ঈদের পর দিন।৮ জনের এক গ্যাং নিয়ে গেলাম বলাকায়। অনন্তর নয়া মুভি বলে কথা।মিস তো আর করা যায় না।বিকাল সাড়ে ৩ টার শো। হলের ভিতরে ঢুকতেই দেখি বিশাল জ্যাম।ঘটনা কি?ঈদের ফাকা রাস্তায় মিরপুর থেকে নীলক্ষেত আসলাম ১৫ মিনিটে আর এখানে এত জ্যাম।কাছে গিয়ে যা দেখলাম তাতে অন্তরের অন্তস্থলে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেল। এ যে মুভির নায়ক-নায়িকা অনন্ত-বর্ষা।তারা দর্শকদের সাথে বসে মুভি দেখবে।ভিড় ঠেলে কিছুটা এগিয়ে অনন্তর কাছাকাছি আসতেই আমার ৩ জন বন্ধু(সবাই ছেলে) তারস্বরে চেঁচানো আরম্ভ করলো-অনন্ত,ম্যারি মি।অনন্ত,ম্যারি মি।
যাইহোক সারপ্রাইজ তখনো শেষ হয় নাই। বরং মাত্র শুরু।ঠেলাঠেলি করে হলে ঢুকে নিজেদের সিটে বসামাত্রই আবিষ্কার করলাম অনন্ত-বর্ষার সিট আমাদের ঠিক সামনেই।কিছুক্ষণ পর বাপ্পারাজ(মুভির আরেক অভিনেতা) ও তাদের সাথে যোগ দিলেন।বোঝেন অবস্থা।মুভি দেখবো নাকি ওদের দেখবো!মুভি শুরু হল।
কাহিনী সংক্ষেপ:
আরিয়ান(অনন্ত) দুদকের কর্মকর্তা। সে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে। পাশাপাশি অফটাইমে সে মুখোশধারীর ছদ্মবেশে মুশকিল আসান বাবার মাজারের খাদেম হিসেবে বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে।সবাইকে ন্যায়ের পথে মোস্ট ওয়েলকাম জানায়। বড়লোকের অবৈধ টাকা সংগ্রহ করে গরীবদের মাঝে বিলায়ে দেয়(রবিনহুডরে মনে পড়তেছে?)।মুখোশপড়া অনন্তর সুপারহিরো মার্কা চেহারা দেখে এভেন্জার্স এর টিকেট না পাওয়ার দুঃখ ভুলে গেলাম।এই মুশকিল আসান বাবার মাজার একটা সেইরকম জিনিস। মানুষজন তাদের মনের খায়েশ লিখে বাক্সে রেখে যায় আর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তাদের ইচ্ছা পূরণ হয়ে যায়। মনে করেন আপনি ইচ্ছা করলেন আপনি সানি লিওনকে আপনার গার্লফ্রেন্ড বানাবেন। আপনি ইচ্ছা লিখে বাক্সে ফেলার ২৪ ঘন্টার মধ্যে সানি লিওন আপনার দরজায় খটখট করা শুরু করবে ।
দুদকের কাজ করতে গিয়ে সে বিশিষ্ট ঋণখেলাপী এবিসি(আহমেদ শরীফ) এর সাথে শত্রুতা সৃষ্টি করে।অপমানিত এবিসির সুন্দরী কন্যা বর্ষা বাবার অপমানের প্রতিশোধ নিতে আরিয়ান অর্থাৎ অনন্তকে প্রেমের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। তাদের সাথে যোগ দেয় আরেক কালো টাকার মালিক আসিফ(মিশা)।তাদের চক্রান্তের শিকার হয়ে আরিয়ান স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে সেই মাজারের রবিনহুড।
এই স্বীকারোক্তিকে ব্ল্যাকমেইল করে আরিয়ানকে তাদের কালোটাকা নিয়ে আসার জন্য থাইল্যান্ড যেতে বাধ্য করে এবিসি। সে যাত্রায় সঙ্গী হয় বর্ষা। ইতিমধ্যে সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে।সে এখন আরিয়ানকে সত্যি সত্যি ভালবাসে।থাইল্যান্ডে আরিয়ান তার পুরানো বন্ধু স্নেহা উল্লাল(কারেক্টারটার নাম মনে নাই) এর সহায়তায় এক থাই ভিলেনের হার্ডডিস্ক চুরি করে(এই ডিস্কেই কালোটাকার একাউন্ট রিলেটেড সমস্ত ইনফরমেশন ছিল)দেশে এসে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
অপরদিকে আসিফ এবিসিকে মেরে বর্ষাকে জিম্মি করে ডিস্ক দাবী করে। আরিয়ান গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।ভিলেন আসিফ মারা যায়।পুলিশ(বাপ্পারাজ) এসে রবিনহুডগিরির অপরাধে আরিয়ানকে ধরে নিয়ে যায়।তবে আদালত বিশেষ বিবেচনায় তাকে ছেড়ে দেয়।সিনেমার নায়ক বলে কথা!
