-এক ব্যাগ জোনাকী এনে দিতে পারবে?
-হুম,পারব।
-সত্যি,
-একটু কষ্ট হবে।কি করবে জোনাকী দিয়ে?
-বারান্দায় রাখব,বারান্দাটা অন্ধকার থাকে।
-বারান্দায় জোনাকী রাখলে তো সব উড়ে চলে যাবে,
-যাবে না,পোষ মানাব।
-আচ্ছা।
-কবে আনবে।
-কাল খুঁজি আগে,তারপর
-আচ্ছা।রাখি তাহলে,
-হুম,,
.
ফোন রাখার পর মেহেদী একটু চিন্তাতেই পড়ে গেল,জোনাকী কোথায় পাবে ও?
শোভা এরকমই,সব সময় কঠিন সব কাজ দেয় মেহেদীকে।জোনাকী পোকা পাওয়া খুব মুশকিল এই ইট পাথরের শহরে। আশেপাশে কোন বন জঙল ও নেই,যে সেখানে গিয়ে খুঁজবে।
তবুও খুঁজতে হবে,শোভা মেয়েটা আসলেই অদ্ভুত। মেয়েরা চাইবে অন্য কিছু, কেউ কি জোনাকি চায়। এতদিনে মেহেদী ওকে একটু ও বুঝতে পারেনি।আবার কথা হহচ্ছে যেযে জোনাকী পোকাকে কি কখনো পোষা যায়? অদ্ভুত সব কান্ড ।তবু হতে পারে শোভা পুষতে পারবে।শোভা যা বলবে জোনাকি তাই শুনবে।
শোভা ভাল মেয়ে,ভাল মেয়েরা যা বলে জোনাকীরে হয়ত তাই শুনে। তবে শোভার সব কাজই মেহেদীর কাছে অদ্ভুত মনে হয়।
.
এইতো মাস দুয়েক আগে শোভা বলল,
-দশটা প্রজাপতি নিয়ে আসতে পারবে,
মেহেদী বড় শিউর হয়েই বলেছিল,
-হুম।
.
প্রজাপতি ধরা আর কি?
কিন্তু এ সোজা কাজ টাও করতে পারেনি মেহেদী। অনেক খুঁজে অবশ্য দুটো প্রজাপতি পেয়েছিল সেগুলো জীবিত ভাবেও শোভা কে দিতে পারেনি দিয়েছিল মৃত ভাবে ।দোষ মেহেদীর ছিলনা, ও তো প্রজাপতি ধরে ব্যাগে রেখেছিল কিন্তু ঘন্টা খানেক পরে দেখে দুটোই মারা গেছে। কে জানে প্রজাপতি পলিথিন ব্যাগের মধ্য অক্সিজেন পায়না।
মৃত এক জোড়া প্রজাপতি পেয়েই শোভা অনেক খুশি হয়েছিল।প্রজাপতি জোড়া হাতে নিয়ে শোভার মুখে হাসি ফুটেছিল।কি সুন্দর সে হাসি। ওই হাসির জন্য মেহেদী যে কোন কাজ করতে পারে।তবে এবার জোনাকী ধরার পুরো কাজটা ভাল ভাবে করতে হবে।তাহলে শোভার মুখে চওড়া এক হাসি ফুটবে।
.
শোভা মেহেদীর কাছে তেমন কিছু চায়না।এসবই চায়।মেহেদী চায় শোভার সব ইচ্ছা পূরন করতে কিন্তু এসব কঠিন ইচ্ছা গুলো মেহেদীর দারা পূরণ করা সম্ভব হয় না ।তবুও মেহেদী চেষ্টা করে। ভালবাসার কারণে চেষ্টা করে।
শোভা এসব কাজ মেহেদীকে দিয়ে মজা পায়, বারান্দায় লাইট লাগালেও অন্ধকার মুক্ত হয়, তবুও কেন জোনাকী লাগবে।এসব কিছু জিজ্ঞেস করেনা মেহেদী।ও শুধু শোভার মন রাখতে চায়।
শোভা মেহেদীর কথা ভাবে আর হাসে !
মেহেদী শোভাকে বলে অদ্ভুত মেয়ে, আরো বলে ওদের প্রেম টাও অদ্ভুত প্রেম।এসব শুনেও শোভা হাসে,বলেনা কিছু।
.
সকালে মেহেদীর ঘুম ভাঙল শোভার ফোনে।
-হ্যালো,
-কোথায় তুমি?
-এই তো মেসেই,
-জোনাকী পাইছ
-না,,,রাত্রে খুঁজতে হবে,দিনে তো আর পাওয়া যাবেনা।
-আচ্ছা,রাত্রেই খুঁজিও।
.
