সাক্ষাৎকারে সবাই অংশগ্রহন করতে পারেন, তবে এটা বলাই বাহুল্য এখানে করা প্রশ্ন ও উত্তর মূল লেখায় ব্যবহার করা হবে এবং তার কপিরাইট লেখকেরই থাকবে। যে কেউ জন্মযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধ সমর্্পকিত প্রশ্ন করতে পারেন। সামহোয়্যার ইন এবং এর সকল অংশগ্রহনকারীর প্রতি অগ্রিম কৃতজ্ঞতা স্বীকার ]
// ভূমিকা
একাত্তর বাংলাদেশের গৌরবগাঁথা, একাত্তর সব বাঙ্গালীর গর্ব, একাত্তর এই বাংলার প্রসবকাল। যে একাত্তর সম্ভব করেছে কোটি বাংলাদেশীর ভাষা, স্বপ্ন, পরিচয়কে সম্ভব করা; আজ স্বাধীনতার সাড়ে তিন দশক পরে এসেও সেই গৌরব অধ্যায় নিয়ে, যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন তোলে তখনকার পরাজিত শক্তির আইডিওলজিতে আক্রান্ত বিভ্রান্তরা।
যে জাতি নিজের পরিচয়, নিজের ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্ত সেই জাতির আত্নসন্মান এবং ভবিষ্যত দিকদর্শন স্পষ্টতই প্রশ্নের সন্মুখিন হয়। অতীত থেকে বর্তমান তৈরী হয়, যা থেকে তৈরী হয় ভবিষ্যত। আজকের বাংলাদেশে বসে যে কোন সচেতন মানুষকে যে কষ্টটা পলে পলে ব্যাথিত করে তা হলো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এই আমাদের ভিতরে বিভ্রান্তি, অপকৌশল। মুক্তিযুদ্ধের কথা, ইতিহাস প্রসঙ্গে এসে একজন অরাজনৈতিক অথবা রাজনৈতিক যেকোন দেশপ্রেমিক নাগরিককে যে বোধটা ভিতর থেকে দহন করে তা এক বিপন্নতার মানসিক দহন। বিপন্ন কারন অনেকগুলো বছর ধরেই আমাদের দেশে দলীয়করনের পণ্যে পরিণত করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকে। যে মুক্তিযুদ্ধেও চেতনার অধিকার সব বাংলাদেশীর, যে 'জয় বাংলা' স্লোগানের দাবীদার বাংলার মাটিতে জন্ম নেওয়া প্রতিটি নবজাতকে সেই চেতনা, সেই সার্বজনীন স্লোগান আজ ব্যক্তিকরন, দলীয়করনের কুৎসিত ধর্ষনের স্বীকার। আজকের সময়ে দাড়িয়ে পুরাতন প্রজন্মের সাথে সাথে নতুন প্রজন্মও বিপন্ন বোধ করে যখন চোখের সামনে পাঠ্যবই থেকে একে একে মুছে ফেলা হয় একাত্তরের বীরগাথার রক্তলাল হরফ, সেখানে সেঁটে বসে রাজনৈতিক তকমা আর দেশ ও জাতির সাথে করা চরম বেঈমানী ম্যানিপুলেশন। ইতিহাস বিকৃতি।
এই যে অসুস্থ ধারা তার কবলে পরে কি একটা জাতি হারিয়ে ফেলবে তার গৌরব? রাজনৈতিক ধর্ষনে নতুন প্রজন্ম কি নিজ দেশের গর্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে? মিথ্যা দিয়ে সত্যকে প্রতিস্থাপন করতে করতে কি আমরা সত্যকে সম্পূর্ন ভুলে যাবো? যে মানুষগুলো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, ছিলেন কালের স্বাক্ষী তারা অনেকে নেই। অনেকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন অদূর ভবিষ্যতে। নিয়মতান্ত্রিক এই মিথ্যাচার, জাতি ও দেশের ইতিহাস নিয়ে ভয়ংকর ছেলে খেলার মাধ্যমে যে ভবিষ্যতে আমরা যাচ্ছি, সেই সময়টায় সত্য উচ্চারনের স্বাক্ষীরাও যখন অনুপস্থিত; তখন আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম কি কখনো সত্যকে জানতে পারবে?
