somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবির জোড়াসাঁকো অবলোকন

১৭ ই মে, ২০২৩ রাত ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি গেছি। হোটেল থেকে হলুদ ট্যাক্সি নিয়ে আসতে হয়েছে। হলুদ ট্যাক্সি চড়ে আসবার পথে আমার মুড়ির টিনের কথা মনে পড়ছিল। কোলকাতায় আরেক ধরনের ট্যাক্সি আছে, সেটা সাদা রঙের। ওটাতে এসি আছে। আর আছে উবার। উবারের ভাড়া তুলনামূলক বেশি কিন্তু কোলকাতার উবার অনেকক্ষণ অপেক্ষা করায়।

হলুদ ট্যাক্সিতে এসি নাই। ফলে এই বৈশাখী রোদের সবটুকু উত্তাপ সে নিজের মাঝে ধারণ করে। গাড়ি হয়ে থাকে আগুন গরম। সেকারণেই মুড়ির টিনের কথা মনে পড়ছিল। আমাদের ঢাকায় একসময় একটা বাস চলত। লোকেরা সে বাসের নাম দিয়েছিল মুড়ির টিন। মুড়ির টিনের মতো করেই সে বাসে ঠেসে যাত্রী তোলা হতো। এরপর একটু পরপর থেমে থেমে যাত্রী ওঠানামা করত। প্রথম থেকে শেষ গন্তব্য অবধি এই অবস্থা। গরমে ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা মনের সুখ মিটিয়ে ড্রাইভারকে খিস্তি করতে থাকত। কিন্তু ড্রাইভার যেন বধির! সে তার নিজের মতো করেই মুড়ির টিন নিয়ে একটু একটু করে টেনে টেনে চলতে থাকত।

একসময় কোলকাতার পথেও এই মুড়ির টিন চলত। সাদাকালো সিনেমায় সে বাস দেখা যাবে। কিন্তু কোলকাতার লোকেরা তাকে মুড়ির টিন নামে আখ্যায়িত করেছিল কিনা- সেটি জানা নেই।

হলুদ ট্যাক্সিগুলোতে মিটার থাকে। নিয়ম হলো আপনি ট্যাক্সি থামিয়ে তাতে চড়ে বসে ড্রাইভারকে গন্তব্য বলবেন। গন্তব্যে পৌঁছে মিটার দেখে ভাড়া পরিশোধ করবেন। সহজ হিসাব। কিন্তু বাস্তবতা সহজ না। বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। মিটারের ভাড়ায় কোনো ট্যাক্সিই যেতে রাজি নয়। তাদের সঙ্গে আমাদের দেশের সিএনজির মতো ভাড়া ঠিক করে তারপর চড়তে হবে। কেউ কেউ অবশ্য ভিন্ন শর্ত দেয়, বলে, মিটার থেকে ত্রিশ টাকা বেশি লাগবে দাদা। কেউ আবার পঞ্চাশও চায়।

কিন্তু আপনি যদি দাদার কথায় আস্থা রেখে চড়েই বসেন তাহলে আপনি অঠিক কাজটি করলেন। প্রথমত আপনার এই সিদ্ধান্তের ফলে সে বুঝে ফেলবে আপনি কোলকাতার স্থানীয় কেউ নন। কেননা স্থানীয়রা এই কাজ করে না। তাহলে আপনি বাইরে থেকে এসেছেন।

তারমানে আপনি পথঘাট কিছুই চেনেন না। তো সে তখন দশ মিনিটের পথ যেতে নানান পথ অতিক্রম করে ত্রিশ মিনিটে পৌঁছুবে। আর আপনি মিটার দেখে ধ্বক ধ্বক করতে থাকা বুক নিয়ে ট্যাক্সি থেকে নামবেন এবং চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধ করবেন। আর সামান্য ট্যাক্সি চড়া নিয়ে আশা-হতাশার দরকারটা কি! মিটারে যেহেতু যাবে না তাহলে ভাড়ার একটা চুক্তি করে নেওয়াই ভালো। এইটি অবশ্য আমার অভিজ্ঞতা নয়। ক'জন অভিজ্ঞ ব্যক্তির অভিজ্ঞতা। তবে আমার মনে হয় ঢালাও ভাবে সকলকে এরকম ভেবে নেওয়াটা সুবিবেচনার কাজ হবে না।

আমি অবশ্য কোলকাতায় এসে ভাড়া ঠিকঠাক করেই ট্যাক্সি চড়ি। তো উঠেছি রিপন স্ট্রিটে। ম্যাপ জানাচ্ছে সেখান থেকে ট্যাক্সিতে মিনিট পনের-বিশ মিনিটের পথ। সূর্য আজকে বীরপুরুষ হয়েছে। একটু পরপর বাইসেপ ফুলিয়ে মাসল দেখাচ্ছে। ভয়াবহ উত্তাপ তার। রাস্তার মোড়ে কিছুটা সময় দাঁড়াতে একটা হলুদ ট্যাক্সি পাওয়া গেল। ট্যাক্সিঅলা ভাড়া চাইল আড়াইশ' টাকা।

আমি বলি, এটা একটা কথা বললেন! এখান থেকে একশ' টাকার বেশি ভাড়া হওয়া উচিত না। একশ' টাকা দিব, যাবেন?

