দাফনি ছিল স্বাধীনচেতা এবং প্রেম ও বিয়েকে ঘৃনাকারী এক তরুনী শিকারী। তাকে এ্যাপোলোর প্রথম প্রেমিকা বলে মনে করা হয়। যদিও সে এ্যাপোলর কাছ থেকে পালিয়েই যেতে চেয়েছিল, কেননা দেবতাদের প্রেমাসক্তির কারনে একের পর এক কুমারী মেয়েরা হয় তাদের ঔরসজাত সন্তানকে গোপোনে হত্যা করতো অথবা নিজেই আত্নহত্যা করতো।
দাফনি কোনো মানুষকেও প্রেমিক হিসেবে কামনা করে নি। তার পিতা, ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন কেননা দাফনি তার স্কল পাণিপ্রার্থীকেই প্রত্যাখ্যান করলো। তার পিতা প্রায়শই আফসোস করে বলতেন "আমি কি কখনো মাতামহ হতে পারবো না?" কিন্তু দাফনি পিতাকে দু বাহুতে জড়িয়ে ধরে মিষ্টি কথায় প্রলুব্ধ করত, তখন পিতা হার মানতেন এবং দাফনি চলে যেত গভীর অরন্যে, নিজের স্বাধীনতায় ঘুরে বেড়াত।
অবশেষে এ্যপোলো একদিন তাকে দেখলেন, তখন দাফনি ছিলো শিকারে ব্যস্ত, তার পোশাক ছিলো হাটু পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত, তার বাহু ছিলো নগ্ন, চুল ছিলো এলোমেলো। তবুও তাকে লাগছিলো অপূর্ব সুন্দরী। এ্যাপোলো ভাব্লেন তাকে যদি চমতকার পোশাক পরানো হয় এবং চুল গুলো পরিপাটি করে সাজানো হয় তাহলে না জানি কত সুন্দরই লাগবে।
তিনি দাফনির দিকে এগিয়ে গেলেন কিন্তু দাফনি পালিয়ে গেলো। সে খুব দ্রুত দৌড়াতে পারতো। প্রথম দিকে এ্যাপোলো তার সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। কিন্তু শীঘ্রই তিনি দাফনির কাছাকাছি পৌছে গেলেন এবং দাফনিকে থামার অনুরোধ করলেন। তিনি তাকে ভয় পেতে নিষেধ করলেন আর বললেন যে "থামো, তাকিয়ে দেখো আমি কে, আমি নিষ্ঠুর, বিকটদর্শন বা মেষপালক নই। আমি হলাম ডেলফির রাজা এবং আমি তোমাকে ভালোবাসি"
কিন্তু দাফনি পালিয়ে যেতেই থাকলো এমনকি আগের চেয়েও জোরে দৌড়াতে শুরু করলো। কিন্তু এ্যাপোলোও তার পিছু ছাড়ছিলেন না। দাফনি ঘাড়ের উপর অনুভব করলো তার নিঃশ্বাস আর তখনই তার চোখে পড়লো তার পিতার নদী। সে আর্ত্নাদ করে বল্লো, "আমাকে সাহায্য করো। পিতা, আমাকে সাহায্য করো।" এই কথার পরপরই তার উপর নেমে এলো অসাড়তা। যে মাটিতে সে দৌড়াচ্ছিলো সেখানেই তার পা আটকে গেলো। গাছের বাকল তাকে ছেয়ে ফেলতে লাগলো। এবং অতঃপর সে পরিনিত হলো লরেল গাছে।
এ্যাপোলো এই রুপান্তরটি দেখলেন হতাশা ভরে। "ওহে সুন্দরতম কুমারী, তুমি আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেলে, কিন্তু অন্তত তুমি আমার বৃক্ষ তো হতে পারবে। তোমার পাতা দিয়ে আমার বিজয়ী যোদ্ধারা তাদের ঢালের অগ্রভাগ জড়িয়ে নেবে। তুমি আমার সকল সাফল্যের অংশ হবে।"
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:১৮