[লেখাটি আমার না, আমার বন্ধুর। কিন্তু, বন্ধুর জন্যে অনুভূতিগুলো সব একই.. যে বন্ধুটি লিখেছে, তার একাউন্ট থেকে লেখা প্রথম পাতায় আসে না, তাই আমার একাউন্ট থেকে লেখা..]
-তোর বাড়ি কি রাঙ্গামাটি?
মাথায় কদম ফুলের মত চুল ওয়ালা রোগা মতন একটা হাস্যোজ্জল ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে দাত বের করে হাসছে। এমনিতেই বর্ষাকাল, তার উপর কাকভেজা হয়ে ক্লাস এ আশায় আরো কাকের মতন দেখাচ্ছে। আমার মাথায় একটা দৃশ্যই দেখতে পাচ্ছিলাম। একটা কদম ছাটের কাক আমার দিকে তাকিয়ে আছে! আমিও প্রথম দেখায় না হেসে পারলাম না।
আমি জবাব দিলাম - 'না, তবে আমার রাঙ্গামাটির মানুষ খুব পছন্দ। তুমি কি রাঙ্গামাটি থেকে এসেছ?'
-কিভাবে বুঝলা? চাকমা চেহারা তাই?
যদিও একজন প্রশ্ন করলে ভদ্রতা করেই প্রশ্ন করতে হয়, শুধু সে কারণেই প্রশ্ন করেছিলাম। তারপর ও অনেক ভাব নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম, যেন দেখেই বুঝে ফেলেছি!
কথায় কথায় অবাক হওয়া সভাবের একটা ভাল মানুষ টাইপ ছেলের সাথে বন্ধুত্ব হল। তুমি থেকে তুই, তুই থেকে 'কথায় কথায় গালাগালি' টাইপ বন্ধুত্ব। হোস্টেল এর ২ তালায় ছোট্ট রুমটায় যে কত গুলো ক্লাস মিস হয়ে গেছে মনে নেই সেই কদম ছাট কাকের সাথে আড্ডা দিয়ে। রাঙ্গামাটি তে তুরুইল্লা(একটি বিশেষ ধরণের পোকা) সাপ্লাই দিয়ে টাকা কামানোর ফন্দী, গুলজার সিনেমা হল ভেঙ্গে ফেলার পর ওইখানে কি ব্যবসা করা যায়, 'সি' সেকশান এর মেয়েরা বেশি সুন্দরি না 'এ' আর 'বি' সেকশান এর মেয়েরা, আমি ক্রীড়া সম্পাদক হয়ে কোন ক্রিকেট খেলার ব্যবস্থা করিনা কেন- এইসব আজাইরা পেচাল পারতে ভালই লাগত অলস দুপুর গুলোতে। আর তিন রুম মেট আর আমার(বহিরাগত) পালাক্রমে ক্লাস এ যাওয়ার পালা, সবার প্রক্সি দেয়ার জন্য। কলেজের প্রথম বর্ষের অনেক সময় এভাবেই কাটিয়ে দিলাম।
-ভাল লাগেনা কিছুই। শুধু রাঙ্গামাটি জেতে ইচ্ছা করে।- প্রতিদিন অন্তত একবার কথাটা শুন্তেই হত। দ্বিতীয় বর্ষের একটা সময় আমরা সবাই গেলাম ওর বাসায়।
অনেক দিন আগের কথা। প্রায় ৭/৮ বছর হতে চলেছে। রাঙ্গামাটির পাহাড়ি পথের একটা অন্ধকার রাস্তায় আমরা কয়েকজন বন্ধু হাটাহাটি করছি মাঝরাতে। ভয় ভয় লাগছে। কুকুরের ডাক শোনা যায় অনেক দূরে কোথাও। বেরশিক কুকুর গুলা ডেকেই চলেছে। এমন সময় পেছনে দেখি কেউ নেই। সাহস দেখানোর জন্যে পেছনে আর গেলাম না। বুঝিনি যে সবাই ভয়ে পালিয়ে গেছে। ভেবেছিলাম হয়তো আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা! কুকুরের ডাক যখন একদম কাছে তখন হঠাত একটা শব্দ শুনতে পেলাম। কেউ দৌড়ে এদিকেই আসছে। আমার কলিজা একদম মুখ দিয়ে বেরিয়ে জাওয়ার আগে দেখলাম আমার সেই কদম ছাট বন্ধু এসেছে। ভয় দেখাবার জন্যে নয়। কুকুরের কাছ থেকে বাচাবার জন্যে। ওইগুলা নাকি অনেক বিখ্যাত পাগলা কুকুর। একবার ধরলে রেহাই নেই। দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরল যেন আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর বলল, জলদি চল। - আমি কোন কথা বললাম না।
সেদিন কেন সে একা এসেছিল জানিনা। হয়তো অন্য কেউ বুঝতে পারেনি কতটুকু ভয় ছিল ওই অন্ধকার গলিতে। হয়তো আমি একটু বেশি ভয় পেয়েছিলাম, ঘটনা আসলে কিছুই না। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম, কদম ছাট কাকটা আমার অনেক ভাল বন্ধু!
