ভালোবাসায় খুশি আনন্দের পাশাপাশি যে কষ্ট আর যন্ত্রণাময় পর্বও থাকে তা গত দুদিন ধরে ভালই বুঝতে পারছে নয়ন। মাত্র তিনদিন দেখা হয়নি মিনতিকে, তাতেই ভালোবাসার জ্বালা পোড়া বুঝে গেছে নয়ন। মনে হচ্ছে কত যুগ ধরে মিনতিকে দেখতে পাচ্ছে না। মনের মানুষকে তিনদিন না দেখার যন্ত্রণায় নয়নের জীবন, দৈনিন্দন কাজ সবকিছু বিষাদময় হয়ে ওঠেছে। সারাক্ষণ মনে একটাই চিন্তা কোথায় আমার মিনতি। কেমন আছে সে, আমাকে না দেখে কেমন যাচ্ছে তার সময়।
মিন্টুর সামান্য খবর শুনেই মোটামুটিরকম একটা সুখ অনুভব করছে নয়ন। আবার সামান্য চিন্তাও হচ্ছে। কেন গেল নানা বাড়ি? আর যাবেই যখন কেনই বা আমাকে না জানিয়েই চলে গেল? আমাকে সামান্য জানিয়ে যাওয়ারও প্রয়োজনও মনে করলো না! সে কি একবারও ভাবলো না, তাকে না দেখে কেমন সময় পার করবো আমি? সেই বা কি করে থাকছে আমাকে না দেখে! যে কিনা একদিন স্কুলে না গেলে পরেরদিন হাজারো প্রশ্ন নিয়ে সামনে খাড়া হতো। সে কি করে তিনদিন আমাকে না দেখে কাটিয়ে দিচ্ছে! এইসব বিভিন্ন ধরণের চিন্তাভাবনা নয়নের মাথায়।
স্কুল থেকে এসে বই খাতা রেখে কাপড় চেঞ্জ করে নয়ন ঘরেই বসে আছে। ভাবছে, মিন্টু শেষ কথাটা কেমন যেন আরেকটা চিন্তার আভাস দিচ্ছে। কিছুই স্থির করতে পারছেনা। ওঘর থেকে মায়ে ডাকে ঘোর কাটে নয়নের। মা ভাত খেতে ডাকছে। এই নয়ন, স্কুল থেকে কখন আসছস, এখনো ঘরেই বসে আছস, ভাত খাবি না? তাড়াতাড়ি আয়, ভাত খেয়ে যা, রাতের ভাত চড়াবো। তাড়াতাড়ি খেয়ে পাতিল খালি করে দে। আসছি মা, বলে নয়ন ঘর থেকে বের হয়ে টিউবয়েল পাড়ে গিয়ে হাত মুখ ধোয়ে খেতে চলে গেল।
সন্ধ্যা হয়েছে অনেকক্ষণ হলো। নয়ন ঘরেই বসে আছে। ভাবনার যেন শেষ নাই। মিন্টুও আসছে না। মিনতিকে ভাবছে। মনে মনে অনেক কথা বলছে মিনতির ছবিটার দিকে তাকিয়ে। চোখ বেয়ে অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ছে। কেন মিনতি? কেন তুমি চলে গেলে এভাবে না বলে? কেমন আছো তুমি? নানা ধরণের প্রশ্ন আজ নয়নের মনে। সবপ্রশ্ন করে চলেছে মিনতির ছবিটিকে। ছবি নিরোত্তর। ছবি তো আর উত্তর দিতে জানেনা। এমন সময় মিন্টুর ডাক শুনতে পেল। নয়ন ঘরে নাকি রে? নয়ন তাড়াতাড়ি চোখ মুছে ছবিটি লুকিয়ে বলছে, হ্যা রে, আয়, ঘরে আয়।
মিন্টু ঘরে ঢোকেই নয়নের দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে বলছে, কিরে, এত চিন্তা করছস ক্যারে। আমি তো বলেই গেলাম তরে। মিনতি আছে তার নানি বাড়ি।
হুম, বলে তো গেলিই। বুঝেছি তোর কথা। তবুও কেমন যেন চিন্তা হচ্ছে মনে। আমাকে একবার বলেও যেতে পারলো না! একবারও ভাবলো না আমার কথা!
