আমার পুরো ঘর জুড়ে মাত্র একটা ক্যালেন্ডার।
সেটাও এই বছরের নয়, চার বছর আগের, ২০১৩ সালের। ক্যালেন্ডার টা এমনি এমনি রাখা হয়নি, এটার গুরুত্ত্ব রয়েছে অনেক।
আমার মন যখনি খারাপ হয় তখনি আমি এই ক্যালেন্ডারের দিকে তাকাই ততক্ষনাৎ আমার খারাপ মন টা ভাল হয়ে যায়।
.
ক্যালেন্ডার টা এত যাদুকরী আমার কাছে কারণ এটা আমাকে মুনিয়া দিয়েছিল। ক্যালেন্ডারে আরো কিছু স্পেশালিটি রয়েছে তা হচ্ছে,
ক্যালেন্ডারে কয়েকটা তারিখে সুন্দর করে গোল দেয়া আছে।
তারিখ গুলো হছে, এক জানুয়ারী,
১৪ই ফেব্রুয়ারী, ২৭ এপ্রিল,২ জুন।
এগুলোতে যে শুধু গোল করে দেয়া আছে তা না, তারিখ গুলোর পাশে সুন্দর করে কোটেশন দিয়ে লেখাও আছে কিছু।
.
সব কিছু মুনিয়া লিখেছিল।
এক জানুয়ারী ছিল আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার দিন। এই দিনই ক্যাম্পাসে ওকে প্রথম দেখেছিলাম,প্রথম কথাও ওই দিনই হয়েছিল।
তাই ওই তারিখের পাশে মুনিয়া লিখেছিল, "দেখা হওয়া দিবস।"
.
১৪ই ফেব্রুয়ারী ভ্যালেণ্টাইন ডে তে ওকে প্রথম ভালবাসার কথা জানিয়েছিলাম।
তাই ওই তারিখের পাশে লেখা "প্রস্তাব দিবস।"
.
২৭ এপ্রিল এ মুনিয়া আমাকে হ্যাঁ বলেছিল তাই সেটার পাশে লেখা "রাজী হওয়া দিবস।"
আর শেষ টা ২ জুন তার পাশে লেখা জন্মদিন দিবস,, এটা মুনিয়ার জন্ম দিন এজন্য।
.
ক্যালেন্ডার টা আমাকে মুনিয়া দিয়েছিল অন্য কারণে। আমি এসব দিবস কিছুই মনে রাখতে পারতাম না,,
সব ভুলে যেতাম।তখন তো আর এখন কার মত চালাক ছিলাম না তাই।
এজন্য অবশ্য মুনিয়া অনেক রাগ করেছিল।
বলেছিল,
-এত ভুলে গেলে কিভাবে হবে? তুমি তো আমাকেও একদিন ভুলে যাবা,,
.
ওর কথা শুনে আমার নিজেরই মন খারাপ হয়েছিল, কেন যে মনে রাখতে পারিনা। ডায়েরীতে সব লিখেও রেখেছিলাম,প্রায় প্রায় বের করে রিভাইজ ও দিতাম।তবুও ভুলে গেছি।
.
তবুও মুনিয়াকে শান্তনা দিয়ে বলেছিলাম,
-এর পরের বার আর ভুলব না,,
.
মুনিয়া আমার কথা শুনে খুব একটা ভরসা পায়নি তাই তার পরের দিন মুনিয়া এই ক্যালেন্ডার টা আমাকে গিফট করে। আমি ক্যালেন্ডার টা খুলে অবাক,,ব্যাপার কি?
এক বছর আগের ক্যালেন্ডার?
.
মুনিয়া আমার ভুল ভাঙিয়ে দিয়ে বলেছিল,
-হাদারাম,, ক্যালেন্ডার এর নিচে দেখো,
.
আমি নিচে তাকিয়ে দেখি এরকম কিছু তারিখে গোল করে দাগ দেয়া,আবার কোটেশনে সেই তারিখের গুরুত্ত্ব লেখা।
আমি এটা পেয়ে মুনিয়েকে একটা বড় সরো ধন্যবাদ দিলাম কাজ টা ও বেশ ভালো করেছে।
এরপর থেকে আর ভুলবোনা এসব।
.
