সেই আদিম যুগ থেকে মানব সভ্যতার বিকাশের জন্য কত জ্ঞানীগুণী মুনিঋষি বৈজ্ঞানিক চিন্তাবিদ কাজ করে গেছেন তার কোন হিসেব আমি জানিনা। তবে এই টুকু বুঝতে পারি, মানুষ নিজেদের চেষ্টায় এই সভ্যতার স্বর্ণযুগে উপনিত হতে পেরেছে সামাজিক রাষ্ট্রিক চিন্তাবিদ আর বিজ্ঞানের সমষ্টিগত প্রচেষ্টায়। এখন আর মানুষ সেই আদিম যুগের মতো বস্ত্রহীন থাকেনা, নির্লজ্জ পশুপাখির মতো নিজেদের যৌবনসুখ চরিতার্থ করে না। মানুষের এখন চিন্তাজগত বিকশিত হয়েছে। সভ্যতার আবরণে সবাই ঢাকা। সবাই নিজেকে সামাজিকতায় বেঁধে রাখতে শিখেছে।
দিনদিন মানুষের শিক্ষা মেধা কর্মক্ষমতা বেড়েছে, বেড়েছে সামাজিক দায়বদ্ধতাও। কিন্তু মানুষের লোভ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক দায়িত্ববোধের অবক্ষয় বেড়েই চলেছে। নিজেকে দ্রুত বড়লোক করে তুলার চিন্তাভাবনা মানুষকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক করে তুলছে। সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ কমে যাচ্ছে। বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। তাই বাড়ছে খুন, বাড়ছে ধর্ষণ, বাড়ছে হিংস্রতা, বাড়ছে না সামাজিক মূল্যবোধ।
সমাজে মানুষ এখন কয়েকটি স্তরে বিভক্ত। চিন্তাজগতের ভিন্নতর এই সামাজিক ব্যবস্থা আমাদের দিনদিন চরম অবক্ষয়ের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। সত্য আজ নির্বাসিত হওয়ার পথে সমাজ থেকে। দায়িত্ববোধে এখন আর কোন মানুষকে এগিয়ে নিতে পারছেনা সমাজ, মিথ্যার জয়োৎসবের ভিড়ে। মানুষ অর্থের কাছে বন্দি হয়ে পড়ছে দিনদিন। মানবতার যেন দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা। আমাদের সামাজিক দায়িত্ববোধে এগিয়ে আসতেই হবে। বাড়াতে হবে সামাজিক মূল্যবোধ। মানুষকে মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে। ভুলে যেতে হবে মানুষের শ্রেণিভেদ। জাগিয়ে তুলতে হবে মানবতা। উৎসাহিত করতে হবে সামাজিক দায়িত্ববোধে এগিয়ে আসার জন্য। রুদ্ধ করতে হবে সামাজিক অবক্ষয়।
মাত্রাতিরিক্ত লোভ ও মাদকাসক্তি সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারন। সামজিক অবক্ষয় সংকট সৃষ্টি করছে মানুষের সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে। নষ্ট হচ্ছে সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ। বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। বন্ধু বান্ধবের মধ্যে কমে যাচ্ছে বিশ্বাস শ্রদ্ধাবোধ। ভাই-বোনের সম্পর্কে ধরছে ফাটল। স্বামী-স্ত্রীর প্রেম-প্রীতিময় সম্পর্কে দেখা দিচ্ছে আস্থার সঙ্কট।
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে দিন দিন সামাজিক অপরাধের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে তা মহামারীর আকার ধারণ করতে পারে। সামাজিক অবক্ষয় মানুষের হৃদয়বৃত্তিতে যে অকাম্য পরিবর্তন ঘটাচ্ছে তার পরিণতিতে সমাজ ও পরিবারে বেজে উঠছে ভাঙনের সুর। অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠছে মানুষের মন। এই অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার জন্য অনেকাংশেই দায়ী মাদকাসক্তি। আবার অর্থের দম্ভভারে ধনবাদী ধ্যান-ধারণাও সামাজিক মূল্যবোধে ফাটল ধরাচ্ছে।