নয়নের কথা শুনে মিন্টু বলছে, হুম, বুঝেছি তোর কথা। একটু চিন্তা হওয়ারই কথা। চল বাহিরে যাই। এখানে আলাপ করা ঠিক হবে না। চল বাহিরে খোলা আকাশের নিচে বসে বসে আলাপ করি, তোর ভালো লাগবে।
হ, ঠিক বলছস, চল বাহিরেই যাই বলে দুজনে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। বাহিরের দিকে হাটছে।
পূব আকাশে চাঁদটা ওঠছে ভুবনজয়ী সোনালী আলো ছড়িয়ে। গতকাল পূর্ণিমা গেছে। আজ তাই সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরেই চাঁদটি আকাশে জেগে ওঠেছে। শীতের বিদায় নেওয়ার সময় হয়ে গেছে। এখনও সামান্য শীত শীত লাগে রাত্রে। তবে সন্ধ্যার এই সময়টা ভালোই লাগছে। না শীত না গরম। নয়ন আর মিন্টু শুকনো ঘাসের উপরই বসে আছে। মিন্টু হঠাৎ বলছে তুই ঘরে কি কাঁদলি নাকি?
মিন্টুর এমন কথায় নয়ন অবাক হলো। কারণ, মিন্টু ঘরে ঢুকার আগেই নয়ন চোখ মুছে নিয়েছি। ভেবেছে মিন্টু হয়তো বুঝে নি। এখন মিন্টুর মুখে কান্নার কথা শুনে একটু অবাক হলেও আবেগে আবার কান্না পেয়ে গেল। মনে মনে ভাবছে একমাত্র মিন্টুই আমার মনের কথা বুঝতে পারে। ধন্য মিন্টু, তোর মতো বন্ধু পেয়ে। তুই কেমনে বুঝলি!
বুঝিরে, তোর অনেক কিছুই আমি বুঝি। তাছাড়া, তোর চোখ এখনও কিছুটা ফুলা ফুলা মনে হচ্ছে।
এর জন্যই তুই আমার সবচেয়ে কাছের ও প্রিয় বন্ধু। তোর মতো বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
হয়েছে হয়েছে, আর পাম দেওয়া লাগবো না।
নয়ন এবার গম্ভীর হয়েই বলছে, তোর কাছে কি পাম মনে হলো আমার কথাটা! আসলে আমি মানুষকে ঠিকঠাক বোঝাতে পারিনা। তোকেও বোঝাতে পারলাম না, তুই আমার কতটা আপন!
হুম, বুঝেছি। এভার আসল কথা শুন। মিনতি আপার আজকে আসার কথা।
তুই কেমনে জানলি! মিনতির আসার কথা শুনে নয়ন মুহুর্তেই যেন চঞ্চল হয়ে ওঠলো।
আজ স্কুলে গিয়ে এক ক্লাস করেই গেছিলাম বিজুলের বাড়িতে ওর খুঁজে। তো, ওকে বাড়িতে না পেয়ে গেছিলাম বাঘের চর স্কুলের দিকে। শুনছিলাম বেজুল ওই দিকে গেছে। তো গিয়ে লাভই হইছে। বিজুলকে পেয়ে মিনতি আপার বাড়িও চেনা হয়ে গেল। বাঘেরচর স্কুলের সাইড দিয়ে আসছিলাম। স্কুলের পিছনের বাড়িতে এসে বিজুল বলছে এটা জানো মামা কাদের বাড়ি?
কই, না তো মামু। এটা কার বাড়ি?
মিনতিরে চিন, সুন্দর করে, নয়ন মামাদের ক্লাসে পড়ে?
হ হ চিনি। মিনতি আপারে তো সবাই চিনে। আজ দুদিন যাবত স্কুলে দেখছি না।
হুম মামা, ঠিকই বলেছো। মিনতি কারাপাড়া গেছে। কারাপাড়া কোথায়?
ওদের নানি বাড়ি। বাচ্চু ভাই কারাপাড়া বিয়ে করছে।
ও ও, বাচ্চু ভাইয়ের মেয়ে মিনতি আপা?
হ, বাচ্চু ভাইয়েরই মেয়ে। তবে....
তবে কি মামু?
থাক মামা, তুমি এটা বুঝবা না।
বুঝবো না মানে!
থাক, পরে একসময় বলবো নি।
আচ্ছা বলো একসময়। এখন বল, স্কুলে যাওনি কেন গতকাল? আজও যাওনি তাই চলে আসলাম। কোন খবর না পেলে কি ভালো লাগে বল। মর্জিনা আপার খবর কি?
ওর জন্যই তো যাচ্ছি না।
কেন মামা, ঝগড়া করছো নাকি ?
আরে না মামু। শুধু চোখে চোখে কথা আর চিঠিতে কি মন ভরে? তাই বলছি কোন বাড়িতে আমার সাথে একদিন স্কুল সময় থাকতে।
হুম, ঠিকই বলেছো মামা। আমিও হেল্প করবো।
সেটাই রাজি হচ্ছে না। তাই বলেছি আমি স্কুলে যাবো না। দেখি কি হয়।
দারুণ কাজ হয়েছে মামু। মর্জিনা আপাও দারুণ উতলা অবস্থা। খুব চিন্তায় আছে। গতকাল কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে তোমার কথা। আজও প্রথম ক্লাসে তোমাকে না পেয়ে আমাকে অনুরোধ করে করে পাঠিয়ে দিল খুঁজ নিতে।
কি বলছে তোমারে?