ড্রাইভার হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে, দু'শ টাকা দেবেন দাদা।

উঁহু। আচ্ছা একশ' বিশ দেব, চলেন।

ড্রাইভার আবারও মাথা নাড়ে। আমি সরে আসি। অন্য কোনো গাড়ি পাওয়া যায় কিনা খুঁজতে থাকি। ড্রাইভার পেছন থেকে আবার ডাকে, দাদা দেড়শ' টাকা দেবেন।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে উঠে বসি।

.

জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির সামনে নেমে রাস্তা পেরিয়ে বিশ্বভারতীর গেট। গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতে সবুজ আঙিনা থাকার কথা। কিন্তু গেট পেরিয়ে যখন ঢুকলাম, দেখি আকাশ দেখা যায় না। সবুজ সে আঙিনার নানান জায়গা ছিলে গিয়ে মাটি দেখা যাচ্ছে। আঙিনা জুড়ে বাঁশ পুঁতে তাতে সামিয়ানা টানিয়ে আকাশ ঢেকে হয়েছে। সামিয়ানার তলে এখানে সেখানে পাঁচ ছ'জন করে জটলা করে বসে লোকজন আড্ডা দিচ্ছে। আট দশ কদম হেঁটে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। এখানে দাঁড়িয়ে বাড়িটা আগে একবার দেখে নিতে চাই।

এই বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ জন্মেছেন। বালক বয়সে বাড়ির সিঁড়ির রেলিংয়ে বসে ভাবতেন ঘোড়ায় চড়েছেন। হাতে কঞ্চি নিয়ে সপাং সপাং করে রেলিংয়ে আঘাত করে ঘোড়াকে আরও জোরে ছুটতে বলতেন। 'মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে/মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে' - 'বীরপুরুষ' কবিতাটি কি তখনই ভেবেছিলেন রবীন্দ্রনাথ? এমন হয় না, একটা লেখা আমরা ভেবে রাখি কিন্তু লেখা হয়ে ওঠে না। যখন লেখা হয়- অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। পরিণত বয়সে ভাবলে তো মাকে নিয়ে নয়, বিদেশ ঘুরতে যেতে চাইতেন নন্দিনী অথবা লাবণ্যকে নিয়ে। কি জানি! মূর্খ হওয়ার যন্ত্রণা যে কত রকমের হয় দেখলেন তো?

জোড়াসাঁকোর এই বাড়িতেই কেটেছে রবীন্দ্রনাথের শৈশব কৈশোর আর তারুণ্য থেকে যৌবন অবধি। এরপরেও অনেকটা সময় তিনি এই বাড়িতে থেকেছেন। থেকেছেন শিলাইদহে, শান্তিনিকেতনে। ঘুরেছেন নানান দেশে। কিন্তু এই বাড়িতে তো তাঁর শেকড় প্রোথিত। মৃত্যুও হয়েছে এ বাড়িতেই। একটা সময়ে আধুনিক বাংলার শিল্প-সাহিত্য- সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল এই বাড়িটিই। আমরা যে বলি বঙ্গীয় নবজাগরণ, সে জাগরণও এ বাড়িতেই।

ওই তো দোতলার বারান্দা! খুব ভোরে উঠে ওই বারান্দায় হাঁটতেন না রবীন্দ্রনাথ? একবার কাজী নজরুল খুব ভোরের বেলায় এসেছেন। দারোয়ান তাকে ঢুকতে দেবে না। মাথাগরম নজরুল দারোয়ানের সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে দিলেন। হৈচৈ শুনে ওই দোতলার বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁকে দেখে গেটের বাইরে থেকেই চিৎকার করে উঠলেন, গুরু! তোমার দরোয়ান আমায় ঢুকতে দিচ্ছে না! রবীন্দ্রনাথ চিনলেন, উন্মাদটা! পরে জেনেছি গল্পটা ছিল বানানো গল্প।

তখনই হঠাৎ কি যেন হলো! আমার দু চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। একটু পর কোত্থেকে যেন এত এত জল এসে দু গাল ভিজিয়ে দিতে লাগল। কাঁদছি নাকি! আমি বুঝতে পারি না। কি লজ্জা! কি লজ্জা! নিজেকে সংবরণ করবার চেষ্টা করি। তখন অবাক হয়ে দেখি প্যারালাইসিস রোগীর মতো মুখটাও বেঁকে যাচ্ছে। ধুর! চারপাশের লোকজন নিশ্চয়ই তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে। কি লজ্জা! কি লজ্জা!

