-ভাইয়া আপনি উল্টা করে গেঞ্জিটা পড়ে আছেন!
কথাটা আমার কানে ধাক্কার মত শোনালো।
নিজের গেঞ্জির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সত্যিই তো গেঞ্জিটা উলটা।
তার মানে বিকেল থেকে উল্টা করে গেঞ্জি পড়ে ঘুরছি। এই উল্টা গেঞ্জি পড়ে দুটা টিউশনিও করেছি, এটা তিন নম্বর।
এটা পড়ে আধাঘন্টার মত আড্ডাও দিয়েছি বন্ধুদের সাথে, আর তারা কেউ লক্ষ্য করেনি কিন্তু এই বাচ্চা মেয়েটা ঠিক লক্ষ্য করেছে।
আমি ব্যাপার টাকে স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে বললাম,
-গেঞ্জিটাই এরকম, তুমি তোমার ম্যাথ করো।
-নাহ,ভাইয়া। ওই যে সুতা দেখা যাচ্ছে,
-আরেহ নাহ, এটা নতুন ফ্যাশন,
-মোটেও না,
বেশ মুশকিল হলো,একবার মনে হলো গেঞ্জিটা পালটে নেই। কিন্তু তার আগে পিচ্চি টা চিৎকার শুরু করল,
-আম্মু আম্মু,
-তোমার আম্মুকে কেন ডাকছ?
-উলটা গেঞ্জি পড়ে আছেন,আম্মু দেখুক।
-আরে এটা দেখার কি আছে,
এসব বুঝাতে বুঝাতে স্টুডেন্ট এর মা হাজির,উনি এসেই বললেন,
-কি হয়েছে?
-ভাইয়া,উলটা করে গেঞ্জি পড়ে আসছে!
আমি একটু লজ্জা পেলাম। তবে নিজেকে ঠিক রেখে বললাম,
-না আন্টি, এটা এমনই।নতুন ফ্যাশন,
উনি আমার ব্যাপার টা বুঝতে পেরে বললেন,
-আচ্ছা পড়ুক।তুমি তোমার পড়ায় মনোযোগ দাও!
উনি আর কিছু না বলে সরে গেলেন।আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম, তবে সেটা পুরোপুরী না।
উনি সরে যেতেই আমার চোখ পড়ল বা দিকের মেয়েটার দিকে,স্টুডেন্টের বোড় বোন। কি যেন নাম, হ্যাঁ, নবনী।
মেয়েটা মিটি মিটি হাসছে,কি লজ্জার ব্যাপার !
এত দিন যত ভাল এক্সপ্রেশন তৈরী করেছিলাম মেয়েটার সামনে, এক ঝটকায় সব শেষ। এখন তো মুখ দেখানোই প্রবলেমের হয়ে যাবে।
এসবের পর আর পড়ানোর মুড রইল না।
নবনী যে ওখান থেকে চলে গেল তা নয়,
ও ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। আমি ও উল্টো গেঞ্জি পরে বসে রইলাম।
কিছুক্ষন বসে থেকে বললাম, আজ ছুটি।
নবনীর দিকে তাকিয়ে দেখি, ও আবার হাসছে।
তাই আমি আর দেরী না করে দ্রুত বের হতে লাগলাম,যতক্ষন এখানে থাকবো ততক্ষন লজ্জাই পেতে হবে।
তাড়াহুড়া করে বের হতে গিয়ে বাসার গেটের সাথে বাড়ি খেলাম।বাড়ি খেয়ে বেশ ভালই ব্যাথা পেলাম।
মাথায় হাত দিয়ে যেই মুখ ঘুরিয়েছি দেখি নবনী দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। সম্ভবত হাসছে।
আমার একটু রাগ লাগলো,এতে হাসার কি আছে? যদিও আমি শিউর না ও হাসছে কিনা! তবু মনে তো এমনই হলো।
বিরক্ত মুখে নবনীদের বাসা থেকে বের হয়ে কিছুটা আসতেই মনে হলো পিছন থেকে কেউ ডাকছে। আমি খানিক টা অবাক হয়েই পিছনে তাকালাম।
দেখলাম নবনী খুব দ্রুত হেঁটে আসছে। ও সোজা আমার সামনে এসে প্রায় হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
-এত জোরে ডাকছি শোনেন না?
