somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্প- যা তোমার,তাই আমার

৩১ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক রাগ নিয়ে কলিং বেল চাপলাম।অনেক ছাড় দিয়েছি আর নয়।আজ অতিরিক্তই হয়ে গেছে ব্যাপারটা। মেয়ে টাকে এমন ভাবে ঝাড়ি দিবো যেন দ্বিতীয় বার এমন করার সাহস না পায়। এত বাজে ভাবে কেউ গান গায়?
আর কিছুক্ষন এ গান শুনলে মারাই যেতে হবে তাই এক্ষুনি এটা জলদি এটা বন্ধ করতে হবে।
.
গেট খুলেতেই আমার ঝাড়ি দেয়ার সব ধরণের ইচ্ছা নিমিষেই উবে গেল।
দরজার সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,শুধু মেয়ে না রুপবতী মেয়ে।
এত সুন্দর মেয়ে হয় কিভাবে??
বাট এই মেয়ে মানে এত সুন্দর মেয়ের গানের গলা এত খারাপ কেন?
.
-কে?
-আমি নয়ন,আপনি?
-আমি ইভা,বাট কে আপনি?
-আমি আপনার পাশের বাসায় থাকি?
-ও, কি চাই?
-এ বাসায় কি গান আপনি গাইতে ছিলেন?
-হ্যাঁ,কেন?
.
হ্যাঁ বলতে বলতেই মেয়েটার মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেল।
মেয়েটা ভাবছে হয়ত আমি প্রশংসা করার জন্য আসছি তা মোটেও না।
এরা সপ্তাহ খানেক হয় এখানে আসছে,সব কিছু ঠিকই আছে শুধু এই মেয়ের গানের গলাটা বাদে। কন্ঠ ভালই,কিন্তু কোন সুর নাই। খালি চিল্লা হাল্লা করে গান গায়।কান ঝালা পালা অবস্থা।
.
মেয়েটাকে আমার ভাল লেগেছে আর মেয়েটার মন নষ্ট করার কোন ইচ্ছাও হচ্ছে না তাই যে জন্য এসেছি সেটা গোপন করে মিথ্যা বললাম,
-আপনার গানের গলা দারুন,,
-ও ধন্যবাদ।বাহিরে কেন ভেতরে আসুন,,
.
আমি মেয়েটার পেছন পেছন ভিতরে চলে গেলাম।মেয়েটা বলতে লাগল,
-আসলে আমি রেগুলার গান গাই না,মাঝে মাঝে,,
.
আমি মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিলাম।
রেগুলার গাইলে কি অবস্থা হত কে জানে?
প্রবলেম টা হয় বেশি কারণ আমার ঘর টা মেয়েটার ঘরের সবচাইতে কাছে।
.
-চা খাবেন?
-হ্যাঁ,,
-আচ্ছা,বসেন।
-আর কেউ নাই বাসায়?
-না, বাবা মা নাই। বাহিরে গেছে,
-ওহ,
-হুম,মা বাসায় থাকলে গান গাইতে দেয়না,,
-গান বোঝেনা তাই,
-হুম,ঠিক বলছেন,,ওল্ড জেনারেশন তো,
- হ্যাঁ,,
-আচ্ছা,বসেন চা আনি,
-হুম,,,
.
মেয়েটার মা কে ধন্যবাদ দিলাম।
ভাগ্য ভাল তিনি এ গান বাসায় এলাও করেন না,এই মেয়ে সারাদিন গান করলে কি হবে কে জানে?
আমি ইভাদের ডাইনিং রুম টা ঘুরে দেখতে লাগলাম।মোটামুটি ভালই সাজানো গোছানো। অনেক গুলো ফটোও আছে ওর।কত সুন্দর সব গুলো।একটা নিয়ে নেব নাকি?
.
এক ফটো তে হাত দিতে যাবো তখনি পিছন থেকে ইভা বলল,
-সরি,
-কেন?
-আসলে চা পাতা নাই,,
-ওহ ব্যাপার না,,আরেক দিন,,
-খুবি খারাপ লাগতেছে,,
-আচ্ছা,চলেন বাহিরে গিয়ে খেয়ে আসি। এখানকার চা খুব ভালো,,
.
ইভা কি যেন ভাবল, তারপর বলল,
-আচ্ছা,চলেন।
.