বললো, মিন্টু একটু যাওনা, তোমার বন্ধুর খবরটা একটু নিয়ে আসো না।
আর কিছু বলেনি?
হুম, কি জানি বললো... হ্যা, মনে হয়েছে। বলছে যে, বলবা স্কুলে আসতে বলেছে।
হুম, বুঝেছি মামু। কাল যাবো।
চল মামু, আজই না হয় লঙ্গি পড়েই স্কুলের দিকে আমার সাথে। তাছাড়া আমারে আগাইয়া দিবানা!
হ মামু, ঠিকই কইছো। চল, আমার মনও দেখার জন্য ছটফট করছে।
তো বিজুলকে সঙ্গে নিয়ে আমি স্কুলে আসতে চার প্রিয়ড শেষ। বিজুলকে ইদিরা পাড় রেখে স্কুলে আসতেই স্কুল ছুটি হয়েগেল। বই নিয়ে তোকে না দেখে এইদিকে আসতে হয়েছিল। নয় তো আমি ওইদিক দিয়ে আসতাম।
মর্জিনা আর বিজুল যে প্রেম করছে তা নয়ন আগেই বুঝেছিল। কিন্তু শিওর ছিল না। আজ যেনো কনফার্ম হয়ে গেল। মিন্টুর মুখে মর্জিনা বিজুলের প্রেমের কথা শুনে নয়ন কিছু না জানার বান করে বলছে, আসলেই কি মর্জিনা আর বিজুল প্রেম করছে!
কেন, তুই কি কিছুই জানস না?
হ, কিছুটা জানি, তবে কনফার্ম ছিলাম না। আজ কনফার্ম হলাম।
ভালো হয়েছে, তবে ভুলেও যেন মর্জিনা আপা বোঝতে না পারে তুই জানস।
কেন জানলে কি হবে!
মর্জিনা আপা খুব মাইন্ড করবে। কারণ, আমারে অনেকবার বারণ করেছে কাউকে বলতে। স্কুলের কেউ জানেনা।
কস কি! কেউ জানেনা?
না, তুই জানলি আর জলিল জানে।
হুম, বুঝলাম। জলিলকে তো মর্জিনা ভাইও বানাইছে।
হ ঠিকই জানস। মর্জিনা আপা আর জলিল ভাই বোন সম্পর্ক।
তাইলে কেমনে কি?
কেমনে কি মানে! মিন্টু একটু অবাকই হলো।
মানে, ভাই কি বিজুলের সাথে প্রেম করার জন্যই?
অনেকটা সবরকমই।
হুম, বুঝেছি। আচ্ছা, মর্জিনার বোন না আছে একটা... কি যেন নাম ?
শিউলি।
নয়ন বোনের নাম বলতেই মিন্টু শিউলি বলে দিল। নয়ন কিছুটা আনদাজ করেছিল যে, মিন্টুও শিউলির সাথে নাকি প্রেম করছে। তবুও কিছু বুঝতে না দিয়েই বলছে। ও ও তাই। তুইও কি তার পিছে লাইন টাইন ধরছস নাকি? নয়ন একটু হাসি দিয়েই কথাটা বলে ফেললো।
না রে। আমারটা আর হচ্ছে কই!
মিন্টু নিরাশ হওয়া মুখ দেখে নয়ন শান্তনা দিয়ে বলছে, হবে রে হবে। আমি কিছুটা জানি মর্জিনা বিজুলকে ভালোবাসে। আর তুই শিউলিকে পছন্দ করিশ। বেশ বেশ, বিজুল বড় বোন আর তুই ছোট বোন হা হা হা। মামা ভাগ্নে বাইরা ভাই হা হা হা। তাইলে জলিলের কাজ কি, তোদের পাহাড়া দেওয়া?
ওই, না না। তুই আবার জলিলকে কিছু বলিস না। তাইলে আর হবে না কিছুই। ওর জন্যই আমার প্রেম আটকে আছে। শিউলির ভয়ই হচ্ছে জলিল। বুঝস না, নতুন নতুন ভাই বানাইছে। আর ভাগ্নে হয়েছে তো কি হইছে। মানুষ নিজের সমবয়সী মামার সাথে কতকিছু করছে। আর বিজুল তো অনের দূরের সম্পর্কের ভাগ্নে।
ভাল, আমি কিছু বলবো না। কিন্তু, কোনদিন তো জানাজানি হবেই প্রেম করলে।
যেদিন জানবে সেদিন দেখা যাবে। আগেই কিছু বলিস না। আগে শিউলির মুখে শুনে নেই ভালোবাসার কথা।
ওকে, দোআ রইল তোদের জন্য। প্রেমে পড়ে দেখ, তুইও বুঝবি আমার অবস্থা। এবার আমার কথা বল। মিনতি আজ আসবে তো?
