আজ মনটা বেশি ভালো মনে হচ্ছিল না। কেমন যেন অস্বস্তিকর মনে হচ্ছিল সবকিছু। কিছুই ভালো লাগছিল না। রাতে ঘুমোতে প্রতিদিন দেরি হয়ে যায়। ফেসবুক, টুইটার, গুগলি, ব্লগ আর নিজের সাইট ঘুরতে ঘুরতে রাতের প্রায় একটা দুটা প্রায় বাজে শুইতে। কোনকোন রাতে চারটাও বেজে যায়, অনেক রাত সকাল হয় নেটে ঘুরতে ঘুরতেই। গতরাত প্রায় সাড়ে চারটার দিকে মোবাইল অফ করে শুয়েছিলাম। সকাল বারোটার দিকে ঘুম থেকে উঠে মুখ ব্রাশ করে গোসল করে পেটে ক্ষুধা থাকার পরও ভাত ভালো লাগছিল না। অল্প কিছু খেয়ে হাত ধোয়ে বসে থাকি। একটা সিগারেট ধরিয়ে বউকে বললাম একটু চা খাওয়াবেন (বউকে মাঝেমধ্যে আমি আপনে করেই ডাকি)। বউ চা করে দিলে চা খেয়ে প্যান্ট আর গেঞ্জি পড়ে বের হই বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে।
গাড়িটি নতুনই পায়, এখনো বছর পার হয়নি। আমার আগের গাড়িটি বেশি ভাঙাচোরা হয়ে গিয়েছিল। তাই সেটা বিক্রি করে এই গাড়িটি কিনেছিলাম মাস দুই আগে। গাড়িটি মিটারবক্স ডিজিটাল। কম দামি গাড়ি হলেও গাড়িটি চালিয়ে খুব ভালোই লাগে। নিজের কষ্টের টাকায় কেনা তাই খুব সাবধানেই চালাই। আজও সাবধানেই চালাচ্ছিলাম। মনটা খারাপ থাকায় মাঝেমধ্যে গতি বেপরোয়া হয়ে যেতো। পরক্ষণেই আবার গতি কমিয়ে চালাচ্ছি। বাসার পশ্চিম দিকের রাস্তা দিয়ে বের হয়ে ধোপাঘাট ব্রিজে গিয়ে উঠলাম। ব্রিজ পর হয়ে কড়ই গাছ পার হয়ে নাজিরাগাড়ার কাছাকাছি যেতেই গতি তেমন ছিল না, এই ৪০ থেকে ৫০ এমন গতিতেই যাচ্ছি। সামনে অনেকগুলো মহিলা রাস্তার দুই পাশ দিয়ে হাটছে। আমার গতিও তখন একটু কমেছে, যেহেতু দুই পাশ দিয়ে হাটছে সেহেতু অত কমনার প্রয়োজন মনে হয় নি। মাথায় একটু চিন্তা ছিল, মনে মনে ভাবছি গ্রামের বাড়ি দিয়ে ঘুরে আসবো। তাছাড়া মফিজুলের সাথে দেখা করতেই হবে। খুব রোদ ছিল আকাশে। তাই চোখে চশমা ছিল। এই সেই ভেবে ভেবেই চালাচ্ছিলাম গাড়ি।
হঠাৎ হাতের বাম পার্শ্বে একটা পিচ্চি মেয়ে সাত আট বছরের হবে হয়তো। হর্ণ বাজাতেই পিচ্চি মেয়েটি দৌড় দিল, ভাবলাম যাক, বামেই থাকবে, আমি একটু ব্রেকে চাপদিয়ে ডান দিক দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি, হঠাৎ মেয়েটি দিক পরিবর্তন করে রাস্তার এপাশ থেকে ডান দিকে দৌড় দিয়েছে, ততক্ষণে গাড়ির একদম সামনে। হাইড্রোনিক ব্রেক আর পিছের ব্রেক একবারে ধরেও আর হল না। গাড়ি ছেছড়ে গিয়ে মেয়েটির সাথে গাড়ির আগার চাক্কা বাজলো, মেয়েটি মাটিতে পড়ে গেল, আমার গাড়িও পড়ে গেল আমার উপর। গাড়ি সহ আমিও অল্প ছেছড়ে গেলাম হয়তো। মেয়েটির জন্য টেনশন হচ্ছিল কিন্তু, লাগলোই শেষ পর্যন্ত। আমাকে স্কুল ফেরত ছেলে গুলি টেনে তুললো। মেয়েটিকে