সাদিক আমার প্লেটে ওর ভাগের মাছের পিস টা তুলে দেওয়ায় একটু অবাকই হলাম ।
যে ছেলে পারলে আমার মাছ নিয়ে খেয়ে ফেলে সে হঠাৎ এত্ত ভাল হলো কিভাবে?
.
জিজ্ঞেস করলাম,
-ব্যাপার কি? মাছ টা আমাকে দিলি যে?
.
ও হাসতে হাসতে বলল,
-দোস্ত,, আজ সিথীকে ফাস্ট কিস করবো,,
-প্লানিং করে কিস?
-হুম,
-তো ও কি বলে দিছে মাছ খাওয়া যাবেনা,,
-না,আসলে মাছ খেলে মুখে মাছের গন্ধ লেগে থাকতে পারে,, তাই রিস্ক নেয়া যাবেনা।
-বেশ ভালো তো,,
-হুম,,
.
সাদিক দ্রুত ওর খাওয়া শেষ করে বের হয়ে গেলো।ফাস্ট কিস,লেট হওয়া যাবেনা।
আমি ধীরে সুস্থে খাওয়া শেষ করলাম।
মেসে মাছের পিস খুব ছোট করে।এক টুকরোতে একটু খেতে সমস্যা হয় তবে দু টুকরো মাছে বেশ খাওয়া হয়।
.
আমি খাওয়া শেষ করে বিছানায় শুয়ে মিষ্টিকে ফোন দিলাম।
ও ফোন ধরেই বলল,
-তুমি তো অনেক দিন বাঁচবা?
-কেন?
-তোমাকেই ফোন দেয়ার কথা ভাবছিলাম,,
-বাহ খুব ভাল,,
-তুমি খেয়েছ?
-হ্যাঁ,মাত্র,, তুমি?
-হুম,
-আচ্ছা, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
-হুম, বলো,,
-আচ্ছা,, মাছ খেয়ে ঠোঁটে চুমু খেলে কি মাছের গন্ধ পাওয়া যাবে??
.
মিষ্টি আমার প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষন হাসলো। ও প্রচুর হাসতে পারে,অবশ্য যাদের হাসি সুন্দর তাদের বেশীই করে হাসা উচিত।
ওর হাসি আমার কাছে দেখার চাইতে শুনতেই বেশি ভাল লাগে।
.
ও নিজের হাসি থামিয়ে বলল,
-চুমু খেয়ে দেখতে হবে,,
-আচ্ছা,, ঠিকাছে,, এর পর দেখা করার দিন মাছ খেয়ে আসবা,,
.
ও আমার কথা শুনে আবার হাসলো।
-কি হলো হাসছ কেন?
-গতবারের দেখা করার কথা মনে আছে,, সেবার ও চুমু খাওয়ার কথা ছিল।
-গতবারে একটু কনফিডেন্স এর অভাব ছিল।
.
এবারো মিষ্টি আমার কথা শুনে হাসলো। এত হাসি এই মেয়ে পায় কোথায়।আমি তো ঠিকই বললাম। সত্যি গতবার একটু কনফিডেন্স এর অভাব ছিল,, অনেক প্লানিং করে গিয়েছিলাম।
যে কোন মূল্য মিষ্টিকে চুমু খাবই।কিন্তু পারিনি, তখনই বুঝেছি প্লানিং করে আর যাই হোক চুমু খাওয়া যায়না।এই যে সাদিক গেছে, ও নিজেও পারবেনা।
.
মিষ্টি ওর হাসি থামিয়ে বলল,
-পরের বার কনফিডেন্স থাকবে তো?
-হুম, অবশ্যই,, আমরা সব কিছু খেয়েই ট্রাই করবো,, সেটার স্বাদ চুমুতে পাওয়া যায় কিনা?
-আচ্ছা, ঠিকাছে,,
.
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই মিষ্টি বলে উঠল,,
-আমার ডিউটি আছে,, রাতে ফোন দিবো,,
-আচ্ছা, ঠিকাছে,,
.
মিষ্টির সাথে আমার প্রেম তিন বছরের,,
এ তিন বছরে ওর সাথে দেখা হয়েছে উনচল্লিশ বার। এত কম দেখা হওয়ার কারণ ও এক খানে থাকে আর আমি অন্য খানে খানে থাকি। ঊনচল্লিশ বার অনেক সময় কারো প্রতি অস্বস্তি কাঁটানোর জন্য।
কিন্তু আমি মিষ্টির সামনে গেলে এখনো অস্বস্তিতে পরি। ঠিকমত কথাও বলতে পারিনা।
.
আর ইদানিং তো ও এপ্রোন পরে আসে।এতে আরো বেশি অস্বস্তি হয়।
সেদিন বললাম,
-এপ্রোন পরে আসো কেন?
-ভালো লাগেনা?
-বেশি ভাল লাগে,,
-হুম,, তোমার একটা ডাক্তার বউ হবে বেশ লাগবে শুনতে যদিও এখন ইন্টার্ন করছি।
-এর পর থেকে এপ্রোন রেখে আসবা,,
-কেন?
-আজব, প্রেম করার সময় এপ্রোন পরতে হবে নাকি?
-উহু, আমরা প্রেম কি পার্ক এ বসে করি নাকি,,
-এপ্রোন পরলে তোমাকে ম্যাম ম্যাম লাগে,,
.
মিষ্টি আমার কথা শুনে হাসে। যদিও এটা সত্য কথা। একটা ডাক্তার মেয়ের সাথে স্বাভাবিক হওয়া বেশি অসুবিধার।।মন থেকেই অন্য রকম একটা সম্মান চলে আসে।
.
গতবার যখন চুমু খেতে পারলাম না তখন মিষ্টিকে বললাম,
-চলো বিয়ে করি,
-কেন?
-আরে প্রেমিকা বলে চুমু খেতে পারিনা, বউ হলে ঠিক পারবে,,
-আচ্ছা,, ঠিকাছে বিয়ে করবো।
.
কিন্তু ও কবে বিয়ে করবে সেটা জানায়নি।
বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে তন্দ্রার মত লেগে গিয়েছিল। সেটা ভাংলো ফোনের শব্দে।মিষ্টি কল দিয়েছে।
ফোন ধরেতেই মিষ্টি বলল,
-চুমু খেতে চাইলে আসো,,
-আজ?
-হুম,আসতে পারবে আজ?
-ডিউটি,,
-ক্যান্সেল,,
-যেতে ঘন্টা দুয়েক লাগবে
-সমস্যা নেই, আসো
-আচ্ছা
.
আমি মেস থেকে বের হয়ে মিষ্টির শহরের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।
মিষ্টি চুমু খাওয়ার কথা বললেও,, আমাকে দেখতে পাওয়াটাই ওর আমাকে ডাকার প্রধান উদ্দেশ্য। হয়ত আমারো এটাই,, খুব ভালবাসি কিনা!
.
আমি জানি প্লানিং করে এসব চুমু টুমু হয়না।
এগুলো হুট করেই হয়ে যায়,ভালবাসার মত। তবে ওর কাছে চুমু খাওয়ার চাইতে ভালবাসার জন্য যাওয়া হয় বেশি।
চুমু খাওয়া ছাড়া তো বেঁচে থাকা যায়, ভালবাসা ছাড়া তো যায়না।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:২৩