আদম হরকরা স্বর্গদূত গিবরিলকে ভাড়া করিয়াছে কিছু ফলমূলের বিনিময়ে। গিবরিল বর্তমানে বেকার, ভবিষ্যতে নাকি ঈশ্বর তাহাকে ঘনঘন পৃথিবীতে পাঠাইবেন বলিয়া আশ্বাস দিয়াছেন। তাই সে চৌপর আড্ডা ভাঁজে, স্বর্গ অপ্সরাদের পিছে লাইন ঠোকে। আদম এমনই এক আড্ডা হইতে তাহাকে গেরেফতার করিয়াছে।
গিবরিল অবশ্য জ্ঞানবৃক্ষের ফলের জন্য লালায়িত নহে, একটি মর্তমান কদলী পাইয়াই সে ভজিয়া গেলো। আদম তাহার হস্তে ভূর্জপত্রের পুঁথি গুঁজিয়া দিয়া জিজ্ঞাসিলো, "বন্ধু গিবরিল, টোলে লেখাপড়া কিছু শিখেছিলে?"
গিবরিল লাজুক হাসিয়া রশ্মিনির্মিত মস্তক চুলকায়।
আদম আবার শুধায়, "বলি হিয়েরোগি্লফিক্স পড়তে পারো?"
গিবরিল পায়ের নখ দ্্বারা স্বর্গের মাটি খুঁটিতে থাকে অধোবদনে।
আদম মনে মনে হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচে, যাক বাবা, গিবরিলটা মূর্খ নিকালিয়া ভালোই হইয়াছে, নতুবা বানান ও ব্যকরণে ভুলভাল ধরিয়া তাহাকে নাকাল করিয়া ছাড়িতো।
সে গম্ভীর মুখে বলে সাধু ভাষায় বলে, "তাহলে পত্রে কাজ নাই। মুখেই বলিতেছি শুনো। ঈভকে গিয়া বলিবে, আলোচনায় বসিতে আমি আগ্রহী। সে যেন তাহার প্রতিনিধি দলের নাম পাঠায়। আর আলোচনায় আমি কাহাকে সাথে রাখিবো, কাহাকে রাখিবো না, তাহা লইয়া বিবাদ উহাকে শোভা পায় না। আমি কি কখনো গিয়া বলিয়াছি, তুমি অমুক স্বর্গসখীর সহিত তমুক নদীতে স্নান করিতে যাও? সহচর নির্বাচনে তাহার যেমন অফুরন্ত স্বাধীনতা, তেমনি আমারও। কাজেই আমি শয়তানকে সঙ্গী করিয়াই আলোচনার মাদুরে বসিবো।"
গিবরিল বার কতক মুখস্থ করিয়া লয় আদমের কথাগুলি, তাহার স্মরণশক্তি মোটামুটি মন্দ নয়।
আদম কিছু চৈনিক বাদাম ধরাইয়া দেয় গিবরিলের হাতে, যাত্রাপথে চিবাইবার জন্য। গিবরিল ডানা ঝাপটাইতে ঝাপটাইতে উড়াল দেয়।
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করিতে হয় না, গিবরিল আবার ফেরত আসে। তাহার হস্তে একটি ডাঁসা পেয়ারা, সে মন দিয়া চিবাইতেছে। প্রতীয়মান হয় পেয়ারাটি ঈভদত্ত।
"আদম," পেয়ারা চিবাইতে চিবাইতে গিবরিল বলে, "তোমার বউ মহা খাপপা। সে শয়তানের সাথে আলোচনায় বসিতে রাজি নয়। শয়তান নাকি স্বর্গদূত ভালো নয়। ঈভকে জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাইতে ব্যাপক ফুসলি দিয়াছিলো। আর তুমি তোমার ঘরে যে ভোটার তালিকা নির্মাণ করিয়াছো, দুইজনের সংসারে ভোটারের সংখ্যা তিনজন দেখাইয়াছো, ইহা সংশোধন না করিলে ঈভ তোমাকে ঘরে প্রবেশ করিতে দিবে না। সে মুড়ো খ্যাংরা হস্তে অবিরাম বাড়ি পাহারা দিতেছে।"
আদম চটিয়া ওঠে, বলে, "আরে এ যে দেখছি মহা ল্যাঠা। আমার পোষা রামছাগল ত্রিভূজ কি তবে মহাপ্লাবনের জলে ভেসে এলো? ও ভোট দেবে না? নাহয় ওর বুদ্ধিশুদ্ধি নেই এক ফোঁটা, তাই বলে কি ও ঘরের কেউ নয়? বয়সও তো ওর আঠারোর ওপরে! এ অন্যায়, এ বড় অন্যায়!"
গিবরিল পেয়ারাটা পুরোটাই খেয়ে ফেলে, বিচিগুলো থু থু করে ছিটাতে ছিটাতে বলে, "কিন্তু ঈভ বললো তুমি নাকি ঈভকেই ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছো?"
আদম বলে, "হাঁ! মেয়েমানুষ ভোট দিয়ে কী করবে?"
গিবরিল বলে, "তাহলে ভোটার তিনজন হলো কিভাবে?"
আদম হাসে। বলে, "ঐ যে শয়তান। ও তো বলতে গেলে ঘরেরই লোক। ওকেও তুলে দিয়েছি লিস্টিতে।"
গিবরিল মাথা চুলকায়।
আদম বলে, "যা-ই হোক গিবরিল, শ্রবণ কর! ঈভকে গিয়া কহ, সে যাতে তাহার খ্যাংরা নত করিয়া ঘরকে স্থিতিশীল করিতে সহায়তা করে। সমগ্র স্বর্গের চোখে আমার ঘরের ভাবমূর্তি নষ্ট হইতেছে। এ কাম্য নহে। তুমি সত্বর গিয়া তাহাকে বলিবে ....।"
দূর হইতে অন্যান্য স্বর্গদূতেরা নিজেদের মধ্যে গুজগুজ করিতে লাগিলো, গিবরিল হঠাৎ এতো উড়িতেছে কেন? স্বর্গের কোথাও কি পত্র চালাচালি হইতেছে নাকি?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০