গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালি গ্রামের বিদেশ ফেরত যুবক আশরাফ সিদ্দিকী। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফল গবেষক মোঃ জিল্লুর রহমানের পরামর্শে চার বছর আগে শুরু করেন বিজ্ঞানভিত্তিক লিচু চাষ। চলতি মৌসুমে পেয়েছেন কাংখিত সাফল্য।
২০০৯ সালে আশরাফ তার লিচু বাগানের লিচু বিক্রি করেন ৪০ হাজার টাকা। একইভাবে ২০১০ সালে এসে বিক্রি করেন ৪৫ হাজার টাকা। বছরে পরিচর্যা ও অন্যান্য খরচ বাবদ ব্যয় হয় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। এখন শুধু লিচু নয়; লিচুর পাশাপাশি তিনি পুরোপুরি মনোনিবেশ করেছেন অন্যান্য ফল চাষে। আশরাফ সিদ্দিকী জানান, এ বছরও ভাল ফলন হয়েছে তার। বাজারে দামও ভাল। প্রতি গাছে গড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার লিচু ধরছে। স্থানীয় বাজারে প্রতি ১শ’ লিচুর দাম ১ থেকে ২শ’ টাকা। এবছর গত বছরের চেয়ে আরো বেশি টাকা পাবে বলে আশাবাদী তিনি। লিচুর পাশাপাশি আশরাফ সিদ্দিকী এবার ২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ২৮৮টি ভাল জাতের আমের চারাসহ বিভিন্ন ফলের গাছ লাগিয়েছেন। তার ইচ্ছে তিনি সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ফল উত্পাদন করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন। তবে বেশি জমিজমা না থাকায় ইচ্ছা করেও ফলের চাষ বাড়াতে পারছেন না তিনি। সহজ শর্তে সরকার খাস জমি সহজ লিজ দিলে ফলের বাগান আরো বড় করতেন বলে জানান তিনি।
লিচু চাষি আশরাফের এ সাফল্য বার্তা পৌঁছে গেছে ওই গ্রামসহ আশপাশের বহু লিচু চাষিদের মাঝে। সেসব চাষিদের কাছে আশরাফ শুধু একজন মডেলই নন, একইসাথে পরামর্শদাতাও।
নিজের দেয়া কৃষি প্রযুক্তির সফল বাস্তবায়ন দেখতে সম্প্রতি পিরুজালি গ্রামে আশরাফের লিচু বাগান পরিদর্শনে আসেন বারি’র বিজ্ঞানী ফল গবেষক মোঃ জিল্লুর রহমান। তিনি জানান, দেশের খাদ্য ও পুষ্টি ঘাটতি পূরণে আশরাফ সিদ্দিকীর মত আমাদের দেশে উদ্যোগী চাষির খুব প্রয়োজন। তার কৃষি অনুরাগ আমাকে দারুণভাবে বিমোহিত করেছে। দু’একবার এসে পরামর্শ নিয়েই থেমে থাকেননি তিনি, সারা বছরই কোনো সমস্যা হলে মোবাইলের মাধ্যমে তার সমাধান জানার চেষ্টা করেছেন। অনেকে ফল বাগান করলেও কেবল সুষ্ঠু পরিচর্যা বা আধুনিক চাষাবাদ জ্ঞান না থাকায় তারা কাংখিত ফলন পান না। কেবল দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি কিংবা ভাল জাত উদ্ভাবনই শেষ কাজ নয়, সেসব উদ্ভাবন আশরাফ সিদ্দিকীর মত উত্সাহি কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াও জরুরি। তাহলেই আসবে গবেষণার সাফল্য। দেশে হবে স্বাবলম্বী।