অনেক রাগ নিয়ে কলিং বেল চাপলাম।অনেক ছাড় দিয়েছি আর নয়।আজ অতিরিক্তই হয়ে গেছে ব্যাপারটা। মেয়ে টাকে এমন ভাবে ঝাড়ি দিবো যেন দ্বিতীয় বার এমন করার সাহস না পায়। এত বাজে ভাবে কেউ গান গায়?
আর কিছুক্ষন এ গান শুনলে মারাই যেতে হবে তাই এক্ষুনি এটা জলদি এটা বন্ধ করতে হবে।
.
গেট খুলেতেই আমার ঝাড়ি দেয়ার সব ধরণের ইচ্ছা নিমিষেই উবে গেল।
দরজার সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,শুধু মেয়ে না রুপবতী মেয়ে।
এত সুন্দর মেয়ে হয় কিভাবে??
বাট এই মেয়ে মানে এত সুন্দর মেয়ের গানের গলা এত খারাপ কেন?
.
-কে?
-আমি নয়ন,আপনি?
-আমি ইভা,বাট কে আপনি?
-আমি আপনার পাশের বাসায় থাকি?
-ও, কি চাই?
-এ বাসায় কি গান আপনি গাইতে ছিলেন?
-হ্যাঁ,কেন?
.
হ্যাঁ বলতে বলতেই মেয়েটার মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেল।
মেয়েটা ভাবছে হয়ত আমি প্রশংসা করার জন্য আসছি তা মোটেও না।
এরা সপ্তাহ খানেক হয় এখানে আসছে,সব কিছু ঠিকই আছে শুধু এই মেয়ের গানের গলাটা বাদে। কন্ঠ ভালই,কিন্তু কোন সুর নাই। খালি চিল্লা হাল্লা করে গান গায়।কান ঝালা পালা অবস্থা।
.
মেয়েটাকে আমার ভাল লেগেছে আর মেয়েটার মন নষ্ট করার কোন ইচ্ছাও হচ্ছে না তাই যে জন্য এসেছি সেটা গোপন করে মিথ্যা বললাম,
-আপনার গানের গলা দারুন,,
-ও ধন্যবাদ।বাহিরে কেন ভেতরে আসুন,,
.
আমি মেয়েটার পেছন পেছন ভিতরে চলে গেলাম।মেয়েটা বলতে লাগল,
-আসলে আমি রেগুলার গান গাই না,মাঝে মাঝে,,
.
আমি মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিলাম।
রেগুলার গাইলে কি অবস্থা হত কে জানে?
প্রবলেম টা হয় বেশি কারণ আমার ঘর টা মেয়েটার ঘরের সবচাইতে কাছে।
.
-চা খাবেন?
-হ্যাঁ,,
-আচ্ছা,বসেন।
-আর কেউ নাই বাসায়?
-না, বাবা মা নাই। বাহিরে গেছে,
-ওহ,
-হুম,মা বাসায় থাকলে গান গাইতে দেয়না,,
-গান বোঝেনা তাই,
-হুম,ঠিক বলছেন,,ওল্ড জেনারেশন তো,
- হ্যাঁ,,
-আচ্ছা,বসেন চা আনি,
-হুম,,,
.
মেয়েটার মা কে ধন্যবাদ দিলাম।
ভাগ্য ভাল তিনি এ গান বাসায় এলাও করেন না,এই মেয়ে সারাদিন গান করলে কি হবে কে জানে?
আমি ইভাদের ডাইনিং রুম টা ঘুরে দেখতে লাগলাম।মোটামুটি ভালই সাজানো গোছানো। অনেক গুলো ফটোও আছে ওর।কত সুন্দর সব গুলো।একটা নিয়ে নেব নাকি?
.
এক ফটো তে হাত দিতে যাবো তখনি পিছন থেকে ইভা বলল,
-সরি,
-কেন?
-আসলে চা পাতা নাই,,
-ওহ ব্যাপার না,,আরেক দিন,,
-খুবি খারাপ লাগতেছে,,
-আচ্ছা,চলেন বাহিরে গিয়ে খেয়ে আসি। এখানকার চা খুব ভালো,,
.
ইভা কি যেন ভাবল, তারপর বলল,
-আচ্ছা,চলেন।
.
