somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ " Before I Fall " - একটি নিখুঁত দিনের সন্ধান

২৪ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৪:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছবির শেষ দৃশ্যের কয়েকটি ডায়ালগ দিয়ে রিভিউ শুরু করছি, " হয়ত তুমি অপেক্ষা করতে পার, হয়ত তোমার জন্য আগামী কাল আসবে, হয়ত আরো এক হাজার কিংবা দশ হাজার আগামী দিন। কিন্তু আমার মত কারো কারো জন্য কেবল আজই শেষ দিন। জানিনা আগামী কাল আসবে কিনা যতক্ষন পর্যন্ত আজকের দিন শেষ না হচ্ছে। তাই কিছু করতে হবে গতানুগতিক দিনগুলোর পার্থক্য গড়ে দেওয়ার জন্য। হয়ত তাতে কিছু কিছু পরিবর্তন আসবে হয়ত আমি কিছু পরিবর্তন আনতে পারব। কিছু ঘটনার রেশ যেন অনন্ত কাল ধরে চলতে থাকে সেই ঘটনা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও, এমনকি মৃত্যুর পরও। এটাই হয়ত একটা জীবনের সবকিছু, এটাই জীবনের স্বার্থকতা।" এমনই অসাধারন ডায়ালগ ছবিটির প্রতি পরতে পরতে। হয়ত চোখও ভিজে যাবে Before I Fall মুভিটি দেখতে দেখতে। ২০১০ সালে লরেন্স অলিভার এর লেখা বেষ্ট সেলিং নভেল "Before I Fall" এর উপর ভিত্তি করে মুভিটি তৈরি হয়েছে।

ছবির মূল চরিত্র সামান্থা (Zoey Deutch) বন্ধু মহলে জনপ্রিয়, সন্দরী। নিজের জীবন নিয়ে খুব ব্যস্ততায় কাটে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, পার্টি, কাউকে ই্চ্ছেমত পঁচানো, পরিবারের সাথে দুরত্ব এভাবেই জীবন চলে। ছবির শুরু হয় সামান্থার ঘুম থেকে ওঠা দিয়ে। সেদিন ছিল কিউপিড ডে। বান্ধবীদের এসএমএস আসে দিনটির কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। দ্রুত তৈরি হয়ে নেয়। বাইরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে তার বান্ধবীরা। বান্ধবীদের সাথে স্কুলে যায়, সেখানে কিউপিড ডে উপলক্ষে কয়েকজনের কাছ থেকে ডেটিং এর প্রস্তাব পায়। তার জনপ্রিয়তায় মনে মনে খুশি হয়। পাশে বসা মেয়েটির একটিও প্রস্তাব আসেনা, সেটা নিয়ে সামান্থার কোন ভাবান্তরও হয়না। ক্লাস শেষ এ বের হওয়ার সময় একটি ছেলে প্রস্তাবকে বেশ অহংকারের সাথেই অগ্রাহ্য করে। দুপুরে বন্ধুরেদ নিয়ে ক্যাফেটেরিয়াতে খেতে বসে ব্যস্ত হয়ে যায় আশ-পাশের সবাইকে নিয়ে সমালোচনায়। সে সময় উশখো-খুশকো চুলে আধ পাগলা টাইপ এর একটা মেয়ে ঢুকে। তাদের স্কুলেরই মেয়ে। কারো সাথে মেয়েটি কথা বলেনা। জুলিয়েট (Elena Kampouris) নামের এই মেয়েটিকে নিয়েও সামান্থা আর তার বান্ধবীরা অনেক হাসাহাসি করল। এমন করতে করতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। পার্টিতে গেল। খুব হল্লোর, হৈ চৈ। নিজের সময়টাকে উপভোগ করাতে ব্যাস্ত সবাই। এমন সময় জুেলিয়েট ঢুকলো পার্টিতে। সবাই খুব অবাক। এই মেয়ে তো এখানে আসার কথা নয়। সামান্থা আর তার বান্ধবীরা সদলবলে তাকে তীব্র অপমান, হাতাহাতি, মারামারি করল। জুলিয়েট এক পর্যায়ে ছুটে বের হয়ে গেল। সকলের মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেল। এত দুর্দান্ত একটা মাস্তি হচিছল, কোত্থেকে একটা ফালতু মেয়ে এসে পার্টিটাই মাটি করে দিল। মেজাজ খারাপ করে সবাই রওনা দিল বাসার দিকে। গাড়ি চালাচ্ছিল লিন্ডসে (Halston Sage) আর চেষ্টা করছিল সবার মুড ভালো করতে। ফাঁকা রাস্তা, ঝির ঝির বৃষ্টি, চারদিক শুনশান, দুপাশে ঘন জঙ্গল। চমৎকার আবহাওয়া। তার মাঝ দিয়ে গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। এমন সময় হঠাৎই গাড়িটা যেনো কিসের সাথে ধাক্কা খেলো। তীব্র বেগে থাকা গাড়িটি উল্টে গিয়ে পাক খেতে লাগল। সামান্থার হাতে ধরা মোবাইলে তখন বাজছে ১১:৩৯ মি:। সামান্থা বুঝল সে মারা যাচ্ছে। সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেল।