হ, বিজুল তো তাই'ই বললো। বিজুলের ভাবি হয় মিনতির মা। সে নাকি মিনতির মার সাথে আলাপ করেই শুনেছে মিনতি আপার নানি বাড়ি কারার পাড়া।
ভালো একটা খবর জোগাড় করছস দোস্ত। আমি মিনতি সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। সে যে ওই দিক থেকে আসতো এটাই জানতাম। জানতামই না মিনতির বাড়ি বাঘেরচর।
যাক, এখন থেকে অনেক খবরই পাবি আমার কাছ থেকে। এবার বল, আমার সংবাদের প্রেক্ষিতে সিনেমা হবে নাকি।
হবে মানে, একদিনে দুই সিনেমা হবে। সব খরচ আমার।
আচ্ছা দেখা যাবে, মনে থাকে কিনা।
মনে থাকবেরে, দেখে নিস। আগে মিনতির সাথে দেখাটা হয়ে যাক। তারপরই ঠিক করবো কবে সিনেমা দেখতে যাবো। তোকে যে আমি সিনেমা দেখাবো।
হুম, কেউ জানবে না।
কিরে, কি যুক্তি পরামর্শ হচ্ছে? কে কি জানবে না? হঠাৎ আল-আমিন এর কথায় হেসে ওঠলো নয়ন আর মিন্টু। হাসতে হাসতেই নয়ন বলছে, নারে, কিছুনা। মিনতির ব্যাপারে আলাপ করছিলাম।
ও হ্যা, মিনতির খবর কি, পাইছস কিছু? আল-আমিনের কথায় সবাই আবারও কেমন যেনো চুপ হয়ে গেল। নয়ন বলছে,
হ্যা রে, মিন্টুর কাছ থেকে সেই খবরই শুনছিলাম এতক্ষণ। কাল নাকি মিনতি স্কুলে আসবে।
যাক, ভালো লাগলো।
তুই এত দেরি করলি ক্যারে? মিন্টু আল-আমিনকে লক্ষ্যকরে বললো।
দেরি হয়ে গেল, রাতের খাবার না খেয়ে আসলে পরে আবার আম্মা আব্বা খুঁজাখুঁজি করবে। তাই একেবারে খেয়ে দেয়েই বের হলাম।
ভালো করেছিস খেয়ে এসে। অামরা তো এখনও খাইতেই পারলাম না। নয়নের কথা শেষ না হতেই মিন্টু বলছে,
আমিও খেয়েই বেরিয়েছি। ক্ষেত থেকে এসে খুব খিধা লাগছিল। তাই খেয়েই বেরিয়েছিলাম।
তাইলে আমিই একা না খেয়েই বসে আছি! তোরা থাক, আমিও তাহলে কয়ডা ভাত খেয়েই আসি।
আসবি তো? মিন্টুর কথায় নয়ন একটু থেমে গেল।
তোরা থাকবি তো?
তুই আসলে চেষ্টা করবো থাকার।
আমি আগে ভাত খাই। তারপর বলতে পারবো। দুদিন ধরে ঠিকমতো ঘুম হচ্ছে না।
নয়নের কথা শুনে মিন্টু বলছে। তাইলে তুই থাক, আজ আর আসা লাগবে না। আমি একটু জলিলের কাছে যাই। কিছু কথাও জানা যাবে।
তাই যা, বলে নয়ন হাটা শুরু করছে বাড়ির দিকে।
আল-আমিন বলছে তাইলে আমি আসলাম কেন!
