somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার স্মৃতিতে নোয়াখালীর মুক্তিযুদ্ধ (২য় পর্ব)

০৫ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার স্মৃতিতে নোয়াখালীর মুক্তিযুদ্ধ (১ম পর্ব)

সেনাবাহিনীর ক্যাপটেন হঠাৎ জিপ থেকে বাজ পাখির মত লাফিয়ে পড়ে আমাকে তার জিপে তুলে নিয়ে ছুটলো দক্ষিণ দিকে। উপস্থিত কয়েক শত ছাত্র-জনতা তখন ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। জিপটি দক্ষিণে বর্তমান বাস টার্মিনাল পর্যন্ত গিয়ে আবার আমাকে নিয়ে ছুটলো মাইজদী বাজারের উপর দিয়ে উত্তর দিকে। বর্তমান টি.ভি সেন্টারের সম্মুখে গিয়ে ক্যাপটেনের জিপ থেকে সেনাবাহিনীর ট্রাকে আমাকে ছুড়ে ফেলল।

শহরে গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে আমাকে আর্মিরা মেরে ফেলেছে। এদিকে সেনাবাহিনীর গাড়ী বহর চৌমুহনী রেল ক্রসিংয়ের গেট বন্ধ থাকায় সেখানে থেমে যায়। পাশের পুলিশ ফাঁড়ি থেকে কর্তব্যরত ও.সি রব্বানী সাহেব বেরিয়ে এসে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আমাকে পুলিশ ফাঁড়িতে রেখে দেন। চৌমুহনী কলেজের ছাত্রদের বিরাট মিছিল আসতে দেখে সেনাবাহিনীর বহরটি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের দিকে চলে যায়।

“আমাকে আর্মিরা নিয়ে গেছে” এ খবরে মাইজদী শহরে উত্তাল জনতার স্রোত রাস্তায় নেমে আসে এবং ঐদিন বিকেল ৪টায় তৎকালীন ব্যারাক মাঠে (বর্তমান পাবলিক হেলথের অফিস) বিরাট জন সমাবেশে আমার মুক্তির দাবী উঠে। পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯ তারিখে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের হেড লাইনে নোয়াখালীর এ খবর ছাপা হয়।

৬ দফা ও ১১ দফার গণঅভ্যথ্বানে স্বৈরাচার প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের পতন ঘটে। সেনা প্রধান ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখল করে দেশে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেয়।

১৯৭০ সাল। সারা দেশে সাধারণ নির্বাচন হলো। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ একক সংখ্যাগরিষ্ট দল হিসেবে কেন্দ্রে এবং প্রদেশে জয়লাভ করলো। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক জান্তা নির্বাচনের ফল মেনে নেয়নি। তারা বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গোল টেবিল বৈঠকের নামে বাঙালী জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

২৬ মার্চ ১৯৭১। নোয়াখালী জেলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল করিম সাহেব টেলিগ্রামে মেসেজ পেলেন বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। বঙ্গবন্ধু জনগণের নির্বাচিত নেতা হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করায় ২৬ মার্চ পৃথিবীর মানচিত্রে “বাংলাদেশ” নামক একটি দেশের অভ্যুদয় ঘটে।

(চলবে)


► লেখক: অ্যাডভোকেট সারওয়ার-ই-দীন
মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবি, নোয়াখালী।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত স্মারক স্বাধীনতা ২০০৩ থেকে নেয়া হয়েছে। প্রকাশকালঃ মার্চ ২০০৩।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:১৪
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এই শহর আমার নয়

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:০২




এই শহর আমার নয়
ধুলিমলিন, পোড়া ধোঁয়ায় ঘেরা
ধূসর এক স্বপ্নহীন চেহারা।
এই শহর, আমার নয়।

ঘোলাটে চোখে জমে হাহাকার,
চেনা মুখেও অচেনার ছাপ।
পথে পথে স্বপ্নরা পোড়ে,
আলোর ছায়ায় খেলে আঁধার।

এই শহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

টিউবওয়েলটির গল্প

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৪



এটা একটি টিউবওয়েল।

২০০৯ সালে, যখন আমি নানী বাড়ি থেকে লেখাপড়া করতাম, তখন প্রতিদিন এই টিউবওয়েল দিয়েই গোসল করতাম। স্কুল শেষে ক্লান্ত, ঘামাক্ত শরীর নিয়ে যখন ঠান্ডা পানির ঝাপটায় নিজেকে স্নান... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজায় গণহত্যা : মুসলিম বিশ্বের নীরব থাকার নেপথ্যে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৫৮


গাজার প্রতিটি বিস্ফোরণে কেবল ধ্বংস হয় না —প্রতিধ্বনিত হয় একটি প্রশ্ন: মুসলিম বিশ্ব কোথায় ? মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির আয়নায় এই প্রশ্নটি এক খণ্ড অন্ধকার, যা শুধু আন্তর্জাতিক রাজনীতির ব্যর্থতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লেখকের প্রাপ্তি ও সন্তুষ্টি

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:০০

একজন লেখক যখন কোন কিছু লিখেন, তিনি কিছু বলতে চান বলেই লিখেন। বলাটা সব সময় সহজ হয় না, আবার একই কথা জনে জনে বলাও যায় না। তাই লেখক কাগজ কলমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওয়াকফ: আল্লাহর আমানত নাকি রাজনীতির হাতিয়ার?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫৯


"একদিকে আমানতের আলো, অন্যদিকে লোভের অন্ধকার—ওয়াকফ কি এখনও পবিত্র আছে?"

আমি ইকবাল হোসেন। ভোপালে বাস করি। আমার বয়স প্রায় পঁইত্রিশ। জন্ম থেকে এখানেই বড় হয়েছি, এখানেই আমাদের চার পুরুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×