somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময়ের স্রোতে ভেসে যাওয়া এক গল্প

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়ের স্রোতে ভেসে যাওয়া এক গল্প
.
.
সাদি খাতায় মোবাইল নাম্বার টা লিখতে লিখতে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করল,
-আচ্ছা,, হাজারে কত কাটবে?
.
দোকানদার প্রশ্নটা শুনে বিরক্ত হয়ে সাদির দিকে তাকাল। দোকানদারেরা খুব সহজে কারো প্রতি বিরক্ত হয়না কিন্তু সাদির প্রতি বিরক্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। প্রতি মাসে দোকানে এলে এই কথাটা সাদি জিজ্ঞেস করবেই । বিকাশ এ হাজারে বিশ টাকা কাটে, এটা তো আর প্রতি মাসে মাসে বদলায়না। তবুও কেন জিজ্ঞেস করতে হবে দোকানদার ভেবে পেলনা।
.
দোকানদার খারাপ ব্যাবহার করলেন না , উনি ভাল ভাবেই উত্তর দিল,
-বিশ টাকা কাটে।তোমার কত পাঠাব আজ?
-এক হাজার পাঠান।
.
এই দোকান থেকেই সাদি প্রতি মাসেই বাসায় টাকা পাঠায়,তাই সাদি এখানে আসলেই দোকানদার বুঝে যায় ব্যাপার কি?
.
-পাঠিয়েছেন?
-হুম,,
.
সাদি দোকানদারের কথা শুনে সস্তির নিশ্বাস ফেলল আর বলল, 
-ফোন টা দেন দুই মিনিট কথা কই আম্মার সাথে?
.
দোকানদার ফোনটা এগিয়ে দিল। এই দোকানদারকে যথেষ্ট পছন্দ করে সাদি।এই দোকানদারের মাধ্য কোন হিংসা নাই। সাদির কথায় এই লোক বিরক্ত হলেও তা কখনোই মুখে প্রকাশ করেনা,অন্য কোন দোকানদার হলে এতদিনে খুব খারাপ ব্যাবহার করত,হয়ত দোকানেই ঢুকত দিতনা।
.
সাদি নাম্বার তুলে ডায়াল করল, কল দিল ওর মাকে।
-হ্যালো আম্মু,
-হুম,
-টাকা পাইছো,
-হুম,পাইছি।
-শোন,টাকা তুলে নিও।হাজারে বিশ টাকা কাটবে।
-হুম জানি তো,তুই আসবিনা বাবা?
-হুম,যাইতে পারি।টুসিরে দাও কথা বলি,
-আচ্ছা ধর দিচ্ছি।
.
সাদি মোবাইল কানে রেখে দোকান দারের দিকে তাকিয়ে একটা কৃতজ্ঞতার হাসি দিয়ে আবার ফোনে কথা বলা শুরু করল,
-হ্যালো,আপু তুই কেমন আছিস?
-ভাল,তুই আমার জন্য জামা নিয়াস বি না?
-হুম,নিয়াস বো।
-কবে আসবি তুই?
-ঈদের আগে যাব।
.
টুসির আওয়াজ আর শোনা গেলনা। টুসির হাত থেকে মোবাইল টা হয়ত আয়েশা বানু নিয়ে নিয়েছেন। প্রতিবারের মত তিনি এখন লেখাপড়ার কথা জিজ্ঞেস করবেন সাদি কে। আর সাদিকে সেগুলোর মিথ্যা সব উত্তর দিতে হবে।সবার সাথেই হয়ত মিথ্যা বলা যায় কিন্তু মায়ের সাথে মিথ্যা বলতে গলায় বাধে। শুধু যে লেখা পড়ার বিষয়ে মিথ্যা বলতে হয় তা না আরো অনেক বিষয়ে মিথ্যা বলতে হয়।
.
আয়েশা বানু এখনো জানে না যে সাদি গার্মেন্টস এ কাজ করে।যদি জেনে যায় তবে অনেক কষ্ট পাবে, এই ভয়েই সাদি কিছু বলেনা। যেমন চলছে তেমন চলুক।
তাই সাদি আর কথা বাড়াল না।আয়েশা বানু ওপাশ থেকে কি যেন বললেন কিন্তু সাদি আর কিছু শুনলনা ফোন টা রেখে দিল।
.
