-হ্যালো,,
.
আবীরের একটা হ্যালো শুনেই মিষ্টি বুঝে গেল, ছেলেটার এখনো ঠিকমত ঘুম ভাঙেনি।
প্রায় দশটা বাজে, ওঠা দরকার ছিল যতই ছুটির দিন হোক।
.
মিষ্টি জিজ্ঞেস করলো,
-তুমি জানো কটা বাজে?
-নাতো কেন? আর আজ তো ছূটির দিন।কি হয়েছে?
-আমি ঢাকায় আসছি,,
-সত্যি!
-হুম,
.
মিষ্টির কথা শুনে আবীর ধরপড় করে বিছানায় উঠে বসে।জিজ্ঞেস করে,
-তুমি এখানে?
-হুম,,
-কার সাথে আসছ?
-একা একা,
-কেন আসছ?
-তোমাকে দেখতে,
-নেক্সট উইক যাওয়ার কথা ছিল তো আমার,
-জানিনা কিছু,,
-আচ্ছা, ওয়েট পাঁচ মিনিট। আমি আসছি।
-হুম,
.
কয়েক দিন ধরেই মিষ্টির মন ভালো নেই। সেটার কারণ ওর জানা নেই। ওর মন প্রায় প্রায় হুট করেই খারাপ হয়। মন খারাপের কারণ আবীর হতে পারে। আবীর কে ইদনিং একটু চেঞ্জ মনে হচ্ছে তবে সেটা আবীরের কোন কাজে বোঝার উপায় নেই।
মিষ্টির মন শুধু এটা বলছে,মন সব সময় ঠিক বলবে এমন টা নয়।
.
আবীরের সাথে রোজ কথা হচ্ছে ওর, কিন্তু সেটা পরিমানে অল্প। আবীর নাকি সারাদিনই বিজি থাকে।
তাই আজ হুট করে কুমিল্লা থেকে চলে আসা দেখা করতে। আবীর অবশ্য বলেছিল নেক্সট উইক ও কুমিল্লায় আসবে কিন্তু এক সপ্তাহ অপেক্ষা করার মত শক্তি মিষ্টির ছিল না।
.
মিনিট দশেক অপেক্ষা করতেই আবীরের দেখা পেল ও ।আবীর প্রায় হাঁপাতে হাঁপাতে মিষ্টির সামনে এসে দাঁড়াল।
.
-বসো, রেস্ট নাও,
-হুম,,
.
আবীর মিষ্টির পাশে বসে দম নিতে লাগলো।
-এত দ্রুত এলে কেন?
-আজব,তুমি একা একা বসে আছ আর আমি তাড়াতাড়ি আসব না? আর রিকশা গুলোর পার্ক এর ভেতর ঢোকা নিষেধ এজন্য দৌড়াতে হলো,,
.
আবীরের কথা শুনে মিষ্টির মনে হয়না এ ছেলে একটুও বদলেছে।কিন্তু ফোনে কথা বলতে চাইলে মিনিট দশেক পরে ওর অজুহাত শুরু হয়।এই কাজ আছে, ওখানে টিউশনি আছে,সকালে উঠতে হবে ইত্যাদি।
প্রেমের প্রথম দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে চাইতো তখন তো কোন অজুহাত দিত না। তখন শুধু চাইত বেশি করে কথা বলতে।
প্রবলেম টা ইদানিং শুরু হয়েছে।
.
আবীরের দিকে ভাল করে তাকালো মিষ্টি।
ছেলেটাকে হালকা পাগলের মত লাগছে এত দ্রুত আসছে চুল আচড়ানোর কথাও ভুলে গেছে। অবশ্য এমন দেখতে ভাল লাগছে ওর।
ও নিজেও আপনা আপনি হেসে উঠল।
.
আবীর ওর হাসি দেখে জিজ্ঞেস করলো,
-হাসছ কেন?
-এমনিই হাসি,,
.
আবীরের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি বলল,
-তোমার ঠোঁট ফাটা কেন?
.
আবীর ঠোঁটে হাত দিয়ে দেখলো সত্যি ফাঁটা কিনা? চামড়া গুলো উঠে যাচ্ছে। কদিন ধরেই ঠোঁটে কিছু দেয়া হচ্ছেনা।
-হালকা শীত তাই এমন,
-ঠোঁটে কিছু দাও না?
-দেই তো,, আজ দেই নি,
.
মিষ্টি ওর ব্যাগ খুলে একটা ভ্যাসিলিনের কৌটা বের করে বলল,
-কাছো আসো,দিয়ে দেই,
-আমার হাতে দেও,
-কেন? আমি দিয়ে দিলে সমস্যা?
-আরে লোক জন দেখবে না?
.
