-মিতু একটা ব্যাপার জানো কি?
-কি?
-তুমি উল্টালে মিতু হয় আবার মিতু উল্টালে তুমি হয়,,
-মানে?
-কয়েক বার তুমি তুমি উচ্চারণ করো দেখবা মিতু হয়ে গেছে।
-বুঝিনাই,, কি বলতেছ?
.
শুভ আরেকটু আগ্রহ নিয়ে বলে,
-এই দেখো আমি উচ্চারণ করছি।
তুমি তুমি তুমি তুমি তুমি তুমি তুমি তুমি তুমি।
দেখছো ব্যাপার টা মিতু হয়ে গেছে।
.
মিতু মুখে হাসি নিয়ে জবাব দেয়,
-ও এই ব্যাপার।
-হুম,তুমি অবাক হও নাই
-অবাক হওয়ার কি আছে। জানতাম তো ব্যাপার টা,
-ও আচ্ছা।
.
শুভ ভেবেছিল মিতু এই ব্যাপার টায় চমকাবে।
বেশ খুশি হবে। অনেক আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করবে কোথায় শিখছ, কিভাবে পারলা এটা? ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু এমন হল না।
মিতু আগে থেকেই জানে।
শুভ কোন ভাবেই মিতুকে চমকাতে পারেনা। পারেনা মুগ্ধ করতে।
.
শুভ এ জন্য একটা বই ও কিনেছে বিশ টাকা দিয়ে। বইয়ের নাম "ছোট ছোট যাদু শিখে আপনার বন্ধুদের চমকে দিন।"
আজকে যেটা করলো সেটা ওই বইয়ে ছিল না। আজকের টা শিখেছে ওর ছোট ভাই রাফির কাছে থাকে।
সকালে রাফি ওর কাছে এসে বলল,
-ভাই তুই কয়েক বার ফিরা ফিরা উচ্চারণ কর,যাদু দেখবি।
.
শুভ কয়েকবার উচ্চারণ করেই দেখল ব্যাপার টা রাফি হয়ে গেছে। শুভ এই ব্যাপার টা দেখে খুশিই হয়েছিল।তখনি ভেবে রেখেছিল ব্যাপার টা মিতুর সামনেও করবে তাহলে মিতুও খুশি হবে, চমকাবে।এজন্যই আজ জরুরী ভাবে মিতুকে ডেকে আনা।
.
কিন্তু মিতু শুভর কোন কিছুতেই চমকায় না।
গতবার বই টা পড়ে শুভ মিতুর সামনে এসে বলল,
-যে কোন একটা সংখ্যা ধরো, আমি সেটা যাদু দিয়ে বের করে দিবো।
.
তখন মিতু উল্টা হেসে বলল,
-হিহিহি, তুমি ধরো আমি বের দিচ্ছি।
.
সেদিনের ব্যাপার টাও মিতু জানে। সব কিছু যদি মিতু জানে তাহলে কিভাবে হবে?
কিভাবে ও মিতুকে চমৎকৃত করবে?
.
-কি ভাবছ?
মিতুর ডাকে চিন্তা ভাঙে শুভর।ও মিতুর দিকে তাকায়। মিতু আজ শাড়ি পড়ে এসেছে।
এটাকে কি কালার বলে মনে পড়ছে না শুভর।
মিতুকে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে।তবে মিতু কি মনে করবে সেটাও ব্যাপার।তবে শাড়িটায় দারুন মানিয়েছে মিতুকে। পরের বার জন্মদিনে মিতুকে এমন একটা শাড়ি দিতে হবে।
-কি হল? কি ভাবছ?
-না কিছুনা।
-চলো তোমার নাম টা ট্রাই করি,
-হ্যাঁ,শুভ।
-উল্টালে হয় ভসু।
.
এটা বলেই মিতু হাসতে লাগল। তাই দেখে শুভ জিজ্ঞেস করল,
-হাসছ কেন?
-ভসু, দারুন নাম,
.
শুভর একটু রাগ লাগে। কি নাম রাখছে নানা। একটা ভাল নাম রাখলেই পারতো। মিতুর নাম টা কত সুন্দর। উল্টালেও সুন্দর।
-ভসু একবার বলবা কেন তুমি?
কয়েকবার ভশু বলবা।
-আচ্ছা,ঠিকাছে কয়েকবার বলব।
ভশু ভশু ভশু ভশু ভশু ভশু ভশু
মিতু কয়েক বার ভশু বলে সেটাকে শুভ বানিয়ে দিল।
.
শুভ কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,
-আচ্ছা,মিতু। তুমি কিসে অবাক হও মানে মুগ্ধ হও?
-অনেক কিছুতেই অবাক হই।
-যেমন?
-মেসির খেলা দেখে অবাক হইই।মেসি মাঝে মাঝে এমন এমন গোল করে সেগুলো দেখে অবাক না হয়ে পারিনা।বাংলাদেশের খেলা দেখেও অবাক হই।
-এসবে না, এমনিতে হওনা?
-হই তো, ফেসবুকে অনেকের গল্প পড়ে হই। ইমরানের গান শুনে হই।
-ও আচ্ছা, ঠিকাছে।
.
শুভর এটা শুনে মন খারাপ হয়ে যায়। ও ফুটবল ক্রিকেট কিছুই পারেনা। আর গল্পও লিখতে পারেনা। গান তো অনেক দূরের কথা।
এসবের কিছু একটা পারলেই মিতু ওর প্রতি চমৎকৃত হত।ও খুব চায় মিতু ওর প্রতি মুগ্ধ হোক।মুগ্ধ হয়ে কিছু বলুক।
শুভ ঠিকমত বাইক টাও চালাতে পারেনা। আগের বার বাইক নিয়ে এক্সিডেন্ট করে সাতদিন বিছানায় ছিল।এটা অবশ্য মিতু জানেনা।মিতু জানলে শুভকে ভাববে এই ছেলে বেকার,কিচ্ছু পারেনা তাই এখনো ও মিতুকে জানায়নি।
.
