somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপকূলীয় অঞ্চলে্র মাটির উর্বরতা সংকট জনক

০৪ ঠা মে, ২০১২ রাত ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ লোনা পানিতে সোনা ফলাতে গিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার মাটির ভৌত গঠন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে মাটির উর্বরতার পাশাপাশি উত্পাদন ক্ষমতাও মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। বছরের পর বছর লোনা পানি আটকে রেখে চিংড়ি চাষের ফলে মাটির এই ক্ষতিকর পরিবর্তনে পরিবেশ ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন। গত দেড় দশকে লবণাক্ততার প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ধানের ফলন তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। ফলবান বৃক্ষে ফল ধরছে না। উজাড় হয়ে যাচ্ছে গাছপালা। নিশ্চিহ্ন হচ্ছে গবাদি পশু। উপকূলীয় পরিবেশ হয়ে পড়ছে ভারসাম্যহীন। এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞ মহল আপাত সমাধান হিসেবে গবেষণার মাধ্যমে লোনা পানি সহনশীল ধান উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় অতি অল্প সময়ে বিপুল মুনাফা লাভের জন্য ধানের জমিতে লবণপানি আটকে রেখে প্রায় দেড় দশক ধরে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। বাগদা চিংড়ি চাষের আগে যে জমিতে বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ মণ আমন ধান উত্পাদন হত সেখানে বিঘাপ্রতি এখন ৭ থেকে ৮ মণ ধান উত্পাদন হচ্ছে। খুলনাঞ্চল পরিণত হয়েছে খাদ্য ঘাটতির এলাকায়। শুধু তাই নয়, লবণাক্ততার প্রভাবে নারকেল, সুপারি ও খেজুরসহ বিভিন্ন বৃক্ষে মড়ক দেখা দিয়েছে। ফলবান বৃক্ষে ফল ধরছে না আগের মত। এমনকি ঘাসও মরে যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে ও লোনাপানি পান করে মারা যাচ্ছে গবাদি পশু। খুলনা জেলার দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা, বটিয়াঘাটা, রূপসা ও ডুমুরিয়া উপজেলা, সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা, শ্যামনগর, কালিগঞ্জসহ আশাশুনি ও সদর উপজেলা এবং বাগেরহাট জেলার মংলা, রামপাল, ফকিরহাট, মোল্লাহাট, চিতলমারী, মোড়েলগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় লবণপানি আটকে রেখে বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয়। এসব উপজেলায় আমন ধান চাষের জন্য অধিকাংশ ঘের মালিক যথাসময়ে পানি নিষ্কাশন করতে দেয় না। এতে মাটিতে লবণাক্ততা ক্রমগত বৃদ্ধি পায়। মাটিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন অনুজীব, জলাবদ্ধ অবস্থায় অক্সিজেনের অভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে মাটির গঠন হওয়ার জন্য যে উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন তার ঘাটতি দেখা যায়। এছাড়া লবণাক্ত মৌলের প্রভাবে মাটির তৈরি হওয়া গঠনও ভেঙে যায় বা নষ্ট হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জৈব পদার্থ হল মাটির প্রাণ। জৈব পদার্থ কম থাকলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। ফলে হ্রাস পাচ্ছে উত্পাদন। লবণাক্ততার কারণে উপকূলীয় এলাকার মাটিতে জলজ উদ্ভিদ নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। জৈব পদার্থের ঘাটতির ফলেও ধানের উত্পাদন হ্রাস পাচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের মাটি এমনিতেই লবণাক্ত। তার উপর লবণপানি বছরের পর বছর আটকে রাখার ফলে মাটির ভৌত গুণাগুণ মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। লবণপানি আটকে রাখা জমিতে দীর্ঘদিন কাঙ্খিত ফলন হবে না। তবে লবণাক্ত সহনশীল বিআর-২৩, ব্রিধান-৪০, ব্রিধান-৪১, ব্রিধান-৫৩ ও ব্রিধান-৫৪ জাতের রোপা আমন ধানের চাষ করতে পারলে একই জমিতে বাগদা ও ধান উত্পাদন সম্ভব হবে। এ ছাড়া বোরো মৌসুমে ব্রিধান-৪৭ ও বিনা ধান-৮ ও ৯ জাতের লবণাক্ত সহনশীল জাতের ধান চাষ করতে হবে। এতে সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে। বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ অঞ্চলের পানি ও মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পরিমিত বৃষ্টিপাতের অভাবে আরো বেশি সমস্যার সৃষ্টি করবে। কাজেই দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার মাটি, কৃষি ও পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করা অত্যন্ত জরুরি। সর্বোপরি দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশ উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা আবশ্যক।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১২ রাত ৯:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাটারি অটো রিক্সা বন্ধ করা কী খুব কঠিন কাজ?

লিখেছেন চোরাবালি-, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৮



বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড় হল এখন অটো রিক্সা, স্বল্প পরিশ্রমে সহজ আয়ের মাধ্যম হিসাবে খুবই জনপ্রিয় একটা পেশা। স্বল্প ভাড়ার জন্য অনেক মানুষ এখন পায়ে হাঁটা ভুলেই গেছে আর হাঁটার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জিয়াউর রহমান

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২৪



চাইলে জিয়াউর রহমান ঢাকায় ঝাঁ চকচকে দালান কোঠা রাস্তা বানিয়ে সবার চোখ ধাঁধিয়ে উন্নয়ন করার বাহাদুরি করতে পারতেন। সেটা না করে তিনি ঘুরতে লাগলেন সারা দেশে, গ্রামে গঞ্জে গিয়ে খাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জবাবদিহিতার অনন্য দৃষ্টান্ত

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪৫

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হয় সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে। সেসব পোস্টে তার বিরুদ্ধে বিপুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি যাত্রা করবেন নাকি রাজনীতি করবেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:১১


ইদানীং দেশে রাজনৈতিক দল গজানোর হার দেখলে মনে হয়, দেশের মাটিতে এখন ধান নয়, গজায় দল। ভোট এলেই বুঝি এই দলগুলো দুলে ওঠে, আর না এলেই পড়ে থাকে ফাইলের পাতায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের নেতারা যদি সত্যিই নির্দোষ হতেন, তাহলে তারা পালিয়ে গেলেন কেন?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:০৯

আওয়ামী লীগের নেতারা যদি সত্যিই নির্দোষ হতেন, তাহলে তারা পালিয়ে গেলেন কেন?

পলায়নপর ছবি কৃতিত্ব এআই

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা দেশ ছেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×