তীর্থস্থান ব্যাপারটাতে আমার আস্থা নেই। এইত ক'দিন আগে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে এক ছেলে লিখল 'শুভ আবির্ভাব দিবস'। সেটা দেখে আমার তো হাসতে হাসতে হেঁচকি উঠে গেল। বলছে কি! রবীন্দ্রনাথ জন্মান নি তবে! আবির্ভূত হয়েছেন! পয়গাম্বর নাকি! তাহলে তো মারাও যান নি, প্রস্থান করেছেন। আমার মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর 'মানুষ মুহম্মদ (স.)'-এর কথা মনে পড়ে গেল- "মহামতি আবুবকর শেষ পর্যন্ত হযরতের মৃত্যুশয্যার পার্শ্বে ছিলেন। তিনি গম্ভীরভাবে জনতার মধ্যে দাঁড়াইলেন। বলিলেন, যাহারা হযরতের পূজা করিত, তাহারা জানুক তিনি মারা গিয়াছেন..."

সকল যুগে সকলখানেই অতি ভক্তি করা লোকগুলাই ক্ষতিকর আসলে।

একটু পর ধাতস্ত হওয়া গেল। দূর থেকে বাড়িটার একটা ছবি নিতে চাই। নিলামও। ধুর! ছবিতে তো খালি বাঁশ ভাসে, সামিয়ানা ভাসে। আমার মেজাজ খারাপ হয়। সামনে বাড়িতে ঢুকবার মুখে রবীন্দ্রনাথের একটা আবক্ষ মূর্তি দেখা যাচ্ছে। ভাবি মূর্তিকে গিয়ে বলব, হ্যাল্লো কলিগ। তখনই কোত্থেকে এক নারী এগিয়ে এসে বললেন, শুনুন, ছবি তোলা যাবে না। ছবি তোলায় নিষেধ আছে।

আমার বিস্ময় হয়। আমি বলি, নিষেধ নাকি! জানি না তো! কয়টা তো তুলে ফেলেছি, মুছে ফেলব?

সে নারী তখন বললেন, ছবি তুলতে পারেন তবে ফোনে একটা স্টিকার লাগাতে হবে। স্টিকার লাগিয়ে নিলে আপনি সব জায়গায় ছবি তুলতে পারবেন।

তাই নাকি! স্টিকার নিব। আপনি দিবেন? দেন একটা স্টিকার লাগিয়ে, বলে ফোনটা বাড়িয়ে ধরি।

ওই নারী তাড়াতাড়ি বললেন, না না, আমি দেব না। ওই অফিসে যান ওরা দেবে। আপনাকে পঞ্চাশ টাকা দিতে হবে।

যে আমি এই গরমে উবার কিংবা এসি ক্যাব না নিয়ে হলুদ ট্যাক্সি করে এসেছি, সেই আমিই ভাবতে লাগলাম, মাত্র পঞ্চাশ টাকা! এই মেয়ে আরও বেশি দাবি করলেও তো আমি রাজি হয়ে যেতাম। ইনি আমাকে চেনেন না এবং কলিগের সঙ্গে সম্পর্কটা জানেন না বলে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলি, আমি তো চিনি না, আপনি একটু সঙ্গে চলুন তো।

তিনি চললেন সঙ্গে। অফিসে আরেকজন নারী বসেছিলেন। তাকে আমার ছবি তুলতে চাওয়ার কথা বললেন। আমি দ্রুত পঞ্চাশ টাকা বের করে তাকে দিতে তিনি আধ ইঞ্চি চওড়া এক ইঞ্চি লম্বা একটা কাগজে ইংরেজিতে লিখলেন '৫০৭', তারপর কাগজটা তুলে ফোনের পেছন দিকে লাগিয়ে দিলেন।

লেখাটা দেখে আমার একটু মনখারাপ হলো। বাংলাদেশ কিংবা কোলকাতা- দুই বাংলার লোকেরা মিলেমিশে ভীষণ আপনজনের মতো বাংলা ভাষাটার পিঠ প্রায় দেয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই জোড়াসাঁকোতে, রবীন্দ্রনাথের নিজের বাড়িতে, যে রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষাটাকে জাতে তুলে দিয়ে গেছেন, এখানে তো অন্তত বাংলায় লেখার চর্চাটা থাকা উচিত ছিল, সংখ্যাটা বাংলায় লেখা উচিত ছিল, তাই নয়? আমার খুব হতাশ লাগল। মনে প্রশ্নও জাগলো, রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষার জন্যে কি করেছেন সেটা কি এরা জানেন?