মোবাইল এর রিং এর শব্দে ঘুম ভাঙলো সামান্থার। চারদিক তাকিয়ে দেখে নিজের বিছানায় শুয়ে আছে। মোবাইলে টুং করে এসএমএস এলো। কিউপিড ডে এর শুভেচ্ছা। সামান্থা বুঝলো পুরোটাই স্বপ্ন ছিল। কিন্তু স্বপ্নে দেখা প্রতিটিা ঘটনা, প্রতিটা কথা এভাবে মিলে যাচ্ছে কেন? সামান্থা সব বলে দিতে পারছে এর পর কি হবে, কে কি বলবে কারন পুরোটাই সে স্বপ্নে দেখেছে। তবে কি সেটা স্বপ্ন ছিল নাকি বাস্তব। যদি বাস্তব হয় তবে গতকালের দিনটা আবার ফিরে আসে কি করে একই ভাবে? মাথার ভেতর শুধু এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সেই একই ভাবে রাতের পার্টি, জুলিয়ট এর আগমন, রাগে কিড়মিড় করতে করতে আবার রওনা হওয়া। কিন্তু এবার সাবধান। সামান্থা জানে একটু পরই এক্সিড্ন্ট হবে। সেটাকে ঠেকাতে হবে। ঠিক ১১.৩৮ মি: সামান্থা লিন্ডসে কে সাবধান করল রাস্তা দেখে চালাতে। কিন্তু তারপরেও এক্সিডেন্ট হয়ে যায়।

পরদিন আবার ঘুম ভাঙ্গে মোবাইল এর শব্দে। টুং করে এসএমএস আসে কিউপিড ডে এর শুভেচ্ছা। সামান্থা বুঝে সে আবারো পুরোনো দিনেই ফিরে গেছে। হতাশ হয়ে যায় সামান্থা। বুঝতে পারে কোথাও একটা ভুল হচ্ছে তার। সেই ভুল শোধরানোর আগে সে নতুন দিনে ফিরে যেতে পারবেনা। সে চেষ্টা চালাতেই থাকে, প্রতিদিন নানা ভাবে। নিজেকে প্রতিদিন বদলানো, জীবন দর্শন বদালো, সম্পর্ক কে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সবই। কিন্তু দিনের পর দিন যায়। নতুন দিন আর আসে না। সামান্থার জীবনে "আগামী দিন" কি আর নেই তাহলে?

আগেই বলেছি ছবিটির প্রতিটি ডায়লগ যেনো জীবনের একেকটি দর্শন। অভিনয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যেকে যার যার দ্বায়িত্ব পালন করেছে নিখুত ভাবেই। চিত্রায়ন ভাল ছিল, তবে রাতের দৃশ্যগুলোতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরেকটু লাইট বাড়ানো যেতে পারত হয়ত। ছবিটির পরিচলানায় ছিলেন রে-রুশো ইয়ং নামের একজন আমেরিকান মহিলা। এটি তার তৃতীয় ছবি।

সত্যি বলতে ছবিটি শুরুতে একটু স্লো মনে হলেও সময়ের সাথে সাথে ছবির গতিও যেনো বাড়তে থাকে। আর ছবির কথা গুলো, ভাবনা গুলো হৃদয়স্পর্শী। ছবির আরেকটি ডায়লগ দিয়ে শেষ করছি,

হতে পারে এটাই জীবনের শেষ হাসি, শেষ চায়ের চুমুক, শেষ সুর্যাস্ত, শেষ বার স্প্রিংকলার এর মধ্যে লাফ দেওয়া, অথবা কোন আইসক্রীম খাওয়া কিংবা আইসক্রীম এর কাঠি উচিয়ে জিহ্ববা বের করে থাকা এক টুকরা বরফের কনার জন্য, আমরা জানিনা এটাই শেষ কিনা। শুধু একটা জিনিস কেবল মনে রাখা দরকার। "আশা" আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। এমনকি মৃত্যুর পরেও আমাদের বাঁচিয়ে রাখে "আশা"
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৪
১০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম বিহীন বিশ্ব গড়ার চেষ্টা বিশ্ব জনসংখ্যা অনেক কমিয়ে দিবে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫০



নেতানিয়াহু বলেছে তাদের সাথে অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্র আছে। সে মুসলিম বিশ্বকে বড় রকমের হুমকি দিয়েছে। সে গণহত্যা চালাচ্ছে। আত্মরক্ষায় মরিয়া মুসলিমরাও গণহত্যা চালাবে। তখন আর সভ্যতার বাণীতে কাজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মিরর ডোল, নিজের মনের অশান্তি অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে ফ্যাসিস্টের মতো আচরণ করবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩৫

ব্লগার মিরর দৌলাকে বলছি।
আপনাকে কিছু কড়া কথা আজ বলবো। ব্লগে বর্তমানে আপনার কোন অবদান নেই। সামুর যে ব্লগপেইজটা আপনি চালান, সেখান থেকে সব পোষ্ট আপনি ড্রাফটে নিয়েছেন। সেটা আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এত হট্টগোল এত সুরাসুর এখানে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:২৬



নিত্যতই লেগে থাকে হট্টগোল, রাজপথে জায়গা নেই,
হাঁটতে গেলেই মানুষের ধাক্কায় হারাই খেই,
বিশৃঙ্খল নগরীর বুকে স্বার্থপরতার বসবাস;
এখানে মাটিতে পা ফেললেই বুকে মুহুর্মূহু দীর্ঘশ্বাস।

বাস, কার, রিক্সা, ভ্যা ন, ম্যা ক্সি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এনসিপিনামা - যে যায় লংকায় সেই হয় রাবণ ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩১


জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল আত্নপ্রকাশ করেছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি) কে নিয়ে। জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিয়ে এই দল গঠিত হয়েছে। প্রচলিত রাজনৈতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

হারিয়েছি অনেক কিছু....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫৪

হারিয়েছি অনেক কিছু....

আমি প্রতিদিন নিয়ম করে বেশ কয়েক কিলোমিটার হাটি। তবে ইদানিং হাটাহাটিতে অপ্রত্যাশিত ছন্দপতন হচ্ছে! এই যেমন, হাটাহাটির টার্গেট মিসিং! যে পথে হাটার কথা, সে পথে না গিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×