আমরা ইভাদের বাসায় তালা দিয়ে চা খেতে গেলাম।এত সুন্দর একটা মেয়েকে নিয়ে চা খেতে যাচ্ছি,ব্যাপার স্যাপারই আলাদা।
তবে একটু প্রবলেম ও আছে,,,পাশে একটা মেয়ে দেখলে এলাকার মানুষ ভেবে নিবে যে আমি প্রেম করি। এসব বিষয়ে পাশের বাসার আন্টিরা আবার খুব ডেঞ্জারাস হয়ে যায়।
.
চায়ের দোকানে গিয়ে বসতেই ইভা বলল,
-আপনারা এখানে স্থানীয়?
-হ্যাঁ,
-ও তাহলে তো ভাল।
-কেন?
-আমি এ শহরে কিচ্ছু চিনিনা,আর এখানে কোন পরিচিতও নাই।
-আরে এটা কোন ব্যাপার না,, আমি আছি,ঘুরাব নে আপনাক,
-আচ্ছা,ধন্যবাদ।
.
আমি আসার সময় ফোন নাম্বার দিয়ে আসলাম ইভাকে।মেয়েটার প্রেমে পরে গেছি আমি খুব ভাল ভাবে।
.
ইভার ঘর আমার ঘরের একেবারে সামনে তাই বাসায় এসে উকিঁ ঝুঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করলাম ওকে।বাট ভাগ্য খুব একটা সহায় হয়নি।তবে রাত্রে ভাগ্য সুপ্রশন্ন হলো।আমার ফোন বেজে উঠল,ইভার ফোন।নাম্বার সেভ করাই ছিল, তাই বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি।
-হ্যালো,,
-ডিস্ট্রাব করলাম,
-আরেহ নাহ,
-আচ্ছা,কাল সকালে একটু বেরুবো।ফ্রি আছেন?
-হ্যাঁ,ফ্রি। কোথায় যাবেন,,?
-আছে এক খানে.
-আচ্ছা,ঠিকাছে।
-আচ্ছা,রাখি।
.
আমি সকাল হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম, সকাল হলেই ইভাকে দেখব। তার চেয়ে বড় কথা আমরা দুজন এক সাথে ঘুরবোও।
সকালে ইভার ফোনেই ঘুম ভাঙ্গল,
-কোথায় আপনি?
-বাসায়?
-রেডী হন,
-আচ্ছা,,
-আধাঘন্টা পর বের হবেন,
-ঠিকাছে,
.
আধাঘন্টার আগেই রেডী হয়ে বাসা থেকে বের হলাম,বাসার বাইরে গিয়ে দেখি ইভা আগে থেকেই আছে। সাদা একটা সেলোয়ার কামিজ পরেছে।কি সুন্দরই না লাগছে।
আমি তো বলেই ফেললাম,
-আপনাকে দারুন লাগছে,,
-ধন্যবাদ,,
-কোথায় যাব?
-পুকুর দেখতে,
-মানে?
-বড় পুকুর,,
-ওখানে দেখার কিছু নাই।সবাই প্রেম করতে যায় ওখানে,
-পুকুর আছে তো,পুকুর আমার খুব ভাল লাগে,,
-আচ্ছা,চলেন তাহলে।
.
যেখানে যাচ্ছি সেখানে গেলে বিপদে পড়ব। কারণ সেখানে সবাই প্রেমিক প্রেমিকা আমরা দুজনেই শুধু আলাদা আলাদা।
তার আগে প্রবলেম হলো রিকশায়,,এত কম জায়গা। পুরা গায়ের সাথে গা লেহে যাচ্ছিল,এত সেফ থাকার চেষ্টা করছিলাম বাট কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না।আমতার উপর ইভার গায়ের কড়া পারফিউম সব কিছুই আমার বিরুপ প্রকৃতির।
ইভা হয়ত আমার অস্বস্তির কথা বুঝতে পেরে বলল,
-ভাল হয়ে বসেন, সমস্যা নাই আমার,
,-আচ্ছা
.