দোকানদারকে একাহাজার টাকার নোট টা বের করে দিয়ে সাদি বলল,
-অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

দোকান দার টাকা নিয়ে রেখে দিল ক্যাশে, কিছুই বলল না।সাদি যাওয়ার আগে আরেকবার দোকান দারকে সতর্ক করে দিল যেন ওর মা ফোন দিলে ওর আসল কথা না বলে।
.
দোকানদার জবাব দিল, আচ্ছা।
.
সাদি আর কিছু বলল না, চুপচাপ নেমে গেল ছোট রাস্তায়।এই ছোট রাস্তাটা পার হলেই মেইন রোড। মেইন রোড দিয়ে হাটতে সাদির দারূন লাগে, সোডিয়াম বাতির আলোতে হাত দেখলে হাত গুলোকে বিবর্ণ লাগে।এরকম বিবর্ন হয়ে গেছে সাদির জীবন।
.
কত স্বপ্ন নিয়ে বছর তিনেক আগে এসেছিল এখানে।এস এস সি পাশ করে সাদির শহরে পড়ার সপ্ন পূরন করেছিল সাদির বাবা আলতাফ হোসেন।
আলতাফ হোসেন ছিলেন এক বেসরকারি হাই স্কুল টিচার,, স্কুলের বেতন আর টিউশনির টাকা দিয়ে চারজনের সংসার ওনার ভালই চলছিল।
.
সাদির এস.এস.সি র রেজাল্ট দেখে সব চেয়ে খুশি হয়েছিলেন আলতাফ হোসেন।গর্ব করেই বলেছিলেন,
-আমি যেটা করতে পারিনি সেটা আমার বেটা করবে।
.
এই কারণেই সাদির শহরে পাড়ি দেওয়া,সব ঠিক ঠাকই চলছিল কিন্তু দশ মাস আগের এক দূর্ঘটনা সব হিসাব নিকাশ পাল্টে দিয়েছিল সাদির জীবনের।হঠাৎ স্টোক করে পৃথিবী থেকে চলে গেলেন আলতাফ হোসেন তখন থেকেই সব সমস্যা শুরু।
.
বাবার মৃত্যুর কথা শুনে সাদি গ্রামে গিয়েছিল, সেখান থেকে আর শহরে ফিরতে চায়নি।
ও জানত শহরে পড়ার মত ক্ষমতা ওর আর নেই, তবুও আয়েশা বানুর চাপের মুখে পড়ে ওকে আবার শহরে ফিরে আসতে হয়।
.
শহরে আসার পর মাস দুয়েক বাড়ি থেকে টাকা আসলেও, তার পর থেকে আর টাকা এলোনা।
সাদির মত বুদ্ধিমান ছেলের বুঝতে সমস্যা হল না ব্যাপার কি?
এরকম টাকার সমস্যা যে হবে এটা সাদি আগে থেকেই আন্দাজ করেছিল।আর ইন্টার পরীক্ষার ফি দেওয়া হলনা আর পরীক্ষাও দেয়া হলনা।
.
তার কিছুদিন পরেই গার্মেন্টস এ কাজ শুরু করল সাদি।কাজ ছাড়া কোন উপায় ও ছিলনা। ঢাকা শহরে টাকা ছাড়া একদিন ও বাচা সম্ভব নয়,আর ওর বাড়ি ফিরে যাওয়াও সম্ভব ছিলনা।
.
ঈদের বাকি আছে আর তিন দিন, বোনাস আগেই দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু দিয়েছে আজ।বোনাস আর বেতন সহ সাদির পকেটে ছিল সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।এক হাজার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে,আর আছে সাড়ে চার হাজার।
খরচ নেই কোন শুধু টুসির জন্য একটা জামা কিনতে হবে।
টুসির বয়স ১৪,ওর গায়ের রং ফর্সা। আমাদের সমাজে ফর্সা মেয়েদের যথেষ্ট কদর রয়েছে, বাবা মাকে বিয়ের জন্য অত চিন্তা করতে হয়না, মেয়েকে একটু দেখে রাখলেই ভাল পাত্র পাওয়া যায়। টুসির জন্যও এখনি অবশ্য বিয়ের সমন্ধ আসছে,তবে সাদি রাজী নয়। কেবল ক্লাস এইটে পড়ে মেয়েটা এখনি কিসের বিয়ে। বাবার সপ্ন গুলো সাদির জায়গায় না হয় টুসিই পূরন করবে।
.
