তখন ধানক্ষেতে পোকা মারার জন্য একপ্রকার প্লেন চলতো,সেই ছোট্ট রানওয়েতে ইন্ডিয়ান প্লেনগুলো নেমে পাকিস্তানি আর্মীদের নিয়ে যেত।সেই সময় আমরা প্রথম প্লেন টাচ করারও অভিজ্ঞতা পাই।সেই প্লেনে করে শত শত আটক পাকিস্তানীদের খুব তারাতারি করে ভারত পাঠিয়ে দেয়া হয়।আর তারাও বিক্ষুদ্ধ বাঙ্গালীদের হাতের মাইর থেকে বেচে যায়।
তখন যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও খন্ড খন্ড যুদ্ধ এখানে সেখানে চলছিল।তাই আব্বা আম্মা আমাকে প্রায়ই বাইরে যেতে দিতনা।আমি লুকিয়েই চলে যেতাম।একদিন শুনলান পাকিস্তানীদের সঙ্গে স্টেডিয়ামে যুদ্ধ হচ্ছে।চলে গেলাম যুদ্ধ দেখতে।আমাদেরকে বেশ দুরেই আটকে দিল মুক্তিসেনারা।নদীর পাড়ে মাথা নিচু করে দেখতে থাকলাম যুদ্ধ।শুনলাম কয়েকটা আটকে পড়া পাকিস্তানি স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে আশ্রয় নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত।মাইকে তাদেরকে আত্মসমর্পন করতে বলা হলো কিন্তু কি সাহস তাদের বলে দিল বাঙ্গালীর নিকট নয় ইন্ডিয়ান সৈন্য এলে তবেই আত্মসমর্পন করবে।পরে জেনেছি বাঙ্গালীরা অনেককে প্রানে মেরে ফেলতো কিন্ত ইন্ডিয়ানরা যুদ্ধের রীতি অনুযায়ী বন্দী সেনাদেরকে বাচিয়ে রাখতো,তাই তারা জানে বাচার জন্য আমাদের হাতে ধরা দিতনা।
এদিকে খুজে খুজে জামাত ও মুসলিমলিগের নেতাদেরও ধরা হচ্ছিল।একদিন শান্তি কমিটির নেতা ভাদু দারগাকে ধরে নিরালার মোড়ে বেধে রাখলো।তার গলায় জুতার মালা আর কপালে পেরেক মেরে কেঊ একজন তার কপালে জুতা লাগিয়ে দিল।কেউ কেউ অবশ্য আফসোসও করেছিল কারন তিনি ছিলেন শহরের অন্যতম ধনী ও বয়স্ক ব্যক্তি।
আর প্রায় প্রতিদিনই রাস্তার আশপাশে লাশ পড়ে থাকতে দেখা যেত।পড়ে জানলাম অনেকে শত্রুতা করেও মানুষ মারা শুরু করেছিল।তাই কিছুদিনের মধ্যেই শহরের শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সবাই তৎপর হলেন।
এদিকে মুক্তিসেনারা তখনো তাদের অস্ত্র হাতে নিয়ে ঘুড়ে বেড়াতো।আমাদের পাড়ার অনেক বড়ভাই পেলাম মুক্তিযোদ্ধা।তাদের ক্ষমতাও তখন অসিম।আমরা কারো কারো নিকট গিয়ে সিনেমা দেখার ফ্রী টিকিট নিতাম!
ওদিকে তাদের ড্রেস আর স্টেনগান দেখে আমরাও যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা শুরু করলাম।বাশ দিয়ে স্টেনগান বানিয়ে আমরা খেলতাম।একদিন শুনলাম কাদের সিদ্দিকী অন্যপাড়ায় এসে এই সব ক্ষুদে মুক্তিযোদ্ধাদের ড্রেস বানিয়ে দিয়ে উৎসাহীত করেছেন।
কিছুদিনের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক শেখ মুজিব টাংগাইল এলেন।তার আগমন তখন ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলেন। প্রতি একশ দুশ গজে এক একটা শুভেচ্ছা তোরণ তখন আমাদের চোখ ধাধিয়ে দিয়েছিল।হেন সংগঠন নেই যারা এই তোরণ বানায়নি।
বিন্দুবাসিনী স্কুল মাঠে কাদেরিয়া বাহিনী তাদের অস্ত্রসমর্পনের ব্যবস্থা করলেন।শতশত মুক্তিসেনা তখন শেখ মুজিবের পায়ের নীচে তাদের যুদ্ধের সাথী অস্ত্রগুলি নামিয়ে রাখলেন।আমি সেই স্মরনীয় দিনের সাক্ষী।সেখানে কাদের সিদ্দিকীকে একজন কাউবয় হিরো লাগছিল,মুজিব তাকে জরিয়ে ধরে কেধে দিয়েছিলেন।কি কথা তিনি বলেছিলেন আমরা দূর থেকে শুনিনি তবে পড়ে জেনেছিলাম তাকে ছেলে বলে ঘোষনা দিয়েছিলেন।
আগের পর্ব এখানেঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১১ ভোর ৪:০২