সামাজিক অবক্ষয়ের কারনে সুশিক্ষিত কন্যার হাতে বাবা-মায়ের হত্যার ঘটনা ঘটেছে রাজধানীতে। ব্যাংক কর্মকর্তার হাতে প্রাণ হারিয়েছে স্ত্রী ও পুত্রসন্তান। স্ত্রী তাঁর বন্ধুদের নিয়ে হত্যা করেছে ব্যবসায়ী স্বামীকে। চট্রগ্রামের রাউজানে স্ত্রী তাঁর স্বামীকে খুন করে ঘরের মধ্যে লাশ পুঁতে রেখে নির্দয়তার প্রমাণ রেখেছে। সম্প্রতি ছোট বাচ্চা মেয়ের ধর্ষণ ঠেকাতে যাওয়া বাবার সাথে সেই মেয়েকেও খুন। জন্মদিনের উৎসবে নিমন্ত্রণ করে ডেকে নিয়ে রাতভর তিনবন্ধু মিলে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ পালাক্রমে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের ধৈর্য-সহ্যশক্তি কমে যাওয়া; অর্থের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত লোভ; সামাজিক অবস্থানে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অসম প্রতিযোগিতা; নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়; সামাজিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক ও সাংস্কৃতিক অস্থিরতা; অন্য দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর অযথা চেষ্টা; দাম্পত্য কলহ ও স্বামী-স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাসহীনতা; স্বল্প সময়েই ধনী হওয়ার ইচ্ছা; সামাজিক উন্নয়নে সচেতনতার অভাব; সুস্থ বিনোদনের অভাব এবং বিষন্নতা ও মাদকাসক্তি সামাজিক অপরাধকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে।
সামাজিক অপরাধ বিশেষত ধর্ষণ খুন পারিবারিক হত্যাকান্ড ঠেকাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে অতিমাত্রা মাদকাসক্তি। মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধেও নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। সামাজিক অবক্ষয় রোধে এগিয়ে আসতে হবে সরকারি পদক্ষেপ এগিয়ে আসতে হবে সমাজ সচেতন দেশপ্রমিক ব্যক্তিদের। মুক্ত ও সুস্থ ধারার বিনোদের ব্যবস্থা ও উদ্যোগ উৎসাহ থাকতে হবে।
অপরাধী যতই শক্তিশালী হোক সম্মেলিত সততার শক্তির কাছে তুচ্ছ। আমাদের সামাজিক দায়মুক্ত হতে প্রয়োজন, সামাজিক সচেতনতা। যুবসমাজের সাহসী পদক্ষেপই পারে সমাজকে দায়মুক্ত করতে, সামাজিক অবক্ষয় রোধ করতে।সামাজিক সচেতনতামূলক পোষ্ট তরুনদের সামাজিক অবক্ষয় রোধে উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসতে সাহায্য করতে পারে। গড়ে উঠতে পারে আমাদের প্রত্যাশিত সুন্দর সমাজ।
ধর্ষক খুনিদের ঘৃণা জানাতে এসে অনেক অপ্রয়োজনীয় কথা বলে ফেললাম। এখানে সবই আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমি বিজ্ঞ কেউ নই। তাই ভুল হতেই পারে। ভুল হলে ক্ষমা করবেন নিজগুনে।
সবশেষে ধর্ষক আর খুনিদের উদ্দেশ্যে ঘৃণা ভরে বলতে চাই...
তোর বিবেক নেই- তুই ধর্ষক, তুই খুনি!!
তুই সভ্যতার ধারেকাছেও
নিয়ে যেতে পারিসনি মনকে! তুই তো
রাস্তার কুত্তার চেয়েও জঘন্য প্রাণী!
তোর কোন মানবিকতার দায় নেই...
তুই ধর্ষক! তুই সভ্যতার গায়ে
কালো চাদর পড়িয়ে দিতে চাস...!
তুই অর্থের দম্ভভারে ভুলে গেছিস সভ্যতা...!
তোর কাছে মানুষের কোন দাম নেই!
তুই মানবতার গায়ে আঘাত করেছিস...!
তোর শাস্তি হবে নিশ্চিত...তুই ধর্ষক
তুই খুনি! তোর জন্মটাই বৃথা,
তুই পৃথিবীর বুকে কলঙ্ক হয়ে রইলি...
তুই ধর্ষক, তুই খুনি।।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৭ রাত ৮:৫৩