ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, “মর্নিং শোজ দ্য ডে”। সপ্তাহের প্রথম সকালেই যদি আপনাকে হাজারো ঝামেলা পোহাতে হয় তাহলে সপ্তাহের বাকি দিনগুলো যে খুব ভাল কাটবে এই আশা না করাই শ্রেয়।
তখন ছিলাম উত্তরবাড্ডার একটি বাসায়। সোমবার সকালে অফিসের উদ্দেশে বের হতেই দেখি বাসার সামনের রাস্তাটি পুরোটাই হাঁটু পানিতে ডুবে আছে। দক্ষিণে কিংবা বামে, যেদিকে তাকাই একই অবস্থা। ঠিক তখনই মনে পরল ভোরে ত্রিশ মিনিট মত বৃষ্টি হয়েছিল। এ বৃষ্টি বর্ষাকালের বৃষ্টি নয়। বসন্তকালের পথভ্রষ্ট মেঘ হতে ঝরা কিছু জলেই রাস্তার এ অবস্থা। যাহোক, বাধ্যহয়েই জুতো-মোজা খুলে পাজামা গুটিয়ে কোনরকমে বড়রাস্তায় যাই। সেখানে আবার আর এক যুদ্ধ। বাড্ডার সকালে অফিসগামী সকলেই এই যুদ্ধের সাথে পরিচিত। বাসস্ট্যান্ডে একসারিতে দাঁড়ানোর কোন নিয়ম না থাকায় যে যেমন পারে, বাসে ওঠার লড়াইয়ে ব্যস্ত। কোনরকমে বাসে চাপতেই মানুষের চাপাচাপিতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। এক ভদ্রলোক আবার নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে, আমার পায়ে দাঁড়াতেই যেন বেশী আগ্রহী। যতই তাকে পা সাবধানে রাখতে বলি না কেন উনার একই উত্তর- বাসে এমনটা হবেই। বাসের চালক আবার বাস চালানোর চেয়ে থামাতেই যেন বেশী পারদর্শী। অফিসে পৌঁছে দেখি ত্রিশ মিনিট লেট!
সপ্তাহটা কেমন কেটেছিল সেই গল্পটি নাহয় না ই বা বললাম। তবে সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর যাইহোক বাড্ডায় আমার থাকা চলবে না। এলাকা আমাকে ছাড়তেই হবে। প্রথম সু্যোগেই বাড্ডা ছেড়ে মোহাম্মদপুরে বাসা নিলাম। বলে রাখা ভাল- আমার অফিস উত্তরায়। তবে অফিসের কাছাকাছি না থাকার বেশ অনেকগুলো কারনের অন্যতম হল আমি আবার বন্ধুদের সাথে থাকতেই বেশি পছন্দ করি। আমার মাইনেটাও এমন আহামরি কিছু নয় যে আলাদা একটি বাসা নিয়ে থাকব। তাই অফিস থেকে এতদুরে থাকা।
মোহাম্মদপুরে এসে দেখি এখানে বর্ষার বৃষ্টিতেও রাস্তায় খুব একটা পানি জমেনা। আবার বাসে সিটিং সার্ভিস, যা মিরপুর হয়ে উত্তরা যায়। কিছুদিন ভালই কাটল। একদিন যাকে বলে ঝুমবৃষ্টি। বেরিয়েছি অফিসের উদ্দেশে। কালশী রোডে যেতেই চক্ষু চড়কগাছ। রাস্তা তো নয় যেন ‘আমাদের ছোট নদি চলে বাঁকে বাঁকে/বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে’। এ হাঁটুজল নয়, রাস্তার জল হাঁটু পেরিয়ে প্রায় কোমর পর্যন্ত উঠে এসেছে। সামনের ছোট গাড়িগুলো বন্ধ হয়ে রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে। মোটরসাইকেলের শুধুই ব্যাকভিউ মিরর পানির উপরে উঁকি দিচ্ছে। রিক্সা, ভ্যান, সিএনজির কথা বলাই বাহুল্য। যাহোক কোনরকমে অফিসে পৌঁছেছিলাম। নয়টার নয়, সাড়ে এগারোটায়।
মনে মনে ভাবি আর হাসি- ‘অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়’ আর আমি অভাগা যেদিকে যাই পানিতে ডুবে যায়।
আমাদের দেশের মানুষের আবার অনেক বড় এক ক্ষমতা/দুর্বলতা আছে। আমরা সবকিছুতেই একসময় অভ্যস্ত হয়ে উঠি, মানিয়ে নেই। এই মানিয়ে নেয়াই আমাদের অনেকটা পিছিয়েও রেখেছে।
স্বপ্ন দেখতে তো আর নিষেধ নেই, স্বপ্ন দেখি- একদিন ঢাকার বর্ষাকাল বন্যায় রূপ নিবেনা। বৃষ্টিকে ভয় না পেয়ে মনের আনন্দে গাইব- “আয় বৃষ্টি ঝেঁপে ধান দিব মেপে/লেবুর পাতা করমচা যা বৃষ্টি ঝরে যা”।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:২৭