somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৌরাণিক ছাগুরাম

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৬ রাত ৩:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছাগুরাম পুঁথি লিখিয়া সুবিধা করিতে পারে নাই। খুর দিয়া কয়লার পেন্সিল ধরা এক দুঃসাধ্য কর্ম, তদুপরি লিখিতে হয় ভূর্জপত্রে। ভূর্জপত্র ছাগুরাম ইতিপূর্বে কয়েকবার চিবাইয়া দেখিয়াছে, মন্দ নহে। তাহার উস্তাদ, শ্রদ্ধেয় মোদাররেস ব্যকরণ শিং বি এ তাহাকে বলিয়াছিলেন, "ছাগু! কোন জিনিস চাখিয়া দেখিতে ইতস্তত করিবে না। ইহা ছাগুসম্মত নহে। সঙ্কোচের বিহবলতা ছাগুরে অপমান।"

তদ্যাবধি ছাগু যাহা হাতের নিকটে পায়, শিশিবোতলের মত শক্ত না হইলে চিবাইয়া দেখে। তাহার ফলাফল হইতেছে এ-ই, পুঁথির পাতা সে চিবাইয়া খাইয়া ফ্যালে। দোকানদার হাসে। কহে, "বিদ্যাচর্চা বস্তু খাইলে পেট ছাড়িবে। নগরীর চতুপর্াশ্বর্ে এত এত পনস বৃক্ষ, পানসপত্র খাইলেই তো হয়।" ছাগুও হাসে মিটিমিটি। উস্তাদ ব্যকরণ শিং বি এ-র কথা কি সে একটা তালপাতার দোকানদারের ব্যঙ্গ শুনিয়া ফেলিয়া দিবে?

কিন্তু ভূর্জপত্র লোপাট করিবার ফলে ছাগুরামের ব্যাপক সমস্যা হয় লিখিতে। কী করিবে সে? প্রস্তরের গায়ে লিখিবে? কিন্তু প্রস্তরখন্ড আলগাইবে কীরূপে? তাছাড়া এই যুগে প্রস্তরখন্ডে লিখিলে তাহার আইআরসি চ্যাটরুমের ছাগীবান্ধবীরা ওলান আন্দোলিত করিয়া হাসিয়া উঠিবে। কী দরকার। যেই যুগে যেই হাইপ।

একদিন ছাগুরামের এক নেটবান্ধব ওয়ারাম আসিয়া কহিলো, "ছাগু ভাই, শান্তি বর্ষিত হোক। শুনিলাম লিখিতে তোমার সমস্যা হইতেছে?"

ছাগু বলিলো, "ম্যাঅ্যা ... মানে হ্যাঁ! কী করা যায় বলো তো?"

ওয়ারাম বলিলো, "নরডেট 28 ব্যবহার করিয়া দেখিয়াছো?"

ছাগু চটিয়া বলিলো, "ছাগেশ্বরের কসম, তুমি কি মশকরা মারিতেছো আমার সহিত?"

ওয়ারাম লজ্জিত হইয়া বলিলো, "দুঃখিত, ভুল উইন্ডোতে লিখিয়া ফেলিয়াছি। মস্তইয়ের সাথেও আলাপ চলিতেছে কি না ... সে যাহাই হউক, তুমি লাদি মিডিয়ামে লেখো না কেন?"

ছাগু ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া বলিলো, "লাদি মিডিয়াম? উহা কী? ম্লেচ্ছ মিডিয়ামে পড়াশোনা করিয়াছি কিয়ৎকাল, লাদি মিডিয়াম তো শুনি নাই!"

ওয়া কহিলো, "আরে, তুমি তো ভূর্জপত্র দেখিলে নোলা সামলাইতে পারো না, খাইয়া ফ্যালো। তাই তোমাকে লিখিতে হবে লাদির হরফে। এই বিপুলা ধরণী হইবে তোমার খাতা। লাদি ছাড়িবার সময় হোগাটিকে সুচারুরূপে নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিলেই তুমি অক্ষর নির্মাণ করিতে পারিবে। আর কতকাল খুর দিয়া কয়লার পেন্সিল আঁকড়াইয়া লিখিবে? এখন লাদিলিপির বড়ই গরমাবস্থা। মহাদেশে মহাদেশে জ্ঞানী-বুজর্গ লোকে লিখিতেছে। তুমিও লেখো।"

ছাগুরামের বড়ই মনে ধরিলো কথাটি। সত্যই তো। ইহাতে ঝামেলা কম। সমস্ত দিনই তো সে এই পত্র সেই পত্র খাইয়া লাদিয়া বেড়ায় স্থানে স্থানে। সেই লাদি ধারাকে যদি একটু সামলাইয়া দেয়া যায়, তাহা হইলেই তো মাটিতে হরফ ফুটিয়া উঠিবে। তাছাড়া সেই হরফে কেউ হাত দিবে না, কারণ উহা ময়লা বস্তু। তাহার লেখা অজরামর হইয়া থাকিবে পৃথিবীর বুকে।

ছাগুরাম হর্ষভরে ম্যাৎকার করিয়া তৎক্ষণাৎ রওয়ানা দিলো নিকটস্থ একটি পনসবৃক্ষের দিকে। আজ সে পেটটি পুরিয়া পাতা খাইবে। তারপর একটি মনোজ্ঞ প্রবন্ধ রচনা করিবে লাদির আঁখরে।


মাস দুই এইভাবে লাদিলিপিচর্চা করিবার পর ছাগুরাম প্রথম বাধার সম্মুখীন হইলো। তাহার নিয়মিত লাদিচর্চার ময়দানের পাশে একটি পাঠশালা গড়িয়া উঠিয়াছে, নাম অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী। সেই পাঠশালায় কতিপয় নাস্তিক বালকবালিকা লেখাপড়ার নামে অনর্থ করে। তাহারা ছাগুরামের লাদিরচনা নিয়া ব্যঙ্গ করে, হাসে। ছাগুরামের গা জ্বলিয়া যায়। গুগল সার্চ দিয়া সে কত কত জ্ঞানের কথাকে ময়দানপটে লাদিলেখায় আঁকিয়া তুলিয়াছিলো, সেইগুলি নিয়া সেই নাস্তিকের দল হাসিয়া মজা লোটে।

ছাগুরাম মাঝে মাঝে উহাদের বুঝাইতে যায়। তাহারা ছাগুকে সমাদর করিয়া বসায়। ছাগুরাম গম্ভীর মুখে অনেক কিছু বলে, তাহারা মিটিমিটি হাসে। কিন্তু শুধরায় না। বরং মাঝে মাঝে ছাগুরামের নাম নিয়া ব্যঙ্গ করে। তাহার একটি পা নাই, তিনটি পা নিয়া সে এত কঠিন কর্মে হাত দিয়াছে, এ নিয়াও ব্যঙ্গ করে তাহারা। রাগে ছাগুরামের শিঙের গোড়া উত্তপ্ত হইয়া ওঠে। সে পণ করে, পরশুরামের মতো সে-ও একদিন পর পর একুশবার পৃথিবী নাস্তিকশূন্য করিয়া ছাড়িবে। সে তো আর কুঠার ধরিতে পারিবে না, তাহার অস্ত্র হইবে লাদি। মারাত্মক দুর্গন্ধযুক্ত লাদি।

কী খাইলে ঐরূপ লাদি সে ছাড়িতে পারিবে? সে নেটে ওয়ারামকে শুধায়।

ওয়ারাম বলে, "নরডেট 28 ব্যবহার করিয়া দেখিয়াছো?"

ছাগু প্রচন্ড চটিয়া যায়, ওয়ারাম লজ্জিত হইয়া সাফাই গায়, কহে, মস্তইয়ে আছে আরেক উইন্ডোতে, দুঃখিত, ভুল জায়গায় লিখিয়া ফেলিয়াছে। তাহার পর সে চুপিচুপি পরামর্শ দেয়। বলে, যাও, হাটবারে হাটে গিয়া মৌদুধি সাহেবের পবিত্রগ্রন্থটি হাতসাফাই করিয়া লইয়া আসো। তাহার পর উহা উত্তমরূপে গলাধঃকরণ করো। ইহার পরদিন সকাল হইতে তোমার যা লাদি বাহির হইবে, উহার দুর্গন্ধের তুলনা পৃথিবীতে নাই।

ছাগুরাম খুশি হইয়া ওঠে। ওয়া বড় কাজের পরামর্শ দিয়া থাকে।

সে স্বপ্ন দেখিতে থাকে। মৌদুধির গ্রন্থজাত লাদির গন্ধে ঐ অল্পবিদ্যাভয়ঙ্করী ইশকুলের নাস্তিকগণ ছটফটাইয়া মরিতেছে। একবার, দুইবার করিয়া একুশবার। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাহাকে আসিয়া পল্টন ময়দানে দাঁড়া করাইয়া পরিচয় করাইয়া দিতেছে, আজ হইতে ছাগুরামকে লোকে জানিবে লাদুরাম বলিয়া ...!

ছাগুরাম ঘুমের ঘোরেও ম্যাঅ্যাঅ্যা করিয়া ওঠে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৪১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×