(আরো ছবি নিচে সংযুক্ত করা হয়েছে)
আজকের সমাবেশে অবরোধ এবং অফিস টাইম থাকা স্বত্তেও বহু সংখ্যক নানা শ্রেনী পেশার মানুষ অংশগ্রহন করেছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন, যারা সহিংসতায় শিকার হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্য, ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, চলচিত্রকার, প্রকাশক, ব্লগার এবং সাধারন মানুষজন।
বিভিন্ন বক্তার বক্তব্য থেকে যে মুল বক্তব্যটি প্রকাশ পেয়েছে তাহলো, সাধারন মানুষ রাজনৈতিক এই হানাহানি থেকে মুক্তি চায়, তারা বিশ্বাস করে, মানুষের জন্যই রাজনীতি, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করুন, তাদের যুক্তিসংগত আন্দোলন নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই, কিন্তু যখন আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করা হয় এবং আবার তা দমন করতে গিয়ে মানুষ হত্যা করা হয় সেটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তারা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দাবি জানিয়েছে অবিলম্বনে আন্দোলনের নামে এই মানুষহত্যা বন্ধ হোক পাশাপাশি বিরোধীমত দমনের নামে সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসও বন্ধ হোক। কারন যেই মরুক মরছে, মরছে আমাদের মানুষই।
বক্তারা জনগনের কাছে সকল রাজনৈতিক দলের নুন্যতম জবাবদিহীতা দাবি করেন। তারা তাদের ভোটের অধিকার সুনিশ্চিত করার দাবি জানান। এই জন্য দায়িত্বশীল সবাইকে অবিলম্বে এগিয়ে আসার দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে একটি মৌন র্যালি বের করা হয়। ঐ র্যালিতে প্রচুর সংখ্যক সাধারন মানুষও অংশগ্রহন করেন। এর মাধ্যমে এটা নিশ্চিত হয়েছে, সাধারন মানুষ এই সহিংসাতে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারে নি। তাই অবিলম্বে এই সহিংসতা বন্ধ করা হোক।
আজকের সমাবেশের আরো কিছু ছবি
কুহক ভাই কিছু ছবি ফেসবুকে আপলোড করেছেন। তার তোলা কিছু ছবি সংযুক্ত করে দিলাম।
মুল লেখা:
প্রচন্ড বিষন্নতা নিয়ে লিখতে বসেছি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের সাধারণ মানুষের জীবন যাপনে যে ভয়াবহ প্রভাব রাখছে তাতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ধারণও প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এই মর্মান্তিক অবস্থায় রাজনীতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক নেতা, নির্বাচন ইত্যাদি নিয়ে ভাবনা খুবই দুরুহ ব্যাপার। পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি আমরা আর কতদিন এভাবে মেনে নেবো?
এমন একটি প্রেক্ষাপটে যারা শারীরিক, মানসিক, আর্থিক সর্বোপরী জীবনের নিশ্চয়তাহীনতায় নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন তারা মূলত খেটে-খাওয়া মানুষ। দিনের পর দিন এই খেটে খাওয়া মানুষগুলো জীবন হারাচ্ছে। একের পর এক শিশু, নারীসহ নিরীহ মানুষ অগ্নিদগ্ধ হচ্ছেন। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিট আমাদের হৃদয় বিদীর্ণ করছে প্রতিদিন। এ যেন কোন মনুষ্য সমাজ নয়! মানুষের জীবনের বিনিময়ে স্বার্থ চরিতার্থ করার নোংরা প্রতিযোগিতা চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বার্ষিক পরীক্ষা, সমাপণী পরীক্ষা সবকিছুই মারাত্বকভাবে ব্যহত হচ্ছে। একটি অগ্রগামী দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতিকে পুঁজি করা হচ্ছে। এই অবস্থাতো আমরা আর কতদিন সহ্য করবো! একে অন্যকে শুধু দোষারোপ করে যাচ্ছে। সাথে যুক্ত আছে অন্ধ দলীয় ভালবাসা এবং যেকোন ভাবেই হোক কোন না কোন দলীয় দৃষ্টিকোন থেকে স্বীয় বক্তব্যটিকে পর্যবেক্ষন করার বিপদজনক প্রচলিত ধারা।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের পর্যবেক্ষণ শক্তি প্রখর। সাধারণ মানুষের পর্যবেক্ষেণে বারবারই সত্য উঠে এসেছে। অপ্রিয় হলেও সত্য প্রকাশিত হবেই এবং তা কারোর না কারোর বিপক্ষে যাবেই। আবার যখনই একটি সত্যের পক্ষ- বিপক্ষ তৈরী হয় তখনই সেখানে শুরু হয় নোংরা অশুভ খেলা- যার অন্যায় বলি হয় বারবার এই সাধারণ মানুষগুলোই, এই আমরাই।