তুই কিছুক্ষণ থাক ভালো লাগলে। মঞ্জু আসতে পারে। তার সাথে গল্প করতে থাক। আমি দেখি একবার তো আসবোই বাহিরে। নয়ন হাটতে হাটতেই কথাগুলো বলে চলে গেল।
নয়নের মনে এখন আবারও খুশির জোয়ার। আগামীকাল মিনতি আসবে স্কুলে। তিন দিনের জমানো কথাগুলো বলবে মিনতিকে। মনে মনে কথা সাজানো শুরুকরে দিয়েছে। মিনতিকে ভাবতে ভাবতে ভাত খেয়ে নিজের রুমে এসে টেবিলের সামনে বসে আছে। কি করবে ভাবছে। মনের মধ্যে হাজারও প্রশ্ন খেলা করছে মিনতিকে নিয়ে। মনে মনে মিনতিকে প্রশ্ন করে আর তিনদিন পর দেখার আনন্দে ভুলেই গেল বাহিরে আল-আমিন বসে আছে। নয়ন বিছানায় শুয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকাল সকাল নয়নের ঘুম ভেঙে গেল। দাঁত মেজে হাত মুখ ধোয়ে যথারীতি পড়ার টেবিলে বসে পড়লো। ক্লাসের পড়া গুলো মুখস্থ করে গোছল করে খেয়ে দেয়ে যথাসময় স্কুলের দিকে রওয়ানা হয়ে গেল নয়ন। বাড়ির সামনের মসজিদ পার হতেই দেখে মিরা যাচ্ছে স্কুলে একা একা। মিরা সাধারণত এভাবে একা একা আসে না কোনদিন। সঙ্গে ওর ছোট বোন হিরা থাকে। নয়তো ইয়াসমিন বা কেউ তো থাকেই। আজ একা দেখে নয়ন কথা বলতে আগ্রহি হয়ে ওঠলো। মিরা মেয়েটি খুব ভালো, খুব নাজুক স্বভাবের। নয়ন পিছন থেকে ডাকছে, এই মিরা দাঁড়াও একসাথে যাই। মিরা একটু ধীরেধীরে হাটতে লাগলো নয়নের ডাকে। নয়ন একটু হাটার গতি বাড়িয়ে মিরার কাছে গিয়ে বলছে, কি ব্যাপার বল তো, আজ তুমি একা কেন?
আমার একটু দেরি হয়ে গেছে, তাই সবাই চলে এসেছে, সেজন্য একটু জোরেশোরেই হাটছি।
তুমি ঘড়ি দেখেছো?
নয়নের মুখে ঘড়ির কথা শুনে মিরা থমকে দাঁডালো।
আরে পাগলি, এখনো দশটা বাজতে পনেরো মিনিট, আর তুমি বলছো দেরি হয়ে গেছে!
ও হ্যা, তাই তো! আমি তো ঘড়ি দেখে আসিনি! যাক তোমারে পেয়ে ভালই হলো। আচ্ছা, মিনতি তিনদিন কেন স্কুলে আসছে না বলতে পারো?
না মিরা, আমি কি করে বলবো! আমাকে কি বলে গেছে নাকি?
কেন! তোমাকে তো বলে যাওয়ার কথা।
মিরার কথা শুনে নয়ন মুচকি হাসছে। তোমাদের বান্ধবী হলো মিনতি, আর আমাকে যাবে বলে! নয়ন একটু অবাক হওয়ার মতোই বললো।
হয়ে গো, আর পাকনামি করতে হবে না। আমি জানি তোমাদের চক্কর।
আরে না, এখনো তেমন কোন চক্কর টক্কর হয়নি। আর হলে তো ভালই হয়, কি বলো?
হ, মিনতি কি সুন্দর! চেয়ারম্যানের মাইয়া।
মিরার মুখে মিনতির পরিচয় শুনে নয়ন তো অবাক। এ কি বলছে মিরা! না না, তুমি মিথ্যে বলছো মিরা। মিনতি কোন চেয়ারম্যানের মাইয়া না। আমি যদিও কিছু জানিনা মিনতি সম্পর্কে, তবুও যেটুকু জেনেছি ও বাঘেরচর থাকে।
হ্যা ঠিকই শুনেছো, মিনতি বাঘেরচরই থাকে। ওর বাবা গতবারও চেয়ারম্যান ছিল, এবারও চেয়ারম্যান পাশ করেছে।
তুমি কি আমাকে পাগল পাইছো নাকি মিরা! বাঘের চর চেয়ারম্যান, আবার আগের বারও!
