somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন
বৃহত্তম বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষক আমি। একজন শৌখিন লেখকও বটে। শখের বশে কবিতাও লিখেছি এক সময়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও বিভাগীয় পত্রিকায় এবং ব্লগে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করি।

আবরার হত্যাকান্ড- একটি মতবাদ ও কলরব

১০ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(সুত্রঃ সম্পাদকীয়, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ, ১২ অক্টোবর ২০১৯, শনিবার, চট্টগ্রাম।)

‘‘হোক কলরব ফুলগুলো সব/লাল না হয়ে নীল হলো ক্যান/অসম্ভবে কখন কবে/মেঘের সাথে মিল হলো ক্যান/হোক অযথা এসব কথা/তাল না হয়ে তিল হলো ক্যান”। কলরব ও জনরবের দেশ বাংলাদেশ। যেমন ধরুন, কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবি, রিফাত-মিন্নি, প্রিয়া সাহা, তারপর কল্লাকাটা গুজব, ডেঙ্গু মশা, জামালপুরের ডিসির পরকীয়া, বালিশ ক্যালেঙ্কারি ইত্যাদি ইত্যাদি। যেন কলরবের শেষ নেই। একেকবার একেক কলরব আসে, কিছু দিন উত্তালতার পর যথাযথ সমাধান ছাড়াই আবার প্রশমিত হয়ে যায় নানাবিধ ব্যক্তিগত, আঞ্চলিক অথবা জাতীয় কোন ইস্যু। তেমনি বর্তমানের জনরব, আলোচিতো একটি ঘটনা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ড। এ ঘটনায় বুয়েট প্রাঙ্গণসহ হতাবাক ও শোকাহত সমগ্র দেশ। সর্বত্র বিরজামান জনরোষ। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।

বুয়েট অ্যালামনাই সদস্য প্রাক্তণ ছাত্র মোনাসিব রোমেল একজন আশাবাদী ও দৃঢ় প্রত্যয়ের মানুষ, ইংরেজীতে যাকে বলা হয় ডাইনামিক। জাপানে আমার স্কলারশিপ ফেলো ছিলেন তিনি। সেখানে পেয়েছি তার মেধা ও সৃজনশীলতার প্রমাণ। ক্লাসের আগে ও পরে এটুকু যেন বসে থাকার সময় নেই তার এমন একটা স্বভাব তার চরিত্রে। সারাদিন অবিরাম ছুটে চলা। আমরা সবাই জানি মেধাতালিকায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বুয়েট। দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীছাত্ররা সেখানে অধ্যায়ন করে। মেধাসম্পন্ন ব্যাক্তিত্বের সকল চিন্তা ও কর্ম মেধা স্বত্তের অধিকারি। অন্য কারো কর্মের সাথে তাদের একত্রিকরণ অপ্রাসঙ্গিক। তারা অন্য সকলের পথচলার আদর্শ। কিন্তু আবরার হত্যাসহ বুয়েটের ইত্যোপূর্বেকার বিভিন্ন হত্যাকান্ড জাতিকে হতাশ করেছে। আবরার ফাহাদ হত্যা ঘটনার পর প্রাক্তণ ছাত্র রোমেল তার স্বলজ্জ্বিত মন্তব্যে বলেন, ‘‘ব্যক্তিগতভাবে প্রচন্ড আশাবাদী টাইপের মানুষ আমি। ২০০৮ সালে বুয়েট পাশ করার পর আইবিএ তে চান্স পেলাম আর অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে স্কলারশিপ। দুটো কাগজ হাতে নিয়ে ভেবেছিলাম কি করবো? বিশ্বাস ছিল নিজের উপর। আমি যদি যোগ্য হই, যেকোন অবস্থান থেকেই আমি কিছু করতে পারবো। প্রথমত, বাংলাদেশ এর ইকোনোমিক গ্রোথ এবং দিত্বীয়ত, পরিবারের কাছে থাকা। এ দুটি সুনির্দিষ্ট বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে দেশে থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। দুঃখজনক হলেও সত্যি সিদ্ধান্তটি গত ১০ বছরে ১০০০ বার ভুল প্রমানিত হয়েছে। আজ আমি পরাজিত, বিধ্বস্ত এবং মৃত“। বাংলাদেশের সর্বোবৃহৎ প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন কর্মী হিসেবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমি অনেক বুয়েট শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করেছি। দুর্দান্ত মেধাবী ও উদ্দীপ্ত প্রত্যেকটা প্রার্থী। ২০১৪ সালে আমরা প্রায় ৬০ জন বুয়েট থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীকে চাকরীর নিয়োগ দিয়েছিলাম। তার মধ্যে দুই বছরের মাথায় প্রায় ৪০ জনই উচ্চ শিক্ষার বৃত্তি নিয়ে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলে গেছেন ধারাবাহিকভাবে। কিন্তু এতো মেধাস্বত্তের অধিকারী শিক্ষার্থীরা যখন অপরাজেনৈতিক কর্মকান্ড ও হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িয়ে পূর্ববর্তী সকল সফলতাকে পা দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়; তখন আমরা সাধারণেরা সঙ্কিত হয়ে পড়ি। চোখে অন্ধকার দেখতে পাই। সাধারণ মত প্রকাশের কারনে যদি এক শিক্ষার্থী তার সহপাঠীকে হত্যা করতে পারে তাহলে জাতি তাদের কাছে কি আশা করবে?

