-হিন্দি মুভি বেশি দেখেন নাকি?
.
মেয়েটা প্রশ্ন টা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
এ মেয়ে সাধারণ কোন মেয়ে না,ডাক্তারনী মেয়ে।
অবশ্য পুরোপুরি ডাক্তার না ইন্টার্নশীপ করছে।
তবে ডাক্তার বলা যেতে পারে।ব্যাচে নাম লেখা, ফারহানা।
গতদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম,ফারহানার আগে পিছে কিছু আছে কিনা।
কন্যা নিলিপ্ত কন্ঠে জবাব দিয়ে ছিল , না।
.
মেয়ের প্রশ্নের উত্তরে আমি বললাম,
-মানে?
.
ডাক্তারনী আবার বলল,
-হিন্দি মুভির হিরো হওয়ার চেষ্টা করছেন?
-আপনার কথা কিছুই বুঝলাম না।
-এই যে রোজ হাত কেটে আনছেন,,,ভাবছেন মুভির মত আপনার কাঁটা হাত রোজ ব্যান্ডেজ করতে করতে ডাক্তারনী আপনার প্রেমে পড়ে যাবে?
.
আমি কথার জবাব দিলাম না,আমার কাটা হাতের দিকে তাকালাম,ব্যান্ডেজ শেষ।হাতটা ওপরে ওঠাতে বললাম,
-আপনি ভুল ভাবছেন,আসলে কোন ডাক্তারকে দেখলাম না , তাই আপনার কাছে আসলাম
.
ফারহানা একটু হাসল,তারপর বলতে লাগল,
-আমি ভেবেছিলাম আপনি সত্য কিছু বলবেন।
-আমি সত্যি বললাম।
-আমি ভেবেছিলাম আপনার হাত হয়ত সত্যি সত্যি কেটে যায় কিন্তু আজ বুঝলাম ইচ্ছা করে কেটে আনেন
-কিভাবে বুঝলেন?
-আপনি হসপিটালে ঢুকতেই আপনাকে দেখেছিলাম। তাই আপনার জন্য অন্য একজন সিনিয়র ডক্টর পাঠিয়েছিলাম কিন্তু আপনি তাকে ফেরত দিয়ে আমার কাছে আসলেন।এবার বলেন যে ভুল?
.
আমি কোন কথা বললাম না, চুপ করে রইলাম কারণ মেয়েটা সত্য কথা বলেছে।
হিন্দি মুভি সত্যি বেশি দেখে ফেলেছি। ফারহানাকে যেদিন প্রথম দেখলাম ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পেইন এ, সেদিনই ওর প্রেমে পড়ে গেলাম। সেদিন অবশ্য কোন কথা হয়নি, কথা বলার জন্য হাতের রক্ত ঝড়াতে হয়েছে।
হাত কেটে নিয়ে এসে, ওকে খুঁজে বের করিয়ে ব্যান্ডেজ করিয়ে ছিলাম।
.
তবে আমার মাথায় চলছিল অন্য কথা,
ফারহানার সাথে আর দেখা করার ও কোন উপায় থাকল না,এর পর হাত কেটে আনলে হয়ত হসপিটালেই ঢুকতে দিবেনা।
এ নিয়ে এক সপ্তাহে তিন দিন হাত কেটে আনলাম।আর কাটব কোথায়, সেটাও ভাবতে হবে।
.
ফারহানা আবার বলল,
-এভাবে রক্ত নষ্ট করে,ভাল কাজে লাগানোর জন্যও হসপিটালে আসতে পারেন।
-মানে?
-রক্ত দিবেন,
-ও আচ্ছা।
-হুম,যান এখন।আমার ডিউটি আছে।
-আচ্ছা।
.
সেদিনের মত বাসায় চলে আসলাম।ফারহানা কে খুবই মনে পড়ছিল।হাত কাটব তারো কোন উপায় নেই।রক্ত শূন্যতা দেখা দিচ্ছিল।
.