ওরে গাদা, আমি মিনতির বাপ চেয়ারম্যান বলেছি। কিন্তু বাঘেরচর থাকে সেটা বলিনি।
না, তোমার কথা আমার মাথায় ঢুকছে না কিছুই।
মাথায় ঢুকা লাগবে না। সময় হলে তুমিও জানতে পারবে। আচ্ছা ভালো থেকো, শুভকামনা তোমার জন্য। স্কুলে চলে আসায় মিরা কমনরুমের দিকে চলে গেল।
নয়ন নিজের ক্লাসে ঢুকে ভাবছে, মিরা আবার এটা কি শুনাইলো! মিনতি চেয়ারম্যানের মাইয়া! মনে কেমন যেন একটা চিন্তা হতে লাগলো। ভুল করলাম না তো, বড় লোকের মাইয়ার সাথে প্রেম করে ? টিকবে তো! মিনতি প্রেমের নামে অভিনয় করবে না তো ? যাউক গা, দেখিই না কি হয়। মনে মনে সব চিন্তা রেখে নয়ন যেন চনমনে হয়ে গেলে মিনতি আসছে দেখে। মিনতিকে দেখামাত্র নয়নের সব চিন্তা ভাবনা হতাশা হারিয়ে গেল। ক্লাসরুম থেকেই দেখছে মিনতিকে। মাঠে ভিতর দিয়ে আসছে। আহ! পরান ডা ভইর্যা যায় ও মুখটি দেখলে! মিনতি দেখতে কমনরুমের ভিতর চলে গেল। নয়ন বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবছে কিভাবে দেখা করা যায়, কথা বলা যায় মিনতির সাথে। স্কুলে ছাত্রছাত্রীও তেমন আসেনি তখনো। এখন কেবল দশটা বাজে। ক্লাস শুরু হতে এখনো ৪৫ মিনিট বাকী। দেখা করতে পারলে তো ভালই হতো।
মিনতি কমনরুমে ভই খাতা রেখে বেরিয়ে এল। বারান্দা দিয়ে এদিকেই আসছে। নয়নের পাশে এসে বলছে, নিলমন আপাদের বাড়ির দিকে আসো কথা আছে। নিলমন' স্কুলের আয়ার চাকরি করে। খুব ভাল সম্পর্ক সবার সাথে। আয়ার চাইতে বড় পরিচয় সে স্কুলের স্থপতির মেয়ে। নয়নের গ্রাম সম্পর্কে চাচি লাগে। নয়নকেও খুব আদর করে।
নয়ন এমন একটা সুযোগের অপেক্ষাই করছিল মনে মনে। গাড় কাত করে সায় জানালো নয়ন। মিনতি একা একা হেটে যাচ্ছে।
নয়নের মন চাইছিল তার সাথে হেটে যেতে। কিন্তু সবাই দেখে নানা ধরণের মন্তব্য করবে। পরে মিনতির সমস্যা হতে পারে ভেবে একটু পরেই নিলমন চাচিদের বাড়ির দিকে হাটা শুরু করলো নয়ন। মনে মনে কথা সাজাইছে আর হাটছে। নিলমন চাচির বাড়ির সামনে এসে দেখে মিনতি দাঁড়িয়ে আছে নিলমন চাচির সাথে। নয়নকে দেখেই চাচি মজা করে বলছে, কি ব্যাপার আজ হঠাৎ এই বাড়িতে কেন? ও বুঝেছি, মিনতি আইছে তাই পিছে পিছে চলে আইছো। কি ব্যাপার?
নানা চাচি এমনিতেই আসছি। ভাবলাম সময় এখনো অনেক বাকী, তাই ঘুরছি। মিনতি মুচকি হাসছে। নয়নের সংকোচ দেখে মিনতি বলছে লাভ নাই লুকিয়ে আপা সব জানে।
নিলমন চাচি বলছে, ও গোলামের বেটা তুমি মনে করছো কিছুই জানিনা! শোন, স্কুলের কোন মেয়ে কোনদিকে ঘুরে, কোন ছেলে কার পিছনে লাইন মারে সব জানি, কিন্তু বলি না কিছু।
আপনার তো জানারই কথা। যাক ভালই হলো। ভয় কিছুটা কমলো।
বাববাহ! কি ভয়.... চাচি মুখ বেংচিয়ে কথাটা বলে মিনতির দিকে চেয়ে বলছে, তোমরা আমার রুমে বসোগা, আমি কাজটা সেরেই রেডি হবো। নয়ন আর মিনতি নিলমন চাচির রুমে ঢুকে গেল। মিনতি খাটের কোণায় টেবিলের পাশে বসে পড়লো। নয়ন দাঁড়িয়ে আছে। মিনতিকে দেখছে চেয়ে চেয়ে। মিনতি চুপচাপ টেবিলের উপর রাখা বই গুলোর দিকে চেয়ে আছে। মুখটা ভার। নয়নকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দমকের সুরেই বলছে, কি হলো, বসবে না? তোমার জন্য চেয়ার রেখে আমি এখানে বসলাম আর তুমি দাঁড়িয়েই আছো! আবার চুপচাপ। কেন, কোন কথা নাই ?
নয়ন বাধ্য ছেলের মতো চেয়ারে বসতে বসতে বলছে কি বলবো ভাবছি। মিনতির মুখের দিকে তাকিয়ে আবারও চুপচাপ নয়ন।
কি, কিছু বলবা না?
কি বলবো?
কোন কথা নাই আমাকে বলার?
আছে তো।
তাহলে বলছো না কেন? তোমার মুখটা এত মলিন লাগছে কেন?