-আচ্ছা, মিতু আজ উঠি।
-কেন?
-এমনিতেই,,
-এত জরুরী ভাবে ডাকলা আর এখনি যাবা?
-হুমম,
-আচ্ছা,,
.
মিতুকে পৌছে দিয়ে শুভ বাসায় এসে গল্প লিখতে বসে । অনেক ক্ষন হয়ে গেলেও একটা লাইন ও লিখতে পারেনা।বিরক্ত হয়ে বসে থাকতেই মোবাইল টা বেজে ওঠে,মিতুর ফোন।
ফোন ধরতেই মিতু বলে,
-কি করছ?
.
শুভ জবাব দেয়,
-গল্প লিখছি,
-তুমি পারো?
-না চেষ্টা করছি,খুব কঠিন।
-আমার মনে হয় তুমি পারবা,
-কিন্তু পারছিনা,
-চেষ্টা করো,আর হয়ে গেলে পড়তে দিও,
-আচ্ছা।
.
নিজের প্রতি রাগ লাগে শুভর। সবাই এত কিছু পারে ও কিছুই পারেনা কেন?
লেখা বাদ দিয়ে উঠে ও বাহিরে চলে যায়।
.
মিতুর বাসার সামনের চায়ের দোকানে বসে বসে চিন্তা করে।ও কিছুই পারেনা তবুও মিতু ওকে ভালবাসে।অদ্ভুত ব্যাপার।
মিতুর মত এত সুন্দর একটা মেয়ে এমনি এমনি কেন ওকে ভালবাসবে?
এসব ভাবতে ভাবতেই একটা বড় সিদ্ধান্ত নেয় শুভ। তার পর মিতুকে ফোন দেয়।
মিতু ফোন ধরেই বলে,
-তোমার কথাই ভাবছিলাম,
-কি ভাবছিলে?
-ফোন করবা,
-ওহ, মিতু তোমাকে একটা কথা বলার ছিল,
-আচ্ছা,বলো।
-আমরা ব্রেকাপ করি,
-কেন?
-আমি তোমাকে কোন ভাবেই ইম্প্রেস করতে পারিনা,,
.
মিতু শুভর কথা শুনে হেসে ফেলে।
-গল্প লিখতে পারোনাই,তাই মন খারাপ,
-না আমি সিরিয়াস।
-আচ্ছা,,তুমি আমার বাসার সামনের দোকান টায় বসে আছ তাইনা।
শুভ অবাক হয়। জিজ্ঞেস করে,
-তুমি কিভাবে জানো,
-জানি, ওখানেই দাঁড়াও।
.
মিনিট দুয়েক পরেই মিতু ওর বাসা থেকে বের হয়।সোজা এসে শুভর সামনে দাঁড়ায়।
-কি হইছে? ব্রেকাপ করতে চাও?
-হুম,
-আরেক দিন এসব বললে কান ছিড়ে ফেলব।
-দেখো মিতু,
-কোন কিছু দেখব না,কান ধরো। কান ধরে বলো এসব কথা আর কখনো মুখেও আনবানা।
.
মিতু একটু থেমে আবার বলে,
-কে বলছে ইমপ্রেস করতে পারোনা। এই যে প্রতি রাতে আমার বাসার সামনে আসো। আমার ঘরের লাইট না নেভানো পর্যন্ত এখান থেকে যাওনা।এটাতে সবচাইতে বেশি অবাক হই, ইমপ্রেস হই।
-তুমি লক্ষ্য করছ?
-হুম,আর কখনো বলবা ব্রেকাপের কথা,
-না,,
-কান ধরো,
.
শুভ কান ধরে বলে,
-আর কখনো এটা বলব না।
.
মিতু এটা দেখে হাসে।
আবার মিতু বলে,
-যাও,ফুচকার দোকান খুঁজে নিয়াসো।
-এখন, এত রাতে?
-হ্যাঁ, ইম্প্রেস করতে চাও করো,
.
শুভ ঘন্টা খানেক খুঁজে একটা দোকান পেয়ে যায় ফুচকার।সেটা নিয়ে ফেরে মিতুর বাসার সামনে। মিতু ফুচকা খায় আর রাগী চোখে তাকিয়ে থাকে শুভর দিকে।এই চাওয়ায় মুগ্ধতা খোঁজে শুভ। হয়ত দেখতেও পায়।
শুভর অবশ্য বেশ ভালো লাগে মিতুকে দেখতে, রেগে গেলে মিতুর চোখ বড় হয় তখন বেশ লাগে।
.
মাঝে মাঝে ভালবাসা গুলো কিছু না দেখেই হয়ে যায়। যে ভালবাসা গুলো এমনিতেই হয়ে যায় সেগুলো হারাতে নেই,কোন ভাবেই হারাতে নেই। শুভও হারাবে না।
আকড়ে ধরে থাকবে মিতুকে।
.
সব ভালবাসা তো আর মুগ্ধতা দিয়ে হয়না,কিছু কিছু ভালবাসা এমনি হয়ে যায়, খুব সহজে হয়ে যায়। তবুও ভালবাসা গুলো ভাল থাকে, ভালবাসায় সত্যি থাকে। মুগ্ধতা কেটে গেলে অন্য ভালবাসা গুলোর এই ভালবাসা গুলো নষ্ট হয়ে যায়না। থেকে যায় ভালবাসার মানুষ গুলোর মাঝে।
.
.
.
গল্প- যে ভালবাসা হারাতে নেই-৩
-নাহিদ পারভেজ নয়ন