শঙ্কাটা অনেকের ভিতরেই কাজ করে। এই শঙ্কা থেকে নুড়ি পাথরের মতো কুড়ানো শুরু হয় একাত্তরের তথ্য, বাস্তবতা, ইতিহাস। ঐ দ্রোহকালের খন্ড খন্ড সব সত্যকে বিন্দু বিন্দু করে সিন্ধুতে সংগ্রহের অসম্ভব প্রয়াস থেকে জন্ম হয় জন্মযুদ্ধ নামের মুক্তিযুদ্ধের ওয়েবসাইটটি।
উদ্যোগটা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে দায়বদ্ধতা থেকে নেওয়া। আজকের জন্যই কেবল নয়, অনাগত দিনের ভবিষ্যতে জন্মকে গর্বের মুক্তিযুদ্ধ গাথাকে পৌছে দিতে; যেখানে থাকবে না দলীয়করন, ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থের খাতিরে জাতির সাথে বেঈমানী।
জন্মযুদ্ধের স্বপ্ন হলো এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ছবি, তথ্যচিত্র, সিনেমা, পত্রিকার কাটিং, প্রকাশিত বই, উপাত্ত সব কিছু ধারন করা সম্ভব করা। চলমান এই প্রক্রিয়ার শুরুটা হয়েছে গত 2006 সালের মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই।
তথ্য প্রযুক্তির এই আধুনিক যুগে আধুনিকতা ছাড়া ভবিষ্যতের অস্তিত্ব হয়ে পড়বে ডাইনোসরের মতোই বিলুপ্ত। যে গুরুত্বপূর্ণ দলিলগুলো আজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাদের ডিজিটাল কপি করে সংরক্ষন করা, একটি জায়গায় আনাটা খুব গুরুত্বপূর্ন। তাই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক, বস্তুনিষ্ট ইতিহাসকে কেবল দেশেই নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশী প্রবীণ, নবীন ও অনাগত সবার কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য ইন্টারনেট মাধ্যমের বিকল্প নেই। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানান সময়ে তৈরী হয়েছে নানান ওয়েবসাইট। কিন্তু সেগুলো থেকে নিজেকে আলাদা করার জন্য জন্মযুদ্ধের যা প্রথম এবং অগ্রজ বৈশিষ্ট্য সেটা হলো দূর্লভ দলিল, তৎকালিন মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব দিনপঞ্জি, সে সময়ে প্রকাশিত দৈনিকের সংগ্রহ সহ আরো অনেক আয়োজনকে এক সাথে আনতে পারা। এই সমৃদ্ধতাই জন্মযুদ্ধকে আলাদা করে রাখবে এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরী সবগুলো সাইটের ভিতরে শীর্ষে রাখবে, এমনটাই এ সাইট তৈরীর পেছনের মানুষগুলোর আকাংখা।
জন্মযুদ্ধ এই ওয়েবসাইটটির wVKvbv: http://jonmojuddho.org
জন্মযুদ্ধ একটি মিলিত প্রয়াস হলেও এর পেছনে যার একক অবদান অনস্বীকার্য সে হলো অমি রহমান পিয়াল। [ [ইটালিক]অমি ভাই, এইখানে আপনার বাবার অনুপ্রেরণা ও তার মুক্তিযুদ্ধের কিছু কথা আমি সংযোজন করবো পরে। [/ইটালিক] ] ...
জন্মযুদ্ধ ওয়েবসাইটটি তৈরীর পেছনের স্বপ্ন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনুভব, আবেগ আর এই সাইটটি তৈরী করার পেছনের অজানা কথা নিয়ে লেখক মুখোমুখি হয়েছিলো অমি রহমান পিয়ালের সাথে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহন করা হয়েছে বাংলা ভাষায় প্রথম এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় কমিউনিটি ব্লগিং ওয়েবসাইট, সামহোয়্যার ইন (http://www.somewhereinblog.net) ব্লগে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০০৭ সকাল ৯:০৯