কই, না তো। নয়ন হাত দিয়ে চোখ মুখ বুলিয়ে বলছে, কই, আমি তো এমনই।
না, তুমি এমন না।
কেমন?
কিসের চিন্তা করছো এত?
তুমি বুঝেছো?
কেন বুঝবো না? আমি ছিলাম না তিনদিন। তোমাকে বলেও যাইনি। সেটার জন্য তোমার এত চিন্তা করা লাগবে? চিন্তা করে করে নিজের স্বাস্থ্য খারাপ করা লাগবে? মিনতির মায়া ঝরা কথা শুনে নয়নের চোখদুটি ছলছল করছে জলে। এখনই হয়তো অশ্রু গড়িয়ে পরবে।
মিনতি, জানতাম না তোমাকে না দেখতে পেয়ে এতটা কষ্টে পুড়বো। এই তিনদিন কতটা কষ্ট নিয়ে ঘুরেছি তা কেবল আমি জানি। আমার খাওয়া দাওয়া ভালো লাগে না। রাতে ঘুম আসে না। পড়া লেখায় মন নেই। কত যে চোখের জল নীরবে ঝরছে তা তো আর তোমাকে দেখাতে পারবো না। তুমি কেন গেলে হঠাৎ করে? আর কেনই বা আমাকে না বলেই চলে গেলে? একবারও ভাবলে না আমার কথা!!
ভেবেছি, খুব ভেবেছি। এই তিনদিন আমারও একই অবস্থা। যদি মেয়ে মানুষ হতে তবে বুঝতে একটা মেয়েকে কতটা কষ্ট সহ্য করতে হয়।
আর ছেলেদের বুঝি কষ্ট হয় না?
হয়ই তো। তবে মেয়েদের কষ্ট একটু বেশিই।
হুম, হয়েছে। আর কষ্টের কথা শুনাতে হবে না। আজ না এলে যে আমি কি করতাম তা আমিও জানিনা। গতকাল সন্ধ্যায় যেতে চেয়েছিলাম তোমাদের বাড়ির দিকে।
গিয়েই লাভ কি হতো?
সেজন্যই পরে আর যাওয়া হলো না।
এখন যাইও। আমি তোমাকে দেখতে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবো।
হুম, যাবো। কাড়াপাড়া তোমার নানির বাড়ি?
হুম, তুমি কার কাছে শুনলে?
শুনছি। কোন প্রেমিক আছে নাকি সেখানে?
হুম, বুঝেছি। তুমি এগুলো চিন্তা করছো।
কেন, এগুলো চিন্তা করা কি অন্যায়?
না অন্যায় না। তবে আমাকে তোমার কি সেরকম মেয়েই মনে হয়? মিনতির মন একটু খারাপ হয়ে গেল মনে হয়। হাসি হাসি মুখ হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল।
আরে না, এমনিতেই বললাম। তোমার জন্য খুব বেশি চিন্তা হচ্ছিল। তুমি কেমনে থাকলে তিনদিন। তোমার কষ্ট হয়নি?
কষ্ট হলেই কি করার ছিল। হঠাৎ করে মামা আসলো। এসেই বলছে আমাকে নিতে এসেছে। পরে যেতেই হলো। আমার যে কেমন লেগেছে তা তোমাকে কি করে বোঝাবো।
মিনতি, একটা কথা সত্যি করে বলবে?
কি ?
তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো?
হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?