যদিও এসব পার্ক এ কেউ কারো দিকে নজর দেয়না।সবাই প্রেমিক প্রেমিকা সহ আসে।
ওরা সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত থাকে,,অন্য কারো দিকে নজর দেওয়ার সময় কখন?
.
মিষ্টি আশে পাশে তাকিয়ে বলল,
-আশে পাশে তাকিয়ে দেখ?
.
আবীর আশেপাশে তাকালো।
আশেপাশে তেমন কিছু নেই,,কাপল দের ছাড়া।
-কিছুই তো নেই,,
-কাপল গুলোকে দেখতেছ,,
-হুম,
-দেখো ওরা কিভাবে বসে আছে?
.
আবীর কিছু বলল না। মিষ্টি আবার বলল,
-দেখো, গায়ের সাথে গা লাগিয়ে বসে আছে।
জঙ্গলের দিকে গেলে দেখবা অনেকে কোলেও বসে থাকে।
অনেকে তো বুকেও হাত দেয় মেয়েদের।
-হুম,
-তো আমি তোমার ঠোঁট ছুতে পারিনা,
-পারো,,
-না থাক লাগবেনা,,
.
ভ্যাসিলিনি টা এগিয়ে দিয়ে মিষ্টি বলল,
-নাও, নিজেই দাও,
.
আবীর ভ্যাসিলিন টা নিয়ে ঠোঁটে মেখে আবার ফেরত দিয়ে বলে,
-হঠাৎ কি হয়েছে তোমার?
-কিছু না তো,
.
মিষ্টি মুখে না বললেও আবীর বোঝে কিছু একটা অবশ্যই হয়েছে,, এমন ভাবে মিষ্টি কখনোই কথা বলেনা।
.
আবীর জিজ্ঞেস করে,
-নাস্তা করছ?
-না,
-চলো করি,,
-ইচ্ছা হচ্ছেনা।
.
আবীর কি বলবে ভেবে পায়না। হুট করে মিষ্টির ঢাকায় আসা কোন তো ব্যাপার আছেই।
.
কিছুক্ষন যেতেই মিষ্টি বলে,
-নাদিয়া কে?
.
মিষ্টির মুখে নাদিয়ার নাম শুনে আবীর অবাক হয়। নাদিয়াকে মিষ্টি কিভাবে চেনে?
নাদিয়া ওর ল্যাব পার্টনার। মেয়েটা অবশ্য ওকে পছন্দ করে, তবে ও নিজে করেনা।
আবীর জবাব দেয়,
-কেন?
-এমনিতেই,,
-ও আমার সাথেই পড়ে,
-মেয়েটা দেখতে সুন্দরী অনেক?
-হুম,সুন্দর
.
মিষ্টি আর কিছু বলেনা।নাদিয়ার ব্যাপার টা আবীরের এক ফ্রেন্ডের কছে থেকে জেনেছে ও।ওদের মাঝে কিছু আছে কিনা তা জানেনা।
তবে ওরা সারাদিন এক সাথেই নাকি ঘোরাফেরা করে।
.
আবীর জিজ্ঞেস করে,
-কার কাছ থেকে শুনছ ওর কথা?
-বলতে চাচ্ছিনা,,
-আচ্ছা, ঠিকাছে। শোন ওর সাথে আমার কিছুই নেই,,
.
মিষ্টিকে দেখে বোঝা যায়না ও আবীরের এই কথা বিশ্বাস করেছে কিনা?
আবীরের সাথে সত্যিই নাদিয়ার কিছু নেই।
তবে ইদানিং নাদিয়ার কথা ভাবছে আবীর।
ঢাকার মেয়ে,প্রচুর মডার্ন আর দেখতেও বেশ।
.
মিষ্টি আবার জিজ্ঞেস করে,
-আচ্ছা,তুমি আমাকে ভালবাসো কেন?
.
আবীর একটু ভেবে জবাব দেয়,
-এমনি ভালবাসি,ভালবাসার কারণ থাকেনা,,
.
মিষ্টির পছন্দ হয়না উত্তর টা।
আবীরের সাথে ওর মাসে দু একবার দেখা হয়। এমনি জিনিষ টা নষ্ট হওয়ার জন্য এটা অনেক সময়।
শহরের মেয়ে গুলোর মত তো আর সবাই হতে পারেনা। ধরে রাখতে পারেনা নিজের প্রিয় মানুষ টাকে। প্রিয় মানুষ টার সব ইচ্ছাও পূরণ করা সম্ভব হয় না। ও নিজেও বুঝে আবীরের সাথে ওর দুরত্ত্ব তৈরি হচ্ছে। ও আবীরকে কোন ভাবেই হারাতে চায়না, কোন ভাবেই না। এসব ভাবতেই মিষ্টির চোখে জল আসে। ও সেটা আবীর কে বুঝতে না দিয়ে বলে,
-আবীর, আমি তোমার জন্য সব কিছু করতে পারবো,,
.