নিশ্চয়ই জানেন। এরা হলেন রবীন্দ্রভারতীর নিজের লোক। রবীন্দ্রনাথের অবর্তমানে এরাই এখন জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির মা-বাপ। এরা তো না জেনে কিছু করবেন না। নিশ্চয়ই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজিতে লিখে দেওয়ার নিয়ম করে রেখেছে। আচ্ছা, দলিল দস্তাবেজও এরা কি ইংরেজিতেই লেখেন? এই খবরটি জাহাজের খবর। আমার মতো অর্বাচীন আদার ব্যাপারীর কাছে সে খবর যে কেউ বলে দিবে না- সেটা বিলক্ষণ। আমিও জানবার চেষ্টা করি না। আসবার সময় ভিসা নিয়ে ভারতীয় দূতাবাস আর ইন্ডিয়ান হাইকমিশন আমার সঙ্গে নানান রকমের খেলাধূলা করেছে, সেকারণে কোলকাতায় এসে প্রশ্ন করি না। এই যে রবীন্দ্রনাথের আঙিনায় বাঁশ কেন দিল- এইটি খুব জানতে ইচ্ছা করলেও টুঁ শব্দটিও করি নি।
.
ঠাকুর বাড়ির মূল ভবনের বারান্দায় ওঠা সিঁড়ির ঠিক ডানপাশে রবীন্দ্রনাথের একটা আবক্ষ ভাস্কর্য বসানো। সে ভাস্কর্য মাটি থেকে অনেকটা উঁচুতে। ওর সামনে ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে চাইলাম- চাইবোই তো আপন কলিগের বাড়ি এসেছি তবু ছবি তোলা বাবদ পঞ্চাশটি টাকা নিয়ে নিল! পঞ্চাশটা ছবি তুললেও প্রতিটি ছবি আমাদের টাকায় এক টাকা পঁয়ত্রিশ পয়সা হয়। ঠিক করলাম কমপক্ষে একশ' ছবি তুলতে হবে। তাতে ছবির দাম অর্ধেকে নামবে।

কিন্তু ছবি তুলতে গিয়ে দেখা দিল ভিন্ন বিপত্তি। যেভাবেই ছবি তুলতে যাই আঙিনাকে দেওয়া বাঁশেরা ফ্রেমে চলে আসে। এখান থেকে ওখান থেকে নানান দিক থেকে চেষ্টা করেও সফল হওয়া গেল না। তখন আরেকটুঁ কাছাকাছি হতে দেখি কি ভাস্কর্যর পেছনে একটা সিঁড়ি। ও সিঁড়ি বেয়ে উঠলে ভাস্কর্যকে জড়িয়ে ধরে বসা যায়। তখন এগিয়ে গেলাম সিঁড়ির দিকে। কাছাকাছি যেতেই উর্দি পরা এক রক্ষী 'করছেন কি! করছেন কি!' বলতে বলতে ছুটে এল। আমি রক্ষীর দিকে একটা পুস্প হাসি হেসে বলি, ওপরে যাচ্ছি, ওঁকে জাপটে ধরে ছবি তুলব।

লোকটি সামনে এসে আমার দিকে চুপ করে তাকিয়ে থাকল, কয়েক সেকেন্ড পর বলল, ওখানে ওঠা যাবে না, নিষেধ আছে।
আমি তার দিকে তাকিয়ে আরেকটা পুস্প হাসি হেসে বলি, ও আচ্ছা। তাহলে থাক। না উঠি। বলে আঙিনার বাঁশ থেকে গা বাঁচিয়ে ডান দিক ধরে হাঁটা ধরি।

বিষয়টাকে আপনি খাবারের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন। কোনো ক্ষুধার্ত মানুষকে আপনি যখন অনেকগুলা সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করবেন তখন সে কি করবে জানেন? তার কাছে সবচেয়ে স্বাদু যেটিকে মনে হবে সেটাকে সে পাতের এক কোণায় সযতনে রেখে দিবে। সকল পদ খাওয়া হয়ে গেলে তারপর সেটিকে খুব রসিয়ে রসিয়ে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করবে- এই তার অভিপ্রায়।

আমারও এখন একই দশা। ঠাকুর বাড়ির চারপাশটা আগে ঘুরেফিরে দেখে সবশেষে মূল ঠাকুর বাড়িতে ঢুকব। কিন্তু ডানদিকে যে ভবনটা আছে ওতেও নাকি যাওয়া যাবে না। তখন দেখি পেছনেও একটা ভবন রয়েছে। ওদিকে এগুতেই পেছন থেকে কেউ চিৎকার করে জানতে চাইল, ও দাদা, ওদিকে কোথায় চলেছেন?

ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি মূল গেটের মতো এখানে আরেকটা গেট। গেটের সামনে চেয়ার পেতে তিনজন রক্ষী বসেছিল। তাদেরই একজন চেয়ার ছেড়ে কয়েক কদম এগিয়ে চিৎকার করেছে। আমি আঙুল তুলে পেছনের ভবনটা দেখিয়ে বলি, ওখানে চলেছি।

ওটা তো অফিস। ওখানে যাওয়া যাবে না।

অফিস হলে তো যাওয়াই লাগে, আমার প্রশ্ন আছে। আচ্ছা যাব না, আপনি বলে দিলেও হবে। বলুন তো এখানে নতুন ভবন কয়টা? মানে রবীন্দ্রনাথ যখন ছিলেন তখন কোন্‌ কোন্‌ ভবন ছিল এখানে আপনি কি জানেন?