আমরা ইভাদের বাসায় তালা দিয়ে চা খেতে গেলাম।এত সুন্দর একটা মেয়েকে নিয়ে চা খেতে যাচ্ছি,ব্যাপার স্যাপারই আলাদা।
তবে একটু প্রবলেম ও আছে,,,পাশে একটা মেয়ে দেখলে এলাকার মানুষ ভেবে নিবে যে আমি প্রেম করি। এসব বিষয়ে পাশের বাসার আন্টিরা আবার খুব ডেঞ্জারাস হয়ে যায়।
.
চায়ের দোকানে গিয়ে বসতেই ইভা বলল,
-আপনারা এখানে স্থানীয়?
-হ্যাঁ,
-ও তাহলে তো ভাল।
-কেন?
-আমি এ শহরে কিচ্ছু চিনিনা,আর এখানে কোন পরিচিতও নাই।
-আরে এটা কোন ব্যাপার না,, আমি আছি,ঘুরাব নে আপনাক,
-আচ্ছা,ধন্যবাদ।
.
আমি আসার সময় ফোন নাম্বার দিয়ে আসলাম ইভাকে।মেয়েটার প্রেমে পরে গেছি আমি খুব ভাল ভাবে।
.
ইভার ঘর আমার ঘরের একেবারে সামনে তাই বাসায় এসে উকিঁ ঝুঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করলাম ওকে।বাট ভাগ্য খুব একটা সহায় হয়নি।তবে রাত্রে ভাগ্য সুপ্রশন্ন হলো।আমার ফোন বেজে উঠল,ইভার ফোন।নাম্বার সেভ করাই ছিল, তাই বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি।
-হ্যালো,,
-ডিস্ট্রাব করলাম,
-আরেহ নাহ,
-আচ্ছা,কাল সকালে একটু বেরুবো।ফ্রি আছেন?
-হ্যাঁ,ফ্রি। কোথায় যাবেন,,?
-আছে এক খানে.
-আচ্ছা,ঠিকাছে।
-আচ্ছা,রাখি।
.
আমি সকাল হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম, সকাল হলেই ইভাকে দেখব। তার চেয়ে বড় কথা আমরা দুজন এক সাথে ঘুরবোও।
সকালে ইভার ফোনেই ঘুম ভাঙ্গল,
-কোথায় আপনি?
-বাসায়?
-রেডী হন,
-আচ্ছা,,
-আধাঘন্টা পর বের হবেন,
-ঠিকাছে,
.
আধাঘন্টার আগেই রেডী হয়ে বাসা থেকে বের হলাম,বাসার বাইরে গিয়ে দেখি ইভা আগে থেকেই আছে। সাদা একটা সেলোয়ার কামিজ পরেছে।কি সুন্দরই না লাগছে।
আমি তো বলেই ফেললাম,
-আপনাকে দারুন লাগছে,,
-ধন্যবাদ,,
-কোথায় যাব?
-পুকুর দেখতে,
-মানে?
-বড় পুকুর,,
-ওখানে দেখার কিছু নাই।সবাই প্রেম করতে যায় ওখানে,
-পুকুর আছে তো,পুকুর আমার খুব ভাল লাগে,,
-আচ্ছা,চলেন তাহলে।
.
যেখানে যাচ্ছি সেখানে গেলে বিপদে পড়ব। কারণ সেখানে সবাই প্রেমিক প্রেমিকা আমরা দুজনেই শুধু আলাদা আলাদা।
তার আগে প্রবলেম হলো রিকশায়,,এত কম জায়গা। পুরা গায়ের সাথে গা লেহে যাচ্ছিল,এত সেফ থাকার চেষ্টা করছিলাম বাট কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না।আমতার উপর ইভার গায়ের কড়া পারফিউম সব কিছুই আমার বিরুপ প্রকৃতির।
ইভা হয়ত আমার অস্বস্তির কথা বুঝতে পেরে বলল,
-ভাল হয়ে বসেন, সমস্যা নাই আমার,
,-আচ্ছা
.
