ভেবেছিলাম ব্লগ ডে নিয়ে কিছু বলব না । এত এত পোস্ট এত এত আলোচনা সমালোচনা না বলে আর থাকতে পারলাম না । কলম উশখুশ করছে । সবিস্তারে বলি -
প্রথমে ব্লগডে তে অংশগ্রহনের জন্য আসা থেকে শুরু করি । মহাখালী অফিস থেকে পৌনে পাচটায় রওনা দেই (অফিস ছুটি ছয়টায়) । কিন্তু ফার্মগেট আসার পরে বাস আর আগায় না । ইতিমধ্যে প্রিয় ব্লগার শাহেদ ভাইয়া এস এম এস করেছেন । আর নাহোল এর ফোন, আপ্নে কই ? আমি উত্তেজিত, টেন্সিত !! মারাত্নক জ্যাম ঠেলে পৌনে ছয়টায় শেরাটনে এসে আর বসে থাকতে না পেরে হাটা ধরলাম ।
এসে ভিতরে ঢুকলাম । ঢুকেই খেলাম তব্দা । এত ছোট্ট হল ! জনা পন্চাশেক মানুষের সেমিনার রুম । কল্পনার বাইরে ছিল বোধহয় আমাদেরে বাংলা ব্লগিঙ এর কর্নধারদের, যে বাংলা ব্লগ কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে । এটা যে এখন শ দুয়েক মাল্টিনিকের গালাগালির পর্যায় থেকে অনেক উপরে, অনেক দূরে উঠে গেছে উনারা হয়ত সাময়িক স্মৃতিভ্রমের স্বীকার হয়ে বেমালুম....
এখানে তেরোটি ব্লগ এর আসবার কথা থাকলেও আরো দু চারটি ব্লগের ব্লগারেরা এসেছিলেন । এক লক্ষ ব্লগার সামুর, বাকি ব্লগ গুলোতে যে সংখ্যক ব্লগার আছেন, সব মিলে ধরে নেই একলক্ষ বিশ হাজার তার ১% যদি আসতেন তবে কি হত ? হয়ত আমাদের রাজনৈতিক আলাপের মত রাস্তায় হা করে দাড়িয়ে দেখতে হত । অবশ্য রাস্তার চাহিদা বেশি হবে এটা বোধহয় তারা বুঝেছিলেন । শত হলেও, আমাদের বন্ধ মুখে বত্রিশ দাত তো উনারাই গোনেন ।
ভিতরে ঢোকার একটু বর্ননা দেই । দরজা খোলার জন্য ঠেলছি, দেখি খোলে না । আমার ঠিক মনে হচ্ছিল ক্লাসে আসতে লেট করে ফেলেছি এমন একটা অবস্থা । যাই হোক এক ব্লগারের পায়ে পাড়া দিয়ে, নিজে দুটো খেয়ে ঢুকে দেখি কাউরে চিনি না । এরা কারা ? আর এমন মুড ধরে সব বসেছিলেন কি বলব । বেড়িয়ে এলাম । এর মধ্যে প্রদান অতিথিরা অবশ্য ঝোকটা বুঝতে পেরে বেশি সময় নেননি । উনাদের কাছ থেকে আমাদের তো শেখার আছেই, আছে মডারেটর এবং দুজন উপস্থাপকের ও।
উনাদের বিদায়ের পরে শুরু হয় আসল উতপাত । কোথায় সবাই ভাবল, পরিচিত পর্ব শুরু হবে । তেরোটা ব্লগের একে অপরে পরিচিত হবে, তা না মডুরা শুরু করলেন লেকচার । এত গুরুগম্ভীর আলোচনা চলছিল যে মনে হয়, আমরা ব্লগ বিষয়ক কর্মশালায় অংশ নিয়েছি । খুব অদ্ভুত ঘুম পাড়ানি ছিল বিভিন্ন ব্লগের স্বত: প্রসূত বিজ্ঞাপন । বিশেষ করে টেকটিউনের মডারেটর এর বক্তব্য ছিল পেইনফুল । কিছুটা সময় অনুষ্ঠাণ দেখে আমার মনে হয়েছে আরিফ জেবতিক কত বড় একটা সত্য বলেছেন, সেটা গবেষ্য বিষয় ।
ভেতরে আর থাকা গেল না । বাইরে আসি, প্রথমেই দেখা জিয়া ভাই এর সাথে (শব্দনীড় এ্রর ) উনাদের সাথে আরো ছিলেন রাজিন, ভালবাসার দেয়াল, আরো দু এক জন । এর পরে শাহেদ ভাইয়া এক ঝলক দেখা দিয়ে গেলেন, পরীক্ষা ফেলে আমার জন্য ওয়েট করছিলেন । আমি কি বলব, এমন ভালবাসা বিরল ।