লোকটি তখন আঙুল তুলে আমার পেছনে থাকা মূল ভবনটা দেখিয়ে বলে, শুধু ওইটা ছিল।

আমি কণ্ঠে আহত বিস্ময় নিয়ে বলি, ওই একটাই! বাকি সব নতুন!

হ্যাঁ, বাকিগুলো পরে করা হয়েছে তবে ডিজাইন ওটার মতোই করা তো।

আমি সঙ্গে সঙ্গে আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। রবীন্দ্রভারতী করেছে কি! একেবারে সর্বনাশ করে দিয়েছে। আমি তখনও জানি না যে সর্বনাশের কিছুই তখনও আমার দেখা হয় নি। আরও দেখা বাকি ছিল।

রবীন্দ্রনাথের সময় যা যা ছিল না সেসব দেখা মানে কেবলই সময় নষ্ট। ঘুরে মূল বাড়ির বারান্দায় উঠে হাঁটতে শুরু করলাম। রবীন্দ্রনাথ কি এই বারান্দায় হাঁটতেন? নিচতলা তো, সম্ভাবনা কম, তবে একবারে যে হাঁটতেন না - তাও নয়। আমার কেমন যেন লাগে। তখন দেখি ডানদিকে ভেতর বাড়িতে ঢোকার পথ। ভাবলাম আগে দোতলাটা দেখে আসি, তারপর নিচতলাটা দেখব। সিঁড়ির কাছে যেতে দেখি এখানেও একজন রক্ষী চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে। কাছে যেতে তিনি টিকেট চাইলেন।

আমি ফোন উলটো করে ধরে ইংরেজিতে '৫০৭' লেখা স্টিকারটা দেখিয়ে বলি এটা?

রক্ষী অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়, তারপর বলে, এটা তো ছবি তোলার জন্যে! এটা নয়, গেটে ঢুকবার সময় যেটা নিয়েছেন সেটা।
আমি বলি, ঢুকবার সময় তো টিকেট নিই নি!

ঢোকার সময় কেউ ডাকে নি! টিকেট কিনতে বলে নি?

না তো, বলে নি তো!

গেটের পাশে টিকেটঘর আছে, ওখান থেকে টিকেট নিয়ে আসুন।

গেলাম গেটের কাছে। আসলেই সেখানে একটা টিকেটঘর আছে। সেখানে কয়েকজন বসেও আছে। আমি তাদেরকে অভিযোগের কণ্ঠে বলি, আমি ঢুকবার সময় আপনারা আমাকে ডাকেন নি কেন? টিকেট নিতে বলেন নি কেন?

তারা অবাক হয়। একজন বলে, আপনি কখন কোন্‌ দিক দিয়ে ঢুকলেন সেটাই তো দেখলাম না!

আমি আর কথা বাড়াই না। টিকেট কিনে চলে আসি। আমারে এদের দেখতে না পাওয়ার কারণ তো ফর্সা। ঢোকার সময় কলিগ নিজে অভ্যর্থনা দিয়ে সঙ্গে ছিল। তাহলে এরা দেখবে কি করে! ঘণ্টা দেখবে?

টিকেট নিয়ে দোতলার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠবার সময় রক্ষী লোকটি বলে, ফোন বন্ধ করে রাখুন, ওপরে ছবি তোলা যাবে না।

আমি আকাশ থেকে পড়লাম! বলে কি! তাহলে যে সবখানে ছবি তুলতে পারব বলে পঞ্চাশ টাকা নিয়ে নিল! এখন বলছে ওপরে ছবি তুলতে পারব না! এ তো রীতিমতো প্রতারণা!

রক্ষীকে পঞ্চাশ টাকায় ছবি তুলবার অনুমতি কিনে ফেলার কথা জানিয়ে আবারও ফোনের পেছনে লাগানো স্টিকার দেখাই। রক্ষী আবারও বলে, এটা শুধু নিচতলা উঠোন-আঙিনার জন্যে। ওপরে ছবি তোলা যাবে না।

আমি বলি, ওপরে ছবি তোলার জন্যে আলাদা টিকেট কিনতে হবে? তাহলে ওটাও কিনব, দিন একটা।

লোকটি মাথা নাড়ে, ওপরের কোনো টিকেট নেই।

কি আর করা। ফোন পকেটে ঢুকিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে থাকি। বাঁ দিকের প্রথম ঘরটিতে ঢুকতে দেখা গেল ডানপাশের দেয়াল ঘেঁষে একটা ঠিক আরাম কেদারা নয় তবে অনেকটা ওর মতোই একটা চেয়ার। এতক্ষণ লক্ষ্য করি নি, গান বাজছে কোথাও- রবীন্দ্রনাথের গান। আমার বড় পছন্দের গান। দোতলার ঘরগুলোর নানান জায়গায় স্পিকার বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে গানের বাণী আর সুর আপনাকে ছেড়ে যাবে না, নিরবিচ্ছিন্ন আপনার শ্রবণে বাজতেই থাকতে থাকবে।