-শুনেছি তো!
-কচু শুনছেন,এই যে আপনার ফোন!
আমি পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম ফোন নাই।
ফোনের কথা মনেই ছিল না,তাড়াহুড়ায় বের হতে গিয়ে ফোন রেখে আসছি।
আমি ফোন হাতে নিয়ে বললাম,
-অনেক ধন্যবাদ,আসলে,
-আসলে কিছুইনা। মাথায় কেমন লেগেছে?
-ভালই,
-দেখে চলবেন না?
-চলি তো"
-কচু চলেন!
আমি ওর কথা শুনে হাসলাম। মেয়েটা কথাও বলে কত সুন্দর। নবনির সাথে অবশ্য এর আগেও আমার কথা হয়েছিল তবে এভাবে আলাদা ভাবে হয় নি।
-আচ্ছা,যাই তাহলে।
-কোথায়?
-কোথায় আবার। ফোন দেয়া শেষ,এখব বাসায় যাবো।
-চলুন এক কাপ করে চা খাই,
-আমি এক কাপ খাইনা
-আচ্ছা,দুকাপ খাবেন তাহলে!
নবনি একটু হেসে সায় দিয়ে বলল,
-আচ্ছা,চলুন।
চায়ের দোকান টা একটু দূরেই, মানে বেশ দূরে। নবনীদের বাসার গলি পার হয়ে কিছুটা আসতে হয়। আমরা কথা বলতে বলতে এসে চায়ের দোকানে বসলাম।
চায়ের দোকানে বসে আমার একটু অস্বস্তি হলো, এই মেয়েটার সাথে এভাবে চা খাবো। ভাবিনি কখনো?
তবে ব্যাপার খানা মন্দ নয়!
নবনির সাথে এভাবে চা খাওয়ার শখ অনেক আগে থেকেই ছিল!
যেদিন ওকে প্রথম দেখেছি সেদিন থেকেই।
চায়ে চুমুক দিয়ে নবনী বলল,
-আপনাকে উল্টো গেঞ্জীতে ভাল লাগছে!
-আসলে ব্যাপার টা!
-আসলে কি?
-এটা এরকমই,, মানে এটাই ফ্যাশন।
নবোনি আমার কথা শোনা মাত্রই হেসে উঠল। ওর হাসি দেখে আমার একটু লজ্জা লাগল,,
কিছুক্ষন যেতেই নবনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি,
-হ্যাঁ, শিউর।
-মাঝে মাঝে আপনাকে আমাদের ক্যাম্পাসে দেখি! আপনার কেউ আছে নাকি ওখানে?
ওর কথা শোনা মাত্রই আমার বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল।মেয়েটা দেখে ফেলেছে তাহলে।
ওকে দেখতেই তো ওর ক্যাম্পাসে যেতাম।যাই হোক কিছু বোঝেনি এটাই ভাল!!
-না, বন্ধু আছে ওখানে।
-ওহ, আমি ভেবেছিলাম আপনার প্রেমিকা আছে,
-আরেহ নাহ, আমি সিঙেল!
-শিউর?
-হুম, হান্ড্রেড পারসেন্ট।
আমার কিছু বলল না,শুধু একটু চেয়ে রইল।
এরপর আর কোন কথা না বলে দুজনে চা শেষ করলাম। নবনী অবশ্য দুকাপের জায়গায় এক কাপ খেয়েই উঠল।
দোকান থেকে বেরিয়ে এসে নবনী বলল,
-তাহলে যাই!
-এগিয়ে দেবো কিছুটা!
