আব্বার চাকরিটা চুরি হয়ে গেলো।
সকালে বেরিয়ে সকালেই
বাড়ি ফিরে ফ্যাল ফ্যাল বললেন,
জানো হাসানের মা, গিয়ে দেখি
আমার চেয়ারে বসে আছে অন্য একজন
আমার মা, যিনি
আঁচলে সযত্নে রাখা দুধভাতের স্বপ্ন হারাতে হারাতে
এখন খুব সহজেই বলে ফেলেন, হু
আজও খুব ছো্ট্ট এক দীর্ঘশ্বাসে বললেন,
হু-
বড় ভাই একটু চোটপাট করলেন খালি-
ঘাড়ের সংগ্রামী রগ ঝাঁঝিয়ে বললেন,
মামার বাড়ি পেয়েছে শালারা...
ওটুকই ব্যস, আমি জানি অনেক আগেই
বাণিজ্যের বেহাতে চলে গেছে তার আসন্ন বিপ্লব।
পাশের ঘর থেকে রাণুটা একটু ফোঁপালো,
দুদিন আগেই বেচারার পরীক্ষা চুরি হলো কীনা,
ক্ষতটা এখনো শুকায়নি!
এসবের কিচ্ছু বোঝেনা অন্তু।
স্কুলের মাঠটা জুড়ে বেচাকেনার দালান ওঠার পর,
ও ঘরের ভেতরেই সারাদিন চোর পুলিশ খেলে অার
নিজেকে নিজেই বলে, একটা চোরকেও
পালাতে দেবো না-
ওর কথায় আমি হাসি,
হাসতে হাসতে খয়ের চাচার চায়ে
চুমুক দিয়ে রোজকার মতো শুনি,
“এনকা চুরি হলি পর ক্যামা করি চলবি কও
ভোট নাই, ভাত নাই..
ধ্যাৎ! কিচ্ছু ভাল লাগে না,
চারিদিকে খালি হারানোর হাহাকার!
বর্ডারের বিন্দুতে মিলিয়ে যাওয়া সুশান্তদা, মিথিলাদি
এইপাশে তাদের রেখে যাওয়া হাসি,
নাই, বুঝলি- নাই, ঘষা চশমার ফাঁকে ঘোলা চোখ তুলে
উদাস কণ্ঠে বলে সিরাজ...
কী বলবো! আমি চুপ-
মুখ হারানোর ভয়ে নির্বিবাদী মুখোশ পরে থাকা মুকুল
টিপ্পনী কাটে, মানুষের মানুষ হয়ে বাঁচার অধিকার
চলে যাচ্ছে জানোয়ারের হাতে আর তুই
মনে মনে এখনো রেহানা রেহানা করিস! আজিব!
আমি আর কী করতে পারি?
চোর হওয়ার সৌভাগ্য নিয়ে জন্মাইনি
কিংবা কেড়ে নেয়ার অতোটা সামর্থ্য নেই
তাই, চুরি যাওয়া বুকটার কথা ভেবে
রাগে দুঃখে ক্ষোভে খানিকটা না হয়
চুপ থাকি
আপনাদের ভদ্রস্থ নিরাপত্তার মতোন-
আসরের সিগারেট শেষে তারপর,
কিছুটা ঘুম কিছুটা না ঘুমের চাঁদের নিচে
লোম ওঠা কুকুরের নেশা হয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ি
অথবা
চুরি হবার অপেক্ষার দিকে ফিরে যাই যেন,
থানায় প্রাত্যহিক হাজিরায় হাজির জুবুথুবু কয়েদি এক;
কানে বাজে চৌকিদারের হাক
“হুঁশিয়ার সাবধান!”
৪.১০.১৫
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:১২