ইংলিশ মিডিয়াম, বাংলা মাধ্যম, ইংলিশ ভার্সন- জগাখিচুড়ি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর আগে রীতিমতো মানসিক চাপে ভুগতে হয় অভিভাবকদের।
ইংরেজির প্রতি আমাদের দুর্বলতা একটু বেশি। ইংরেজি ভাষায় আভিজাত্যের ছোঁয়া আছে যে! ব্রিটিশ আমল থেকেই এই ধারণা আমাদের মাথায় পাকাপোক্ত হয়ে বসে আছে যে ইংরেজি ভাষা অভিজাতদের ভাষা।
ইংলিশ মিডিয়াম ভীষণ ব্যয়বহুল। ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করা শুধু ধনী অভিভাবকদের পক্ষেই সম্ভব। তারা করছেনও তাই। করবেন না কেন? আন্তর্জাতিক চাকরির বাজার ধরতে ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষা নেয়ার তুলনা চলে না। কারণ বিদেশে স্নাতক পর্যায়ে পড়তে হলে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াটা জরুরী- অন্যদের তুলনায় কয়েকধাপ এগিয়ে থাকা যায়
প্রশ্ন হচ্ছে ইংরেজির জন্য মাতৃভাষার স্থান ছেড়ে দেয়া কতোটা যুক্তিযুক্ত?
মধ্যবিত্তদের ইংরেজির প্রতি দুর্বার আকর্ষণ। অপরদিকে ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষা নেয়া অসম্ভব ব্যয়বহুল। মূলত, এই সমস্যার সমাধানকল্পেই চালু হয়েছে ইংলিশ ভার্সন। এখন দেখা যাচ্ছে, সারা দেশে সচ্ছল অভিভাবকরা শিশু-কিশোরদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য দ্রুত গতিতে ইংলিশ ভার্সনের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। একসময় দেখা যাবে দেশের অধিকাংশ মানুষ ইংলিশ ভার্সনেই শিক্ষা নিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই, ধীরে ধীরে বাংলা মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে থাকবে। ইংলিশ ভার্সন প্রবর্তনের পর শিক্ষাবোর্ড বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি ইংরেজি অনুবাদেও সব পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করছে। কিছুদিন পরে হয়তো বাংলা মাধ্যমের প্রতি ইংলিশ ভার্সনের এই নির্ভরশীলতা আর থাকবে না। ইংরেজি মাধ্যমের পাঠ্যসূচী ভিন্ন হবে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলা ভাষার যে স্থান তা ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাবে। ইংরেজি মাধ্যমে যারা পড়ছে তারাই তো দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
প্রশ্ন হচ্ছে বাংলা ভাষার অবস্থানটা আসলে তখন কোথায় হবে?
ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের লেখা দুই লাইন মনে আসছে,
“বাংলা নিয়ে আজকাল কেউ সুখের স্বর্গে ভাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।”
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৮