-থাক লাগবেনা।
-আচ্ছা,বাই।
-হম! আর এর পর থেকে নিজের কাপড় পড়ার প্রতি খেয়াল রাখবেন।যদিও উলটা গেঞ্জিতে আপনাকে খারাপ লাগছেনা।
আমি নবনীর কথার জবাবে কিছু বললাম না, শুধু একটু হাসলাম।
মেসে ফিরে মনে হলো,নবনীর ফোন নাম্বার টা চাইলে মন্দ হত না।একটু আধটু তো কথা বলাই যেত।
এর পরে কোন দিন এরকম একটা সুযোগ এলে ঠিক চেয়ে নিবো।এরকম চিন্তা ভাবনা করেই ঘুমোতে গেলাম।
তবে নবনীর ফোন নাম্বার চাইতে হলো না। কারণ সকাল বেলা নবনীর ফোন এসে হাজির।ফোন নাম্বার চেনা ছিল না তাই জানতাম না ওটা নবনী।
তাই ফোন ধরেই জিজ্ঞাস করলাম,
-কে?
-ফোন ধরে কেউ কে বলে,
-না,হ্যালো। কে বলছেন?
-আমি নবনী
-কোন নবনী?
-কটা নবনীকে চিনেন,
আমি শোয়া থেকে উঠে বসলাম।নবনীর ফোন বিশ্বাসই হচ্ছেনা।জিজ্ঞেস করলাম,
-নাম্বার কোথায় পেলেন?
- নাম্বার পাওয়া খুব একটা কঠিন কাজ নয়।
-তা ঠিক।কি জন্য ফোন দিয়েছেন।
-আমি আপনার মেসেরর বাহিরে!
-সত্যি! কিন্তু কেন?
-আসলে আপনাকে উলটা গেঞ্জি তে বেশ লাগছিল তাই ভাবছিলাম একটা ফটো তুলে রেখে দেই।
-তাই নাকি?
-জ্বি তাই! এক কাজ করুন দুই মিনিটের মধ্য একটা উলটা গেঞ্জি পড়ে বেরিয়ে আসুন।
আমি অপেক্ষা করছি।
-আচ্ছা, বেরুচ্ছি।
ফোন রেখে রেডি হতে লাগলাম। দু মিনিটের জায়গায় পাঁচ মিনিট লাগলো।নবনীর সাথে এই প্রথম বের হবো! একটু চকচকে না দেখালে কি হয়?
আমি মেস থেকে উলটা গেঞ্জি পড়েই বের হলাম! মেসের যাদের সাথে দেখা হলো তারা কেউ ধরতে পারল না।তবে নবনীর সামনে যাওয়া মাত্র ও বলল,
-বাহ! উলটা গেঞ্জি!
-হ্যাঁ,
-বেশ লাগছে!বআচ্ছা রিকশায় উঠে আসুন
-কোথায় যাচ্ছি?
-আসুন তো আগে!
নবোনি রিকশার এক পাশে সরে গিয়ে বলল,
-উঠে আসুন।
আমি দেরী করলাম না, রিকশায় উঠে পড়লাম। রিকশায় উঠে আবার জিজ্ঞেস করলাম,
-কোথায় যাচ্ছি?
-যাচ্ছি কোথাও একটা!
-ওহ!
-এক কাজ করবেন আপনি আমার সাথে দেখা করার সময় সব সময় উলটা করে গেঞ্জি পড়বেন,,
-আমাদের মাঝে মাঝে দেখা হবে?
-হবে হয়ত!
-তাহলে অবশ্যই পড়ব!
নবনী আমার কথা শুনে হাসলো।আমিও অর দেখাদেখি হাসলাম।ও হেসেই বলল,
-আপনার কোন সমস্যা নাই তো!
আমি একটু ভেবে নিয়ে বললাম,
-মেয়েটা যদি আমাকে উল্টা গেঞ্জিতেই পছন্দ করে, করুক না! আমার আর কি সমস্যা!!
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:০৩