হাঁটতে হাঁটতে ছোট রাস্তা থেকে মেইন রোডে নেমে এল সাদি। মেইন রোডের পাশের ফুটপাত গুলোতে অনেক কাপড়ের আর জুতার দোকান বসেছে। এমনি দিন এ জায়গা গুলো ফাঁকাই থাকে,কিন্তু ঈদ এলেই জায়গা গুলো দোকানে দোকানে ভরে যায়, তখন ফুটপাত ছেড়ে রাস্তা দিয়ে হাটতে হয়।সাদি এখন রাস্তা দিয়েই হাটছে আর ভাবছে এসব দোকান থেকে একটা জামা কিনে নিবে নাকি?
টুসি কি পছন্দ করবে?
করবেনা হয়ত।আলতাফ সাহেব খুব কম উপার্জন করলেও ভাল ভাল কাপড় পরিয়েছে তার পরিবার কে।কষ্টে রাখেনি কোন সময়।
.
তবে দোকান গুলোতে মনে হয়না খুব খারাপ মানের কাপড় বিক্রি হয়,কারণ সব গুলো দোকানেই ভিড়।সাদি র মত মানুষদের কেনাকাটার জন্যই এই সব দোকান।
এখানে না কিনলে সুপার মার্কেট থেকে কেনা যেতে পারে,তবে দাম টা একটু বেশি হয়ে যাবে। হোক ! একটু না হয় বেশিই হল, তবে ভাল জামা পেলে টুসি অনেক খুশি হবে।
সাদির কাছে সব চাইতে প্রিয় জিনিষ ওর ছোট বোন ,আর ওর জন্য সামান্য কটা টাকা খরচ করতে পারবেনা।
সাদি আর কিছু ভাবলনা,পা বাড়াল সুপার মার্কেট এর উদ্দেশ্য।
.
ঈদের অল্প সময় বাকি তাই ভিড় অতিরিক্ত বেশি মার্কেট এ।এত টাই ভিড় যে পা ফেলার জায়গা পর্যন্ত নেই।
.
সাদি দোকান গুলোর সামন দিয়ে হাঁটছে আর দোকানে রাখা জামা গুলো দেখছে।যেটাই দেখছে সেটাই পছন্দ হচ্ছে,তবে পিছনের বড় দোকানে সাজিয়ে রাখা নীল জামাটা বেশি পছন্দ হয়েছে টুসির জন্য।
দাম টা অনুমান করা যাচ্ছেনা তবে হাজার দুয়েকের মধ্য হলে নেয়া যাবে।সাদি আবার ঘুরে এল বড় দোকান টার কাছে,জামাটার দাম জানা দরকার ! 
কিন্তু দোকানের সামনে মেয়ে দিয়ে ভর্তি তাই কোন ভাবেই আগানোও যাচ্ছেনা।
.
সাদি দোকান টার সামনেই মিনিট পাঁচেক এর মত দাড়িয়ে রইল কিন্তু মেয়েগুলা সরছেই না,, কি কিনছে কে জানে??
.
সাদি উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করল মেয়েগুলো কি কিনছে? কিন্তু কিছুই দেখতে পেলনা।
ও আর অপেক্ষা করল না,সামনে আগালো, দোকানের এক কোনায় একটু ফাকা আছে ওদিক দিয়ে জিজ্ঞেস করা যাবে যে জামাটার দাম কত?
.
সাদি একটু আগাতেই হঠাৎ করে একটা মেয়ে দুম করে চেয়ার থেকে দাড়িয়ে পিছনে ঘুরল আর সাদির বুকের সাথে ধাক্কা খেল।
সাদি বুঝতে পারল, মেয়েটার ভালই লেগেছে। মেয়েটা উল্টোদিকে ঘুরেই কপালের যে জায়গা টায় লেগেছে সেখান টা হাত বোলাতে লাগল,,
সাদি বলতে লাগল,
-সরি,আসলে আমি বুঝতে পারিনি।
.