তবে ওখানে গিয়ে খুব একটা খারাপ লাগেনি আমাদের,যে কেউ আমাদের দেখে প্রেমিক প্রেমিকাই ভেবেছিল।
সবচাইতে ভাল যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে ইভা আর আমি অনেক ফ্রি হয়ে গেছি।এর পর থেকে ইভা যেখানেই যায় আমিও সেখানেই যাই।এভাবে শুধু আমরা না আমাদের পরিবার ও ফ্রি হয়ে গেল।
এলাকার অনেকে ভেবেই নিল আমরা প্রেম করছি,,আমি মাঝে মাঝে এ কথাটা ইভাকে বলতাম।ইভা অনেক মজা নিত।মাঝে মাঝে ও আমার হাতত ধরেও ঘুরতো।খুব ইচ্ছা করত ওকে বলে ফেলি মনের সব কথা।কিন্তু কোথাও যেন আটকে যাচ্ছিলাম হয়ত ভয় পাচ্ছিলাম।
.
তবে ইভা আমার প্রতি ইমপ্রেস কারণ আমি একমাত্র ওর গানের প্রশংসা করি।তাই খুব দ্রুত আমি ইভার কাছে আপনি থেকে তুমি হয়ে গেলাম।ও মাঝে মাঝেই আমাকে গান শোনাত, আমার কিছু করার ও ছিলনা।বসে বসে সেই গান শুনতে হত। আর মিথ্যা প্রশংসা করতে হত।তবে মাঝে মাঝে ইভার গান চমৎকার হত।একদিন একটা গীটার ওকে গিফট করলাম।যেন গান টা একটু ভাল হয়। কান টা দিয়ে আরো কিছুদিন শুনতে চাই।
.
তো কিছুদিন পরেই ইভার জন্মদিন ছিল। অনুষ্ঠান ও করা হল হালকা পাতলা।
তো সেই অনুষ্ঠানেই আমি সবার সামনে বললাম ইভা গান গাইবে কিন্তু ইভার ফ্যামিলির কেউ গান শুনতে ইচ্ছুক না তারা তো খুব ভাল করেই জানে ইভা কেমন গায়?
.
ইভার এক খালা তো বলেই ফেলল,
-পার্টি টা নষ্ট করার দরকার নাই,
.
যদিও উনি মজা করেই বলেছিলেন।বাট ইভার খুব খারাপ লেগেছিল।ও নিজের ঘরে চলে যায়। আমিও যাই ওর পিছন পিছন।গিয়ে দেখি ও কাঁদছে।ওর ঘাড়ে হাত রাখতেই,ও মুখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকাল।চোখের কাজল গুলো লেপ্টে কি সুন্দর লাগছে দেখতে।
.
আমি বলা শুরু করলাম,
-ইভা, মন খারাপ করার কি আছে? ওরা গান বোঝেই না
-আর কত মিথ্যা বলবা,আমি জানি আমি খারাপ গাই,
-সত্যি না,,ভাল গাও,
ইভার কান্নার পরিমান বেড়ে গেল।
.
আমি আবার বললাম,
-ইভা কে কি ভাবে জানিনা। আমার কাছে তুমি বেস্ট।
.
ইভা একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার কাঁদতে লাগল।আমার হাতে নিজের মাথা রেখে কাঁদতে লাগল।আমার খুব মায়া হল।কেন জানি বলতে ইচ্ছা করল,
-ইভা,,তোমার গান আমার খুব ভাল লাগে।আর তুমি চাইলে আমি সারাজীবন সেটা শুনব।আর তুমি শুধু আমার জন্যই গাইবা।
আমি তোমাকে ভালবাসি ইভা আর তোমাকে ভাল রাখবো।
.
কথাটা বলেও ফেললাম,
এক নিশ্বাসে বলে ইভার দিলে তাকালাম।
কান্না নেই ওর চোখে।ও চোখ মুছে বলল,
-সত্যি,গান শুনবা তো,
-হুম,তিন সত্যি,
.
ইভার সাথে আমার প্রেম হয়েছে এটা ভাল ব্যাপার,,, আমার সাথে ইভার প্রেম হয়েছে এটা খারাপ ব্যাপার কারণ ইভার গান গুলো এখন থেকে আমাকেই শুনতে হবে।
অবশ্য আমি অভ্যাস করে নিচ্ছি,ওর কিছু গান রেকড করে নিয়ে এসে শুনছি।
আমি কিছুতেই ইভাকে কষ্ট দিতে চাইনা এই বলে যে তোমার গানের গলা খারাপ।
ভালবাসা মানে তোমার যা আমারই তা। তোমার ভাল লাগা মানে আমারো।
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৫৭