১৯৯৬ এবং ২০০৬ সালের নিষ্ঠুর দৃষ্টান্তের পর ২০১৩ সালে এসে যে দৃষ্টান্ত ইতিমধ্যে স্থাপিত হয়েছে তা শুধু মাত্র অবাধ, নিরপেক্ষ বা গ্রহনযোগ্য নির্বাচন নিয়ে তীব্র অনিশ্চয়তা নয় বরং তা আন্দোলনের নামে বর্বরতা, নৃশংসতা ও সহিংসতার সকল মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ক্ষমতার লড়াই এ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে নিরীহ মানুষকে আর তা নিয়ে চলছে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে ‘দুরভিসন্ধির’ কাঁদা ছোড়াছুড়ি।
একটি রাষ্টের নাগরিকদের অভিভাবক হলো সরকার এবং বিরোধীদল। রাষ্টের নাগরিকদের সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের এবং সেখানে কোন গাফিলতি দেখলে তার সরকারের সামনে তুলে ধরার দায়িত্ব বিরোধীদলের। কিন্তু দায়িত্বশীল এই দুই অভিভাবক যখন তীব্র বৈরীভাব নিয়ে মুখোমুখি দাঁড়ায় তখন নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রশ্নটি একটি প্রহসনে পরিনত হয় এবং তাদের আসলেই যাওয়ার কোন জায়গা থাকে না। আমরা এখন সেই ঘোর অনিশ্চয়তায়।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোন অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে বিরোধীদল যে সরকারকে চাপে ফেলবে বা দাবি আদায় করবে তা ভাবাটা যেমন কঠিন তেমনি বিদ্যমান জনসমর্থনকে কৌশলে কাজে লাগাতে পারলে আমাদের বিরোধী দল যে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে না তা বলার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিনিয়তই মন্দ থেকে মন্দরতর দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে আর এর ধারাবাহিকতা থেকে মুক্তি না পেলে সাধারন মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তনই ঘটবে না।
আমরা বুকের মাঝে তীব্র আশা নিয়ে অপেক্ষা করছি অচিরেই কেউ হয়ত একটি সুস্থ সুন্দর দৃষ্টান্তস্থাপন করতে এগিয়ে আসবেন, কেউ হয়ত আমাদের স্বাভাবিক জীবন এবং নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেবেন। এটা অনস্বীকার্য যে যারা ক্ষমতায় থাকেন, তাদের দায়িত্বটা সবসময়ই বেশি। তাদেরকেই যে কোন সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আন্তরিক এবং অর্থবহ মূল দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেই হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়ত সাধারন মানুষের জীবনে শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি উদ্যোগ নিতে পারেন। এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে রাষ্টের সর্বোচ্চ নির্বাহী বা অভিভাবকের কাঁধে আমরা এই সাধারণ চাওয়ার ভার অর্পন করতেই পারি।
অনেকেই আমরা গভীর আশংকা নিয়ে একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি, কেউ কেউ সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সহিংসতা নিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছেন, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। তাদেরকে বিনীতভাবে অনুরোধ করি , দয়া করে সহিংসতা নিয়ে উল্লাস প্রকাশ বন্ধ করুন। আমরা মানুষ। আমরা আমাদের বিবেক বিসর্জন দিতে পারিনা। আমাদের রাজনৈতিক চেতনার চাইতে মনুষ্যত্বের চেতনা অনেক বেশী মূল্যবান এবং এই দুঃসময়ে সেটি ভীষন জরুরী।
পাশাপাশি আমরা এই সহিংসতার সমাধানের জন্য আর বসে থাকতে চাই না। সময় এসেছে এই ঘৃন্য অমানবিক ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে সম্মিলিত ভাবে দল মত নির্বিশেষে প্রতিবাদ জানানোর। 'সহিংসতা প্রতিরোধে জনতা' স্লোগান নিয়ে শাহবাগ জাদুঘরের সামনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের যাদের বিবেক ও মনুষ্যত্ব এই ঘটনায় ব্যথিত হয়েছে এবং সাধারন মানুষের প্রানহানীতে যারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন তাদের সবাইকে সেই সমাবেশে যোগদান করার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
এই সংক্রান্ত একটি ফেসবুক ইভেন্ট খোলা হয়েছে। ইভেন্টির লিংক হলো
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৪ ভোর ৬:৩০