ইতিহাসই নেতৃত্বের স্রষ্টা। কোনো ব্যক্তিজীবনকে নেতৃত্বের মর্যাদায় অভিষিক্ত করার ব্যাপারে রয়েছে ইতিহাসের নিজস্ব নিয়ম-তার চির অক্ষয় শিক্ষা। এই নিয়ম ও শিক্ষা অনুসারে ইতিহাসের বিচিত্র বন্ধুর পথে যিনি সার্থক অভিযাত্রী তিনিই নন্দিত হন নেতারূপে। ইতিহাসের অভিষেকও তারই জন্য। তাই নেতা যিনি হবেন তাকে নিত্য-নিয়তই অর্জন করতে হয় ইতিহাসের এই নিয়ম ও শিক্ষা সম্পর্কে সত্য উপলব্ধি, ইতিহাসের খাড়িপথ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান, এই উপলব্ধি ও জ্ঞান শুধু পুঁথি- আহরিত হলেই চলে না, বাস্তব অভিজ্ঞতালব্ধ হতে হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং জনগণের অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিষ্ঠার মূলে ইতিহাসের স্বীকৃতি ও তার সত্য সন্ধানে নেমে জানতে হবে তাঁর জীবন ও কর্মধারা সম্পর্কে, প্রয়োজন বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণের। যে বিশ্লেষণ হতে হবে রাজনীতি, বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাস- ঐতিহ্যের পরম্পরাগত মুক্ত বিচার বুদ্ধির আলোকে। বরেণ্য প্রবন্ধকার ও কলামিষ্ট আসাদুজ্জামান চৌধুরী’র উপরোক্ত বক্তব্যের তাৎপর্য আমাদের জানতে হবে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের আগে ও পরের নেতৃত্ব ও নেতৃত্বেরধারা বিশ্লেষণের মাধ্যমেই। তারপরই নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বাস ও ভরসা করা যাবে নিশ্চিন্তে। দেশ-জাতির উপর ভালোবাসা থাকলে আপনাকে সঠিক নেতৃত্ব ও সঠিক রাজনৈতিক দল বেছে নিতেই হবে, যার উপর আপনার প্রিয় দেশের দায়িত্বভার নিশ্চিন্তে রাখতে পারেন।
একটা সময় ছিল যখন বাঙালি তদানীন্তন পাকিস্তানীদের হাতে নির্মমভাবে মার খাচ্ছিল, শোষিত হচ্ছিল। নিজেদের জাতিসত্তা বলতে বাঙালিদের কাছে কিছুই ছিল না। এই জাতিকে শত্রুদের হাত থেকে মুক্ত করতে, একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাসস্থান গড়ে দিতে যিনি আমরণ সংগ্রাম করে গেছেন তিনি আমাদের জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাঙালি জাতির এই মহান অবিসংবাদিত নেতার ডাকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হায়েনা সৈন্যদের আগ্রাসন থেকে বাংলাদেশেকে স্বাধীন করতে বাঙালি জাতি জাপিয়ে পড়েছিল স্পাতকঠিন মনোবল আর যুদ্ধজয়ের পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে। যে বিশ্বাস আর মনোবলের উৎস ছিলেন বঙ্গবন্ধু। নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে বাঙালি জাতি মুক্ত হয়েছিল শত্রুদেশ পাকিস্তান থেকে, পেয়েছিল স্বাধীনতা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই স্বাধীন বাংলাদেশ পেতে বাঙালি জাতিকে উৎসর্গ করতে হয়েছিল ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দু’লক্ষ মা-বোনের পবিত্র ইজ্জত।
চড়ামূল্য দিয়ে পাওয়া আমাদের এই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশকে তো আর যারতার হাতে ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে চুপ হয়ে বসে থাকতে পারিনা। তার জন্য দরকার দেশপ্রেমী নেতৃত্ব আর দেশপ্রেমী রাজনৈতিক সংগঠন। যে নেতৃত্ব, যে সংগঠন আমার সোনার বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করতে পারবো সেই নেতৃত্ব আর সংগঠনকেই সমর্থন করবো এটাই লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।
আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান। আমার বাবা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশমাতৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। আমি অনুভব করি দেশের মাটির প্রতি দেশের মানুষের প্রতি কতোটা ভালোবাসা থাকলে একজন মানুষ পরিবার ও নিজ জীবনের মায়া ছেড়ে যুদ্ধের ময়দানে নামতে পারে। নিশ্চিত মৃত্য জেনেও বাংলার সূর্যসন্তানেরা স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজেদের নিয়োগ করেছিলেন। আমি মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সেই হিসেবেই নয়, দেশটাকে বড় বেশি ভালোবাসি, তাই ‘আওয়ামী লীগ’ সমর্থন করি। আসেন আমার সমর্থনের কারণগুলো আলোচনা করি এবার-