আবীর কিছু বলেনা চুপচাপ অবাক চোখে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকে। মিষ্টি আজ এমন করছে কেন বুঝতে পারছেনা ও।
নাদিয়ার কথা টা নিয়ে কি মিষ্টি এখনো ভাবছে? ওর তো সত্যি নাদিয়ার সাথে কিছু নেই।
.
মিষ্টি আবার বলে,
-শহরের মেয়েটা তোমার জন্য যা করতে পারবে আমিও তাই পারবো,,
.
আবীর কিছু বলতে যাবে তার আগে মিষ্টি ওকে থামিয়ে দিয়ে নিজে বলে,
-বাসায় যাব,বিকেলের আগে ফিরতে হবে,
-আচ্ছা,
.
পার্ক থেকে বের হয়ে রিকশা ডেকে উঠে পরে দুজন। রিকশায় বসে আর কোন কথা বলেনা মিষ্টি। শুধু দু একবার হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে।
আবীর মিষ্টিকে কি বলবে ভেবে পায়না।
নিজেকে ওর দোষী মনে হয়।
ও কোথায় ভুল করেছে জানেনা?
তবে ওর জন্য মিষ্টি কষ্ট পেয়েছে এটা জানে।
.
সায়েদাবাদে রিকশা থামতেই মিষ্টি বাসের টিকেট কেটে একটা বাসে উঠে যায়।
আবীর কে বাই পর্যন্ত বলেনা।
আবীর চুপচাপ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।
.
মিষ্টি বাসে উঠে জানালা দিয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা আবীরের দিকে তাকায়। ও নিজেও জানেনা আবীর এখনো ওর আছে কিনা?
.
আবীর শুধু চিন্তাই করছিল মেয়েটাকে কিভাবে বুঝাবে সে ওকে ভালবাসে।বাস যখন স্টার্ট দিল তখন আবীর ও বাসে উঠে গিয়ে মিষ্টির পাশে বসল। আবীরের মনে হয়েছিল ও যদি এখন মিষ্টির পাশে গিয়ে না বসে তবে ভালবাসার অপমান হবে,যে ভালবাসা ও কোন ভাবেই হারাতে চায় না।
.
ভালবাসা মানুষ গুলোকে যতটা শক্তিশালী বানায় ততটা অসহায় ও বানিয়ে দেয়।
অসহায় মানুষ গুলো ভালোবাসার জন্য যে কোন কিছুই করতে পারে।
তবে মাঝে মাঝে অনেক কিছু করাটা ভুল মানুষের জন্য হয়ে যায়।
.
সবাই তো ভালবাসার মানে টা বোঝেনা।
যারা বোঝে তারা কখনো এসব ভালবাসার মানুষকে হারাতে দেয়না।
সব করতে পারা মানুষের সংখ্যা খুব কম হয়,খুব কম।
.
আবীর মিষ্টির পাশে বসতে বসতে বলল,
-কি কি করতে পারবা?
.
মিষ্টি কিছু বলেনা।চোখ তুলে শুধু আবীরের দিকে তাকায়। আবীর নিজেই বলে,
-চলো বিয়ে করি,, করবা?
.
একটু থেমে আবীর মিষ্টির বা হাত টা ধরে আবার বলে,
-কেন ভালবাসি? এটা জরুরি নয়। জরুরী এটাই যে আমি তোমাকে ভালবাসি,,
.
আবীরের কথাটা শুনে মিষ্টির মুখে হাসি ফোটে।উত্তর টা পছন্দ হয় ওর।
এবার মিষ্টি মুখ খুলে বলে,
-আচ্ছা, এবার নামো। বাস স্টার্ট দিছে,
-না কুমিল্লা যাবো। মা বাবাকে আজকেই তোমার বাসায় পাঠাবো।কিছুতেই তোমাকে হারাতে চাইনা।
-আচ্ছা,,
ও নিজেও আবীরের হাত টা শক্ত করে ধরে।
.
ভালবাসার ভ থেকে ল এর দূরত্ত্ব টা অনেক।
মুখে তো সহজে বলাই যায়,মন থেকে ব্যাপার একটু দূরত্ত্বের যা সহজে বের হয়না। তবে যখন বের হয় তখন সেটা সত্যিকারের হয়, সেটা মিথ্যা হয়না।
.
এসব ভালাবাসা গুলো হারানো ঠিক না, কোনভাবেই ঠিক না।
.
.
গল্প:: যে ভালবাসা হারাতে নেই -১
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:১৪