বাংলাদেশে নাগরিকের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার সাংবিধানিক অথচ এতেই যত বাধা-বিপত্তি। অতি প্রতিক্রিয়াশীলদের কারণে চিন্তার স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। বিগত কয়েক বছরে ফেসবুকে স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে নানা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে। ফেসবুকে ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করলেও প্রতিপক্ষের আক্রমণের শিকার হচ্ছে মানুষ। অনেক তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। সর্বশেষ ফেসবুকে স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডেকে নিয়ে রাতে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। দেশজুড়ে প্রতিবাদ হলেও এ ক্ষতি অপূরণীয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অপব্যবহার হচ্ছে। এ অপব্যবহার থেকেও আমাদের বিরত থাকতে হবে। কারও সম্মানহানি করা বা কারো ব্যক্তিগত চরিত্র নিয়ে মন্তব্য করা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা অনুচিত। যেখানেই স্বাধীনতা আছে সেখানেই দায়িত্বের শুরু। আবার ফেসবুকে মতামতকে কেন্দ্র করে হত্যা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা—এগুলো কখনো কাম্য নয়। কেউ আক্রান্ত বোধ করেলে সেজন্য আইন আছে। আইন হাতে তুলে না নিয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। বাকস্বাধীনতা থাকলেও তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। ২০১৮-২০১৯ পর্যন্ত বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৫৫৪টি। পিটিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ৭৬ শতাংশ পুরুষ, বাকি ২৪ শতাংশ নারী। মানুষের মানসিক অস্থিরতা, প্রতিশোধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়াও ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা কমছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ও তরুণ সমাজের মধ্যে অস্থিরতার মাত্রাটা অনেক বেশি। সেই অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশই এরকম মাঝে মাঝে দেখা যায়। এখন এটাও ভাববার সময় এসেছে যে বাংলাদেশে এই ধরনের রাজনীতি কি আর সমর্থনযোগ্য কিনা?’

ছাত্রদের দ্বারা এধরণের অপরাজনৈতিক হত্যাকান্ড ও অপরাধ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সোনার বাংলার স্বপ্ন এবং উন্নয়নকে দেশবাসী ও বর্হিবিশ্বের কাছে দুর্বল করে তুলছে। জাগো নিউজের প্রকাশিত তথ্যমতে, তিনি ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছেন তাঁর উন্নয়নকে উইপোকা খেয়ে ফেলছে! তিনি কী ধরনের নির্মম বাস্তবতার সম্মুখীন তা আমরা তাঁর এরূপ আক্ষেপ থেকে সহজেই উপলব্ধি করতে পারি। তাঁর এই উপলব্ধিজাত বিশ্বাস থেকে বর্তমানের চলামান শুদ্ধি অভিযান। এই অভিযানে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মীরা যেমন উজ্জীবিত হয়েছেন তেমনি উজ্জীবিত হয়েছেন রাজনীতি বিমুখ সাধারণ মানুষও।

আমরা অনেক তাজা প্রাণ হারিয়েছি বিভিন্ন উগ্রবাদজনীত সন্ত্রাসবাদে। হারিয়েছি অনেক মেধাস্বত্ত। আমরা সাধারণ জনগণ কোন বর্ণবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ বা ধর্মবাদের পক্ষে নই। যখনই কোন মতবাদ হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হয় তখনই তা রূপ নেয় সন্ত্রাসবাদে। হোক সে হত্যাকান্ড রাজনৈতিক বা অরাজনৈতি ব্যানারে। হোক তা বাংলাদেশে, যুক্তরাষ্ট্রে, ফ্রান্সে, সুইডেনে, ইরাকে, সিরিয়ায় বা নিউজিল্যান্ডে- আমরা মানবতাবাদ তাকে ধিক্কার জানাই। কোন বেসামরীক নিরীহ, নিরাপরাধ প্রাণ কোন সন্ত্রাসবাদের মতো মতবাদের স্বীকার হোক মানবাতবাদের তা কখনই কাম্য নয়। আবার এটাও সত্য যে- কোন মতবাদ, ধর্মবাদ বা বর্ণবাদকে কোন একজন ব্যক্তি বা ব্যক্তি কতকের নিজস্ব ধ্যান-ধারণা বা কর্মকান্ড দিয়ে সামগ্রীক বিচার করলেও চলবে না। ঘৃণা নয়, হিংসা নয়, আমরা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব দেখতে চাই। বন্ধ হোক সকল হেইট ক্রাইম, রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক, বর্ণবাদ, ধর্মবাদ, মতবাদ থেকে সৃষ্ট হত্যাযজ্ঞ।

লেখকঃ কলামিস্ট
ই-মেইলঃ [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×