯১২ সালে চাইনিজ বিপ্লবীরা ম্যাচু রাজপরিবারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে চীনা ন্যাশনালিস্টরা ক্ষমতা দখল করে, মূলতে এই বিপ্লবের সূচনা করে । পরবর্তীতে Sun Yat-sen , Chiang Kai-shek নেতৃত্বের চীনা ন্যাশনালিস্ট পার্টি ক্রমেই মাওং সেতুর কমিউনিস্ট আন্দোলনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৫ সালের মধ্যে মাওং সেতু ১০০০০ কি মি লং মার্চের মাধ্যমে উত্তরের দিকে অগ্রসর হয় । এবং এই আন্দলোনের মাধ্যমে মাওং সেতু চীনের কমিউনিস্ট আন্দলোনের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি হয়ে ওঠে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট এবং অন্যান্য দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাপানী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় । কিন্তু পরবর্তীতে তাদের মধ্যেও বিরোধ দেখা দেয়। ফলসরূপ ১৯৪৬ সালে চীনে গৃহ যুদ্ধ শুরু হয়। মাওং সেতুর আর্মী ১৯৪৯ সালে ন্যাশনালিস্টদের পরাজিত করে এবং চীনে কমিউনিস্ট যুগের সূচনা করে ।
ফলাফলঃ চীনে কমিউনিস্ট পার্টীর উত্থান এবং চীনের সুপার পাওয়ার হওয়ার পিছনে এই আন্দলোনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:০৬