মেয়েটা মুখ না ঘুরিয়েই বলল,
-গাধা নাকি আপনি, দেখেন না।
-আসলে আমি সত্যি দেখিনি, মাফ করবেন প্লিজ।
-মেয়ে দেখলেই ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এটুকু বলেই মেয়েটা মাথা ঘোরালো,সাদি কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু মেয়েটার মুখ দেখে আর কিছু বললনা।শুধু সরি বলে উল্টো দিকে হাটা শুরু করল।
.
-সাদি,দাড়াও।
সাদি দাড়াল না,হাটতেই লাগল। সবার ডাকে থামতে নেই, এটাও তেমন ডাক।
কিন্তু সাদিকে থামতে হল কারণ মেয়েটা সাদির সামনে এসে দাড়াল !!
-পালাচ্ছিলে?
.
সাদি জবাব দিল না।
মেয়েটা আবার বলল,
-কথা বলছ না কেন?
-উম,
-চিনতে পেরেছ?
.
চিনতে না পারার কোন কারণ নেই। ঢাকা শহরে সাদির যদি আপন কেউ থাকে তবে এই মেয়েটিই,নাম আচল।ইন্টারে পড়ার সময় সাদির ক্লাস মেট ছিল এখন সম্ভবত ভার্সিটিতে পড়ে।
.
সাদি মাথা নেড়ে জানাল,হুম।
-আমার নাম কি বলত?
-আচল।
-এই তো চিনেছ,,এড়িয়ে যাচ্ছিলে কেন?ব্যাস্ত খুব?
.
সাদি মাথা নাড়িয়ে বলল,
-না,
-শপিং করতে এসেছ?
-হুম,
-কার জন্য,
-ছোট বোন।
-কিছু নিয়েছ?
-না।
-কিছু পছন্দ করেছ?
.
সাদি জবাব দিলনা,আচল খুব বুদ্ধিমতী। ও ব্যাপার টা বুঝে গেল,সরাসরি কিছুই বললনা। কারো কাছ থেকে কথা কিভাবে বের করা যায় এটা এই মেয়ে খুব ভাল করেই জানে।
-ওই দোকানের কিছু ভাল লেগেছে?
-না,
-তবে দোকানের দিকে যাচ্ছিলে কেন,মেয়ে দেখতে?
-না, একটা জামা ভাল লেগেছে, 
-কোন জামাটা, 
-ওই নীলটা,,
-সুন্দর আমারো ওটা দারুন লেগেছে বাট আমি একটু লম্বা ওটা পড়লে, আমার শরীরে টাইট হয়ে যাবে আর ছেলেরা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে। এটুকু বলেই আচল হাসল। সাদি বুঝলনা এখানে হাসার কি আছে।
.
-এই আচল যাবিনা?
পিছন থেকে একটা মেয়ে বলে উঠল, সম্ভবত আচলের পরিচিত কেউ যাদের সাথে আচল এখানে এসেছে।
আচল মুখ পিছনে ঘুরিয়ে বলল,
-না,একটু পরে।তোরা চলে যা।
.
মেয়েগুলো আর কিছু বলল না,চলে গেল।
-তুমি কি করবে, চলে যাও ওদের সাথে।
-তাড়িয়ে দিচ্ছ
-না তো,
-চল জামাটা কিনে ফেলি,
-ওটা অনেক দামী,
-কত আছে?
.
সাদী জবাব দিলনা,
-আচ্ছা,চল জিজ্ঞেস করি।
.
দোকানদারের কথা শুনে সাদীর মাথা ঘোরা শুরু হল।জামাটার দাম পাঁচ হাজার পাচশ।
সাদি দোকানের চেয়ার থেকে উঠে দাড়াল,তাই দেখে আচল বলল,
-বস ! 
-না কিনবনা,
-কেন?
-এমনি,
-বস বলছি!
-না চল।
-চুপ চাপ বস।
.
সাদি আচলের কথায় কিছুটা ভয়ই পেল।চুপ চাপ আচলের পাশে বসে পরল।দোকানে দামা দামী করার কোন চান্স নেই একদরের দোকান।
.