বাংলাদেশ ও বাঙালির উপর ভালোবাসা শেখ হাসিনার উত্তারাধিকার সূত্রেই প্রাপ্ত। কারণ তাঁর বাবা বাঙালিদের অবিসংবাদিত নেতা জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন ‘আওয়ামী লীগ’-এর আদর্শ, নীতি অসাম্প্রদায়িকতা, ভবিষ্যৎ দৃষ্টি, দেশ ও জনগণের প্রতি মমত্ববোধ, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকার, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে অটল অবস্থান এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ও মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার জন্য যে দল এবং দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নিরন্তর কাজ করে চলেছেন, সে দলকে তো সচেতন নাগরিক হিসেবে সমর্থন করতেই হবে। তাছাড়া এই দলের সাঙ্গেই জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির সংগ্রাম, মুক্তি এবং জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও রাজনীতির ইতিহাস। এই দলের সাথে জড়িয়ে আছে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানের গৌরব। তাই আওয়ামী লীগকে তো সম্মান শ্রদ্ধা ও সমর্থন করতেই হবে। আর সব দলতো কী নীতির প্রশ্নে, কী আদর্শের প্রশ্নে বা দেশপ্রেমের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের ধারেকাছে থাকারও সাক্ষ্য রাখে না।
আওয়ামী লীগের সবচাইতে বড় সম্পদ তার দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর আইটি উপদেষ্টা সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়।
দেশের কল্যাণে শেখ হাসিনা আপোষহীন এবং সুকৌশলী কূটনীতি মানুষের মনে দাগ কেটেছেন। ভারত আর মায়ানমারের বিরুদ্ধে সমুদ্রসীমা মামলার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের সমদ্র সীমা চিহ্নিত করে সমুদ্র সম্পদ আহরনের সোপান খুলে দিয়েছেন, টিপাইমুখে বাঁধ দেওয়ার যথেষ্ট ইচ্ছা থাকার সত্বেও ভারত তা দিতে পারেনি বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাঁধা উপেক্ষা করে। আন্তর্জাতিক ক্রিড়াঙ্গনে, বিশেষ করে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্যে তিনি যেভাবে উদ্বেলিত হন তা যে কোন আরোপিত আনন্দ নয় তা বুঝাই যায়। স্থল সীমান্ত চুক্তি করে তিনি ভারতের সাথে ১৯৪৭ সাল থেকে অমীমাংসিত সীমান্ত চুক্তির শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছেন যাতে বাংলাদেশের বঞ্চিত হওয়ার মতো কোন অভিযোগ প্রতিক্রিয়াশীল চক্রও খুঁজে পায়নি। মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র আর তার নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যাংক এর চোখ রাঙ্গানোকে উপেক্ষা করে পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন পদক্ষেপে স্বাধীন সিদ্ধান্তগ্রহণ বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে সম্মানের আসনে আসিন করেছে।
অন্যদিকে ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এশিয়া অঞ্চলের প্রথম ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার সুযোগ আসে যাতে যুক্ত হতে বাংলাদেশের কোন টাকাই খরচ করতে হতো না। সেই নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে অস্বীকৃতি জানিয়ে প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় বাংলাদেশকে যোজন যোজন পিছনে ঠেলে দেয় বর্তমান জঙ্গিনেত্রী খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার। এটা বিএনপির নেতৃত্বের সর্বোচ্চপর্যায়ে দুর্নীতির উদাহারণ, কারণ আমি বিশ্বাস করিনা তারা বুঝতে পারেনি যে এর ফলে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে। তারা ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে অস্বীকৃতির পিছনে অজুহাত দেখিয়েছিল রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার আসঙ্কা। যার প্রকৃত কারণ, কোটি কোটি টাকা মূল্যে ভিস্যটি ব্যবসার প্রলোভন কিংবা ভারতের কাছে পয়সা খেয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে আইটি সেক্টরে পিছিয়ে দেওয়া, যার কুফল বাংলাদেশকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। আর একটি কথা হলো মুখে মুখে বিএনপি ভারত বিরোধী হলেও তাদের সময় কয়েকবার বাংলাদেশের স্বার্থহানী হয়েছে।