এর পরে নাহোল, ছোট্ট এ্যালেক্স যে স্বাস্থ্য গত ভাবে সত্যিকারে ছোট আশকারির থেকেও ছোট হবে ভাবিনি । নাহোল এর সাথে দু কথা বলতেই দেখি, ওপাশে ড্যাশিং একটা ছেলে । থ্রিপিস পড়া ছেলে এ যুগে পাওয়া ভার । সে ছিল আমাদের শিপু ভাই । আমারে অবশ্য চিনতে পারে নাই । তবে পড়ে সে মহা উৎফুল্ল হল পরিচয় পেয়ে ।
একটু পড়ে আরেক জনের সাথে পরিচয় । কালো মত, কেশবিহীন সুদর্শন এক ব্লগার । উনি বংশের ছোট পোলা, ছোট মির্জা, এসেই্ আমার হাতে ডায়েরি ধরিয়ে দিলেন । আমি স্তব্ধ ! উনি সবার নাম এবং নাম্বার লিখে নিলেন । উদ্দেশ্য কি কে যে জানে ?
পাশেই দেখি সুমন্টোগ্রাফির সুমন । এই প্রথম ক্যামেরা ছাড়া । এর সাথে আমার যে কবার দেখা হয়েছে সবসময়েই ক্যামেরা বিষয়ে কথা হয়েছে । কাল নয় । যাক সে কথা, সুমন ঠান্ডায় কাবু থাকায় কিছুক্ষণ পরেই চলে যায় । বাসায় যেতে যেতেই যতদূর জানি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে ।
একটু পরে আমার প্রিয় পান্থ দার সাথে দেখা । আগেই পরিচয়, তাই নতুনত্ব নেই । প্রিয় হেলাল মামা আমাকে দেখা মাত্র চিনেছেন । আমি খুব খুশি হয়েছি। কিন্তু উনি ইদানিং আমাকে কবি বলছেন কেন আমি সেটা বুঝতে পারছি না । আমি উনাকে মামা কিন্তু মিন করেই ডাকি । জানি না বাকি রা কি করে ।
আমার জন্য সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিল তনু (তন্ময় ফেরদৌস) আর শিপু ভাই যখন পনি আপুর (আরজু পনি ) সাথে বার বার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন । আমার দমফাটানো হাসি পাচ্ছিল । কিছুতেই শিপু ভাই বুঝতে পারছিলেন না উনি আমার পূর্ব পরিচিত । এক পাশ থেকে দেখলাম ফয়সাল তূর্যকে । এত চুপচাপ ! ভাবাই মুশকিল
জিসান মামা তার ভাগনা গোষ্ঠীর সাথে গোল হয়ে দাড়িয়ে ছিলেন । খুচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কে ? বলতে পারলেন না । কি আর করা ? পরিচয় দিলাম । এই সময়ে পরিচয় হয় গোলগাল রাষ্ট্রপ্রধান আর মনসুর ভাইয়ের সাথে । উনাদের সাথে আমার কোন ব্লগ ইন্টার এ্যাকশন নাই । উনারা আমার কোন পোস্টে কমেন্ট করেন নাই ।
গাট্টগোট্টা ইভান, তন্ময়, বাবু ভাই এদের সাথে কিছুক্ষণ ঘোরার পরে দেখি আরিফ রায়হান মাহিকে । নষ্ট কবি আগে থেকেই সাথে ছিলেন । উনি পূর্বপরিচিত বলে কিছু বলিনি । অভাগা ফারজুলের সাথেও দেখা হয় । এক লক্ষতম ব্লগার পোস্ট না দিয়ে সেফ হয় আর ফারজুল ন মাসের
ঋদ্ধ ব্লগিং জ্ঞান নিয়ে পড়ে আছে ।