সন্ধ্যায় মেস থেকে বের হল মেহেদী।জোনাকী খুঁজতে হবে।আগের বার প্রজাপতি যেখানে পেয়েছিল সেখানেই খুঁজতে যাবে।শহরের শেষের দিকে একটা পোড়া বাড়ি আছে।একটু জঙল দিয়ে ঘেড়া বাড়িটা, ওখানেই পাওয়া যেতে পারে জোনাকী।
.
তবে জোনাকী কি পোষ মানবে শোভার কাছে এটা একটু চিন্তার বিষয়।আজ মেহেদীর হাতে নেটের ব্যাগ,আগেরবার প্রজাপতি ধরার সময় ওর হাতে প্লাস্টিকের ব্যাগ ছিল এ জন্য হয়ত প্রজাপতি মারা গেছে তাই আজ নেটের ব্যাগ নিয়ে আসা।নেটের ব্যাগে ছিদ্র আছে খুব সামান্য ছিদ্র।জোনাকী বের হতে পারবেনা সম্ভবত। তাই কোন চিন্তা নেই,শোভা কে জীবন্ত জোনাকী উপহার দিবে মেহেদী।
.
পোড়া বাড়ির ভিতর ঘুটঘুটে অন্ধকার হওয়ার কথা ছিল, কিন্ত এখানে অনেক আলো।সব জোনাকির আলো।এত জোনাকি দেখে মেহেদী খুশি হল।মেহেদী জোনাকী ধরতে লাগল আর ব্যাগে পুড়তে লাগল।
.
জোনাকী ধরতে ধরতে মেহেদীর একটু রাতই হয়ে গেল।ও এসেছিল সেই সন্ধ্যায়। জোনাকীর আলোর খেলায় মেহেদী ডুবে গিয়েছিল,তাই মনেই ছিল না ও একটা পুরনো পোড়াবাড়িতে আছে।যেখানে শাপ খোপ ও থাকতে পারে।
পুরো ব্যাগ ভরতি করে মেহেদী ঘড়ি দেখল নটা বাজে। ও ব্যাগ ভর্তি জোনাকী নিয়ে সেখান থেকে বের হল।
.
মেহেদী হাঁটতে হাঁটতে শোভার বাসার কাছে চলে এল,ও নিজেই শোভাকে এগুলো দিতে চায়।কিন্তু সমস্যা আছে,এসময় ভদ্র বাড়ির মেয়েরা চাইলেও বাসা থেকে বের হতে পারেনা,গভীর রাত্রে যে বের হবে তাও না।রাত আরেক টু গভীর হলেই মেহেদী দেয়াল টপকিয়ে শোভাদের বাড়িতে ঢুকবে। শোভার ঘর দোতলায়, ও বারান্দায় এসে দাড়াবে তারপর মেহেদী সেগুলো শোভাকে দিবে।
.
শোভা সারাদিন ধরেই জোনাকীর জন্য অপেক্ষা করছে।ও জানে মেহেদী যে করেই হোক জোনাকী নিয়ে আসবে।
জোনাকী কেন চায় শোভা ও জানেনা?
ও শুধু চায় মেহেদী ওর জন্য জোনাকী নিয়ে আসুক।জোনাকি গুলো উড়িয়ে দিবে, অন্ধকার টা আলোকিত হয়ে যাবে কত সুন্দর লাগবে দেখিতে।
.
মেহেদীর করিমের দোকানে বসে বসে অপেক্ষা করছে।করিমের দোকান শোভার বাড়ির একেবারে সামনে।মেহেদী প্রায় প্রায় আসে শোভার বাড়ির সামনে, শোভাকে দেখার জন্য। এসে করিমের দোকানেই বসে এভাবেই সম্পর্ক হয়ে গেছে করিমের সাথে।এমন ও দিন গেছে প্রায় দশ কাপ চা খেয়েছে মেহেদী করিমের দোকানে। করিম এক প্রকার ভক্ত মেহেদীর।
.
প্রজাপতি ধরার জন্য ওই পোড়াবাড়ির সন্ধ্যান করিমই দিয়েছিল।আজ হাতে ব্যাগ ভর্তি জোনাকী দেখে করিম বলল,
-ভাই,পোকা দিয়ে কি করবেন?
-বুঝবিনা,
-বলেন দেখি,,
-শোভা পুষবে,
-মানুষ গরু ছাগল পোষে এই প্রথম শুনলাম কেউ জোনাকী পোষে।অদ্ভুত আপনাগো প্রেম। কিছুই বুঝিনা।
.
মেহেদী করিমের কথা শুনে হাসে,ও নিজেও বোঝেনা ওদের প্রেম, তবুও প্রেম করে ।
করিম আরো বলে,
-মানুষ ফুল চায়,গিফট চায়।আর আপনার জন চায় জোনাকী প্রজাপতি,,,
.