জামা কিনতে সাদি মানা করলেও আচল জামাটা কিনে ফেলল। সাদির হাতে জামা সহ প্যাকেট টা দিয়ে বলল,
-সাহায্য করেছিলে আমায় তার প্রতিদান দিলাম।
.
সাদি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আচলের দিকে, এক সাহায্যর প্রতিদান আর কতবার দিবে মেয়েটা।
.
পাঁচ হাজার টাকা প্রতিদানের সাহায্য কি ও করেছিল, সম্ভবত নয়।খুব সামান্য একটু কাজ করেছিল ! 
সেদিন দুপুর ছিল, আর ছিল প্রচন্ড গরম।সাদি চা খাচ্ছিল কলেজের সামনের ছোট্ট ঝুপড়িতে।
.
আচল সেদিন কলেজ এসেছিল রিকশায়,ও রোজ পাজেরো করে কলেজ আসত,সেদিন কি হয়েছিল ওর গাড়ির কে জানে?
সব ঠিক ঠাকই ছিল কিন্তু বিপদ হল রিকশা থেকে নেমে?
.
আচলের কাছে টাকা নেই,ও পার্স ভুলে এসেছে বাসায়। রিকশাওয়ালা কে বারবার বলছে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করেন কেউ আসলে দিয়ে দিব টাকাটা।কিন্তু রিকশাওয়ালা মানবার পাত্র নয়।
রিকশাওয়ালা অনেক বাজে কথা বলতে লাগল, সাদি চা খেতে খেতে পুরো কাহিনী টা দেখল। সাদির সাথে একবার আচলের চোখাচুখি ও হল।সাদির মনে হল আচল এখনি কাঁদবে তাই সাদি আর দেরী করল না সাথে উঠে গিয়ে রিকশাওয়ালাকে বলল,
-চিনেন আপনি এনাকে?
.
রিকশাওয়ালা সাদির কথা শুনে কিছুটা ভয়ই পেল। রিকশাওয়ালার মনে হল উনি বড় কোন ভুল করে ফেলেছে।সাদি আবার বলল,
-ভারা কত?
-বিশ টাকা।
.
সাদি রিকশাওয়ালা কে টাকাটা দিতে দিতে বলল,
-মিয়া বিশ টাকার জন্য কেউ এমন করে।
ভাড়া মিটিয়ে সাদি আচলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-চল ক্লাসে যাই।
.
কথাটা বলে সাদি নিজেই অবাক হয়ে গেল,এই প্রথম কলেজের কোন মেয়ের সাথে সাদি কথা বলল তাও আবার তুমি করে।আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার মেয়েটা আচল রহমান।
.
আচল কলেজের সবচাইতে বড় লোকের মেয়ে।ও আসলেই কলেজ অন্য রং পেত।ক্লাসে প্রতিটা ছেলেই ওকে পছন্দ করত এমন কি সাদিও,,
আচল কে পছন্দ না করার কোন কারণ নেই,বেশি কথা বলা মেয়েটা সব সময় ক্লাস কে মাতিয়ে রাখত।ওই দিনই সাদি প্রথম আর শেষবারের মত আচলের চোখে পানি দেখেছিল। পরে সাদি হাস্যজ্জোল আচল কে দেখে ভাবত,এই মেয়েটা কি কখনো কাঁদতে পারে?
.
তবে আচল খুব শীঘ্রই সেই উপকারের প্রতিদান দিয়েছিল সাদির পরীক্ষার ফির টাকা দিয়ে।অবশ্য সাদি পরে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য এনেছিল কিন্তু আচল নেয়নি বলেছিল উপকারের প্রতিদান।
এই ভাবেই সাদির সাথে আচলের কথা বলা,অবশ্য কথা অল্প কয়েকবার হয়েছিল।
ক্লাসের সবাই ভাবত প্রেম করছে ওরা কিন্তু সাদি তেমন ভাবত না।তবে প্রেমের কিছু হলেও হতে পারত কিন্তু সাদির বাবা মারা যাওয়ার পর আর সাদি কলেজে যায়নি। মেস চেঞ্জ করাতে আচল ও আর খুজেও পায়নি সাদিকে, এটা অবশ্য বছর খানেক আগের ঘটনা।
.