না, এমনিতেই। আমার খুব শুনতে মন চাইছে তোমার মুখ থেকে।
হ, ভালোবাসি। মন থেকে ভালোবাসি তোমাকে। তুমিই আমার প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা। তুমি শুধু আমাকে বিশ্বাস করো। আমাকে ভুলে যেওনা কোনদিন।
বিশ্বাস করি মিনতি। তোমাকে খোদার পরেই বিশ্বাস করি। দুনিয়া ভুলে থাকতে পারবো তোমাকে ভুলে থাকা সম্ভব না।
তাহলে আমার জন্য আর কোন প্রকার চিন্তা করবা না কখনো।
এমন সময় নিলমন চাচি এসে বলছে চল মিনতি এখন ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। মিনতিও বলছে, হ আপা চলেন।
নয়ন কিছুই বলতে পারছেনা। নিলমন চাচির সামনে কেমন যেন লজ্জা লাগছে। চুপচাপ বসেই আছে চেয়ারে। মিনতির মুখের দিকে চেয়ে ভাবছে, মিনতি, আমার মনের চাওয়াটা বুঝলি না। আমাকে একটা চুমাও দিলি না, দেওয়ার সুযোগও দিলিনা।
মিনতি ওঠে যাওয়ার সময় বলছে তুমি একটু পরে আসো, আমরা আগে যাই।
নয়ন চুপচাপ বসে রইল। মিনতি আর নিলমন চাচি বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। নয়নও ওঠে ঘর থেকে বেরিয়ে স্কুলের দিকে হাটতে লাগলো।
এভাবেই চলতে থাকলো বেশকিছু দিন। স্কুলে যায় আসে, মিনতির সাথে দেখা হয়, কথা হয়, চিঠির মধ্যে ভরে দেওয়া হয় সব না বলা কথাগুলো। ভালই চলছে নয়ন মিনতির প্রেম। কিন্তু নয়নের কেমন যেন লাগে সবসময়। যতো কথা চিঠিতেই বলতে পারে, সামনে গেলে কল্পনায় সাজনো কথাগুলোর কিছুই আর বলা হয় না মিনতিকে।
একদিন চারক্লাশ পরেই স্কুল ছুটি হয়ে গেল। মিনতি কমনরুম থেকে বেরিয়ে নয়নকে বারান্দায় দাঁড়ানো দেখে কাছে এসে বলছে, কাল সকাল সকাল স্কুলে আসবে। বলে মিনতি বাড়ির দিকে হেটে চলে গেল। নয়ন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মিনতির চলে যাওয়া দেখছে পিছন থেকে। তারপর নিজেও বাড়ির দিকে হাটতে লাগলো.....।
নয়ন আবারও স্বপ্ন সাজাতে লাগলো আগামীকাল কি কি বলবে মিনতিকে। না, অনেক দেরি করেছি। আগামীকাল মিনতিকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলবো, মিনতি আমি তোমাকে না পেলে বাঁচবো না, মরে যাবো আমি। তোমাকে একদিন না দেখলে আমার সবকিছু কেমন যেন বিষাদময় হয়ে ওঠে। কোন কাজেই আর মন বসে না। পড়া লেখা ভালো লাগে না আমার। তুমি আমাকে এভাবেই তোমার বুকে ধরে রেখো সারাজীবন। আমি তোমাতেই সুখ খুঁজে নেবো, সুখী হবো আমি। প্রতিবারই মিনতির সাথে আলাদা বাড়িতে দেখা করার আগের দিন নয়ন এরকম অনেক স্বপ্ন সাজায় মনে মনে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মিনতির হাতটি ধরারও সাহস হয়নি নয়নের। কেমন যেন ভয় কাজ করে নয়নের। যদি মিনতি খারাপ কিছু ভেবে মন খারাপ করে তো নয়নের ভীষণ কষ্ট হবে। বা যদি ভুল বোঝে তো নয়নের দুঃখের আর শেষ থাকবেনা। যতবার দেখা করার আগে ভাবে মিনতিকে আজ জড়িয়ে ধরবেই, তাকে একটু আদর করবেই। কিন্তু মিনতির সামনে বসে সবকিছু ভুলে যায়, শুধু চেয়ে দেখে। মিনতির মুখপানে চেয়ে চেয়ে মিনতির কথা শুনে আর ভাবে, মিনতি তো আমারই। তাকে কেন আগেই অপবিত্র করবে। তারচেয়ে বরং এই আকর্ষণটা তুলা থাকুক বিয়ের প্রথম রাত্রির জন্য। এসব ভেবেই মিনতিকে আর জড়িয়ে ধরা হয় না। একটু আদর করে মিনতির শরীরে হাত বুলানো হয় না। তার মনের এই কামনা অপূর্ণই থেকে যায় প্রতিবার। তাইতো প্রেমের বয়স প্রায় একবছর পার হতে থাকলেও নয়নের এই আকাঙ্ক্ষার সময় আর পার হয় না কোনদিন। দেখা করার পড়ে চিঠিতেই বলা হয় মনের অপূর্ণ বাসনার কথা।
কিন্তু আজ ভাবছে, এবার ধরবে মিনতির হাত। জড়িয়ে ধরবে বুকের সাথে। মিনতির ঠোটে দিবে চুমো। যাই ভাবুক মিনতি। এবার নয়ন তার বহুরাতের কাঙ্ক্ষিত এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেই। আর ভয় পাবেনা নয়ন। নয়ন স্কুল থেকে বাড়ি পথে হাটতে লাগলো অজানা এইসব সুখের কথা ভাবতে ভাবতে.....। আগামীকালের কথা ভেবে নয়ন আজ খুব খুশি.....
বড় ভুল করেছিলাম তোমায় ভালোবেসে....(পর্ব-৩)
বড় ভুল করেছিলাম তোমায় ভালোবেসে...(পর্ব-২)
বড় ভুল করেছিলাম তোমায় ভালোবেসে...(পর্ব-১)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৩৩