( লেখাটি শুধুমাত্র ঢাবির ভাই বোনদের জন্য , বিশেষ করে যারা নিয়মিত বাদুড় ঝোলা হয়ে যাতায়াত করেন)
একটা বিশেষ প্রয়োজনে মালিবাগ যাবার দরকার হয় দুদিন আগে। মালিবাগের লাইনে ঢাবির ‘কিঞ্চিত’ বাসটি চলাচল করে। টি এস সির সামনে দাড়ালাম । দেড়টার গাড়িতে যাব। বাস আসার পর সবাই যেভাবে হামলে পড়ল তাতে বন্যা কবলিত কোন স্থানে রিলিফের রুটি দেবার কথা মনে পড়ে গেল। আমি আগেই প্রস্তুত ছিলাম। কারণ গত তিন বছর ধরে আমি ‘উল্লাসের’ নিয়মিত যাত্রী। কিন্তু বিপুল বিক্রমে গাড়িতে উঠে একেবারেই হতাশ হলাম কারণ বেশিরভাগ সিটই ফাকা । একটু পরে বেশ অবাক হলাম একটা বিষয় দেখে তা হলো মেয়েরা উপরে এসে বসে পড়েছে। আমি জানি নিচে খুব বেশি ভিড় থাকলে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি নিচে ফাকা থাকে আর মেয়ে গুলো যদি দ্বোতলার মাঝে মাঝে এমনকি ছেলেদের সাথে বসে তাহলে সেটা সম্ভবত অবাক করার মতই। একজনতো আরো অগ্রগামী। সে জানালার পাশের ছেলেটাকে ভেতরের দিকে দিয়ে জানালার পাশে বসল কিন্তু মজার ব্যাপার হলো ছেলেটা বের না হয়েই মেয়েটাকে যেতে দিল। আমরা যারা ঢাবির গাড়িতে চড়ি তারা জানি এমনটি হলে যে বসে থাকে তাকে কতটা দলিত মথিত করে জানালার পাশে যেতে হয়। আরো অবাক করা বিষয় হলো মেয়েটা ছেলেটাকে বের হতেও বলল না। কারণ আমরা জানি খুব বেশি ভিড় হলে মেয়েরা সাধারণত পেছনের সিট গুলোতে বসে। কিন্তু এখানে নিচে ফাকা ছিল। ভাবলাম আমাদের উল্লাস কতইনা নিরস একটা কমিটি দিয়ে চলে। বুঝলাম জার্নিটা ভালোই হবে।
গাড়ি চলতে শুরু করল। শাহবাগ মোড়ে আসার পরই নিচে ভিষণ চিৎকার। আতঙ্কিত হয়ে জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়ল না। আমার অবস্থা সম্ভবত পাশের ছেলেটা বুঝতে পারল । সে বলল ‘‘এ বাসের নতুন কমিটি প্রত্যেকটা মোড় ঘোরার সময় এমন চিৎকার করে। আগে এমনটা ছিল না। ’’ বললাম তাই বলুন। নিন্দুকরা হয়ত বলবেন একদল বস্তির শিশু বা গার্মেন্টস কর্মীরা পিকনিকে যাবার সময় যেমন চিৎকার চেচামেচি করে সেটা কি ঢাবির ছেলেরা করলে ভাল দেখায় ? তাদের বলব এটা ঢাবির সামগ্রিক চিত্র না। আমি প্রায় সব বাসে চড়েছি কিন্তু এমনটি দেখিনি। সারাটা পথ ওরা এরকম চিৎকার চেচামেচি করেছে। অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম এরা কি নূন্যতম ব্যক্তিত্ববোধ নিয়েও চলে না?
ক্লাশে বান্ধবীকে জিজ্ঞাসা করলে ও বলল বাসে কিছু নতুন মেয়ে এ দাবি তুলেছে যে তারা দ্বোতলায় বসবে। আর নতুন কমিটিও তা সমর্থন করেছে।
মনে পড়ে গেল প্রথম বর্ষের শুরুর দিকের একটা ক্লাসের কথা। স্যার নারী পুরুষের সমতা নিয়ে পড়াচ্ছিলেন। এমন সময় একটা মেয়ে দাড়িয়ে বলল ‘‘ সার ! ছেলেদের হল সারা রাত খোলা থাকে কিন্তু মেয়েদের হল কেন সাড়ে নয়টায় বন্ধ হবে ? আমাদের তো রাত ১২ টার দিকেও হলে আসা লাগতে পারে। ” সার বললেন ‘‘ মা, তোমার কি কারণে এত রাতে বাইরে থাকতে হবে?’’ বিশেষ প্রয়োজন হলেতো হল-এ প্রবেশের ব্যবস্থা আছেই’’।
আমি জানিনা ঢাবির যেসব গাড়ি চলাচল করছে তাদের কমিটির কেউ এটা পড়ছেন কিনা। যদি পড়েন আমার প্রস্তাব হলো আসুন সকল গাড়িতেই এটা কার্যকর করি যে মেয়েরা ছেলেরা যে যেখানে পারে বসবে। বিশেষ করে আমার উল্লাস গাড়ির কমিটির কাছে নিবেদন প্রস্তাবটি বিশেষ ভাবে ভেবে দেখার জন্য । তাতে অন্তত জ্যামটা এতটা একঘেঁয়ে হবে না।