প্রায় তিন চার দিন হওয়ার পর, নিজেকে আর বেধে রাখা গেলনা।
সোজা গেলাম ফারহানার হসপিটালে, গিয়ে ওকে খুজে বের করলাম এমারজেন্সি র সামন থেকে।
খুব চিন্তিত মনে হচ্ছিল ওকে,আমি ওর সামনে গিয়ে দাড়াতেই ও বলল,
-আজ ব্যাস্ত আছি,অন্য ডাক্তারের কাছে গিয়ে ব্যান্ডেজ করিয়ে নেন।
-হাত কাটেনি,
-তাহলে
-রক্ত দেব,
-ও আচ্ছা।কি গ্রুপ?
.
আমি উত্তর দেয়ার আগে অন্য এক ডাক্তার এসে বলল,
-ফারহানা,এ নেগেটিভ রক্ত পাওয়া যায়নি।
-কি বলেন?রক্ত তো ছিল?
-বাট শেষ।
-এখন কি হবে?
-আমি অন্য হসপিটালে খোজ নিচ্ছি তুমিও দেখ,,
-সময় খুব অল্প,কই দেখব
.
পাশের ডাক্তার দাঁড়াল না, চলে গেল।
ফারহানার চোখ লাল হয়ে গেল,মনে হয় এখনি কাঁদবে।এ মেয়েকে কিছুতেই কাঁদতে দেওয়া যাবেনা।ফারহানা আমার সামন থেকে যেতে ধরল,আমি বললাম,
-শুনুন,
-কি?
-আমার রক্ত এ নেগেটিভ ,কাকে দিতে হবে?
.
ফারহানা আর গেলনা,আমার কাছে ফিরে আসল। তারপর বলল,
-আমার বাবাকে, সকালে এক্সিডেন্ট করেছে
-ওহ,আচ্ছা চলুন।
-চলুন।আপনার নাম টাই তো জানা হলনা?
-আমি নয়ন, আপনার?
-কেন ফারহানা,
-আগে পিছে?
-পরে বলব
-ও আচ্ছা।
.
কেবিনে গিয়ে দেখি,ফারহানার বাবার অবস্থা অনেক খারাপ।
.
রক্ত দিয়ে যখন বের হলাম,আগে,একটু খারাপ লাগছিল।আগে অবশ্য কাউওকে রক্ত দেইনি। বের হতেই ফারহানাকে দেখলাম,আমার কাছে এসে বলতে লাগল,
-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
-নাহ ঠিকাছে।
-ওখানে কিছু খাবার রাখা আছে,কিছু খেয়ে নিন।
.
তাকিয়ে দেখলাম,কিছু খাবার রাখা। আমি বললাম ,
-নাহ কিছু খাবনা।
-কেন খাবেন না?
-ভাল লাগছেনা!
-খুব খারাপ লাগছে নাকি আপনার।একটু রেস্ট নিন।আর প্লিজ কিছু খেয়ে নিন।
-নাহ অত খারাপ লাগছে না,আচ্ছা আমি আসি। কাল একবার আপনার বাবাকে দেখতে আসব।
-একা যেতে পারবেন বাসায়।
-হুম।
.
এই বলে চলে আসলাম,বাড়িতে এসে আম্মুকে বললাম রক্ত দিছি,আম্মু বিলিভই করল না।যে ছেলে রক্ত ভয় পায় সে রক্ত দিবে এটা সহজে কেউ বিলিভ করবে না,কিন্তু প্রেমে পরলে অনেক কিছু সম্ভব।
হুম আমি প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম,ফারহানার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম সেটাও কঠিন ভাবে তাই এতবার হাত কাটতেও দিধা হয়নি।
.
পরের দিন আবার হাসপাতালে গেলাম,ফারহানা আমাকে দেখতে পেয়ে প্রায় দৌড়ে আসল, আমি বললাম,
-আপনার বাবা কেমন আছে?
-হুম,ভাল।আপনার সাথে দেখা করতে চাচ্ছেন।
-আচ্ছা চলুন।
.
ফারহানা বাবা আমার প্রতি ইমপ্রেস,যাক ফারহানাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে ইনি মনে হয়না না করবে।ফারহানার মা আরো ভাল, আমার শাশুড়ি হিসেবে পারফেক্ট।
.
