
তবে কি! আমি ভাল নেই? সত্যিই ভাল নেই? হযতবা! জীবনের আকাঁবাকা পথে পথ চলতে যেয়ে জীবনের বিধি বিধানে কখনও সখনও আটকে যাই নিজের অজান্তেই, ব্যাঘাত ঘটে প্রায়শই নিজের চিন্তা চেতনায়, ক্ষনিকের জন্য আটকে যায় জীবন চাকা, কিছুটা পিছিয়ে যাই অলক্ষ্যেই। পরক্ষনেই গা ঝাড়া দিয়ে চলতে শুরু করি, জীবন- সংসার এর মায়ায়, বেচে থাকর মোহে। চলতে চলতে আবার হোচট খাই, আবার পথ চলি........এভাবে এগিয়ে যেতে থাকি আমি ও আমার বেচে থাকা। মহান আল্লাহ তায়ালাকে ধন্যবাদ যে, সকল নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থেকেও তার অনুগ্রহে আর নিজের অদম্য প্রচেষ্টায় বেচে আছি বলে।
কিন্তু নিজের প্রচেষ্টার গন্ডি পেরুলেই প্রতি মুহুর্তে পরতে হয় অজশ্র ভোগান্তিতে। ভোগান্তির যেন আর শেষ নেই। ঘর থেকে রাস্তায় বেরুলেই বিরক্তিতে মনটা কুচকে থাকে সারাক্ষন। এক ঘন্টার রাস্তা তিন ঘন্টায়ও যখন মুক্তি মেলে না, গাড়িতে বসে থেকেও স্বস্তি পাওয়া যায় না আবার হাটতে যেয়েও ঘটে বহুবিধ বিপত্তি। এবড়ো থেবড়ো রাস্তা আর এপাশ ওপাশ খুড়াখুড়িতে দীর্ঘদিন মানুষ ভোগান্তিতে থাকলেও এটা দেখার ও তা থেকে পরিত্রানেরও যেন কোন মানুষ নেই। আর জনগন! সবারই কেমন যেন গা সয়ে গেছে। মুখ ফুটে কেউ কিছু বলে না, মনে হয় ইচ্ছা থাকা সত্বেও বলতে চায় না। আর সবচেয়ে বিরক্তির উদ্রেক হয় নিত্যদিনের বাজারে গেলে। আমরা যারা স্বল্প আয়ের সাধারন মানুষ তাদের হয়েছে সবচেয়ে বড় জ্বালা। আমরা না পারি বলতে, না পারি সইতে। "দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্ধগতি, খেতে হবে কচুর লতি" - সেটাও এখন আর কুলিয়ে-পুষিয়ে উঠতে পারছিনা। বাজারের এই শাসন আর শোষনে নিঃসপেশিত হয়ে ঘামে গরমে শ্রান্ত পরিশ্রানত হয়ে ঘরে গিয়ে যখন দেখা যায় বিদ্যুৎ নেই, হাতে মুখে একটু পানির প্রলেপ দেওয়ার মতও যৎসামন্য একটু পানি নেই, খাইতে বসে সময় মত খাবার নেই (গ্যাসের অভাবে রান্না হয় না বলে) তখন নিজেকে মনে হয় সমাজের উচ্চিষ্ট, অসুচি, পরিত্যাক্ত।
আর বিদ্যুৎ! এর কথা আর কি ইবা বলব। কু্ইক রেন্টালের নামে বিদ্যুতে দেশ ভেসে গেলেও!! তা কাজীর গরুর মত বাস্তবে যে গোয়ালে নেই সেটা এক ঘন্টা পর পর বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার রিহার্সেলেই প্রতিয়মান হয়। তারপরও কথার ফুলঝুড়িতে টিভির পর্দা আর মঞ্চ থাকে সারক্ষন প্রকম্পিত, সাধারনের কান হয় ঝালাপালা। তারপর আছে মরার উপর খারার ঘা এর মত হত্যা, গুম চিনতাই আর হয়রানী আতন্ক। সারাক্ষনই মনটা ভিতরে ভিতরে কুকঁড়ে থাকে, কখন কে না কে অপদস্ত, হেনস্হা অথবা গুমই করে ফেলে। মাঝে মাঝেই শুনা যাচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে বা লিখলে বিশেষ গোয়েন্দা সংস্হার লোকজন নাকি অনেককে অপদস্ত, অপমানিত ও হেনস্হা করছে। এগুলো শুনলেই কেমন জানি অন্তরাত্বা পর্যন্ত কেপে উঠে, গা গুলিয়ে বমি বমি ভাব হয়, নিজেই নিজের মধ্যে কুকড়ে যাই, গুটিয়ে থাকি সারাক্ষন। যখন দেখি সাংবাদিক সাগর-রুনী কে হত্যা করে খুনীরা পার পেয়ে যায়, ইলিয়াস আলীর মত একজন জাতীয় জনপ্রিয় নেতাকে গুম করলে তার কোন হদিস মেলে না, তখন আমার মত একজন অতি সাধারন নাগরিকের হত্যা বা গুমের ঘটনায় দেশ, দেশের প্রশাসন বা সরকার কিইবা করবে? কিইবা ভুমিকা রাখবে? তা ভেবে শুধু শন্কিত বা আতন্কিতই হই না, রীতিমত ভিতরে ভিতরে কুকঁড়ে থাকি সর্বক্ষন। নাগরিক হিসাবে কি এটাই আমার আপনার প্রাপ্য?? একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশে বাস করেও স্বাধীনভাবে কেউ সত্য কথা লিখতে ও বলতে পারবে না, নিজের মৌলিক অধিকার পাবে না এবং তা বলতেও পারবে না, প্রকাশ ঘটাতে পারবে না, এটা কেমন কথা, এটা কোন ভাবেই সহ্য করা যায় না, তা কারো কাম্যও হতে পারে না।
২০০৪-৫ সালেও যে র্যাবকে দেখলে পথ চলতে সাহস যোগাত, সেই একই র্যাবকে এখন দেখলে মনটা অজানা আতন্কে কেন জানি কুকঁড়ে থাকে। যে পুলিশ জনগনের বন্ধু হওয়ার কথা ছিল সেই পুলিশ এর কথা নাই বা বললাম। এত সব প্রতিকুলতা, আর ভীতিকর অবস্হায় নিজেই নিজেকে সাহস যোগাই, সাহসী হই এই বলে, যে আমি তো কোন অপরাধ করিনি, আমিতো কোন আইন অমান্য করেনি, আমি অপরাধী নই..............!। তারপরও আতন্ক। আমার মত আজ এই আতন্ক সাধারন জনমনে অহরহই বিরাজ করে বা করছে। এই ভীতিকর গুমট অবস্হা কোন অবস্হাতেই জনগন, রাষ্ট্র বা সরকার এর কোনটার জন্যই শুভ ও কাম্য হতে পারে না।
তবে আজ আমার সেই ধারনা ভুল প্রমানিত হল (সত্যিই কি তাই?) আজ পেপার খুলেই প্রথমেই চোখে পড়ল, বড় বড় করে হেড লাইনে লেখা শেখ হাসিনার প্রতি ৭৭ শতাংশ মানুষের আস্থা : গ্যালাপ জরিপ শধু তাই নয়, জরিপটিতে দাবী করা হয়েছে সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে এশিয়ার নেতাদের মধ্যে প্রথম কাতারেই রয়েছেন দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনাকারী শেখ হাসিনা। তালিকায় তার অবস্থান সপ্তম। জরিপে অংশ নেয়া ১৯ শতাংশ মানুষ তার ওপর নাখোশ বলে জানা গেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্যালাপের এ জরিপে শেখ হাসিনা পেছনে ফেলেছেন- প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জন ফিলিপ কি, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুসিলো বামবাং ইউধোইয়োনো, ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী নুয়েন টান ডাং এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ডকে। এশিয়ার সবচেয়ে শিল্পোন্নত দেশ জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিকো নোডার অবস্থানও তার পেছেনে। তবে কি সত্যিই দেশের মানুষ ভাল!! আছে? তাইতো মনে হয়.......অন্তত গ্যালাপ জরিপ এ শেখ হাসিনার প্রতি ৭৭ শতাংশ মানুষের আস্থা (!!??) সেই কথাইতো বলে।
হায়! সেলুকাস!.....................

আমার মনের শন্কা ছিল হয়তো দেশ ভাল নেই বলেই হয়ত আমিও ভাল নেই। আজকের পর থেকে সেই শন্কা রাখার হিম্মত বা সাহস এর কোনটাই রাখার কোন ক্ষমতা বা অধিকার আর আমার রইল না

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১২ দুপুর ২:০৯