একটু পরেই প্রিয় গানগুলো যন্ত্রণা হয়ে আবির্ভূত হলো। বিষয়টা হলো আমি ঐতিহ্য দেখতে এসেছি। ঘুরে ঘুরে নিজের মতো করে একলা একলা ঐতিহ্য দেখব, ভাববো, পড়াগুলোর সঙ্গে মেলাবো, মাথার ভেতর গল্প তৈরি হবে, মনের চোখ সে গল্পের দৃশ্য তৈরি করবে- তা না, সারাক্ষণ গান এসে সেসবের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে! এইভাবে জোর করে গান শোনাবার বুদ্ধি বিশ্বভারতীকে কে দিয়েছে? তবে বাড়িতে ঢুকবার পর যা যা দেখলাম, মনে হয় না বিশ্বভারতীর কারও বুদ্ধির দরকার। সে নিজেই কম বুদ্ধি ধারণ করে বলে মনে করে না। রবীন্দ্রনাথ যে বাঙালীর সেটিও সে ভাবে না। রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বভারতী নিজেদের একলার সম্পদ ভাবে যে, কেবল তা নয়, বানিয়েও ফেলেছে।

সিঁড়ি বেয়ে উঠে বাঁ দিকে ঘরটিতে ঢুকতে দেয়ালে পিঠ ঠেকানো আরাম কেদারার মতো একটা চেয়ার দেখা গেল। এই চেয়ারে রবীন্দ্রনাথ বসতেন। বৈঠক হতো এখানে। মানে আলাপ আলোচনা চলত। সে চেয়ারের তিন পাশ জুড়ে টেবিল দেখে আমার কৌতূহলী মন জানতে চাইল, টেবিলের বাধ পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ ওই পর্যন্ত পৌঁছুতেন কি করে! কোনো পথ যে খোলা রাখা নেই! টেনে টেবিল সরানো হতো? আমি ধাঁধায় পড়ে গেলাম। তাছাড়া তিন দিকের টেবিলগুলোর সঙ্গে কোনো চেয়ারও নেই। আলাপ আলোচনায় রবীন্দ্রনাথ একলা বসে থাকতেন আর বাকিরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই কথা বলতেন? এটা কি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে যায়! আর অন্যরা যদি দাঁড়িয়েই যদি থাকবেন তাহলে টেবিল কেন থাকবে! টেবিল তো থাকার কথা না! আমার ধন্ধ লাগে। তাতে অবশ্য কিছু যায় আসে না।

ও ঘরটির পাশের ঘরটি একটি রান্নাঘর। ওতে সামান্য আসবাবও দেখা গেল। বলা হয়েছে ওখানে মৃণালিনী দেবী রান্না করতেন। আমার মধ্যবিত্ত কৌতূহলী মন বলল, যাহ্‌! কি বলে! আমাদের মধ্যবিত্ত মূল্যবোধ ভাবাতেই পারে, জমিদার পত্নী রান্না করবেন! কিন্তু এখানে মধ্যবিত্ত মূল্যবোধ মোটেই গুরুত্ব বহন করে না।

রবীন্দ্রনাথ বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতে খুব ভালোবাসতেন। একবার হয়েছে কি লন্ডনে রবীন্দ্রনাথ একই শিক্ষকের কাছে পড়া বন্ধু প্রিয়নাথ সেনকে নিমন্ত্রণ করে বসলেন। কিন্তু নিমন্ত্রণ করবার পর সেটি তিনি ঠিক আমার মতো করে ভুলেও গেলেন। মৃণালিনী দেবীকে বন্ধুর আসবার কথা জানাবেন তো দূর নিজে খেয়েদেয়ে দুপুরে বিশ্রাম নিতে চলে গেছেন। আর ঠিক তখনই হাজির হলেন প্রিয়নাথ সেন। রবীন্দ্রনাথ হায় হায় করে উঠলেন! জিভ কামড়ে ভাবলেন, কী ভুলটাই না হয়ে গেছে! প্রিয়নাথ সেনকে বসিয়ে ছুটে গেলেন মৃণালিনী দেবীর কাছে। গিয়ে খুলে বললেন নিজের ভুল যাওয়া বিষয়ক কথাবার্তা। মৃণালিনী দেবী একেবারেই বিচলিত হলেন না। প্রিয়নাথ সেনকে কিছু বুঝতেই দিলেন না। একটু পর যখন দুজনকে ডাকলেন, রবীন্দ্রনাথ দেখেন আয়োজনের কিছুই বাকি নেই। যেন প্রিয়নাথ সেনের আসবার কথাটি মৃণালিনী দেবী আগে থেকেই জানতেন!

জোড়াসাঁকোর বাড়িতে মৃণালিনী দেবীর রান্নাঘরটি বেশ পরিপাটি। হাতে বানানো চুলা সময়ের হিসেবে যতটা আধুনিক করা সম্ভব সেটিই করা হয়েছে। যদিও বাড়ির আকৃতির তুলনায় সেটিকে বেশ ছোটই মনে হলো। হয়ত এটা একান্তই মৃণালিনী দেবীর নিজের বলে। পুরো বাড়ির রান্নার জন্যে নিশ্চয়ই আলাদা রান্নার ঘর রয়েছে।

মৃণালিনী দেবীর রান্নাঘরটিতে তাঁর ব্যবহার করা রান্নাবান্নার কিছু জিনিসপত্র সংরক্ষিত আছে। ও ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরটি সংগীতঘর। এ ঘরে গান পরিবেশন করা হতো। রবীন্দ্রনাথ নিজেও গান গাইতেন। এরপরের ঘরটিতে বিছানা পাতা, শোবার ঘর। সে ঘরেই মারা যান রবীন্দ্রনাথ।

দোতলা ঘুরতে ঘুরতে কেবলই মনে হতে লাগল, রবীন্দ্রভারতীর লোকেরা রবীন্দ্রনাথের ব্যবহার করা জিনিসপত্রর চেয়ে তাঁর ছবিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। যদিও ছবি তুলবার নিমিত্তে আমাদের থেকে পঞ্চাশটি করে টাকা আদায় করে নিয়েছেন ঠিকই কিন্তু দোতলায় যে ছবি তোলা যাবে না সেটি তখন গোপন রেখেছেন। একটা ঘরের পাশে দেখি লাগোয়া খুব ক্ষুদ্র একটা ঘর। দেয়ালে ও ঘরটির পরিচয় লেখা 'আঁতুড়ঘর'। ঘরটি কাঠের বেড়া দিয়ে একটু আলাদা করা। আর কেমন যেন অন্ধকার অন্ধকারও লাগল। এই ঘরটিতেই রবীন্দ্রনাথ জন্মেছিলেন। অনেকটা সময় এখানে দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিসব কিসব ভাবনা যেন এল।

সকল ঘরের দেয়ালেই রবীন্দ্রনাথের নানান ছবি। ছবির পাশে বর্ণনা লিখে রাখা আছে। ছবির পানে আগ্রহী হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। কেননা যেসব ছবিতে চোখ গেছে তাদের বেশিরভাগই আগে কোথাও না কোথাও দেখা হয়েছে। তাহলে জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্রনাথের বাড়ি এসে ছবি কেন দেখব! এখানে যদি মেঝে কিংবা বারান্দা দেখি ওতেও অনেক কিছু দেখা হবে। একটা ঘরে কাচ দিয়ে ঘেরা রবীন্দ্রনাথের পোশাক দেখা গেল। সেখানেও কাটল কিছু সময়। এরপর গেলাম বারান্দায়।

বারান্দায় আমার আগ্রহ আছে। মনে হলো বারান্দায় দাঁড়ালে পুরো বাড়িটা ঠাওর করা যায়। সেখানে দাঁড়াবার পর নিশ্চিত হওয়া গেল মনে হওয়াটা ভুল নয়। যেখানটাতে দাঁড়িয়েছি তার ঠিক নিচতলাতে ভেতর বাড়িতে ঢুকবার পথ। ওইখানে দাঁড়াতে দেখা গেল ভেতরে ঢুকবার পর পাকা আর প্রশস্ত উঠান। তারপর সিঁড়ি। কিন্তু সিঁড়ি পেরিয়ে ওপারে যাওয়ার উপায় নেই। ওদিককার ঘরগুলো বন্ধ করে দিয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেওয়া আছে। তবে নিচতলা তো, তাই এখানে ছবি তোলা যায়। দোতলার বারান্দা থেকেই দেখা গেল তরুণতরুণীরা সিঁড়িতে বসে নানান ভঙ্গিতে ছবি তুলছে। বারান্দা ধরে হাঁটতে হাঁটতে সামনে আরেকটা সিঁড়ি পড়ল। ছাদে যাওয়া যায় নাকি! সিঁড়ি বেয়ে উঠতে দেখা গেল ছাদ নয়, তিনতলায় এসে গেছি।

এই বাড়ি যে তিনতলা এটাই তো জানি না! তিনতলার ঘরগুলো বেশ ঠাণ্ডা। এসি লাগানো আছে। গরমে একটু আরাম মিলল। তিনতলার ঘরগুলো দেখতে দেখতে ধন্ধ লাগে। রবীন্দ্রনাথ যেসব দেশে ঘুরেছেন সেসব দেশের নানান স্মৃতির সংরক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে একেকটা ঘর সংশ্লিষ্ট দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বানানো হয়েছে জাপান গ্যালারি, চায়না গ্যালারি, ইউএস গ্যালারি, হাঙ্গেরি গ্যালারি।

আমার ধন্ধ তখন সন্দেহে পরিণত হয়েছে। চীনের ঘরটিতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথকে চৈনিক মনে হতে লাগল। আর চুপ করে থাকা সম্ভব হলো না। ওখানকার নিরাপত্তা রক্ষীকে জিজ্ঞেস করি, একটা কথা বলেন তো, এই বাড়িটা কি রবীন্দ্রনাথের সময়েই তিনতলা ছিল না পরে এই তলাটা করা হয়েছে?

