এ অঞ্চলের ছেলেদের কাছে কৈশোর মানে ছিলো, নদী-জল-ভ্রমণ-খেলা-আকাশ। ইস্কুল পালানো, নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া, এক গলা জলের ডোবায় মাছ ধরা, সাইকেল নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, শীত এলে এ টুনামেন্ট, সে টুনামেন্ট। সে অতীত। কিশোরদের কোমড়ে এখন গুজা থাকে ছুরি, রিভালভার, পিস্তল। ইয়াবায় আচ্ছন্ন তাদের কৌশোর। সন্দ্বীপে অস্ত্র তৈরির কারখানার এ সংবাদ যা ঘটছে, যা ঘটতে যাচ্ছে, বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে এ শংকা শুধু কিছুটা বাড়িয়ে দিলো।
২০১৩-১৪, এ বয়সটা যখন আমরা পার করছিলাম। শুরুটা তখন। এর আগেও সন্ত্রাস ছিলো। খুনাখুনি হতো। চাঁদাবাজী হতো। জলদস্যূ-ভূমিদস্যূ ছিলো। অন্যসব গ্রামের মত, ফুটবল খেলার জের ধরে দশবিশজন আহত হওয়ার ঘটনাও ছিলো। তবে সন্ত্রাসীদের মাঝে আর সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশাল এক ফারাক ছিলো। এসব খুনোখুনির মধ্যে থেকেও অস্ত্র দেখেছে সামনে, এমন মানুষও কম ছিলো। রূপকথার মত তাই আমরা সেসব ডনদের কথা শুনতাম, খুনের গল্প শুনে শিহরে উঠতাম। কিন্তু মধ্যবিত্ত একটা পরিবারে বড় হয়ে এগুলোকে অবহেলাই করে যেতাম।
পরপর কয়েকবার র্যাবের আক্রমণে এসব দস্যূদের ক্ষমতা কমে এলো ২০১৫-১৬ এর দিকে। উড়িরচর, জাহাইজ্জার চরসহ পাশের কিছু দ্বীপের মানুষ প্রথম শান্তির জীবন কি তা বুঝলো। কিন্তু এরপরেই শুরু হলো ভয়াবহ এক অধ্যায়। মাদক ঢুকলো প্রথমে। ইয়াবাসক্ত কিশোরে ছেয়ে যেতে লাগলো সমাজ। প্রবীণ রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় অস্ত্র উঠলো বাচ্চা ছেলেদের হাতে। অস্ত্র আর মাদকের সহজলভ্যতা এর সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছলো। পারস্পরিক বিরোধের জের ধরে মারামারি খুনোখুনি বাড়তে লাগলো যেকোন সময়ের চেয়ে বেশী।
মাদকব্যবসায়ী যারা, তারাই রাজনীতিবিদ, তারাই আবার চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসীর সাথে সরাসরি বা পেছনে জড়িত। এসব প্রবীণরা এটাই বুঝে না, এসব ছেলেদের নিজস্ব কোন আদর্শ নেই, কোন দল নেই। তার বানানো সন্ত্রাসী সময়ের পরিবর্তনে তার বিপরীতেই উঠেপড়ে লাগবে। এমন ভয়াবহ এক সময়ে সন্দ্বীপ নিয়ে মাঝেমধ্যে আসলেই হতাশ হতে হয়। সাম্প্রতিক সংবাদ একেবারেই হতাশ করে দিলো।