somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুখ

২৭ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জামিল লোকটার দিকে আরেকবার তাকাল, বয়স ত্রিশ এর মত হবে হয়ত। পরণে পাঞ্জাবী আর পায়জামা। কাপড় চোপড় দেখে লোকটা সমন্ধে কোন ধারণা পাচ্ছেনা জামিল। তবে লোকটার কথা শুনে মনে হচ্ছে নিম্নবিত্ত টাইপ।
.
না হলে এই সামান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়া করত না।
.
লোকটা স্বর্ণের দোকানদারের সাথে খুব সামান্য একটা বিষয় নিয়ে তর্ক করছে।বিষয় টা হল, উনি এক সপ্তাহ আগে একটা চেন দাম করে গিয়েছিলেন,কিন্তু এখন এসে দেখে সেই চেনের দাম বেড়ে গেছে।
লোকটা দোকানীকে বার বার বলছে,
-এক সপ্তাহ আগেই তো চার হাজার ছিল।দাম কিভাবে বাড়ল?
স্বর্ণর দোকানদার ও একই ভাবে বারবার ওনাকে বুঝিয়ে চলছে,
-এসব জিনিষের দাম হুট করে বাড়ে।কিছুই করার নেই।
.
কিন্তু সেই লোক কিছুতেই দোকানীর কথা বুঝতেছে না। উনি আগের দামেই চেন টা কিনতে চান। যা কখনো সম্ভব নয়।
শুধু শুধু ঝামেলা করছেন।
.
জামিল স্বর্ণর দোকানে এসেছে প্রায় দশ মিনিট। ওর বোন আর ওর মা কে নিয়ে।ওর বোনের বিয়ে সামনের সপ্তাহে,তারই কেনা কাঁটা করতে এখানে আসা।দশ মিনিট ধরেই জামিল দেখছে লোক টা তর্ক করেই চলেছে।
.
জামিল এখনো বুঝতে পারছে না,লোকটার সমস্যা কি?
মাত্র হাজার টাকাই বেড়েছ চেনটার দাম।চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার হয়েছে।বেশী দিলেই হয়ে যায়,ঝামেলা করার কি আছে। জামিলের মনে হল, লোকটার সমস্যা আছে,নয়ত ঝগড়া করার কথা না।লোকটার থেকে ব্যাপার টা কি শোনা দরকার।সামান্য কিছু হলে অবশ্যই এভাবে কেউ ঝগড়া করত না।
.
-মা তোমরা দেখো, আমি একটু ওপাশ থেকে আসছি।
-আচ্ছা যা।
.
জামিল লোকটার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-কি হয়েছে ভাই,সমস্যা কি আপনার?
.
জামিলের কথাতে লোকটার মনে একটু সাহস সঞ্চার হল। উনি একটু জোর গলায় বলল,
-দেখছেন ভাই,কিভাবে ঠকায়? চেনটা আগের সপ্তায় চারহাজার ছিল এখন পাঁচ হাজার টাকা হয়ে গেছে।
.
জামিল কিছু বলল না,চেনটার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবল।তারপর বলল,
-হুম,কার জন্য নিবেন?
.
লোকটা একটু জামিলের দিকে সরে এসে বলল,
-বউয়ের জন্য,ওর জন্মদিন আজ।গত বছর পছন্দ করছিলো,দিতে পারিনাই।গরীব মানুষ তো।এবার ধান ভাল হইছে তাই কিনতে আইলাম, কিন্তু এখন তো!
-বাসা গিয়ে টাকা আনেন,
-তা তো করা যায় কিন্তু ওরে সাথে করে আনছি। খালি হাতে ওর সামনে গেলে কষ্ট পাইবো।
-কোথায় আপনার স্ত্রী?
-বাইরে ভাই, রিকশায় বসে আছে।
.
জামিল দোকানের বাহিরে তাকাল। রিকশায় একটা অল্প বয়সী মেয়ে বসে আছে হাসি মুখে। হয়ত অপেক্ষা করছে তার সামীর জন্য,যে তার পছন্দের চেন উপহার দিবে তাকে।
লোকটা আরেকটু জামিলের দিকে সরে এসে বলল,
-এক হাজার টাকা জোগাড় করতে আরো কয়েকদিন লাইগা যাইব। কি করি কন তো?
এই টাকা জোগাড় করতেই অনেক কষ্ট হইছে। বৌটা কখনো কিচ্ছু চায়না।এই একটা জিনিষ চাইলো তাও দিতে পারলাম না।
.
