
আজ ভোর বেলা মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসার পথে কলা কিনার আগ্রহে দুই আড়াই ইঞ্চি সাইজের কলার দাম জিজ্ঞেস করায় দোকানী দাম হাকল ডজন একদাম ৬০টাকা। যে কলা দুই দিন আগেও কিনেছি ৪০ টাকায়, আজ একদাম ৬০ টাকা শুনে আক্কেল গুড়ুম! কি বলব বা কি করব ভাবতে ভাবতেই ৫০ টাকা বলে ফেললাম কিন্তু দোকানীরতো ঐ এক কথা, সে ৬০ টাকার কমে দিবেই না বরংচ তার "না" বলার ভঙ্গিতে মেজাজটা গেল খিচরে। তাই কলা না নিয়েই ফিরে চললাম। খানিক দুর আনারস দেখে এগিয়ে গেলাম আনারস কিনতে কিন্তু ঐখানেও দাম শুনে মেজাজটা গেল আরও খিচরে..........মাঝারি সাইজের আনারস দাম হাকল ১০০ টাকা জোড়া, একদাম ৯০ টাকা। যে আনারস গত তিনদিন আগেও কিনেছি ৬০ টাকা জোড়া, সেটা তিনদিনের ব্যবধানে এত পার্থক্য হয় কি করে! ভাবতেই আশ্চর্য লাগে। এই অরাজক অবস্হা প্রতিটি ক্ষেত্রে। নিত্যদিনের মাছ-মাংস আর সবজি বাজারে গেলে হা-হুতাশতো আরো বেড়ে যায়। তাই দোকানীকে কিছু না বলে মনে মনে নিজেই নিজেকে বিদ্রোপ করলাম, এরকম অরাজক দেশ জন্মেছি বলে। মাফ করবেন, আমার দেশপ্রেম নিয়ে...........আমরাতো আমাদের রাজনীতিবীদদের মত আর মহাদেশপ্রেমিক না!!!
উপরের অভিজ্ঞতা শুধু আজকের বা শুধুমাত্র আমার একারই না মনে হয়। এ অভিজ্ঞতা আমার মত সীমিত আয়ের প্রায় প্রতিটি মানুষেরই হবে। এই হা-হুতাশটা দেখা যায় খানিক লাজ শরমের বালাই না করে হাটে বাজারে একটু বহিঃপ্রকাশে। দামের সাথে কুলিয়ে উঠতে না পারার অপারগতায় একটু বহিঃপ্রকাশ দেখালেই অনেক মানুষের আমার মতই হৃদয়ের আর্তচিৎকার উপলব্দি করা যায় কিন্তু তা আবার ভদ্র জাতি বলেই নিমিষে মিইয়ে যায়। জাতি হিসাবে আমরা খুবই ভদ্র ও ধৈর্যশীল এটা আমাদের নেতা নেত্রীদেরকে অবশ্যই মানতে হবে। নাহলে, বর্তমান পরিস্হিতিতে এই সরকারের ক্ষমতায় এতদিন থাকার কথা না। যারা নির্বাচনের আগে ১০ টাকা সের ধরে চাল খাওয়াবে বলে ক্ষমতায় এসেই সে কথা বেমালুম ভুলে যায়, শুধু ভুলে যাওয়া নয় স্বীকারই করতে চায় না, তাদের এতদিন ক্ষমতায় ঠিকে থাকাটাই আশ্চর্য বটে! এটা সম্ভব নিতান্তই আমাদের মত জনগনের ভালমানুষীর সুযোগে।

লিখতে চাইলে কতকিছুই লেখা যায়। বর্তমানে ত্রাহি মধসুদন অবস্হায় লেখার উপাদানেরতো আর কোন কমতি নেই কিন্তু আমাদের মত সাধারন জনগনের কাছে ভারতকে ট্রানজিটের নামে করিডোর দিয়ে দেওয়া বা টিপাইমুখ বাধেঁর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ না করা বা ২০০ ভরি স্বর্ণ দিয়ে ইন্দিরাকে সম্মানিত করা বা যুদ্ধপরাধীর বিচারের নামে রাজনীতি করা বা বিচারের নামে বিরোধী নিপীড়ন করা বা খুনীর আসামীকে নিজ দলের বলে মাফ করে দেওয়া বা গ্যাস চুক্তির নামে সম্পদ বিকিয়ে দেওয়া বা সংস্কৃতির নামে সংস্কৃতির আগ্রাসনকে প্রশ্রয় দেওয়া বা সংবিধান নিয়ে কাঁটাছেড়া করা ইত্যাদি ...........................ইত্যাদির চেয়েও ভয়ন্কর ত্রাহি ত্রাহি, খুবই অসস্হি আর ভীষন রকমের নাকাল হওয়ার বিষয় হচ্ছে "দ্রব্যমুল্য"। সত্যিই আর পারি না.....................কলিজা শুকিয়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। কেনাকাটায় নাকাল হয়ে যাচ্ছি নিত্যদিন, বউয়ের সাথে খিটিমিটি লেগেই থাকে প্রায় প্রতিদিনই। বর্তমানের এই অসস্হিকর অবস্হায় আর না পারার ব্যকুলতায় বিএনপির আমলকেই আমার কাছে স্বর্ণযুগ বলে মনে হয়।
আর ভিক্ষে চাইনা মা, তোমার কুত্তাটাই কেবল সামলাও। ১০ টাকা কেজি চাল আর খেতে চাই না বুবুজান, আমার আগের দামই ফিরিয়ে দাও। নির্বাচনী ওয়াদায় যা বলেছিলে তা বোধ হয় আমরাই শুনতে ভুল করেছিলাম, আমরাই পাপী, সব পাপ আমাদের মত জনগনের। তোমরা কেবল ধোয়া তুলষীপাতা, তোমাদের কোন দোষা নাই, তোমাদের কোন দোষ থাকতেও পারে না, তোমাদের দোষারোপ করাটাই হবে আমাদের পাপ, মহাপাপ!
আমরা বাঙ্গালী না, খাটি বাংলাদেশী হয়েই থাকতে চাই। সংস্ক্রতির আগাসন দিয়ে বাঙ্গালী বানানোর চেষ্টা থেকে দয়া করে বিরত থাকুন। আপনাদের মত মহাদেশপ্রেমিক আমরা না। আপনাদের মত সরু বাসমতি চাল আমাদের পেটে সইবেনা, তা চাইও না। গন্ধযুক্ত মোটা চালই যথেষ্ট আমাদের জন্যে। দয়া করে তেলেসমাতিটা খালি বন্ধ করেন। আমাদের ভাগ্য বিড়ম্ভনা নিয়ে কটাক্ষ করবেন না, দয়া করে উপহাস-বিদ্রুপ বন্ধ করেন। আমরা দিনে আনি দিনে খাইর দল। আমাদের নিত্যদিনই হিসেবের টাকায় ব্যাগ হাতে বাজারে যেতে হয়, না গেলে হাড়িঁ চড়ে না। আপনাদের মত গাড়ি হাঁকিযে পাইক পেয়াদার লট বহর নিয়ে বাজারে যাওয়া সামর্থ আমাদের নাই, সেই চিন্তাও করি না । তাই, দয়া করে বাজারে না যাওয়ার উপদেশ দিয়ে ১৬ কোটি মানুষকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করবেন না, উপহাস-বিদ্রুপ করবেন না প্লিজ..............................।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১১ দুপুর ১:০৪