অবশ্য এর পরে মনে রাখার প্রয়োজন ও পরেনি,,
.
ক্যালেন্ডার টার নিচে ডিসেম্বর মাস টাতেও সুন্দর করে একটা তারিখে গোল দেয়া আছে, সেটাতেও কোটেশন করে কিছু লেখা আছে।
এবার অবশ্য মুনিয়া লেখেনি আমি লিখেছিলাম।
১৭ডিসেম্বর এর পাশে সুন্দর করে লিখেছিলাম বিয়ে দিবস।এই দিন মুনিয়ার বিয়ে হয়।
যদিও আমার সাথে হয়নি অন্য কারো সাথে হয়েছিল
.
১৭ ডিসেম্বর তো আমাদের দেখাও হয়নি।
আমাদের দেখা হয়েছিল ১৯ ডিসেম্বর।
সেদিন মুনিয়া আমার পাশে বসতে বসতে বলেছিল,
-সাদিক আমার বিয়ে হয়ে গেছে"
.
আমি হাসি হাসি মুখে বলেছিলাম,
-স্বপ্নে নাকি?
.
মুনিয়া আমার প্রশ্নের জবাবে যখন কিছুই বলল না,চুপ করে রইলো।তখন বুঝলাম ও সিরিয়াস।
আমি আবার বললাম,
-সত্যি?
.
ওর জবাব ছিল,
-হ্যাঁ,,
.
কিভাবে কি হয়েছে? শুনতে ইচ্ছে করেনি।
মনে রাখার ইচ্ছেও করেনি এসব।
তবুও ক্যালেন্ডার টা মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দেয়।
মুনিয়ার সাথে ওইদিনের পর আর কখনো আমার কথা হয়নি, ও আমাকে ছোট্ট একটা ম্যাসেজ পাঠিয়েছিল ফোনে।সেটাও খুব সুন্দর করে ক্যালেন্ডারের নিচে লিখে রেখেছি।
.
আজ ২৭ এপ্রিল,
মুনিয়া চার বছর আগে এই দিন আমাকে হ্যাঁ বলেছিল।কি যে আনন্দ হয়েছিল আমার সেদিন, বলে বোঝানো যাবেনা।
মনে হয়েছিল আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গিয়েছিলাম। নাচতে ইচ্ছে হয়েছিল সেদিন।
কত দ্রুতই কেঁটে গিয়েছে ভাল সময় গুলো।
কি থেকে কি হয়েছে?
.
ক্যালেন্ডার টা মাঝে মাঝে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে, পারিনা কেন জানি?
ক্যালেন্ডার টা খারাপ না মোটেও, এটা আমাকে আনন্দ দায়ক স্মৃতি গুলো মনে করিয়ে দেয়।
আমার আর কিবা আছে বেঁচে থাকার জন্য এই স্মৃতি গুলো ছাড়া?
.
দুইদিন আগের কথা, মুনিয়াকে দেখেছিলাম এক ছেলের সাথে নিউমার্কেট এ,, কি যেনো কেনাকাটা করছিল।ছেলেটা সম্ভবত ওর হ্যাজবেন্ড ছিল। হাত ধরে ছিল ছেলেটার, ঘুরছিল একসাথে দুজন।
বেশ মানিয়েছিল দুজন কে।
মুনিয়ার চোখে চোখ পড়ার আগেই চলে এসেছিলাম ওখান থেকে। কেন শুধু অস্বস্তি তে ফেলবো ওকে? ভালবাসি যে।
.
আমি শুধু ঘুরে ফিরে এসে এই ক্যালেন্ডার এর সামনে দাড়াই,ক্যালেন্ডার এর নিচে ছোট্ট করে লেখা আছে,
"অনুভূতিরা সময়ের মত,এক সময় পালটে যায়"
.
এটা পড়তেই আমার মুখে হাসি ফোঁটে, নিজেই নিজেকে বলি পাল্টাবো,পাল্টে যাবো একদিন।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন