আমি আস্তে করে ডাক দিলাম,
-মেঘা,
.
আমি জানি এ ডাক মেঘার কানে যায়নি। আসলে জোরে ডাকার সাহস পাচ্ছিনা,তাই এমন মিন মিনিয়ে ডাকছি। এ মেয়ে আমাকে দেখলেই এক গাদা কথা শুনিয়ে দেবে।আর অন্য একটা ব্যাপারও আছে এই মেয়েই সত্যি মেঘা তো। ইদানিং আবার সব মেয়েকেই মেঘার মত লাগে।প্রেমে পরলে যা হয় আরকি?
আসল কথা এত রাতে এই মেয়ে এখানে কি করে? অবশ্য বেশি রাত ও হয়নাই মাত্র দশটা বাজে কেবল।আশে পাশে মানুষ নাই তাই এমন বেশি বেশি মনে হচ্ছে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে অবশ্য আমারই কেমন যেন লাগছে, আর এ তো একটা মেয়ে মানুষ।
.
যেই আরেকবার ডাকব,তখনি দেখি ও আমার দিকেই হেঁটে আসছে।কাছে আসতেই শিউর হলাম এটা মেঘাই।ও আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে মুখ খোলার আগেই আমি বললাম,
-আমি তোমার পিছনে আসিনি, সত্যি না।
আমি আমার এক খালাকে হসপিটাল এ দেখতে গিয়েছিলাম,,
.
মেঘা আমার কথা শুনে বলল,
-তারমানে তুমি আগের দিন গুলাতে আমার পিছে পিছে যাইতা,,
-প্রতিবার না, কয়েক বার।
.
মেঘা কোন জবাব দিল না আমার কথার।
মেঘার ধারণা, আমি সব সময় ওর পিছু করি কিন্তু তেমন না এটা হুট করেই হয়ে যায়।ওকে যখন জানালাম যে আমি ওকে পছন্দ করি তখন থেকে এ মীরাক্কেল টা বেশি শুরু হল।
যেখানেই যাই সেখনেই ও।সেদিন এক বন্ধুর সাথে ওর চাচাত ভাইয়ের বিয়েতে গেলাম, সেখানে গিয়ে দেখি কণে মেঘার বান্ধবী হয়। মেঘা ওখানে আমাকে দেখে ধরেই নিলো আমি ওর পিছু পিছু আসছি। আবার এই আজ খালাকে দেখে বের হয়ে অটোর জন্য অপেক্ষা করছি এখানেও মেঘার সাথে দেখা।
.
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-কোথায় আসছ?
-আম্মুর রিপোর্ট নিতে আসছিলাম, কিন্তু লেট হয়ে গেছে,,
আমি একটু চিন্তা করে বললাম,
-এদিকের সব রাস্তা বন্ধ, কোন কিছু পাবানা। আমার সাথে নেক্সট মোড় পর্যন্ত চলো।
.
মেঘা আমার কথা শুনে একটুও নড়ল না।আমি আবার বললাম,
-একা একা আসতে পারবানা,,ভয় পাবা।
ও জবাব দিল,
-পারব আমি,আমি সব পারি।যাও তুমি,,
.
আমি ওর কথা শুনে চিন্তায় পরে গেলাম।এই মেয়ে অতিরিক্ত দেমাগী।একবার না বললে হ্যাঁ বলানো মুশকিল।আমি আবার বললাম,
-আসলে আমার ভয় লাগতেছে, একটু আসবা আমার সাথে?
.
এবার মেঘার মুখে হাসি ফুটঁল।ও ওর হাতের ব্যাগ টা আমার হাতে দিয়ে বলল,
-আসো, আমি নিয়ে যাচ্ছি,
.
ওর কথা শুনে আমার মুখেও হাসি ফুঁটল। মেয়েটা পারেও বটে।নিজেকে সব সময় বড় করে রাখবে।
.
বি.এন.পি আর আওয়ামিলীগ এর গন্ডগোল এর কারণে এ অবস্থা, আশেপাশে জনমানব শূণ্য।পরের মোড়ে এসে দেখি মাত্র একটাই রিকশা।ভাবলাম আমার আর যাওয়া হল না। আমি শিউর ছিলাম মেঘা আমাকে রেখে একাই রিকশা করে চলে যাবে কিন্তু ও রিকশায় উঠে আমাকে অবাক করে দিয়ে একপাশে সরে গিয়ে বলল,
-উঠে আসে,
-শিউর?
-আজব তো,এমন দেরী হইছে,
.
আমি আর দেরী করলাম না টুপ করে রিকশায় উঠে পরলাম,মেঘার সাথে এক রিকশায় যাওয়া, এটা কোনভাবেই মিস করা যায় না।
.
আমার মনে হচ্ছিল রিকশায় উঠে মেঘা কিছু জ্ঞান মূলক কথা বলবে আমার জন্য,এই যেন আমি ওর পিছনে না ঘুরি,এসব প্রেম ভালবাসা ঠিক না ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু তেমন কিছু হল না,ও প্রথম যে কথাটা বলল তা হল,
-লেখাপড়ার কি অবস্থা?
-হুম,ভালই,,
-খালি ভাল,
-খুব ভাল,
-গুড
.
কিছুক্ষন চুপ থেকে ও আবার জিজ্ঞেস করল,
-আমার নাম কি?
-মেঘা,
-না,মেঘলা,।মনে থাকবে?
-আসলে ভালবেসে মেঘা ডাকি,
-ও, আমি তোমাকে ভালবেসে নয়ন থেকে নয় ডাকব তাহলে,
-তুমি আমাকে ভালবেসে নয় কেন শুধু ন ডাকতে পারো নো প্রবলেম,
-হে হে হে,,
-তুমি কি আমাকে ভালবাস?
-কখন বললাম ভালবাসি?
-না তা বল নাই,,জিজ্ঞেস করলাম আর কি?
-আচ্ছা,যদি ভালবাসি তবে কি হবে?
-একটা প্রেম হবে?
-প্রেম হলে?
-একটা বিয়ে হবে,
-বিয়ে হলে?
-একটা মেয়ে হবে,
-আমার তো ছেলের ইচ্ছা,
-তাহলে ছেলেই হবে,
-হে হে হে,,
.
আমি একটু গম্ভীর ভাব নিয়ে বললাম,
-হাসির কিছু নাই,আমি সিরিয়াস,
.
মেঘা আর কিছু বলল না,ও কেন জানি গম্ভীর হয়ে কিছু একটা চিন্তা করতে লাগল।ওর চিন্তা শেষ হওয়ার আগেই ওর বাসা চলে এল।ও রিকশা থেকে নেমে সোজা চলে যেতে গিয়েও আরেকবার ফিরে এল,তারপর আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
-কাল সকালে আমাদের ক্যাম্পাসে আসবা,
-কেন?
-অল্প অল্প ভালবাসা হইছে,এখন প্রেম হোক,,
.
আমি কিছু বলব তার আগে মেঘা মুখ ঘুরিয়ে বাসার ভিতর চলে গেল।আমি চুপচাপ ওর চলে যাওয়া দেখতে লাগলাম।তখনি রিকশাওয়ালা বলল,
-মামা যামু?
.
আমি রিকশাওয়ালার কথায় সামান্য বিরক্তও হলাম না।কেন জানি উল্টা ভাল লাগল। আসলে ভাল কিছু হয়েছে খুব ভাল কিছু।
ভালবাসা হইছে,প্রেম হবে,বিয়ে হবে,বাচ্চাও হবে।
.
দুই,,
কোন একখানে শুনেছিলাম প্রেমিকা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।কথার মানে টা আগে না বুঝলেও এখন আস্তে আস্তে ঠিকই বুঝতে পারতেছি।
যদিও আমার এমন কঠিন পরিস্থিতি আসেনি তবে যা হয়েছে তাও কিছু কম নয়।
.
মেঘার সাথে আমার প্রেম শুরু করতে যত কষ্ট হয়েছে তার চাইতে ওর সাথে মানিয়ে নিয়ে প্রেম করাটা বেশি কষ্টের হয়ে যাচ্ছে।
আমি প্রায় নিজের সব কিছু চেঞ্জ করে ফেলেছি ওর জন্য।সকালে ঘুম ভেঙে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আমি মেঘার কথা মেনে চলি।ও যেমন চায় তেমন ভাবেই চলি।তবুও দেখা যায় মেঘা আমার কোন কিছুতেই খুশি নয়।ওর ধারণা আমি ওর সাথে ইচ্ছা করে এরকম করি।কিন্তু আমি সব সময় চাই ও যেন আমার প্রতি খুশি থাকে।
.
ছোট ছোট কাহিনী নিয়ে ও অতিরিক্ত রিয়্যাক্ট করে,যা মোটেও কাম্য নয়। এই সপ্তাহ খানেক আগে দুজনে রিকশা করে যাচ্ছিলাম তখনি হঠাৎ আমার এক পুরাতন স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়ে গেল। আমি রিকশা থামিয়ে মেঘাকে এক মিনিটের কথা বলে দেখা করতে গেলাম। মাত্র এক মিনিট কথা বলে এসে দেখি রিকশা আর মেঘা দুজনের কেউ নেই।
.
পরে যখন ওকে এ বিষয়ে বললাম।তখন ও উত্তরে বলল,
-তুমি গার্লফ্রেন্ড কে কিভাবে ট্রিট করতে হয় সেটাও জানোনা?
.
আমি ওর কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,
-এটাই প্রথম প্রেম তো,এক্সপেরিয়েন্স নাই,,
.
আমার এই সামান্য কথাটা ওর লেগে গেল।ও বলতে লাগল,
-তার মানে কি বলতে চাও,আমার এটা দিতীয় প্রেম?
-না তা বলিনি,,
-তো কি বলছ?
-আমি বলছি,প্রথম প্রথম তাই এমন হচ্ছে, কয়েক দিন পরে ঠিক হয়ে যাবে।
-এসব জিনিষ তো আগে থেকেই ঠিক হওয়ার কথা।আমাকে রেখে তুমি তোমার ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাও এটা কেমন কথা?
-অনেক দিন পর দেখা তাই,
-এসব বলে লাভ নাই,
-আচ্ছা,সরি। আর হবেনা এমন।
.
এত কিছুর পর মেঘা মাফ করে ছিল,তবে বলেছিল এর পর থেকে এমন হলে সোজা ব্রেকাপ।সেই থেকে ওর প্রতি আমি আরো সিরিয়াস হয়ে গিয়েছিলাম।
.
তবে সমস্যা আরো ছিল। কাল বিকালে ওর সাথে যখন দেখা করলাম তখন ও কথার এক পর্যায়ে বলেই ফেলল,
-তুমি রোমান্টিক নও,,
.
এর উত্তরে কি বলব ভেবে পেলাম না।উত্তরে বলা যায়,
-তুমিও রোমান্টিক নও,
.
এটা বললে ব্রেকাপ নিশ্চিত তাই এটা বাদ দিয়ে বললাম,
-কিভাবে হব রোমান্টিক?
.
মেঘার মুখ গম্ভীর হল।ও কিছুক্ষন ভেবে বলল,
-কয়েক টা বই দিচ্ছি,আর কয়েক টা মুভির নাম বলব সব পড়বা আর দেখবা তাতেই হবে,
-বই আর মুভি দেখে রোমান্টিক হওয়া যাবে
-পুরোপুরী না হলেও কিছুটা তো হওয়া যাবে,,
.
আমার মনে হয়েছিল আমি যথেষ্ট রোমান্টিক কিন্তু মেঘার কথায় সেই কনফিডেন্স হারিয়ে গেল।যে ছেলে মেঘাকে পটাতে পারে তার মধ্য কিছুতো থাকবে। কি আছে সেটা ভেবে পেলাম না।তাই সব কিছু বাদ দিয়ে এখন বসে বসে মুভি দেখছি আর রোমান্টিক হওয়ার চেষ্টা করছি।কিন্তু লাভ হচ্ছেনা কিছু, সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।নেটে এরকম বই ও খুঁজলাম রোমান্টিক হওয়ার শর্টকাট উপায়, কিন্তু কিছুই পাইনি।
.
আমাকে আনরোমান্টিক বলার কারণ হিসেবে সারারাত ভেবে আমি যা খুঁজে পেয়েছি তা হল,আমি কখনো ওর হাত ধরিনি।যদিও ভালবাসি কয়েক বার বলেছি।
হাত ধরতে পারলে কি রোমান্টিক হওয়া যায় কিনা ,এটা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
.
সকালে ভয়ে ভয়ে মেঘার সামনে উপস্থিত হলাম।ও আমাকে দেখে সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলল,
-রোমান্টিক হয়েছ,,
-হুম,হালকা,
-আচ্ছা,কিভাবে প্রমান দাও,,
.
আমি দেরী না করে ওর হাত ধরে বললাম,
-আমি তোমাকে ভালবাসি,
-এটা কি রোমান্টিকতা,
-হুম,
-হয়নি,কাল শেষ চান্স।না পারলে ব্রেকাপ,,
.
আমাকে আর কোন কিছু বলার চান্স না দিয়ে মেঘা সোজা হন হন করে হেঁটে চলে গেল। আমি আবার টেনশনে পরে গেলাম।
বাসায় এসে সারাদিন চিন্তা করলাম যে রোমান্টিক হব কিভাবে?
.
এত চিন্তা করেও কিছু মাথায় এলনা,তাই রাতে বের হলাম মেঘার বাড়ির উদ্দেশ্য। ওর হাত পা ধরে বলব যেন ও আমার সাথে ব্রেকাপ না করে। ওর পছন্দের ফুল বেলী আর আইস্ক্রিম নিয়ে ওর বাসায় পৌছালাম।ওর বাসার দেয়াল ছোট, তাই সেটা পেরোনো মোটেও কঠিন কিছু ছিলনা,কিন্তু ওর ঘর দোতলায় তাই সেটা ওঠার কোন উপায় ছিলনা।তাই বাধ্য হয়ে ওকে ফোন দিয়ে বললাম,
-একটু বারান্দায় আসো,,
.
ও বারান্দায় এসে আমাকে দেখা মাত্র নিচে নেমে এল।ও আমার কাছে আসতেই আমি আমার হাতের ফুল গুলো ওকে দিয়ে বললাম,
-আমি তোমাকে ভালবাসি,
.
আরো কিছু বলব সে সুযোগ না দিয়ে মেঘাই বলল,
-আচ্ছা,,তুমি পাশ, আমার পছন্দ হয়েছে।
-মানে?
-মানে তুমি রোমান্টিক,অবশ্য যদি সরাসরি দোতলায় উঠে আমার ঘরে ঢুকে ফুল দিতে পারতে তবে বেশি খুশি হতাম,,
.
আমি অবাক আর খুশি দুটাই হলাম।
তবে রোমান্টিক হয়েছি এটাই সবচেয়ে বড় কথা।
মেঘা আস্তে করে বলল,
-আমিও তোমাকে ভালবাসি,,
.
তখনি ওদের বাসার কুকুর টা ঘেউ ঘেউ করে উঠল।আমি ওকে বিদায় দিয়ে বের হয়ে আসলাম।বেশি ক্ষন মেঘাদের বাসায় থাকা মোটেও সুবিধার নয়।
.
যাক এর পর আমাদের প্রেমে মনে হয়না আর কোন সমস্যা হবে।হয়ত বিয়ের পর হতে পারে কিন্তু প্রেমে কোন ভাবেই নয়।
(
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৬ রাত ৯:৫৫