অতঃপর তাহারা সুখে-শান্তিতে....................
যেসব বিষয় ভাল লাগে নাই:
১.বাংলা সিনেমার এই গতানুগতিক মাজার সংস্কৃতি বন্ধ করা দরকার।ভন্ডামী প্রমোট করা উচিত না।
২.অনন্তর উচ্চারণ ও অভিনয়।২ টার কোনোটাই সে ঠিকমত করতে পারে না।ব্লু বার্ড হোটেল কে বুলু বার্ড বললে হাসি টেকায়ে রাখা কষ্ট।তা অনন্তর পিছে বা পাশে যেখানেই বসি না কেন! ।অবশ্য স্পিড এর চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে এবার।
৩.অহেতুক শিলা কি জাওয়ানি গানটা মিনিট খানেকের জন্য বাজানো।
৪.অনন্ত মোটরসাইকেলে করে উড়তেছিলো। মুরগী পাখি হয়েও উড়তে পারে না অথচ মোটরসাইকেল এরোপ্লেন না হয়েও কেমনে ওড়ে?
এরকম টুকিটাকি আরও ২/৩ টা বিষয় আছে। সব মনেও নাই।
যেসব বিষয় ভাল লাগলো:
১.কাহিনী বলেন আর ডিরেকশন বলেন মুভি হিসেবে মোস্ট ওয়েলকাম কে স্পিড এর চেয়ে বেটার মনে হয়েছে।
২.মুভিটিতে বিব্রতকর কিছুই নাই। গানের পোশাকগুলোও যথেষ্ট শালীন মনে হয়েছে।সবাই মিলে দেখতে পারবেন মুভিটি।
৩.গানগুলাও স্পিড এর চেয়ে বেটার মনে হয়েছে।২/১ টা গান বেশ ভালই লাগলো।
৪.এবিসির সাগরেদ চরিত্রে কাবিলার অভিনয়।
৫.বর্ষার মুভি এই প্রথম দেখলাম। বেশ ভাল লাগছে।বেশ।চেহারা,ফিগার সব।অভিনয় এট লিস্ট অনন্তর চেয়ে বেটার।এ প্রসঙ্গে অনন্ত একবার এক টিভি চ্যানেলকে বলেছিলেন-বর্ষার শিলিম ফিগার। ওকে সবাই খুব পছন্দ করে।
টিভি চ্যানেলকে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন বর্ষা। হলের ভেতর তোলা ছবি
বলাকার সামনে
ছবি শুরুর আগে,মধ্যবিরতিতে আর ছবি শেষের পর ২ জনের সাথেই কথা হল।২ জনেই বেশ ফ্রেন্ডলি।আমাদের সাথে ছবি তুললেন।আর নেক্সট মুভিও হলে এসে দেখার আমন্ত্রণ জানালেন।
*মুভির কাহিনী খুব একটা ভাল মত লিখতে পারি নি। মুভি ভাল মত দেখতে পারলে তো? সামনে জ্বলজ্যান্ত বর্ষা বসে থাকলে কি আর অন্যদিকে মন দেয়া যায়?
সবাই ভাল থাকুন। হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:৪৩