জামিল কি যেন ভেবে বলল,
-আচ্ছা,আমি দিয়ে দিচ্ছি টাকাটা,
-না না ভাই,আপনি কেন?
-নেন,ফেরত দিয়েন।নিজে কারো স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি।তাই বলে অন্যর স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করব না কেন?
.
লোকটা আর কিছু না বলে জামিলের থেকে টাকা নিয়ে চেন টা কিনল।জামিলের টাকা নেয়া ছাড়া তার হয়ত আর কোন উপায় ও ছিলনা।
.
চেন কেনা শেষে, লোকটার সাথে দোকান থেকে বের হয়ে আসে জামিল।মা পিছন থেকে বলে,
-কোথায় যাস বাবা?
-তোমরা কেনো মা, আসছি।
.
বাহিরে এসে লোকটা ধন্যবাদ দেয় জামিল কে। ফোন নাম্বার চায়,টাকা শোধের জন্য।জামিল দিতে চায়না,লোকটা জোর করে।শেষ মেস একটা কার্ড বের করে দেয় লোকটার হাতে।
জামিল জিজ্ঞেস করে,
-প্রেম করে বিয়ে?
-হুম ভাইজান,
-আচ্ছা ভালো,
.
লোকটা জামিল কে বিদায় দিয়ে স্ত্রীর সামনে যায়,
চেনটা বের করতেই মেয়েটার মুখে হাসি ফোটে। হাসি পায় জামিলের মুখেও।কত দিন পরে ও হাসলো কে জানে?
দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিল জামিল এসব।
.
জামিল আর ওখানে দাঁড়ায় না,সামনে হাঁটার জন্য পা বাড়ায়।পিছিয়ে পরা জীবন টাকে এগিয়ে নিতে।চেন টা দেখে অজান্তেই রোদেলার কথা মনে পরে গেছে।রোদেলা এরকম একটা চেন পছন্দ করেছিল, তাও প্রায় বছর পাঁচেক আগে।উপহার হিসেবে চেয়েছিল ওর জন্মদিনে।
তখন দাম আরো কম ছিল।তবুও দিতে পারেনি জামিল।তখন মাত্রই একটা চাকুরীতে ঢুকেছিল জামিল, গোটা সংসারের ভার ছিল ওর একার উপর।আলাদা করে টাকা বাঁচিয়ে রোদেলাকে দেওয়ার উপায় ছিলনা।কিছুদিন পর দিতে চেয়েছিল,রোদেলাকে একটু বোঝার চেষ্টা করতে বলেছিল জামিল।
.
রোদেলা কেন জানি বোঝার চেষ্টা করেনি জামিল কে? রোদেলার সব চাহিদাই প্রায় পূরণ করত জামিল,তবুও রোদেলার মন ভরেনি।
রোদেলা বুঝতে পারে জামিলের দাড়ায় ওর সব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়,সম্ভব নয় ভাল থাকাও।এ কথা গুলো বুঝতে পেরেছিল জামিলও। তাই তো খুব সহজেই রোদেলা জামিলের জীবন থেকে সরে গিয়ে বিয়ে করে জামিলের এক বড় লোক ফ্রেন্ড কে।জামিল ও খুব সহজেই মেনে নিয়েছিল ব্যাপার টা । ও নিজেই বুঝতে পেরেছিল, ওর সাথে রোদেলা ভাল থাকবেনা।
হয়ত ভাল থাকত,এখন তো জামিলের অনেক আছে, শুধু রোদেলা নেই।
.
শেষ বারের দেখায় রোদেলা শুধু বলেছিল,
-ভালবেসে থাকলে ডিস্ট্রাব করবেনা কখনো।
.
জামিল কখনো ডিস্ট্রাব করেনি,ভালবাসে যে।
ভালবাসার মানুষ গুলোকে সমস্যায় ফেলা যায়না কখনো। জামিল ও পারেনি।
.
ভালবেসে হাতে হাত রাখা মানুষটার যে স্বপ্ন গুলো কখনই পূরণ করা হয় না। সে স্বপ্ন গুলো অন্য কখনো পূরণ হয়।অন্য কেউ পূরণ করে।
শুধু স্বপ্ন দেখানোর মানুষটার পরিবর্তণ হয়ে যায়। তবুও সুখ খুঁজে ফেরা হয় অন্য মানুষটার বুকে। কেউ খুঁজে পায় কেউ হয়ত পায়না।
.
তবে জামিল রা সুখ খুঁজে ফেরেনা অন্যর বুকে।
তারা ভয় করে,আরেক বার ধোঁকা খাবার ভয়। আরেকবার কষ্ট পাবার ভয়।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:০৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×