ফারহানার বাবা মায়ের সাথে কথা বলে যেই বের হব তখন ফারহানা আমাকে ডাক দিল।এপ্রোন ছাড়াই আমার কাছে এল।এই প্রথম ওকে এপ্রোন ছাড়া দেখলাম,দারূন লাগছিল।
.
ও আমার কাছে এসে বলল,
-এক কাপ কফি খাবেন আমার সাথে,
.
আমার বিলিভই হচ্ছিল ন যে ফারহানা আমাকে কফি খাওয়ার জন্য অফার করবে।আমি তো এক পায়ে রাজি।
-হুম,অবশ্যই।
.
হসপিটালের ক্যান্টিনে গিয়ে আমরা বসলাম। ফারহানার সাথে এভাবে বসে কথা বলতে খুব অসস্তি হচ্ছিল কারণ ও জানে যে আমি ওকে পছন্দ করি।
সেদিন টুকটাক কথা হল,কি করি?
ফ্যামিলি নিয়ে এসব।
.
তারপর আরো দুদিন গেলাম ফারহানা বাবাকে দেখতে।যদিও সেটা একটা উছিলা,আমি তো সব সময়ই ফারহানাকেই দেখতে আসি।
.
ফারহানার বাবাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর আর কোন কারণ রইল আমার হসপিটালে যাওয়ার।
তবে ফারহানার বাবা ওনার বাসায় আমায় দাওয়াত করছে তাই ওখানে যাওয়া যেতে পারে। বাট যাবনা।আরো পরে, একেবারে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব।
.
দুদিন ফারহানার সাথে দেখা হল না,পরের দিন হাত কেটে নিয়ে গেলাম। ফারহানে দেখা মাত্রই খুব রাগ করল।ব্যান্ডেজ করতে করতে সরাসরি থ্রেট দিয়ে বলল,
-আর কোন দিন যদি হাত কাটছ তাহলে বুঝবা তোমার কি হয়।
এই প্রথম ও আমাকে তুমি করে বলল।
.
ফারহানা আরো বলল,
-যদি দেখা করার ইচ্ছা হয় সোজা চলে আসবা। এত কিছু করতে হবেনা।বোঝাতে হবেনা,তুমি আমার প্রেমে পড়ছ।
.
আমি আস্তে করে বললাম,
-প্রেম না ভালবাসি
-হুম,ভালবাস।আর হাত কাঁটবানা।
-আচ্ছা।
-ঘন্টা খানেক ওয়েট কর।আমার ডিউটি শেষ করে বের হব।
-আচ্ছা।
.
জোরে বলতে ইচ্ছা করল,
-ফারহানা তোমার জন্য একঘন্টা কেন, সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারব।
.
ঘন্টা খানেক নয়,পুরো তিন ঘন্টা পর ফারহানা আমার সাথে বের হল,বিকালে বের হওয়ার কথা ছিল,আর বের হলাম সন্ধ্যায়। তবে এ তিন ঘন্টায় ফারহানা দু বার আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল,এতেই আমি খুশি।
.
ফারহানা হসপিটাল থেকে বের হয়ে বলল,
-কোথায় নিয়ে যাবে?
-মানে?
-কোথায় যাব আমরা?
.
আমি একটু ভেবে বললাম,
-একটু হাটি ফুটপাত ধরে,
-আচ্ছা,
-হাত ধরে,
-হুম,হাত ধরে।
.
আমরা গ্রীন রোডের ফুটপাতে আসলাম,এ খান কার ফুটপাত সবসময় ফাকা থাকে।বিশেষ করে সন্ধ্যয়।এখানে হাত ধরে হাটলেও দেখার কেউ নেই।
.
আমি ফারহানার হাত ধরে ফেললাম,একটু লাগছিল আমার হাতে কারণ হাত ব্যান্ডেজ করা ছিল। বাট ফারহানার হাতের ছোয়া পেলে খুব শীঘ্রই আমার হাত ঠিক হয়ে যাবে।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫২