ঈশ্বর আসনে বসিয়া ঢুলিতেছিলেন, ইদানীং হাতে কাজের চাপ কম, খালি তন্দ্রা আসে। সৃষ্টির শুরুতে এক হপ্তা গাধার খাটুনি খাটিতে হইয়াছিলো, বর্তমানে বেশ বিশ্রামযুগ কাটাইতেছেন। বোর অনুভব করিলে তিনি মাঝে মাঝে আসনপাশ্বর্ে রক্ষিত চিলুমচি হইতে বরফখন্ড লইয়া ইতস্তত ছুঁড়িয়া মারেন। সেগুলি মহাকাশে লাট খাইতে থাকে, বোকা লোকে তাহাকে ধূমকেতু মনে করিয়া জোর গবেষণা শুরু করিয়া দেয়।
হঠাৎ বিকট ম্যাৎকারে ঈশ্বরের তন্দ্রা টুটিয়া খানখান হইলো। তিনি চক্ষু ডলিতে ডলিতে তাকাইয়া দেখিলেন. আদমের পালতু ছাগুরামটি তাহার সম্মুখে দন্ডায়মান। তাহার মুখচ্ছবি জ্ঞানের ভারে বিকট। চোয়াল নড়িতেছে। নিশ্চয়ই কাঁটালপাতা চিবাইতেছে। ছাগুরাম কাঁটালপাতার যম।
ঈশ্বর ছাগুরামের কর্মকান্ডে ব্যাপক আমোদ লভিয়া থাকেন। তিনি সহাস্যে শুধাইলেন, "কী গো ছাগু, কী সংবাদ? দন্তমার্জনা কর না কেন? দাঁতের ফাঁকে কাঁটালপাতা দেখিতেছি যে!"
ছাগু মাটিতে পা ঠুকিয়া বলিলো, "কাঁটাল পাতা ফুরাইয়া গিয়াছে।"
ঈশ্বর সস্নেহে বলিলেন, "কাঁটাল পাতা সব খাইয়া শেষ করিয়াছো?"
ছাগু গোঁ গোঁ করিয়া বলিলো, "আমার নাগালে যত পাতা ছিলো চিবাইয়া বিনাশ করিয়াছি। অবশিষ্ট কাঁটাল পাতা আমার নাগালের উপরে। পিছনের দুই পায়ে ভর দিয়াও তাহাদের আয়ত্বে আনিতে পারি না।"
ঈশ্বর বলিলেন, "এখন আমাকে কী করিতে হইবে বল।"
ছাগু বলিলো, "মাঠের যত ঘাস আছে, উহাদের কাঁটাল পাতা ঘোষণা করুন।"
ঈশ্বর চমকিয়া উঠিলেন। এ কেমন বিখাউজ আব্দার?
তিনি বলিলেন, "ঘাসেদের পিছে কেন লাগিয়াছো? উহারা তোমার কী ক্ষতি করিয়াছে? আমি বরং তোমার উচ্চতা কয়েক ইঞ্চি বর্ধন করিবার ব্যবস্থা দেখি। কিংবা কাঁটাল গাছকে বলি তাহার যেন কান্ডদেশে আরো বেশি পত্র ধারণ করে। তাহলে চলিবে না?"
ছাগু ডানে বামে মাথা নাড়ে। "মাঠের ঘাসগুলি আমি চিবাইয়া দেখিয়াছি। মন্দ নহে। ভাবিয়া দেখিলাম, উহারা প্রকৃতপক্ষে কাঁটাল পাতা। কিন্তু নিজেদের ঘাস বলিয়া দাবি করিয়া আমার মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াইতেছে। উহাদের কাঁটালপাতা ঘোষণা করুন, ল্যাঠা ছুকিয়া যায়।"
ঈশ্বর ছাগুরামকে বুঝাইতে প্রবৃত্ত হইলেন। ঘাস আর কাঁটালের ফাইলোজেনি খুলিয়া ছাগুরামকে দেখাইলেন, তাহাদের উদ্ভবের ইতিহাস আলোচনা করিলেন, ঘাসের ঘাসত্ব লইয়া ঘাসের বক্তব্যও পাঠ করিয়া শুনাইলেন। কিন্তু ছাগুরাম মানিতে নারাজ। তাহার এক দফা এক দাবি।
অবশেষে ঈশ্বর চটিয়ামটিয়া ছাগুকে খেদাইয়া দিলেন। ছাগু রোষকষায়িত লোচনে খানিকক্ষণ তাকাইয়া থাকিয়া প্রস্থান করিলো। যাইবার আগে মাটিতে ছরছর করিয়া একগাদা লাদিও ছাড়িয়া গেলো।
ঈশ্বর তাঁহার ইন্টেলিজেনস বিভাগের ভারপ্রাপ্ত স্বর্গদূত জেমসবন্ডাইলকে তলব করিলেন। জেমসবন্ডাইল সন্তর্পণে আসিয়া কুর্ণিশ করিলো।
"ছাগুরামের হঠাৎ এইরূপ উগ্রতার কারণ কি?" ঈশ্বর সোজাসাপ্টা জানতে চাইলেন।
জেমসবন্ডাইল একখানি বিড়ি ধরাইলো। "বন্ডাইল। জেমস বন্ডাইল।"
ঈশ্বর মহা ক্ষেপিয়া গেলেন। "ভড়ং ছাড়ো মূর্খ! ঐসব অপ্সরা পটানো বুলি আমার সামনে আরেকবার আওড়াইলে মারিয়া পস্তা উড়াইবো!"
জেমসবন্ডাইল থতমত খাইয়া বিড়িটা ফেলিয়া দিলো। "গোস্তাকি মাফ করবেন হুজুর, বদভ্যাস ছাড়িতে পারিতেছি না। ... হইয়াছে কি, কিয়ৎকালপূর্বে ছাগুরাম গোঁধরিয়াছিলো, সে আর স্বর্গে বাস করিবে না। আদম নাকি ঈভকে পটকাইতে না পারিয়া মাঝেমধ্যে তাহাতে উপগত হইবার কুচেষ্টা করিয়াছে। ছাগুরাম কয়েকদিন ঠিকমতো হাঁটিতে পারে নাই। বুঝতেই পারিতেছেন ...।"
ঈশ্বর বিরক্ত হইয়া বলিলেন, "প্রাসঙ্গিক কথা বলো অর্বাচীন।"
জেমসবন্ডাইল বলিলো, "তো ... ছাগুরাম ঠিক করিয়াছিলো সে স্বর্গ ত্যাগ করিবে। এইখানে তাহার বড় কষ্ট। সকলে তিরিভুজ বলিয়া গালাগালি করে, হো*া মারিতে চায় ... তো সে তাহার গামছায় রসদপত্র লইয়া স্বর্গ ত্যাগ করিবার সময় শয়তান আসিয়া তাহাকে ভুলাইয়াভালাইয়া একটি ঝোপের আড়ালে লইয়া গিয়াছিলো। সেইখানে তাহারা কী করিয়াছে তাহা আমি আপনাকে বলিতে পারিবো না, বড়ই শরমের বিষয় ... তবে শুনিয়াছি প্রচুর মৌদুধিকাঁটা ছাগুরামকে খাওয়ানো হইয়াছে। আমার ধারণা উহার পাশর্্বপ্রতিক্রিয়াতেই তাহার মস্তিষ্কে এইরূপ বিকৃতি দেখা দিয়াছে।"
ঈশ্বর বিরক্ত হইয়া জেমসবন্ডাইলকে হাতের ইশারায় বিদায় করিলেন। শয়তান বড় শয়তানি শুরু করিয়াছে। কমিক ছাগুটিকেও গুন্ডামো শিখাইয়া দিয়াছে।
দূরে ভ্যা ভ্যা শব্দ শুনিয়া ঈশ্বর কান পাতিলেন। শুনিলেন, ছাগু আরো কিছু তৃণভোজী ডাকিয়া আনিয়া মেহফিল জমাইয়া বসিয়াছে। সেখানে ঘাসকে কাঁটালপাতা ঘোষণার দাবি, আর মুক্তবুদ্ধির মুন্ডপাত চলিতেছে মুহুমর্ূহু।
ঈশ্বর দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া অস্ফূটে বলিলেন, "ব্যাটা তিরিভুজ কোথাকার ...!"
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০