সেনাবাহিনীর ক্যাপটেন হঠাৎ জিপ থেকে বাজ পাখির মত লাফিয়ে পড়ে আমাকে তার জিপে তুলে নিয়ে ছুটলো দক্ষিণ দিকে। উপস্থিত কয়েক শত ছাত্র-জনতা তখন ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। জিপটি দক্ষিণে বর্তমান বাস টার্মিনাল পর্যন্ত গিয়ে আবার আমাকে নিয়ে ছুটলো মাইজদী বাজারের উপর দিয়ে উত্তর দিকে। বর্তমান টি.ভি সেন্টারের সম্মুখে গিয়ে ক্যাপটেনের জিপ থেকে সেনাবাহিনীর ট্রাকে আমাকে ছুড়ে ফেলল।
শহরে গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে আমাকে আর্মিরা মেরে ফেলেছে। এদিকে সেনাবাহিনীর গাড়ী বহর চৌমুহনী রেল ক্রসিংয়ের গেট বন্ধ থাকায় সেখানে থেমে যায়। পাশের পুলিশ ফাঁড়ি থেকে কর্তব্যরত ও.সি রব্বানী সাহেব বেরিয়ে এসে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আমাকে পুলিশ ফাঁড়িতে রেখে দেন। চৌমুহনী কলেজের ছাত্রদের বিরাট মিছিল আসতে দেখে সেনাবাহিনীর বহরটি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের দিকে চলে যায়।
“আমাকে আর্মিরা নিয়ে গেছে” এ খবরে মাইজদী শহরে উত্তাল জনতার স্রোত রাস্তায় নেমে আসে এবং ঐদিন বিকেল ৪টায় তৎকালীন ব্যারাক মাঠে (বর্তমান পাবলিক হেলথের অফিস) বিরাট জন সমাবেশে আমার মুক্তির দাবী উঠে। পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯ তারিখে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের হেড লাইনে নোয়াখালীর এ খবর ছাপা হয়।
৬ দফা ও ১১ দফার গণঅভ্যথ্বানে স্বৈরাচার প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের পতন ঘটে। সেনা প্রধান ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখল করে দেশে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেয়।
১৯৭০ সাল। সারা দেশে সাধারণ নির্বাচন হলো। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ একক সংখ্যাগরিষ্ট দল হিসেবে কেন্দ্রে এবং প্রদেশে জয়লাভ করলো। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক জান্তা নির্বাচনের ফল মেনে নেয়নি। তারা বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গোল টেবিল বৈঠকের নামে বাঙালী জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
২৬ মার্চ ১৯৭১। নোয়াখালী জেলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল করিম সাহেব টেলিগ্রামে মেসেজ পেলেন বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। বঙ্গবন্ধু জনগণের নির্বাচিত নেতা হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করায় ২৬ মার্চ পৃথিবীর মানচিত্রে “বাংলাদেশ” নামক একটি দেশের অভ্যুদয় ঘটে।
(চলবে)
► লেখক: অ্যাডভোকেট সারওয়ার-ই-দীন
মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবি, নোয়াখালী।
► নোয়াখালী জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত স্মারক স্বাধীনতা ২০০৩ থেকে নেয়া হয়েছে। প্রকাশকালঃ মার্চ ২০০৩।