লোকটি বলল, না না, এটা দু তলাই ছিল। তিনতলা পরে করা হয়েছে।

সঙ্গে সঙ্গে আমি সকল আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। দোতলা বাড়িটিকে তিনতলা বানিয়ে এই গ্যালারিগুলো বানানো খুব কি দরকার ছিল? এটা তো পাশে বানানো কোনো ভবনেও করা যেত, যেত না? ঐতিহ্যটাকে নষ্ট করল শুধু শুধু। তিনতলা দেখব না। সিঁড়ির দিকে হাঁটা ধরলাম। বিশ্বভারতীর পাকনামো দেখতে তো আমি আসি নি! আমি এসেছি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি জড়ানো তাঁর বাড়িটি দেখতে। এই বাড়ির ওই আঁতুড়ঘরে রবীন্দ্রনাথ জন্মেছেন। এই বাড়িতে তিনি বেড়ে উঠেছেন। রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলায় পরিচারকদের সর্দার ছিলেন ব্রজেশ্বর। পেটুক ও গম্ভীর মেজাজের ব্রজেশ্বর ভালো ও ভেজালহীন খাবারের ব্যবস্থা করত এ বাড়িতেই। ফলে অসুখ হতো না বালক রবীন্দ্রনাথের। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ব্রজেশ্বরের মতো পরিচারক দরকার- এসব তো এ বাড়িরই স্মৃতি।

কিন্তু বিশ্বভারতী আপন মনের মাধুরী দিয়ে এ বাড়ি সাজাতে সাজাতে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিদেরকেই তাড়াতে শুরু করে দিয়েছে। দেখা গেল এ কাজটি বিশ্বভারতী ভালোই পারে। পারে যে সে প্রমাণও বিশ্বভারতী নানানভাবে রেখেছে। খুব সম্প্রতি কোলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থানে এখনই সমস্ত ধরনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে হবে। তারা হেরিটেজ ভবন ভাঙতে শুরু করেছিল। আদালত জানতে চেয়েছে হেরিটেজ ভবন কার নির্দেশে ভাঙা হচ্ছিল? বিস্তারিত জানতে চেয়ে রাজ্য সরকার ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কি রিপোর্ট দিয়েছে জানি না।

একবার ভাবেন তো, বিশ্বভারতী কিংবা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে জোড়াসাঁকোর ঐতিহ্য রক্ষা করতে যদি আদালতকে নির্দেশ জারি করতে হয়- তাহলে এরা কি করছে? কাজটা কি এদের? রবীন্দ্রনাথকে পুঁজি বানিয়ে বেচাবিক্রি করা? তাহলে কিন্তু ঠিকই আছে। রবীন্দ্রনাথকে এরা ভালোই বেচাবিক্রি করছে।

এখন বাকি শান্তিনিকেতন যাওয়া। পরেরবার শান্তিনিকেতন যেতে হবে। অমর্ত্য সেন থাকতে থাকতে যেতে পারলে ভালো হয়

১৪.৫.২৩
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:৩৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের পহেলা বৈশাখ! এবার ১৪৩২।

লিখেছেন নাজনীন১, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:১৬


বাঙলা বা ইংরেজি যেকোন নববর্ষই আমাদের জন্য আনন্দের ইংরেজি অবশ্য বছরের শেষ রাতটা সবাই অনেক আনন্দ করে। সে হিসেবে পহেলা বৈশাখের আনন্দ সাধারণতঃ দিনের বেলায়।

যদিও এবার জমকালো বৈশাখী লেজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

লীগের মাস্তানদের নির্যাতনে বিসিএস ক্যাডার পরিবার অসহায়, একঘরে হয়ে আছি!

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:৩১


যে পরিবারটি আমাদের জীবনকে নরক বানানো শুরু করেছে, সেটি সুমন রায়ের পরিবার। দেখুন তাদেরই কিছু পাগলামি ও অপকর্মের প্রমাণ যা ক্যামেরায় ধরা পড়লো। ক্যামেরা না থাকলে বা অগোচরে কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৫০

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৩



গতকাল ছিলো বাংলা নববর্ষ।
সকালে এক জরুরী কাজে আমি উত্তরা গিয়েছিলাম। আমার তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার কথা। কিন্তু দেরী করে ফেললাম। আজ বাসার সবাই মাওয়া যাবে। সেখানেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই সময়ের কিঞ্চিৎ ভাবনা!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:১৭

বাক স্বাধীনতা কিংবা যা মনে আসছে তাই লিখে বা বলে ফেলছেন, খুব একটা ব্যাক স্পেস চাপতে হচ্ছে না এখন, তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে এবং যে কোন দল নির্বাচিত হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৮

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ১০ জনের একটা গ্রুপ আছে। আমরা বেশীরভাগ সময়ই সমসাময়ীক বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি। গত তিনদিনের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো বিএনপির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×