বাংলা ব্লগিং এর ইতিহাসে ক্যাচাল একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ । আমি ক্যাচাল যথাসম্ভব এড়িয়ে চললেও ক্যাচাল কিন্তু ছাড়েনি । জড়িয়ে ধরেছে আরো শক্ত করে । তো আমার মত নাদান ব্লগারের সাথে একটা এপিক ক্যাচাল হয়েছিল ডিজিটালাইজড একজন ব্লগারের সাথে । সেটা এ ব্লগে নয় । অ আদ্যক্ষর যুক্ত একটি ব্লগে । তখন তার পক্ষ নিয়ে যৎসামান্য যে ব্লগাররা আমার বিপক্ষে বলেছিল তাদের একজন রিফাত । আমার ভীষণ রাগ হয়েছিল ওর উপর । উল্লেখ্য সে চে গুয়েভারা -২ নামে সমধিক পরিচিত । বর্তমানে ব্যান এবং এখন সে মেরি শেলীর একটা চরিত্রের নাম নিয়ে ব্লগিং করছে । সে আমাকে আগেই চেনার কারণে এসে আলাপ জুড়ল । এইত আর কি ! সমস্ত কিছু শেষে শুধু মনে পড়ে, আমার সেই অমর কমেন্ট - অর্থহীন পোস্ট । কাল পিটার প্যানের একটি পোস্টে আবার এটা করেছি ।
এর মাঝে দেখা হয় বর্ষীয়ান কালপুরুষ আঙ্কেল, সুনীল সমুদ্র এবং নাজনীন খলিল আন্টির সাথে । কালপুরুষ আঙ্কেল আমার আবৃত্তির কথা মনে রেখেছেন এবং আমাকে আশীর্বাদ করেছেন । নাজনীন খলিল আন্টি আমাকে ঠিক চিনেছেন কিনা আমি নিশ্চিত নই । উনার ফোন আশায় আর পরিচয় দেই নি ।
এ্কটা মজার ঘটনা বলি । বি ডি ব্লগ নিয়ে আলাপ হচ্ছিল আইরিন আপুর সাথে । এর ফাকে পাশ থেকে একজন উনাকে লক্ষ্য করে বলেন বি ডি ব্লগ কোন ব্লগই না । আপু হালকা শক্ত হয়ে গেলেও পরে স্বভাব সুলভ মানিয়ে নিয়েছেন । একেবারে শেষে দেখা হয় বেগ ভাই আর জাহাজী ভাই । বেগ ভাইকে ডেরিভেটিভ করে ত্বরণ বের করে তব্দা খাইয়ে দিয়েছি । এর ফাকেই নাস্তা খাবার সময় এক ব্লগার এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমার নিকটা যেন কি ? আমি বললাম । সে আমাকে চিনতে পারল । আমি পারি নাই । তার নিকটা ছিল অনবদ্য অনিন্দ্য । এর পরে আমার কেক, সিঙারা সহ যাবতীয় শীতল শুষ্ক খাবার খাওয়া তিনি চেয়ে চেয়ে দেখলেন । এর মাঝে কথাও কিছু হল আর কি !
একেবারে শেষে ব্লগার জাহাজী পোলার সাথে দেখা । আমার পরিচয় পেয়ে যে ভাবে জড়িয়ে ধরল, আমি আবেগাপ্লুত হয়ে গেলাম । আরো অনেক ব্লগারের সাথে দেখা হয়েছে । সবার নাম মনে আসছে না । ভুলো মন ! সব থেকে ভাল লেগেছে অচেনা অথচ খুব চেনা এক দঙ্গল ব্লগারের সাথে ব্লগর ব্লগর করতে পেরে । অনেকের কথা আলাদা করে বলিনি তারা হলেন আরিফ রায়হান মাহি, হাজারি, নিশাচর ভবঘুরে, আমাদের আরজে নিশাত, অনুজীব, নোমান নমি,গুরুজী, রোকন রাইয়ান এই সকল ব্লগার । কারো নাম বাদ পড়লে ক্ষমাপ্রার্থী
এই ৩য় ব্লগ দিবসে এসে একটা অমিমাংসিত সমস্যার সমাধান পাওয়া গেছে যে ছাইরাছ হেলাল আর জিসান শা ইকরাম এক ব্যক্তি নয় । এটা কিন্তু ক্যাচাল নিরসনে সুদদূর প্রসারী ভূমিকা রাখবে ।
আবার অনুষ্ঠান স্থলে ফেরত । মডুদের বকবক চলছেই । আমি দেখি কি ভেতরে একটা খালি রুম । সবাইকে যেতে বললাম । পালের গোদা না নড়লে কেউ নড়ে না । আমার কথায় তাই কেউ এল না । জিসান মামা ঢোকামাত্র সব সুড়সুড় করে ঢুকে গেল । ভিতরে হাসি আর হাততালি এত বেশি হচ্ছিল যে অনেকে ভাবছিল জানার দাবড়ানি খেতে হবে । যাক সে কথা ।