তবে ওখানে গিয়ে খুব একটা খারাপ লাগেনি আমাদের,যে কেউ আমাদের দেখে প্রেমিক প্রেমিকাই ভেবেছিল।
সবচাইতে ভাল যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে ইভা আর আমি অনেক ফ্রি হয়ে গেছি।এর পর থেকে ইভা যেখানেই যায় আমিও সেখানেই যাই।এভাবে শুধু আমরা না আমাদের পরিবার ও ফ্রি হয়ে গেল।

এলাকার অনেকে ভেবেই নিল আমরা প্রেম করছি,,আমি মাঝে মাঝে এ কথাটা ইভাকে বলতাম।ইভা অনেক মজা নিত।মাঝে মাঝে ও আমার হাতত ধরেও ঘুরতো।খুব ইচ্ছা করত ওকে বলে ফেলি মনের সব কথা।কিন্তু কোথাও যেন আটকে যাচ্ছিলাম হয়ত ভয় পাচ্ছিলাম।
.
তবে ইভা আমার প্রতি ইমপ্রেস কারণ আমি একমাত্র ওর গানের প্রশংসা করি।তাই খুব দ্রুত আমি ইভার কাছে আপনি থেকে তুমি হয়ে গেলাম।ও মাঝে মাঝেই আমাকে গান শোনাত, আমার কিছু করার ও ছিলনা।বসে বসে সেই গান শুনতে হত। আর মিথ্যা প্রশংসা করতে হত।তবে মাঝে মাঝে ইভার গান চমৎকার হত।একদিন একটা গীটার ওকে গিফট করলাম।যেন গান টা একটু ভাল হয়। কান টা দিয়ে আরো কিছুদিন শুনতে চাই।
.
তো কিছুদিন পরেই ইভার জন্মদিন ছিল। অনুষ্ঠান ও করা হল হালকা পাতলা।
তো সেই অনুষ্ঠানেই আমি সবার সামনে বললাম ইভা গান গাইবে কিন্তু ইভার ফ্যামিলির কেউ গান শুনতে ইচ্ছুক না তারা তো খুব ভাল করেই জানে ইভা কেমন গায়?
.
ইভার এক খালা তো বলেই ফেলল,
-পার্টি টা নষ্ট করার দরকার নাই,
.
যদিও উনি মজা করেই বলেছিলেন।বাট ইভার খুব খারাপ লেগেছিল।ও নিজের ঘরে চলে যায়। আমিও যাই ওর পিছন পিছন।গিয়ে দেখি ও কাঁদছে।ওর ঘাড়ে হাত রাখতেই,ও মুখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকাল।চোখের কাজল গুলো লেপ্টে কি সুন্দর লাগছে দেখতে।
.
আমি বলা শুরু করলাম,
-ইভা, মন খারাপ করার কি আছে? ওরা গান বোঝেই না
-আর কত মিথ্যা বলবা,আমি জানি আমি খারাপ গাই,
-সত্যি না,,ভাল গাও,
ইভার কান্নার পরিমান বেড়ে গেল।
.
আমি আবার বললাম,
-ইভা কে কি ভাবে জানিনা। আমার কাছে তুমি বেস্ট।
.
ইভা একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার কাঁদতে লাগল।আমার হাতে নিজের মাথা রেখে কাঁদতে লাগল।আমার খুব মায়া হল।কেন জানি বলতে ইচ্ছা করল,
-ইভা,,তোমার গান আমার খুব ভাল লাগে।আর তুমি চাইলে আমি সারাজীবন সেটা শুনব।আর তুমি শুধু আমার জন্যই গাইবা।
আমি তোমাকে ভালবাসি ইভা আর তোমাকে ভাল রাখবো।
.
কথাটা বলেও ফেললাম,
এক নিশ্বাসে বলে ইভার দিলে তাকালাম।
কান্না নেই ওর চোখে।ও চোখ মুছে বলল,
-সত্যি,গান শুনবা তো,
-হুম,তিন সত্যি,
.
ইভার সাথে আমার প্রেম হয়েছে এটা ভাল ব্যাপার,,, আমার সাথে ইভার প্রেম হয়েছে এটা খারাপ ব্যাপার কারণ ইভার গান গুলো এখন থেকে আমাকেই শুনতে হবে।
অবশ্য আমি অভ্যাস করে নিচ্ছি,ওর কিছু গান রেকড করে নিয়ে এসে শুনছি।
আমি কিছুতেই ইভাকে কষ্ট দিতে চাইনা এই বলে যে তোমার গানের গলা খারাপ।
ভালবাসা মানে তোমার যা আমারই তা। তোমার ভাল লাগা মানে আমারো।
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৫৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×