প্রিটেস্ট পরীক্ষা শেষ। টেস্ট ও শুরু হয়ে গেছে। আমাদের কোন খবর নাই। এমনকি ক্লাস তো দূরে থাক পরীক্ষাও দেইনি কয়েকটা! গারজিয়ান ডেকে ঝারি দেয়া হল অনেক। কোন মতে এইছ এস সি পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি পেয়েই খুশি। সিটি কলেজে সিট পরীক্ষার। পরীক্ষাগুলা ভালই হচ্ছিল। পদার্থ বিজ্ঞান ২য় অংশের পরীক্ষার দিন আমার পেছনে বসা কদমছাট বন্ধুটার কান্না শুনতে পেলাম
- 'দোস্ত কিছুই পারিনা। ফেইল করব!'
-এমন সময় আমাদের তখনকার এনালগ বাংলাদেশে অনেক ঝর শুরু হল। কারেন্ট চলে গেল। সবাই মোম্বাতির জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে শুরু করল।আমার লিখা প্রায় শেষ। লুজ শিট নিয়ে খাতাটা দিয়ে দিলাম মি. কদম কে। কি লিখেছে জানিনা। তবে পরিক্ষার পর মনটা দুইজনেরি অনেক ভাল হয়ে গেল!
তারপর অনেকদিন চলে গেল। মাঝে মাঝে ফোন ফেসবুক ছাড়া আর দেখা হয়নি সেই বন্ধুটার সাথে।
কিছুদিন আগে শুনলাম কদম ছাট কাকটা নাকি অনেক কঠীন কোন রোগ বাধিয়েছে। ওর নাকি বোন মারো ট্রান্সপ্লান্ট করা লাগবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ২৩ নাম্বার কেবিন এ মৃত্যুর সাথে আরেকবার কাকভেজা হয়ে কদমফুলটা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে!
রাতে ঘুমানোর সময় একটা নির্জন গলিতে হাটার সময় পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে প্রায়ই কান্না করে নিয়াজ। (হ্যা, সেই কদমছাট কাকটার আসল নাম 'নিয়াজ মোরশেদ', 'সি' সেকশান, রোলঃ ২১৭) দোস্ত, আমি মনে হয় আর বাচবোনা! আমি আমার পদার্থ বিজ্ঞানের খাতাটা ওকে দিয়ে দেই। কিন্তু ওর কান্যা থামেনা। আমি বুঝতে পারিনা ওর কান্না কিভাবে থামানো যায়। কিন্তু বুকের ভেতর কেমন জানি রক্ত গুলো থেমে জেতে থাকে। ওরও কি রক্ত থেমে যাচ্ছে?- ঘুম ভেঙ্গে যায়। কিন্তু নিয়াজ এর কান্না থামেনা! কানে বেজে উঠে- "দোস্ত আর পারতেসিনা! আমাকে বাচা!!"
আমার এই বন্ধুটা আবার হাসবে কিনা জানিনা। তবুও একটা অদম্ম ইচ্ছা। ওর সেই রাঙ্গামাটির বাসায় আরেকবার বেড়াতে যাব।
I am forwarding the Account Details of Niaz's Father below....
Account name: MD. AKHTAR HOSSAIN
Account No.: 0129. 101 . 209 750
Dutch-Bangla Bank Limited, CDA Avenue Branch, Chittagong.
মূল পোস্ট: Click This Link
সাহায্য পাঠাতে যেকোন তথ্যের জন্যে ঐ পোস্টে যোগাযোগ করতে পারেন।
আলোচিত ব্লগ
এক্স লইয়া কি করিব
যাচ্ছিলাম সেগুনবাগিচা। রিকশাওয়ালার সিট কভারটা খুব চমৎকার। হাতে সেলাইকরা কাঁথা মোড়ানো। সুন্দর নকশা-টকশা করা। নর্মালি এররকম দেখা যায় না। শৈল্পিক একটা ব্যাপার। শুধু সিটকভার দেইখাই তার-সাথে কোন দামাদামি না কইরা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইলিশনামা~ ১
১৯৮৫ সালে ডক্টর মোকাম্মেল হোসাইন ‘ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে যেই রিসার্চ পেপারটা( থিসিস – এম এস এর জন্য) জমা দিয়েছিলেন সেটা এখানে মিলবে;
[link|https://open.library.ubc.ca/cIRcle/collections/ubctheses/831/items/1.0096089|Spawning times and early life history of... ...বাকিটুকু পড়ুন
সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার | SAD
শীতকালীন সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, কনজাংকটিভাটিস, নিউমোনিয়া কিংবা খুশকি মতো কমন রোগের কথা আমরা জানি। উইন্টার ডিসঅর্ডার বা শীতকালীন হতাশা নামক রোগের কথা কখনো শুনেছেন? যে ডিসঅর্ডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন
চট্টগ্রাম আদালত চত্বরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি
আজ চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা নানান গুজব ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা এড়াতে প্রকৃত ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে... ...বাকিটুকু পড়ুন