পরবর্তীতে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ফাইটার অপটিক নেটওয়ার্কে বাংলাদেশকে যুক্ত করার উদ্যোগ নেন, কিন্তু ততদিনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো ইউরোপের আইটি বাজার ভারতীয় এক্সপোর্টে ভরে গেছে। আমেরিকার সিলিকন ভ্যালী, মাইক্রসফট আর অধুনা গুগল, ফেইসবুক সবই এখন ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রণে।
বর্তমানে ইনফরমেশন টেকনোলজিতে বাংলাদেশ অনেকটাই এগিয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক পুরষ্কার প্রাপ্ত হয়ে দেশ জাতির মুখ উজ্জল করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ বৃটেনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে শিক্ষা বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী। প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের অবদান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃতি পেয়েছে। যা সর্বোতভাবে খালেদা জিয়ার ‘জঙ্গি’ পারিবারিক ইমেজের বিপরীতে শেখ হাসিনার আধুনিক পারিবারিক ইমেজকে উজ্জল করেছে। দেখা যাচ্ছে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জয়, টিউলিপ, পুতুলরা যখন বিশ্ববাসীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ; তখন হয়তো শফি হুজুরের মুরিদ হয়ে হাওয়াভবনের ১০% সর্দার তারেকরা রাস্তায় হেটে যাওয়া নারীদের দেখে জিভের জল ফেলছে। মানুষ তো এই সবই লক্ষ্য করছে ও বুঝছে।
সর্বশেষ ৫ই জানুয়ারি থেকে চলমান বিভীষিকাময় দিনগুলীর কথাই ভাবুন- সেসময় মনে হচ্ছিল দিনগুলি মনে হয় শেষ হবার নয়। জলে, স্থলের অতি চেনা জানা পথও যেন শত্রুসেনা বেষ্টিত অচেনা দুর্গম মৃত্যুর গিরিখাত। বাচ্চাকাচ্চাদের স্কুল কলেজ বন্ধ, দূরপাল্লার যাত্রায় কখন যে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হতে হয় কেউ জানেনা। বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কোমায় পতিত হয়ে গেছে, আর বিএনপির মিত্র জামাত এর রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে তালেবান-আইএস এর সন্ত্রাসীর চরিত্রে আবির্ভূত হল।
আমার আওয়ামী লীগ সমর্থনের পিছনে সর্বোপরি যুক্তি ও ইচ্ছার মূলে রয়েছে দুই দলের উৎপত্তি, দেশপ্রেম, আদর্শ-নীতি এবং নেতৃত্বের যোগ্যতা ও দুই নেত্রী’র পারিবারিক আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আমার বিশ্বাস আওয়ামী লীগ পারে, আওয়ামী লীগই পারবে আমার সোনার বাংলাদেশকে বিশ্ব-দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়ে বাঙালি জাতিকে সম্মানিত করতে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।। জয় হোক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের।।
লেখাটি সম্ভবত পনেরো সালে লিখেছিলাম। তারপর ষোলো সালে আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট তৈরি করার পর সেখানে তুলে রেখেছিলাম। আজ আমার ব্লগেও রেখে গেলাম। জানি অনেকেই পোষ্টটি ভালো ভাবে দেখবেন না, সমস্যা নেই। আমি আমাকে কোনোভাবে লুকিয়ে রাখতে চাই না। আমি যা সমর্থন করি তা জানাতে কোন ভয় দেখি না, যদি শুভাকাঙ্ক্ষী কমে যায় তবুও। তবে কেউ দলকানা ভাববেন না, আমি সকল সমালোচনা মাথাপেতে নিতে অভ্যস্ত সবসময়। তবে দেশের সমালোচনা মানতে সবসময় আপত্তি থাকে আমার।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:২৪