-তুমি আগেও একবার উপকারের প্রতিদান দিয়েছিলে
-না ওটাতে শোধ হয়নি,তাই আবার দিলাম।
-আচ্ছা।
-চল,একটু হাটি।
-কোথায়,
-মেইন রোড ধরে,
-এত রাত্রে?
-হুম।
.
সাদি আর আচল দুজনেই মার্কেট থেকে মেইন রোডে নেমে এল। কিছুক্ষন কেউ কোন কথা বলল না।নিরবতা ভেঙে আচল বলল,
-পড়ালেখা আর করনা?
-না,
-কেন?
-এমনি।
-কি কর এখন?
.
সাদি জবাব দিল না।
-আচ্ছা না বলতে চাইলে বলিও না।এটার জবাব দাও রোজ শুক্রবার তুমি আমার বাসার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থাক তাইনা?
.
সাদি এবার ও কোন জবাব দিলনা, কারণ কথাটা সত্য।সাদি প্রতি শুক্রবার দুপুর দুটার দিকে যায় আচলের বাসার সামনে। গিয়ে দু ঘন্টা দাড়িয়ে থাকে মাঝে মাঝে হোটেলে বসে চাও খায়। আচলের বাসা চারতলা , আর আচলের রুম তিনতলায়।তিন তলার বারান্দাটা ঠিক ভাবে দেখা যায়না নিচ থেকে,ভাল হত যদি দোতলায় আচলের ঘর হত।তবে আচল নিচে নামে মাঝে মাঝে, আচল কে মাত্র একদিন দেখতে পেয়েছিল সাদি তবুও সেই আশায় যায় যদি আরেক বার ওকে দেখতে পাওয়া যায়।
.
-কি বল?
-হুম যাই।
-এখন থেকে শুক্রবার আমি দোতলার বারান্দায় বসে থাকব,তাহলে তুমি সহজেই দেখতে পারবে,
-কেন?
-কষ্ট করে যাও,খালি হাতেই ফেরত আস,এটা ভাল লাগেনা। তুমি বললে মাঝে মাঝে বাসার নিচেও নামব।
-আচ্ছা।
-জানো তুমি?আজ সহ আমাদের মোট কত বার কথা হল?
-না তো,
-বার বার কথা হল,
-ওহ,এখন জানলাম।
-তবুও তুমি আমার একজন কাছের মানুষ,
- আমি তোমার বন্ধু সেটা জানি। তোমার সাথে আমার সারা জীবনে কথা হয়েছে মাত্র বার বার। এতে প্রিয় হলাম কিভাবে?
-সব কিছু বলে কয়ে তো হয়না, এসব ব্যাপার এমনি হয়ে যায়,তুমি বুঝবেনা।
.
সাদি কিছু বললনা,কারণ ও সত্যি কিছুই বুঝছেনা আচলের কথা। সাদিকে পছন্দ করার কিছু নেই, এক সময় ভাল স্টুডেন্ট ছিল বাট এখন আর পড়েইনা,, সে দেখতেও ভাল না,আর প্রধান কথা সে যে গরীব সেটা কলেজের সবাই জানত,তবুও কেন পছন্দ করবে আচল।
.
আচল আবার বলল,
-আচ্ছা, কতদিন পর আমাদের কথা হল?
-জানিনা তো,
-নয় মাস।
-অনেক সময় ভুলে যাওয়ার জন্য,
-এমন কেন বললে?
-এমনি।
-আচ্ছা,তোমার ফোন আছে।
-না,
.
আচল ওর ব্যাগ থেকে ওর ফোন টা বের করে বলল,
-এটা রাখ তুমি,, আমার বাসায় আরেকটা আছে।
-না নেবনা।
-কেন নিবেনা?
-আসলে আমি যে রাস্তা দিয়ে যাই সেখানে অনেক ছিনতাই কারী, দামী মোবাইল দেখলেই প্রবলেম।
-ও আচ্ছা।তাহলে আমার নাম্বার টা রাখ।!
আচল ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে সাদির হাতে দিল।সাদি কার্ড টা হাতে নিয়ে পড়ার চেষ্টা করল কিন্তু রাস্তার অন্ধকারের কারণে পড়া গেল না।আর পড়ার চেষ্টা না করে সেটা বুক পকেটে রেখে দিল।
.