এটুকুই বলে দাঁত বের করে হাসে করিম,সে হাসি দেখে মেহেদীও হাসে।
দেখতে দেখতে ঘন্টা দুয়েক চলে গেল।শোভাদের বাসার দেয়াল বেশি উঁচু নয়,এটা টপকাতে খুব একটা অসুবিধা হয়না মেহেদীর।
মেহেদী দেয়াল টপকিয়ে গিয়ে শোভার বারান্দার নিচে এসে দাঁড়াল,শোভার ঘরের লাইট অফ। মেহেদী ভাবল শোভা হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই শোভার ফোনে কল দেয়ার চিন্তা করল, শোভার নাম্বারে ফোন দিতেই সাথে সাথেই কল রিসিভ করল শোভা।
শোভা এই ফোনের জন্যই অপেক্ষা করছিল, ও তো মেহেদীর উপড় রাগ করে বসে আছে এখনো কেন ও জোনাকী আনেনি তাই।
.
ফোন ধরে শোভা রাগ দেখিয়ে বলল,
-হ্যালো,
-কই?
-কই আবার ঘরে
-বারান্দায় আসো,
-কেন,
-আমি নিচে
-মানে,
-নিচে আসলেই দেখবা,
.
শোভা ছুটে এসে বারান্দায় দাঁড়াল।তারপর ফোনেই বলল,
-তুমি এখানে?
-জোনাকী এনেছি।
হাতের ব্যাগ টা উচিয়ে বলল মেহেদী।ব্যাগের মধ্য উঁকি দিচ্ছে জোনাকীরা।জোনাকীরা জল জল করছে,কোন টা জলছে কোন টা নিভছে।কি সুন্দর দৃশ্য।
শোভার মনে হল ও এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখেনি।শোভার চোখে মুখে হাসি ফুটল,যদিও অন্ধকারের কারণে স্পষ্ট দেখা যায়নি সেটা তবুও মেহেদী মনে হল শোভার মুখে হাসি ফুঁটেছে।
এই হাসি টুকুই হয়ত মেহেদী দেখতে চেয়েছিল শোভার চোখে মুখে।
.
শোভা বলল,
-ছেঁড়ে দাও,
-ছেঁড়ে দেব মানে?
-ব্যাগ খুলে দাও,
-পোষ মানাবে না,
.
শোভা হাসতে হাসতে বলল,
-ধূর পাগল,পোষ মানানো যায় নাকি?
-কাল যে বললে,
-এমনি বলছি,ছেঁড়ে দাও
.
মেহেদী আস্তে আস্তে ব্যাগের মুখটা খুলে দিল। আস্তে আস্তে জোনাকী গুলো ব্যাগের বাহিরে বের হয়ে যেতে লাগল।এটা দেখতে কত সুন্দর লাগছিল শোভার এটা ও কাওকে বুঝাতে পারবেনা ও ।জোনাকী গুলো আস্তে আস্তে উপরে উঠতে লাগল।জোনাকীর আলোয় মেহেদীর মুখটা দেখা যাচ্ছে,কি মায়াবী মুখ। জোনাকী গুল্য আস্তে আস্তে আরো উপড়ে উঠে গেল।
জোনাকি গুলো সব শোভার বারান্দায় গিয়ে ঘুরতে লগল।সেই আলোতে শোভাকে দেখল মেহেদী। শোভার মুখের হাসি টুকুও দেখল। কি সুন্দর সেই হাসি,এ হাসির জন্য যে কোন কিছু করতে পারে মেহেদী।
.
জোনাকী গুলো শোভার চারপাশে ঘুরছে, মনে হচ্ছে জোনাকি গুলো পোষ মেনে নিয়েছে শোভার। মেহেদীর মনে হয় শোভা সব পারে , ওর কাছে এসব জোনাকিকে পোষ মানানো কোন ব্যাপার না।অদ্ভুত ভাবে মেহেদী তাকিয়ে আছে শোভার দিকে আর শোভা জোনাকি গুলোর দিকে।শোভা একহাত দিয়ে কানে ফোন ধরে রেখেছে আর অন্য হাত দিয়ে জোনাকী ধরার বৃথা চেষ্টা করতে লাগল।
মেহেদী ফোনে বলল,
-ভাল লেগেছে
-খুব,
-ভালবাস?
-হুম,,
.
আর কিছু বলল না মেহেদী, এটুকু শোনার জন্যই তো এতকিছু।শোভা নিচে মেহেদীর দিকে তাকাল,অদ্ভুত সে চাহনী।ভাল ভাবে দেখা যাচ্ছেনা তবুও তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে দুজনে।
.
করিম দেয়ালের উপর বসে থেকেই দেখছিল এসব,ও পাহাড়া দিচ্ছিল মেহেদীকে।
ও কিছু বোঝেনা মেহেদী আর শোভার ভালবাসার,আর বুঝতেও চায় না। ও তো শুধু জোনাকীর আলোয় দুজন মানব মানবীর প্রেম দেখছিল,কি অদ্ভুত সেই প্রেম।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:৩৬