তিথি নীল শাড়ি টা হাতে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-এটাই নেই নাকি?
.
আমার তখনো মনোযোগ কালো শাড়ি টার দিকে।আমি তিথির দিকে মুখ ঘুরিয়ে জবাব দিলাম,
-এটাই পছন্দ?
-হুম,
-আচ্ছা,এটাই নেও,,
.
তিথির কালো শাড়িটা কেন পছন্দ হল না বুঝলাম না। ওকে কালো রং এ মানায় খুব।ওর কয়েক টা কালো জামা আছে, যে গুলো পরলে ভাষায় প্রকাশ করা যায়না ওকে কত সুন্দর লাগে।
..
শাড়ির বিল মিটিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে এলাম। সব সময় তিথির সাথে শপিং করা হয়না, বছরে এক আধ বার।কাল তিথির জন্মদিন তাই আজ ওকে নিয়ে শপিং করা।
ইচ্ছে করলে সারপ্রাইজ কিছু দেওয়া যেত কিন্তু ওকে নিয়ে এসে কিনে নেওয়াই কেন জানি বেশি সুবিধার মনে হল।আগের বার শাড়ি কিনে নিয়ে এসে বড় ঝামেলায় পড়েছিলাম।
তাই এবার আর তেমন রিস্ক নেইনি।
.
রিকশায় উঠে তিথি জিজ্ঞেস করল,
-শাড়িটা ভাল হয়নি?
-হুম,তুমি যা পড়বে তাই ভাল লাগবে,
-কালো টাও কিন্তু ভাল ছিল,
-হুম,
-কালো কত গুলো জামা আছে তাই আর নিইনি,
-ও,আচ্ছা।
.
সারা রাস্তায় আর কোন কথা হল না।আমার চিন্তা তখনো ওই কালো শাড়ির দিকে।কল্পনা করতেই ভাল লাগল ওটা পড়লে তিথিকে কত সুন্দর লাগবে।
.
বাসায় এসে তিথিকে রেখে আবার সেই দোকানে গেলাম।কালো শাড়িটা এত ভাল লেগেছে যে সেটা হারিয়ে ফেলার কোন ইচ্ছাই ছিল না।সমস্যা নেই,এবার তিথি নীল পরুক পরের বার কালো পরবে। শাড়িটা একটু শুধু লুকিয়ে রাখলেই হবে।বাসায় এসে আমার অফিসের কাগজ পাতির যে ড্রয়ার আছে সেটাতেই রাখলাম শাড়িটা।এখানে কখনোই তিথি হাত দিবেনা।ও এগুলোকে খুবি বিরক্তি কর মনে করে।এক প্রকার নিশ্চিন্ত হয়ে অনান্য কাজ করতে লাগলাম।
.
কেক ছাদেই কাঁটব তাই সব আয়োজন ছাদেই।
আয়োজন বলতে বেশি কিছুনা, শুধু কেক টাই যা।মানুষ দুজন আমরা শুধু তাই ঝামেলাও নেই কোন?
.
ছাদে আলোর ব্যাবস্থা নেই তেমন।মাত্র একটাই লাইট। চাঁদের আলো ভরসা।ছাদে ওঠা হয়না তেমন,যেদিন খুব জোৎস্না পরে সেদিন তিথি জোর করে নিয়ে আসে।
তবে ভাল ব্যাপার যে সময় গুলোতে তিথির জন্মদিন হয় সে সময় গুলোতে চাঁদের ভালোই জোৎস্না হয়।গতবার ও জোৎস্না ছিল।এবারো আছে মোটামুটি।
.
বারোটা বেজে গেছে অনেক আগেই,আমি ছাদে বসে আছি।আমি দশটার সময় তিথিকে নিচে রেখে আসছি।ওর সাজতে অনেক সময় লাগে।আমি ভেবেছিলাম দুঘন্টা তিথির জন্য যথেষ্ট হবে কিন্তু না কম হয়ে গেছে।
.
ছাদে দুটা চেয়ার আর এক টা টেবিল আছে, আমি চেয়ারে বসেই অপেক্ষা করছিলাম তিথির জন্য।কখন চোখ বন্ধ হয়ে এসেছে টের পাইনি। যখন চোখ খুলল তখন দেখি তিথি সামনে দাঁড়িয়ে।কালো শাড়ি পরে।আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম।জোৎস্নার আলোয় মেয়েটাকে কত সুন্দর লাগছে।চোখে কাজল দিয়েছে ঘন করে।চিন্তা করলাম এর পর থেকে তিথিকে কালো রঙের সব শাড়ি কিনতে বলব।
.
-তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে,,,
তিথি আমার কথার জবাবে যে প্রশ্ন টা করল তাতে আমার অবস্থা চেয়ার থেকে পরে যাওয়ার মত হল। তিথি জিজ্ঞেস করল,
-শাড়িটা কার জন্য কিনছ?
.
আমি একটু অবাক হলাম।ওর মুখে সন্দেহ ভাব।
-তোমার জন্যই কিনছি,,
-ওটা তো তোমার ড্রয়ারে পাইলাম।লুকাই রাখছিলা।
-ড্রয়ারে কেন হাত দিছ?
.
তিথি কিছুক্ষন গরম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
-ওটা ইম্পরট্যান্ট না,,ইম্পরট্যান্ট হচ্ছে কার জন্য কিনছ?
-তোমার জন্যই জান? আর কে আছে আমার। যাকে এত টাকা নষ্ট করে শাড়ি দিব?
-তো দাও নাই কেন?
-ভাবছি পরের বার দেব এটা।এবার যদি দুটা দেই,কোন টা ছেড়ে কোন টা পরবা তাই আর কি দেই নাই।
.
আমার কথা মনে হলো তিথির বিশ্বাস হল না।
ও আবার বলা শুরু করল,
-আমি তোমাকে চিনি।বলো কার জন্য কিনছো?
.
ভালই মুশকিল হয়ে গেল।আমি আবার বললাম,
-সত্যি তোমার জন্যই,
-অফিসে কারো প্রেমে পড়ছ নাকি?
-কি বল এসব? সত্যি না।তুমি আমার প্রথম তুমি আমার শেষ।
-তোমার চরিত্র খুব একটা ভাল না।তুমি আমার সাথে প্রেম করার সময়, আরেক টা মেয়ের প্রেমে পরছিলা।
-প্রেমে পড়িনাই,ওই মেয়েটাই আমার প্রেমে পরছিলো।
-তোমাকে বিয়ে করাই ভুল হইছিলো,
--সত্যি তোমার জন্যই কিনছি,,
-প্রমান আছে কোন?
.
কোন প্রমান নাই।কি করা যায় কিছু মাথায় এল না।আমার একটু ভয় হল,এই মেয়ে আবার ওর বাবার বাসায় চলে যায় নাকি?
আগের বার সামান্য বিষয় নিয়ে চলে গেছিল। এবার ব্যাপার আরো সিরিয়াস।একবার মনে হল ও যদি কান্নাকাটি করে তখন ব্যাপার টা কেমন হবে।আমার নিজেরই ভয় লাগলো। অতিরিক্ত ভালবাসলে যা হয় আর কি?
.
আমি একটু ভাবনা চিন্তা করে বললাম,
-গতবার যে কালো জামাটা কিনে এনে তোমাকে কি কি বলছিলাম তোমার মনে আছে?
-কি বলছিলা?
-বলছিলাম যে কালো কাপড়ে তোমাকে অপ্সরীর মত লাগে।
-হুম,তো?
-আসলে,আজকেও আমি ভাবছিলাম তুমি কালো টাই পছন্দ করবা,কিন্তু নীল টা করছ। তাই ভাবলাম কালোটাও কিনে রাখি,,যদি পরে শাড়িটা বিক্রি হয়ে যায়।
.
তিথির মুখ দেখে এবারো মনে হল ও বিশ্বাস করেনি।তবুও ও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-বিশ্বাস যোগ্য নয়,,তবুও বিশ্বাস করলাম।
.
তিথির কথা শুনে আমার মুখে হাসি ফুটল। শাড়ি কিনে এত বড় বিড়ম্বনায় পড়ব ভাবিনি।
আর কখনো কোন কিছু এনে লুকিয়ে রাখব না।
.
তিথি এসে আমার পাশে বসতে বসতে বলল,
-কি সুন্দর চাঁদ তাই না?
-হুম,চলো কেক কাঁটি?
-না,,,কিছুক্ষন চাঁদ দেখি,,,
-আচ্ছা।
.
তিথি চাঁদ দেখছে, আমি তিথিকে দেখছি।
সত্যি কালো শাড়িতে মেয়েটাকে দারুন মানিয়েছে। যতই বিড়ম্বনা হোক,এই মেয়েটাকে কালো শাড়িতে দেখার জন্য যে কোন বিড়ম্বনাই সহ্য করা যাবে।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:৩০