-ফোন দিবে কিন্তু আমাকে,
-হুম,
-না দিলে কিন্তু তোমার খবর আছে,
-কি খবর
-তোমাকে তুলে নিয়ে যাব! 
এটুকু বলেই আচল আবার হাসল।
.
-বাসা যাবেনা?
-হুম,,
-এগিয়ে দেব
-না গাড়ি আসবে।
-আচ্ছা।
-তুমি শুক্রবারে আসবে তো,,,
-ঈদে গ্রামে যাব।
-তারপর থেকে,
-চেষ্টা করব।
-অবশ্যই আসবে আমি অপেক্ষা করব।
.
আচলের গাড়ি এসে গেছে, আগে একটা পাজেরো আসতো এখন আসে কার ! অবশ্য কালার একি, দুটারই কালার কালো।
.
আচল গাড়ির গেট খুলতে খুলতে বলল,
-তোমাকে কোথাও ড্রপ করে দিব?
-না আমি উল্টো দিকে যাব।
-আচ্ছা।বাই।
আর ফোন দিবা কিন্তু।আবার দেখা হবে।
-আচ্ছা।
.
আচল গাড়িতে বসতেই সাদি গাড়ির গেট টা লাগিয়ে দিল। গাড়ি চলতে শুরু করল।
আর সাদি নীল জামার প্যাকেট টা শক্ত করে ধরে সোডিয়াম বাতির নিচে দাড়িয়ে আচলের চলে যাওয়া দেখতে লাগল।
মনে হল,কিছুক্ষন আগেও জীবন রঙীন ছিল সেটা হঠাৎ বিবর্ন হয়ে গেল।
.
সাদি ততক্ষনাৎ সিদ্ধান্ত নিল ! 
এ শহর থেকে চিরতরে চলে যেতে হবে। কাওকে মিথ্যা সপ্ন দেখানো উচিত নয়,সপ্ন ভাঙার কষ্ট সাদি জানে,সেই কষ্ট টা আচল পাক সেটা ও কখনোই চাইবেনা।
হুম,এটাই ঠিক।
আচলের গাড়ি চোখের আড়াল হতেই সাদি উল্টা দিকে ঘুরে হাঁটা শুরু করল,বুক পকেটে হাত দিয়ে আচলের নাম্বারের কার্ড টা বের করল।এটা পকেটে থাকলে আচলের কথা মনে পড়বে তাই এটাকে আগে সরানো দরকার তাই সাদি কার্ড টাকে দুমড়ে মুচড়ে রাস্তার পাশে ফেলে দিল।
.
আচলের আর কিছু থাকল না সাদির কাছে, সব নষ্ট করা হল ! সব কি নষ্ট করা হল?
না ভালবাসা গুলো নষ্ট হয়নি, ওগুলো নষ্ট হবেনা যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন এগুলো থেকে যাবে।কার্ড টা ফেলে দিতেই কেন জানি বুক টা হাহাকার করছে,মনে হচ্ছে কিছু একটা নেই?
সত্যি কি কিছু নেই??
.
আচ্ছা, শুক্রবারে কি আচল বারান্দায় অপেক্ষা করবে,হয়ত করবে। করুক দুদিন অপেক্ষা করে যখন দেখবে কেউ আসছেনা তখন আপনা আপনি ভুলে যাবে। 
সবাই ভুলে যায় কেউ কাওকে মনে রাখেনা, কেউ পরে ভোলে কেউ আগে ভোলে কিন্তু এক সময় না একসময় ঠিকই ভোলে।
সময় কারো জন্য অপেক্ষা করেনা ,সময়ের স্রোতে সবাই ভেসে যায় আজ সাদি ভেসে যাচ্ছে,অন্য একদিন আচল ও ভেসে যাবে।
পৃথিবীর নিষ্ঠুর সত্য গুলোর মধ্য এটা একটা।
.
তবুও ভাল থাকুক সে,যে ভাল থাকলে অন্য আরেক জন ভাল থাকে।সুখে থাকুক সে তাহলে অন্য আরেক জন সুখে থাকবে।
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×