এর পরে এক লক্ষ তম ব্লগার প্রসঙ্গ । আশিকুর রাসেলের কাকতালীয় কৃতিত্বকে অভিনন্দন । এক লক্ষতম ব্লগার, কথাটা শুধু সংখ্যা নয়, মার্জিনাল নয় । বাংলাদেশের মত পশ্চাৎপদ নিতিনির্ধারকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি দেশে ইন্টারনেটের মত একটি উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক লাখ লোক একটি সাইটে অবিরাম লিখছেন, সত্যি অবিশ্বাস্য । এই বিষয়টাকে প্রাধান্য না দিয়ে উপহার দেয়াটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয়েছে । বিষয়টা স্থুল লেগেছে । এই কারণে ব্লগে ভবিষ্যতে মাল্টিনিকের বিস্ফোরণ হবে বলে আমার বিশ্বাস ।
সেরা ব্লগারদের ব্যাপারে আমি বলব, নির্বাচন ক্রাইটেরিয়াটার সম্পর্কে আমি অবগত নই । তাই আমি কিছু বলব না । তবে সবাইকে অভিনন্দন টুপি খোলা । আলোড়ন যে তারা তুলেছ এটা যেমন নি:সন্দেহ, পুরষ্কার প্রাপ্তিও অবাক করেনি । তবে নির্বাচনের ক্রাইটেরিয়া বলে দিলে ভাল হত । আমার খোলা চোখে মনে হয়েছে ব্লগে পুরষ্কার পাবার মূল যোগ্যতা সাংবাদিকতা এবং গনসংযোগ বিভাগেই আছে ।
অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি মূল ধারার সাহিত্য বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের বিমাতা সুলভ আচরণ । হাসান মাহবুব আর স্বদেশ হাসনাইন না পাওয়ায় আমি ব্যক্তিগত ভাবে ব্যথিত । তবে মানুষের ভালবাসায় উনারা সিক্ত, এটাই বড় অর্জন ।
পুরষ্কার প্রাপ্ত একজন ব্লগারের বিরুদ্ধে অতীতে ছাগু বিষয়ক কর্মকান্ডে মদদ দেবার অভিযোগ উঠেছে । উঠামাত্র সেটা ড্রাফটে নিয়ে উনি নিজেকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন । পুরষ্কার প্রাপ্ত একজন ব্লগার তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ খন্ডন করবেন না, এটা মানা কঠিন । এটা উনাকে আরো প্রশ্ন বিদ্ধ করছে ।
সব শেষে বলব যাদের মিস করেছি। আমার প্রিয় কবি বন্ধুরা যথারীতি এবারেও আসেননি । স্বদেশ দা অবশ্য প্রবাসী বলে আসতে পারতেন না । আর হানিফ ভাই, ত্রাতুল ভাই , হাসান ভাই এরা আসেননি । আমার প্রিয় ব্লগবন্ধু ফাইরুজ, সায়েম মুন এবং নষ্ট ছেলে আসেননি । আর মিস করেছি প্রিয় নীরবকে ।
শেষ করব একটি কথা বলে, আমরা ব্লগাররা ব্লগিং করি ভালবাসার জন্য । কিছু পেতে নয়, খেতে নয়, জ্ঞানার্জনে নয়, এসেছিলাম পরিচিত হতে সবার সাথে । কিছুটা হতাশ । তবু যা পেলাম তা ঢের । আর তাই যতবার ব্লগ দিবস হবে ততবার যাব । শুধু একটু বলব, আমরা আমরাই কি প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান করতে পারি তা প্রথম আলোর এ বছরের বর্ষপূর্তি দেখিয়ে দিয়েছে । জানা আপা, কৌশিক দা সেখানে ছিলেন, তারা আমার থেকে ভাল জানেন । তবে এত এত ব্লগার এক খানে করতে পারায় ব্লগ পরিচালকদের ধন্যবাদ দেই । ব্লগ দিবসের জয় হোক ।
অ.ট : ফান করতে কি ইমো লাগেই ? আপনাদের মতামত চাই
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৩৮