পাশের মহিলারা কুলে তুলে নিয়েছে। মেয়েটি কাঁদছে। আমি কোনরকম উঠে মেয়েটির কাছে গেলাম মাথায় হাত দিয়ে বলছি মা কোথায় ব্যথা পেয়েছো। পাশের মহিলারা বলছে বাপু তুমি চলে যাও, এখানে থাকলে নানাজনে নানা কথা বলবে, তোমার কোন দোষ নেই, আমরা তো দেখলামই। তুমি খুব চেষ্টা করেছো দেখেছি। দেখলাম মেয়েটির তেমন ক্ষতি হয়নি, সামান্য ছাল উঠেছে। আমার বাম হাত কেটে রক্ত পরছে, ডান হাতের কয়েক যায়গায় ছাল উঠে গেছে। সখ করে কিনা স্ট্রিজ পেন্টটি হাটুর ওখানে ছিড়ে গেছে ঘষা লেগে পাক্কার সাথে। মনে হয় অনেক টুকু ছাল গেছে হয়তো, পেন্ট থাকায় ঠিক দেখা গেল না, তবে বুঝা যাচ্ছিল বেশ, সবচেয়ে বেশি ব্যথা পাচ্ছিলাম বাম পায়ের পাতায়। আমি হাটতে পারছিলাম না। তবুও ছাত্রদের সহযোগিতায় গাড়ি তুলে সেল্ফে স্টার্ট দিয়ে চলে আসলাম সেখান থেকে। গাড়ির তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে ডিজিটাল মিটারের বারোটা বেজে গেছে। লাইট বক্স ফেটে গেছে। পরে অমনি গ্রামে গিয়ে ঘুরে এসে এখন বাসায় শুয়ে আছি।
তখন বাম পায়ের পাতায় ব্যথা কম মনে হলেও, এখন প্রচণ্ড ব্যথা করছে। সম্ভবত পায়ের পাতার হাঁড় ফেটে থাকবে হয়তো, ঠিক বুঝতেছি না। বাসায় আসার পর বউ অনেকক্ষণ পানি ঢেলে দিল পায়ের পাতায়, শরসে তেল মালিশ করে দিল, একটা মলম লাগিয়ে এখনো মালিশ করছে। মাঝে ছেলেও অনেকক্ষণ পাতা মালিশ করে গেল। বাম পায়ের হাটুতে অনেকটুকু ছুলে গেছে, খুব বেশি ব্যথা লাগছে পাতায়। পায়ের পাতায় ভর দিতে পারছিনা। শরীর কাঁপছে, জ্বর উঠছে মনে হচ্ছে। একটা নাপা খাইলাম।
যা হোক, আল্লহ্ বড় ধরণের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচিয়েছেন এটা অনুভব করছি। আমার দোষ যদিও নেই তবুও আমার কাছে মনে হচ্ছে দোষ আমারও কিছুটা ছিলই। যদি মানসিক অবস্থা ভালো থাকতো, একটু সাবধান থাকতাম তো এমনটা হতো না। আল্লাহ্ মেয়েটিকে বাঁচিয়েছে। নয়তো যদি মেয়েটির মাথায় আঘাত লাগতো তো মরেও যেতে পারতো। যেভাবে পড়েছিলাম তাতে আমার বাম পা ভেঙেও যেতে পারতো। গাড়ির ডিজিটাল মিটার বক্স ফেটে গেছে, যাক, তবুও আমি বেঁচে আছি মেয়েটির তেমন ক্ষতি হয়নি এখানেই শুকরিয়া মহান স্রষ্টায়।
তাই, গাড়ি চালানোর সময় ১০০% মন গাড়িতে রেখে চলানোই ভালো। নয়তো দুর্ঘটনা অনেকটা নিশ্চিত। অন্যমনস্ক হয়ে গাড়ি না চালিয়ে কিছুক্ষণ দোকানে বসে, চা খেয়ে আবার না হয় গাড়ি চালানো যেতে পারে। গাড়ি চালানোর সময় মন হাজির রাখুন, অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাজনিত কারণ এড়িয়ে চলুন। সবার জন্য শুভকামনা সবসময়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:১৬